banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: April 2024

 

‘আজকে আমি নিঃসন্তান, শুধু জিপিএ ফাইভের জন্য’

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে অভির কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা।
ছবি : এনটিভি

‘আমার ছেলের নাম ছিল অভি। অনেক শখ করে তার নামটা রেখেছিলাম। ভাবছেন হয়তো বা ছিলাম কেন বলছি। কারণ আজকে আমার ছেলে আমার সাথে নেই। সে অনেক দূরে চলে গেছে। অনেক দূরে। আমাদের সবার থেকে অনেক অনেক দূরে।’

এভাবেই ক্যামেরার সামনে নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন এক মা। নিজের নাম, পরিচয় বা ছবি কোনো কিছুই প্রকাশ না করার শর্তে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর কথা প্রকাশ করলেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই। যেন তাঁর জীবনের ঘটনা থেকে অন্যরা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারেন।

অনেক আদর করে ছেলেকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন এই মা। ব্যবসায়ী স্বামী পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এসবের মধ্যে তিনি চাইতেন, তাঁর ছেলেকেও যেন তাঁর মতো পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে জীবন পার করতে না হয়। তিনি চাইতেন তাঁর ছেলে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হোক। বাবা চাইতেন ছেলে বড় ব্যারিস্টার হবে।

অভি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন কোনো কারণে তার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়। এতে তার বাবা ভীষণ রেগে যান বলে জানান অভির মা। এমনকি অভির দাদাবাড়ির সদস্যরাও পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য তার মাকে দোষারোপ করতে থাকেন। সবাই বলতে থাকেন যে, মা অভির ঠিকমতো খেয়াল নেননি।

এসব আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ছেলের ওপর চাপ দিতে থাকেন মা। ছেলেকে নিয়েই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তিনি। সে ঠিকমতো বাড়ির কাজ করছে কি না, অযথা সময় নষ্ট করছে কি না এসব খেয়াল রাখতে শুরু করেন। ছেলেকে সব সময় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে বলতেন বলেও জানালেন এই মা। ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু তিনি একাই করতে শুরু করেন। একসময় তাঁর জগৎই হয়ে যায় অভিকেন্দ্রিক।

এরপর অভি যখন অষ্টম শ্রেণিতে ওঠে, তখন পরিশ্রমের ফল পান এই মা। জানালেন, সে বছর ভালো ফল করে তাঁর ছেলে। কিন্তু এর পর থেকে অভির ওপর তার বাবার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়। অভিকে যে করেই হোক জিপিএ ফাইভ পেতে হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ ছাড়া পরিবারের অন্যরাও বারবার অভিকে মনে করিয়ে দিতে থাকেন যে সামনের মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় তাকে সেরা ফলটাই করতে হবে। অভির বাবা বলতেন যে, ছেলে জিপিএ ফাইভ না পেলে তাঁর মান-সম্মান নষ্ট হবে, পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে। এ ছাড়া ছেলেকে ব্যারিস্টার বানানোর তাঁর যে স্বপ্ন সেটিও পূরণ হবে না।

ফলে অষ্টম শ্রেণি থেকেই অভির ওপর চাপ দেওয়া শুরু হয়। এই মা বলেন, ‘ও খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, আস্তে আস্তে দেখলাম ওই জিনিসগুলার ভেতরে ছেলেটা কেমন যেন চুপ হয়ে গেল। জিনিসগুলার প্রতিও তার মন উঠে যাচ্ছে। ছবি আঁকা বন্ধ করে দিছে। আমি তারপরেও বলি যে ঠিক আছে, তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ আমারও ওর বাবার থেকে যে চাপটা আমি পেতাম, হয়তো বা সেটাই আমি আমার ছেলেকে দিয়ে এসেছি।’

এসএসসি পরীক্ষা যতই এগিয়ে আসছিল, অভির ওপর ততই চাপ বাড়াচ্ছিলেন বলে জানান তার মা। বলেন, ‘ওর বাবা আমাকে প্রতিনিয়ত কী করছে, ছেলে কী করছে, ছেলের দিকে খেয়াল রাখতেছো? ওকে দেখতেছো? ও কী পড়াশোনা করতেছে? কী করতেছে?’

মূল পরীক্ষার আগে বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষায় অভির ফল ভালো হচ্ছিল না উল্লেখ করে মা বলেন, এগুলো দেখে অভির বাবা প্রচণ্ড রেগে যান। সেই রাগের মাত্রা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না বলে জানান তিনি। অভির বাবা বলেছিলেন, অভি জিপিএ ফাইভ না পেলে তিনি ছেলের মুখও দেখবেন না।

এরপর একসময় পরীক্ষা শেষ হয় অভির। সে আরো চুপচাপ হয়ে যায় বলে জানান তার মা। চুপচাপ এক কোণায় পড়ে থাকত। অথচ আগে সে বেশ হইচই করত।

এভাবে রেজাল্টের দিন এসে গেল। সকালে ভয়ে কাতর চেহারা নিয়ে অভি বের হয়। মা বলেন, “আমি বাসায় অপেক্ষা করছি। সকাল পেরিয়ে দুপুর পার হয়ে গেল, তারপরেও তার কোনো খবর নাই। আমি ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব যারা, ওর তো তেমন বন্ধুও আমি হতে দেই নাই আসলে, ওর কিছু পরিচিত মানুষ যারা ওর ক্লাসে ছিল, ওর সাথে কোচিংয়ে যেত ওদের থেকে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কেউ বলতে পারে না আসলে আমার ছেলে কোথায়। আমি ওর বাবাকে জানালাম। ওর বাবা তো আমার সাথে প্রচণ্ড রাগারাগি চেঁচামেচি শুরু করল। ‘কী বলো তুমি, খেয়াল রাখো না, কেমন মা তুমি? কিছুই করতে পারো না। ছেলেটাকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারো নাই’।”

সন্ধ্যায় অভির বাবাসহ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁরা। এর পরদিনও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অভি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার দুদিন পর থানা থেকে ফোন আসে। পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাঁদের প্রিয় অভি আর বেঁচে নেই। বাড়ির কাছের একটি রেললাইনের ধারে পড়ে ছিল তার লাশ।

পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, অভির শরীরে বিষের নমুনা পাওয়া গেছে। সম্ভবত বিষাক্ত কিছু খেয়ে রেললাইনে আত্মহত্যা করেছে।

জানা যায়, অভি জিপিএ ৫ পায়নি। সে জন্য আর ঘরে ফেরেনি সে। মা বলেন, ‘ফিরতই বা কীভাবে। বলেই তো ফেলেছিলাম যে তোর মুখ আর কোনোদিন দেখব না। তাই আমার ছেলে ঘরেই ফেরে নাই। ফিরল না। আজকে আমি নিঃসন্তান। শুধু কেন? জিপিএ ফাইভের জন্য। আমি তাকে এতটাই চাপ দিছি জিপিএ ফাইভ পেতে হবে সেই ভয়ে আমার ছেলে আজকে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আজকে আমি বুঝি সে কতটা কষ্ট মনে নিয়ে এরকম একটা কাজ করে ফেলছে।’

ক্যামেরার সামনে কাঁদতে থাকা এই মা বলেন, ‘মা হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি আমার ছেলেকে কখনো বোঝার চেষ্টা করি নাই। কখনো তাঁকে কাছে নিয়ে জিজ্ঞাসা করি নাই, বাবা তোর কী ভালো লাগে, তুই কী করতে চাস? তোর কি কষ্ট হচ্ছে না কি তাও কখনো জিজ্ঞাসা করি নাই। শুধু সারাক্ষণ পড় পড় পড় পড়। পড়তে হবে, পড়তে হবে, জিপিএ ফাইভ পেতে হবে।’

‘আজকে আমার ছেলে নাই আমার কাছে’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেকটা যেন স্বগতোক্তি করেন এই মা।

নিজের জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা থেকে অন্য অভিভাবকদের প্রতি সন্তানদের ওপর চাপ না দিতে অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, সবাই যেন সন্তানকে কাছে ডেকে নিয়ে তার ভালো মন্দ, ইচ্ছা অনিচ্ছা জানতে চান। শুধু জিপিএ ফাইভ পাওয়ার আশায় জীবনের মূল্যবান সম্পদ সন্তানকে যেন কেউ হারিয়ে না ফেলেন সেই কথা বলেন তিনি।

তাঁর মতো যেন আর কোনো মাকে কাঁদতে না হয়, আফসোস করতে না হয় সেই কথা বলেন এই মা।
সুত্র:এনটিভি

 

এই শীতে শিশুর যত্ন_’টনসিল’ -ডা.মারুফ রায়হান খান

টনসিলের সমস্যার কারণে গলাব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকেই। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হয়ে থাকে তারপরেও শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের ইনফে কশান একটু বেশি হয়। টনসিলের এই ইনফেকশানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ।
img20171130_223447
কোথায় থাকে এই টনসিল?
জিহবার পেছনে গলার দেয়ালের দুপাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যা দেখা যায় সেটিই টনসিল। টনসিল দেখতে মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি।
img20171130_224603
কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?
– গলা ব্যথা
– গিলতে অসুবিধা
– জ্বর
– কানে ব্যথা
– মাথা ব্যথা
– গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া
– নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
– শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা
– নাক দিয়ে পানি ঝরা
– গলার বাইরে গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
img20171130_223737
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা কী?
কারণের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দিতে হয়। ভাইরাসের জন্যে হলে ৫/৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়, সেক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে কিছুটা সময় নেয়। কয়েক মাস পর্যন্ত টনসিল বাড়তি আকৃতিতে থাকতে পারে। অনেকক্ষেত্রে ওষুধে না সারলে রোগের তীব্রতা ও আক্রমণের হার বিবেচনা করে অপারেশানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
img20171130_223639
টনসিলের অপারেশান কখন করতে হয়?
– টনসিল বড় হওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা নাক ডাকলে।
– ঢোক গিলতে বা খেতে অসুবিধা হলে।
– এক বছরে ৭ বা তার বেশি বার হলে।
– টানা ২ বছর ৫ বারের বেশি হলে।
– টানা ৩ বছর ৩ বারের বেশি হলে।
– বছরে এই সমস্যার কারণে ২ সপ্তাহ বা তার বেশি স্কুলে বা কাজে যেতে না পারলে।
টনসিল অপারেশান করলে ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা হবে কি?
img20171130_230018
টনসিলের অসুবিধা দূর করার জন্যেই অপারেশান। আর ভবিষ্যতে যাতে টনসিলের ইনফেকশান থেকে জটিলতা।না হয় তার জন্যেই অপারেশান করা হয়। কাজেই টনসিল ফেলে দেওয়ার জন্যে ভবিষ্যতে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।

 

কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন

যত্ন নেবার জন্য খুব কম সময় কিন্তু সচেতনতা প্রয়োজন। শরীর এবং নিজের মনকে ভালো রাখতে হলে কিছুটা যত্ন দরকার, মনকে ভালো রাখতে, চাই নিয়মিত যত্নের অনুভূতি। নিজের প্রতি ব্যক্তি যত্নশীল হওয়ার অর্থ, যত্নের সাথে উঁকি দেওয়া- শারীরিক, আধ্যাত্মিক, আর মানসিক চাহিদার ব্যাপারে। কোন অজুহাত ছাড়ায় ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ নেওয়া। মনকে ভালো রাখতে হলে প্রিয় কাজগুলো করতে হবে আর শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
img20171129_012134
তাই আসুন কতকগুল টিপস জেনে নেই ‘নিজের মন আর শরীরের’ যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে হাফিংটন পোস্ট ও উইকিহাউ জানান, ‘মনের যত্নের প্রতি প্রত্যেকের সময় রাখা উচিত, সারাদিনে অল্প হলেও সময় দিন।’ অজস্র কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আমরা নিজেদের ব্যাপারে অসচেতন হয়ে পড়ি। শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে, নিজের অনুভূতিকে সতেজ রাখবে তেমন কয়েকটি টিপস।

টিপস:
img20171129_011249
রাতের আকাশে বসুন
১.মনের সতেজতার নানান গল্প জওআছে, আছে ত তাই না। নিজেকে মধ্যরাতের তারার ঝাঁকে খুঁজুন, বসে পড়ুন রাতের নীলিমায়, আগে হয়ত কখনও দেখা হয়নি নিজের উজ্জল নক্ষত্রের প্রতিবিম্ব রূপকে। মনের ঘরে আসুক প্রশান্তি ঝড়।
img20171129_011723
প্রকৃতিকে স্পর্শ করুন অনুভবে
২.অনুভূতি ত গাছের পাতার ডগায় বসে থাকা বিন্দু কণা জল। প্রতিটি স্পর্শ যেন হয় অনুভবের গল্প। নিজের ঘরের টপে বেড়ে ওঠা গাছটিকে পানি দেবার সময় আলত করে স্পর্শ করুন। নিজের প্রিয় বিষয়গুলকে ধরার সময় খেয়াল। যত্ন নিন নিজের অনুভূতির।
img20171129_011659
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকুন
৩.নিজের যত্ন নেবার সময় কখন কখন নিজেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস(মোবাইল, ইন্টারনেট, এবং টেলিভিশন) থেকে দূরে রাখুন। ভাবুন নিজেকে নিয়ে।
img20171129_011605
লিখুন নিজের সাফল্য
৪.খাতা-কলম নিয়ে বসুন। আপনমনে কিছু ইতিবাচক দিক লিখুন। সাফল্য পেতে চাইলে আপনাকে আরো কী কী করতে হবে তারও একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। দেখবেন ভালো লাগবে। প্রতিদিন ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি কি কিছুক্ষণ? নিজের আনমনা অনুভূতিগুলও লিখে রাখতে পারেন ডায়েরির পাতায়।
img20171129_011532
ছুটি দিন চিন্তাকে
৫.যে চিন্তারা আমাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভাবতে বাধ্য করে, যন্ত্রণার সঙ্গী করে সেটি নিয়ে চিন্তা কিছুক্ষণ ছেড়ে দেই। যেতে দিন সময়। এটা হতে পারে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা অথবা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে। ভাল রাখতে নিজেকে প্রথমে ভাল রাখার অনুভূতিকে হাতে রাখা।
img20171129_011454
নদীর ধার বা খোলা মাঠে কিছুক্ষণ
৬.চিন্তা বাড়াতে সাহায্য করুন। ভাবুন কোন খোলা প্রান্তে বসে। নয়ত নদীর পাশে নিজেকে কতক্ষণ ছেড়ে দিন।
img20171129_092642
হাটুন আপন মনে
৭.
মন ভালো রাখতে হাটতে পারেন, পারেন কিছু যোগব্যায়ামও করতে শরীরকে ভাল রাখতে। গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত হাঁটা মানসিক চাপকে কমাতে সাহায্য করে। এতে মন ও শরীর ভালো থাকে।
img20171129_093129
মনের ও শরীরের খোরাক জোগাতে কাজ করুন। ব্যস্ত থাকুন নিজের কাজে। মনকে ভালো রাখবে।

ফাতেমা শাহরিন

 

রান্নার যত কথা

রঙটাও সুন্দর হতে হবে আবার সুন্দর ঘ্রাণও চাই। খাবারের সময় কিছুটা মুখরোচক খাবার কেনা চায়। রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দেবার জন্যই আজকের কিছু নতুন টিপস। যা আপনার রান্নার স্বাদকে আরো বাড়িয়ে দিবে।
img20171128_224257
স্যুপ বা স্যুপি নুডুলস(Soup or Sappy Noodles)
স্যুপ বা স্যুপি নুডলসের সঙ্গে টুকরা করা ব্রেডে রসুন, বাটার, সামান্য চিনি ও গোলমরিচের পেস্ট লাগিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট গ্রিল বা সেঁকে মচমচে পরিবেশন করুন, দেখবেন খেতে মুখরোচক হবে।
img20171128_224157
খেজুর গুড়(Date Molasses)
খেজুরের গুড় দিয়ে পায়েস করতে গিয়ে অনেক সময় দুধটা ফেটে যায়। দুধ ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে তারপর গুড় মেশাবেন। ভালো করে নেড়ে আবার কিছুটা ফুটিয়ে নেবেন, দেখবেন রঙটাও সুন্দর হয়েছে আবার সুন্দর ঘ্রাণ বের হচ্ছে। দুধ ফাটার ভয়ও থাকবে না।
img20171128_224116
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম(Peanut and Almonds)
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম তেলে ভেজে পরে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেমাই বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে অনেকে বাদাম ব্যবহার করে থাকেন। বাদামে যদি তেল মেখে পরে তাওয়ায় ভাজেন তাহলে তেল কম লাগবে। নয়তো শুকনো ভাজতে গেলে তেল বেশি লাগবে।
img20171128_224059
তেতুলের ব্যবহার(Use of Tamarindus)
ওল, কচু অথবা কচুশাক রান্না করলে তাতে কিছুটা তেঁতুল ব্যবহার করবেন। খাবারের সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন, তাহলে গলায় আর চুলকানোর কোনো ভয় থাকবে না।
img20171128_224018
সেমাই রান্না(Cook the cottage Cheese)
সেমাই রান্নার আগে দেখে নিন। হালকা ভাজা হলে তেলে বা ঘিতে আবার ভেজে নিন। তাহলে রান্নার সময় সহজে গলে যাবে না।
img20171128_223952
মজাদার কেক(Fun Cake)
কেক বানাতে যদি ডিমের পরিমাণ কম থাকে তাহলে ভয় পাবেন না। কর্ণফ্লাওয়ার ব্যবহার করবেন। দেখবেন ডিমের ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে।
img20171128_223906
তরকারি রকমারি(Tasty Curry)
রান্নাতে খাদ্যমান ঠিক রাখতে যতটুকু সম্ভব তরকারি বড় বড় টুকরা করে কেটে নিন। নানান রং এর সবজি রাখতে পারেন। তাহলে বাচ্চারা পছন্দ করবে।
img20171128_223846
টক বা চিনি( Sour or sugar)
রান্না করতে গিয়ে তরকারিতে লবণ বেশি হলে সামান্য টক অথবা সামান্য চিনি দেবেন, তাতে কিছুটা হলেও লবণাক্ত ভাব কমে আসবে।

 

চলুন ঘুরে আসি মাল্টনোমাহ জলপ্রপাত(প্রচুর ছবি আছে) -দ্য স্লেভ 

মাল্টনোমাহ ফলস
received_1022689287871273
১৮ ঘন্টাব্যপী রোজা আমার জীবনে কখনও রাখিনি,তাও আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এবার নরওয়েতে ২২ ঘন্টা রোজা, সে তুলনায় সুখে আছি। তবে যেরকম কষ্ট হবে মনে করেছিলাম সেরকম হচ্ছেনা। রোজার পূর্বে মারাত্মক চিন্তায় ছিলাম যে, এবার রোজায় না জানি কি হয় ! দোয়া করছিলাম যাতে কষ্ট না হয়। অবাক কান্ড হল কর্মব্যস্ত দিনেও বাসায় ফেরার পথে পার্কে স্টিল বার ধরে ৫০ বার শরীর উপরে ওঠা-নামা করিয়েছি এবং আরও কসরত করেছি। একটু কষ্ট হলেও মনে হয়েছে শক্তি তেমন একটা ক্ষয় হয়নি। কার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে জানি না,তবে রোজা আমার শারিরীক সুস্থ্যতার ক্ষেত্রে ব্যপক অবদান রেখেছে। রোজার বাইরে আমি ননস্টপ খাই,তাই একটা বিরতী দিয়ে শরীরকে নব উদ্যোমী করার জন্যে রোজার গুরুত্ব অধিক বলে আমার মনে হয়েছে। আর অবশ্যই ফরজ হিসেবে রোজা পালন করতে আমরা বাধ্য। সত্যিই এটাতে দুনিয়া ও আখিরারে ব্যপক কল্যান রয়েছে।

আজ ছুটির দিন, ভাবছিলাম বাসায় শুয়ে বসে কাটাই,কিন্তু ঘোরাঘুরি যার স্বভাব তাকে আটকে রাখে এমন বিছানা পয়দা হয়নি। পরিকল্পনা ঝালাই করলাম। গুগল জানালো ‘মাল্টনোমাহ ফলস’ আজ শুভ। বাসা থেকে ১৬০ কি:মি: দূরে এটি অবস্থিত। হাইওয়ে ৫ এবং ৮৪ ধরে ধাবিত হলাম। আজ ব্যপক গরম। শরীর থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে,তবে পিপাসা তেমন অনুভূত হচ্ছেনা। দেড় ঘন্টা পর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে অগ্রসর হতে লাগলাম। কলম্বিয়া নদীর পাশ ধরে যে রাস্তা রয়েছে তা ধরে কেউ যদি গাড়ি চালায় অথবা হাটে,আর যদি সে আস্তিক হয় তবে সে ¯স্রষ্টার প্রশংসা না করে পারবে না। 
received_1022689277871274
এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ আর এদিকের এক পাশে উঁচু পাহাড়শ্রেণী,যা আগ্নেয় শীলায় তৈরী। এটির পাশ ধরে এবং ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া নদী প্রবাহিত। অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট একটি নদী এটি। পাহাড়ের যে অংশটি খাড়াভাবে উপরে উঠেছে,তার পাদদেশে নদীর অস্তিত্ব সত্যিই পুলকিত করে। এখানে সেটিই ঘটেছে। বামে কলাম্বিয়া নদীকে রেখে অগ্রসর হলাম। ডানেও সুন্দর পর্বতশ্রেণী। সবুজ আর সবুজ। খাড়া পাহাড়ের শরীর জড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছগাছালির বসবাস। ভাল না লেগে কতক্ষণ !
received_1022689267871275
ডানে মাল্টনোমাহ ফলস। দূর থেকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম এবং অবাকও হলাম এ কারনে যে, অনেক আগে নেটে পৃথিবীর বিভিন্ন চমৎকার জলপ্রপাতের খোঁজ খবর করছিলাম। তখন যে কটা জলপ্রপাত আমাকে আকৃষ্ট করেছিল,তার ভেতর এটিও ছিল। অবাক হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বহু উপর থেকে পানির ধারা পাহাড়ের কঠিন শীলার উপর আছড়ে পড়ে খানিকটা বাষ্প সৃষ্টি করে নীচে পতিত হচ্ছে। দৃশ্যটি বার বার দেখতে ভাল লাগবে। এগিয়ে গেলাম। বেশ গরম, শরীর পুড়ে যাওয়ার মত হচ্ছে।

জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র নদীর পাশ ধরে সুন্দর রাস্তা হয়ে জলপ্রপাতের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের সীমার মধ্যে যেতেই এক চমৎকার শীতল আবহাওয়া শরীরে ধাক্কা দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে গরমের স্থলে অতি মাত্রায় চমৎকার অনুভূতি কাজ করল। বেশ আরাম অনুভব করলাম। রহমত ব্যাপারটা এরকমই। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ পূর্বে যেন আমার গরমই অনুভূত হচ্ছিল না। 
এ এলাকাটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুরুতেই একটি পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র,তারপর রেস্টুরেন্ট এবং একটি সুন্দর প্রাঙ্গন। আজ প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়দের দেখা পেলাম। সাধারণত আমার এলাকায় ভারতীয় তেমন দেখা যায় না। নীচে দাড়িয়ে জলপ্রপাত দেখতে থাকলাম। পাহাড়টি এখানে একটি সুবিশাল প্রাচীরের মত মনে হয়। কঠিন পাথরে শ্যাওলা কিছুটা জমেছে এবং সময়ের আবর্তে তা ক্ষয়ে গেছে,সে দৃশ্য দেখে মনে হয় এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস সম্বলিত কোনো দেওয়াল। জলপ্রপাতটি যদি নাও থাকত তবুও এই কঠিন পাথরের আঁিকবুকি দেখতে ভাল লাগত। খাড়া পাহাড়ের মাথায় বড় বড় গাছ শোভা পাচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বিরামহীনভাবে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পতিত জলরাশি সোজা নীচে পতিত না হয়ে মাঝামাঝি একটি স্থানে পাথরে ধাক্কা খেয়ে তবে নীচে পতিত হচ্ছে। সে দৃশ্যটি অতি মনোরম। গৃষ্মে জলধারা ক্ষিন,তবে ততটা ক্ষিণ নয়। জলধারা যেখানে পতিত হচ্ছে সেখান থেকে আরও নীচে আরেক স্তর রয়েছে এবং এটার উপরে একটি শক্ত পোক্ত সেতু নির্মান করা হয়েছে,যাতে দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। সেতুটির নীচ দিয়ে জলধারা আরেক দফায় লাফিয়ে অবশেষে সমতলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জলপ্রপাতটির ধাপে ধাপে শিল্পের চিহ্ন। ডান দিকের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে থাকলাম।

প্যাচানো রাস্তা ধরে সেতুর উপর উঠে আসলাম। এখান থেকে দেখতে খুব ভাল লাগে। শীতে যখন তুষারপাত হয়েছিল তখন এই জলপ্রপাতে তুষার মিশ্রিত জলধারা পতিত হওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এখান থেকে পাহাড়ের খাড়া অংশের কঠিন পাথরের কাঁরুকাজ দেখতে খুব ভাল লাগছিল। বায়ের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাটলাম।
received_1022689417871260
বায়ে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ আর ডানেও খাড়া,কিন্তু সেখানে বিশালাকৃতির গাছপালা রয়েছে। কঠিন পাথরের কোথাও কোথাও গর্ত তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। সরু,স্বর্পিল এবং উর্ধ্বমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম,উদ্দেশ্য জলপ্রপাতের উৎস্যমূলে পৌঁছানো। ঝিরিঝিরি বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে,ভাল লাগছে,তবে একটু কষ্টও হচ্ছে কিন্তু এসব এখন তুচ্ছ। 

হাতের বায়ে দেখলাম পাহাড়ের খাড়া ঢাল ধরে ঘন বন। সেখানে ছোট বড় সব রকমের গাছগাছালি। পাথুরে মাটির উপর বিশালাকৃতির গাছগুলি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। কোনো কোনোটা বয়সের ভারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা মরেও সৌন্দর্য প্রদান করছে। 
received_1022689427871259
উপরে ওঠার পথে কয়েকটা লুকআউট আছে,যেখান থেকে খাড়া পর্বতশ্রেণীর পাশদিয়ে প্রবাহিত কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। ক্রমেই উপরে উঠে আসছি। কোথাও না থেমে একেবারে উপরে উঠে আসলাম,অনেক সময় লাগল এখানে পৌছাতে। এবার কিছুটা নীচের দিকে রাস্তা চলে গেছে। এতক্ষন রাস্তা ছিল নুড়ি পাথরে পূর্ণ এবং পাকা রাস্তাও ছিল,আর এখন মাটির রাস্তা শুরু হল। এর একদিকে কাঠের ছোট ছোট গুড়ি দিয়ে আটকানো। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা নীচে নেমেই দেখলাম চোখ শীতলকারী দারুন সেই জলধারার উপস্থিতি। খানিক দাড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। এ যেন ছবিতে দেখা কোনো পাহাড়ী ছোট নদী। 

নীচে নামলাম। মধ্যম মানের গতিতে চলমান জলধারার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা। সেসব গাছে শ্যাওলা জমে আছে,যা সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ছোট বড় পাথরের চাক এখানে সেখানে গেথে আছে। এর উপর বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটায় শ্যাওলা ধরা আর কোনো কোনোটা ক্ষয়ে গেছে। কিছু গাছের ভেতরে ক্ষয়ে পাইপের মত হয়ে আছে,সেসব মরা গাছ দেখতে বেশী ভাল লাগে। পানির ধারার উপর অবস্থিত বড় কিছু পাথরের চাকের উপর দিয়ে পানির কাছে গেলাম এবং হাত দিয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। খুব ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানি,মনে হল খেয়ে ফেলি কিন্তু রোজার কারনে হল না। পতিত বিশাল এক গাছের কান্ডের উপর দিয়ে হেটে আরেক ধারে গেলাম। এখানে আরও সুন্দর। স্বশব্দে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে নীচের দিকে। এবার জলধারাকে অনুসরণ করে এর খাড়া পতিত হওয়ার স্থানের দিকে হাটলাম। 
received_1022689424537926
খানিক পর দেখলাম এটি অন্তত দশফুট নীচে পতিত হচ্ছে এবং সামনে বিশ/পচিশ ফুট অগ্রসর হয়ে একেবারে খাড়া পতিত হচ্ছে। ধঃর ১৯১ সরঃবৎ যরমযএখানে একটি মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। আমি সেখানে পৌছলাম। এখান থেকে জলপ্রপাতের খাড়া রূপটি দেখা যায়। সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর ! ছড়ানো ঝিটানো পানির ধারা এখানে একত্রে মিলিত হয়ে নীচে পতিত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ বেশ লোক সমাগম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে এটা দেখতে।

চারিদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাশ বুক ভরে টেনে নিলাম,ভাল লাগল। এখানে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়। ডানে দেখলাম বহু নীচে রাস্তা দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি গুলোকে বেশ ছোট লাগছে। খাড়া পাহাড়ের উপরে দাড়িয়ে এভাবে চারিদিকটা দেখতে সত্যিই ভাল লাগে। 
received_1022689284537940
এবার উঠে আসলাম। সোজা পথে না এসে পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসলাম,তাতে কষ্ট হলেও সময় বাচল,সময়ের দাম অনেক,যদিও আজ আমি পুরো অবসরে ! এবার পাহাড়ের ভেতরের দিকে যাবার পালা। এই জলপ্রপাতের আরও গোড়ার দিক দেখার জন্যে বিপরীত দিকে রওনা হলাম। এপাশে শুনশান নিরবতা এবং গাছগাছালির ঘনত্বের কারনে আলোর পরিমান কম কিন্তু এক অপরূপ রূপের সুষ্টি করেছে এই আধারী মাখা জলধারা সমৃদ্ধ বনভূমী। চারিদিকে বড় বড় পাথরের চাক,তার উপর শতবর্ষী গাছপালার উপড়ে পড়া,এখানে সেখানে মরা গাছের কান্ড,ধারালো আগ্নেয় শীলায় তৈরী প্রাকৃতিক রাস্তা, ওহ সত্যিই অসাধারণ। আমি চলতে থাকলাম। আজ বিশেষ কেড্স পরেছি যাতে পা পিছলে না যায়। চলতেই থাকলাম। ডানের খাড়া পাহাড়ের শরীরের কোথাও কোথাও ছোট ছোট পানির প্রবাহ দেখলাম। এ অংশের রাস্তা সুবিধার নয়। সতর্কতার সাথে অগ্রসর হলাম। সরু রাস্তায় ধারালো খাড়া পাথর একটার পাশে একটা। বামে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই ভাল লাগছে। উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। বিভিন্ন স্থানে জলধারা বিভিন্ন রূপের সৃষ্টি করেছে। অসাধারণ দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করতে করতে অগ্রসর হলাম। একসময় থামলাম এবং পিছু হটলাম। একা একা চলতে ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আরও গেলে ভাল হত। কিন্তু ফিরতি পথ ধরলাম।
received_1022689281204607
ফেরার পথে বুঝলাম অনেক দূর হেটেছি। আবেগে প্রথমটায় বুঝিনি। রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। ঢালুতে নামছি তারপরও মনে হচ্ছে বিরাট পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সত্যিই অনেকদূর গিয়েছি। নীচের দিকে নেমে আবারও জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষন ধরে দেখলাম। এলাকাটি মনের মধ্যে গেথে গেছে। মাল্টনোমাহ ফলস আমার হৃদয় হরণ করেছে। 

ফেরার পথে পোর্টল্যান্ড হালাল স্টোর থেকে বিপূল পরিমানে গরুর মাংস এবং মশলাপাতি কিনলাম। রোজা রেখে বাজার করা ঠিক নয়, আর্থিক ক্ষতিটাই আসল। কিন্তু এত চমৎকার গরুর মাংস আমি আর কোথাও পাইনি। আজ সন্ধ্যায় সাদা ভাত আর গরুর মাংসের ঝোল যদি না ঝেড়েছি,তবে আমার নামে কুকুর পুষবেন !
পুনশ্চ: রান্নাটা হয়েছে দারুন। কথা রেখেছি। 

 

“ভুলেও সন্তানকে অভিশাপ দিবেন না”

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। আমাদের পাড়ার আব্দুল্লাহ যে কিনা পানিতে ডুবে মারা যায় তাঁর মা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিশোর সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে পাগলপারা হয়ে কাঁদছেন। মায়ের বাঁধভাঙ্গা কান্না আর বিলাপ শুনে উপস্থিত কারো পক্ষেই চোখের পানি সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
img20171126_231028
♦মায়ের চোখের পানি
তিনি কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন,
‘ও বাবুর আব্বু তুমি আমাকে মেরে ফেল। আমিই তোমার সন্তানকে হত্যা করেছি। গতকালই ওর জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমি বলেছি, ‘তুই মরিস না; মরলে দশটা ফকিরকে খাওয়াতাম।’
img20171126_231427
♦দুরন্তপনা বালক
হ্যা, সত্যিই তিনি আগেরদিন ছেলেটির দুরন্তপনায় অস্থির হয়ে এমন বলেছিলেন। তখন একজন পাগলেরও ভাবার অবকাশ ছিল না যে গর্ভধারিণী মা সত্যিই তার সন্তানের অমঙ্গল কামনা করছেন। কিন্তু অসচেতনভাবে কামনা করা দুর্ঘটনাও কখনো সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে।
img20171126_225141
♦মায়ের অভিশাপ
আব্দুল্লাহর মা গতকাল রাগের মাথায় যে কথা উচ্চারণ করেছিলেন কে জানত আজই তা বাস্তব হয়ে দেখা দেবে।
ঘটনা হলো, সেদিন দুপুরে ছেলেটি তার মায়ের সঙ্গে শুয়ে ছিল। তিনটার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে একরকম জিদ করেই সে মায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজতে। বাড়ির বাইরে এসে সে আশপাশের সমবয়সী আরও কয়েকটি কিশোরকে পেয়ে যায়। সবাই মিলে কোন বুদ্ধিতে যেন দল বেঁধে যায় পাশের মহল্লার একটি নতুন পুকুরে গোসল করতে। সেখানে গিয়ে সবার আগে সে-ই লাফ দেই পুকুরে।
img20171126_231729
♦পুকুরের টলমল পানি
অবুঝ কিশোর ঠিক বুঝতে পারেনি লাফ দিলে পুকুরের প্রায় গভীরে গিয়ে পৌঁছবে সে। যেখানে সাঁতার না জানা একটি কিশোরের জন্য অপেক্ষা করছে অবধারিত মৃত্যু। ঘটনা যা হবার তাই হল। বাচ্চাগুলোর চোখের সামনেই সে পানিতে ডুবল। ওরা ভাবল সে বুঝি তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কিছুক্ষণ পর তারা ওকে না পেয়ে ভয়ে আশপাশের লোকদের ডেকে আনল। ততক্ষণে অবশ্য তার ক্ষুদেকায় দেহ থেকে প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে।
img20171126_224658
♦মায়ের কাছে সন্তান
মা তার সন্তানকে অবর্ণনীয় কষ্টে গর্ভে ধারণ করেন। অমানুষিক কষ্টে পৃথিবীর আলো-বাতাসে আনেন। তারপর নিজের ভালোবাসা আর ত্যাগের সবটুকু উজাড় করে অসহায় একটি শিশুকে যথাক্রমে সুস্থ, সবল, সজ্ঞান ও স্বাবলম্বী করে তোলেন। সন্তান মানুষ করতে গিয়ে বাবা-মাকে যে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় তা শুধু বাবা-মায়েরাই জানেন। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এ কষ্ট আরও বেশি। এখানে রোজ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়াই করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়।
img20171126_232704
♦মায়ের ভালবাসা
অভাবের কারণে একজন নবীন মাকেও একহাতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব আর অপরহাতে বুকের ধন সন্তানটিকে আগলাতে হয়। অনেক মা আছেন যারা সময়মত বাচ্চার খাবারটিও যোগাতে পারেন না রুচিমত। বিশেষত যেসব বাচ্চা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। দরিদ্র পরিবারে এসব শিশুকে যে কত কষ্টে মা জননী বড় করে তোলেন তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ সময় মায়েদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়।
img20171126_224736
♦মা’ যখন ধৈর্যহারা
অথচ প্রগলভ চরিত্রের অনেক মা’কে এ সময় ধৈর্যহারাও হতে দেখা যায়। অনেক মা সন্তানের ওপর বিরক্ত হয়ে তাকে অবলীলায় অভিশাপ দিয়ে দিয়ে বসেন। স্নেহময়ী জননী হয়তো তার জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের যে কোনো অনিষ্ট রোধ করতে চাইবেন। কিন্তু তিনিই আবার রাগের মাথায় অবচেতনে আদরের সন্তানটির অনিষ্ট কামনা করে বসেন।
গ্রাম-বাংলায় প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদের দুরন্তপনা বা দুষ্টুমিতে নাকাল হয়ে অনেক মা সরাসরি বাচ্চার মৃত্যু কামনা করে বসেন। ‘তুই মরিস না’, ‘তুই মরলে ফকিররে একবেলা ভরপেট খাওয়াতাম’, ‘আল্লাহ, আমি আর পারিনে’, ‘এর জ্বালা থেকে আমাকে নিস্তার দাও’- এ জাতীয় বাক্য আমরা অহরহই শুনতে পাই। বিশেষত কৈশোরে এসে গ্রাম-বাংলার শিশুদের দুরন্তপনা কখনো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে কিশোর সন্তানকে উদ্দেশ করেই সাধারণত মায়েরা এমন অসহিষ্ণু বাক্য উচ্চারণ করে থাকেন। তাই এ সময় মাকে অনেক বেশি ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
img20171126_225356
ইসলামের সার্বজনীন আদর্শের ধারাবাহিকতায় এ বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা দিকনির্দেশনা পাই তারই কাছে। এ ব্যাপারেও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।
ইসলাম কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া বা বদ দু‘আ করাকে সমর্থন করে না। আপন সন্তানকে তো দূরের কথা জীবজন্তু এমনকি জড় পদার্থকে অভিশাপ দেয়াও সমর্থন করে না।
img20171126_232146
♦আল হাদীস
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাতনে বুওয়াত যুদ্ধের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি মাজদী ইবন ‘আমর জুহানীকে খুঁজছিলেন। পানি বহনকারী উটগুলোর পেছনে আমাদের মধ্য থেকে পাঁচজন, ছয়জন ও সাতজন করে পথ চলছিল। উকবা নামক এক আনসারী ব্যক্তি তাঁর উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিল এবং তাকে থামাল। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দিল। উটটি তখন একেবারে নিশ্চল হয়ে গেল। তিনি তখন বললেন ধুত্তুরি।
‘তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’
এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের উটকে অভিশাপদাতা এই ব্যক্তিটা কে?
তিনি বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি এর পিঠ থেকে নামো।’ আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্তুতির এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেবেন।’
[মুসলিম : ৭৭০৫]

♦♦♦হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, অর্থাৎ তোমরা কোনো মুহূর্তেই নিজের বিরুদ্ধে, নিজের সন্তান বা সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করো না। কারণ, হতে পারে যে সময় তুমি দু‘আ করছো, তা দিনের মধ্যে ওই সময় যখন যা-ই দু‘আ করা হোক না কেন তা কবুল করা হয়। তোমরা তো এ সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত নও। (মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ : ৭/৭০৩)

♦♦♦ হাদীসটি বর্ণনা করে আরেক ব্যাখ্যাকার বলেন, ‘হাদীসটি রাগের মাথায় মানুষের তার পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে। হাদীসটি এর কারণও তুলে ধরে। আর তা হলো, এ দু‘আটি কবুলের বিশেষ মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। ফলে মানুষের সবই কবুল হয়ে যায় চাই তা ভালো হোক বা মন্দ, যা সে তার পরিবার বা সম্পদের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে না।’
[আবদুল মুহসিন, শারহু সুনান আবী দাউদ : ৮/২৮৮]
img20171126_232204
♦আল কোরআন
নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে দু‘আ করার অর্থ তো নিজেই নিজেকে হত্যার তথা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ – البقرة: ١٩٥
‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫]

অতএব প্রতিটি মাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার রাগের মাথায় উচ্চারণ করা বাক্য যদি সত্যে পরিণত হয় তাহলে কেমন লাগবে?
আমি কি তা সহ্য করতে পারব?
img20171125_125224
এ জন্য রাগের মাথায়ও কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করা যাবে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে শুধু মায়েদেরই নয়, আমাদের সবারই উচিত নিজের, নিজের সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করা থেকে সংযত হওয়া। রাগের সময় সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া।
img20171126_225441
আর মেয়েদের সবিশেষভাবে বলতে চাই, মা, আপনি অনেক ধৈর্য ধরেছেন, অনেক কষ্ট করেছেন, আরেকটু সবর করুন। রাগের মাথায় সন্তানকে অভিশাপ দেয়া থেকে সংযত থাকুন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমীন।

#সংগৃহীত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে
images(37)
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।
img20171125_125115
শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।
img20171125_124745
একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।
img20171125_124845
বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?
img20171125_125224
প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।
img20171125_125323
যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।
প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।
img20171125_124715
এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।
img20171125_124910
এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।
img20171125_125000
টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।
এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

নাতীর সাথে পিইসি পরীক্ষা দিলেন নানী -নাজমুস সাকিব

শিক্ষার কোনো বয়স নেই, সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় নাতির সাথে অংশগ্রহণ করে একথা বাস্তবে প্রমাণ করলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগম।
এ বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন। হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্গাচাষি আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম। ওই দম্পতির চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দু’জন ভ্যানচালক ও তৃতীয় ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। ছয় বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোনো রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেকোনো মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন।
পরের দিন একমাত্র মেয়ে রহিমার তৃতীয় সন্তান জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন প্রথম শ্রেণীতে। ধাইয়ের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন স্কুলে কাস করতেন। ছয় বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতি জায়েদ ও দেবরের ছেলে মুহিবের সাথে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন।
সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন। পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম প্রতিবেদককে জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি। জন্মেছিলাম দরিদ্র পরিবারে, লেখাপড়া তো দূরের কথা ভরণ-পোষণ ঠিকভাবে দিতে পারেনি পরিবার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় আরেক দরিদ্র পরিবারে। দরিদ্র হওয়ায় সন্তানদেরও পড়াশুনা করাতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, গত ছয় বছরে সব কাস পরীক্ষায় নাতির বয়সী সব শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনেক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে।
সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এ বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেড়িয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, এটাই প্রমাণ করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই।
চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বদর উদ্দিন জানান, আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর দেখিনি।

সুত্রঃ নাজমুস সাকিব ত্রিশাল (ময়মনসিংহ), নয়াদিগন্ত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।

শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।

বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না।

বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?

প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।

প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।

এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।

টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।

এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হুদা দম্পতি

সম্পত্তি হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের অন্যতম সুন্দর উপায় হল ‘দান’। ভূ-সম্পত্তির মালিকরা তাঁদের স্নেহধন্য মানুষকে বা ভালোবাসার ব্যক্তিকে সাধারণত দিয়ে থাকেন। কিন্তু ডা.দম্পতির দানের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন কাজ করে সবার কাছে স্বরণীয় ও সম্মানিত হয়ে গেলেন।

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্বেচ্ছায় কোনো মূল্য বা বিনিময় ব্যতিরেকে ব্যক্তিকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানকে ‘দান’ করা যায়। আবার মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি নিস্বার্থভাবে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানের নামেও দেওয়াকে ‘দান’ বুঝায়। দানের ক্ষেত্রে আটটি ক্ষেত্র রয়েছে। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল বা ভবিষ্যৎ দানেরও বিধান রয়েছে। কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তা ধরা হয় ‘দান’।
FB_IMG_1511450666163
৫ তালা বাড়িটি দানের এই সিদ্ধান্ত শুধু ডা.হুদা ওনার একার নয়, সাথে রয়েছেন তার স্ত্রী ডা.রোকসানা হুদা। দুজনে মিলে “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” হস্তান্তর করেছেন।
FB_IMG_1511450649585
ডা.হুদা ও ডা.রোকসানা হুদা আজ ২৩শে নভেম্বর তাদের তেজস্তুরি বাজারের ৫ তালা বাড়ি টি “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কে দান করলেন। ডা:দম্পতির ইচ্ছানুযায়ী এই বাড়িতে একটি মেয়েদের অনাথালয় যাকে আমরা “হোম” বলি, স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দান সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-দানের প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর। স্থাবর বা অস্থাবর সব ধরনের সম্পত্তি যে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দান করা যায়।
FB_IMG_1511450655291
“আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কতৃপক্ষ তাদের এ দান যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করে নেন সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সমাজের অন্যান্য বিওবানরাও অনুসরন করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

 

একটি জাতীয় দৈনিকের মোটা দাগের শিরোনাম “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা” -ডা.কবীর জুয়েল

আমাদের বহির্বিভাগে প্রায়শঃই নিজেকে বড় মনে করা, বেশী কথা বলা, মাত্রাতিরিক্ত খোশ মেজাজী রোগীর দেখা মেলে, আজও এমন এক ম্যনীক-(অসুস্থতাজনিত ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী)রোগী এলো’, ইতিপূর্বে সে কক্ষনোই আমাদের এখানে আসে নাই কিন্তু তার শারিরীক ভাষা ও বাচন ভঙ্গীতে মনে হচ্ছে এই হাসপাতালের-ই উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা বুঝি পরিদর্শনে ঢুকলেন, সাথের মানুষগুলো ইতস্ততভাবে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন, টেবিলে একটি জাতীয় দৈনিক রয়েছে যার ‘মোটা দাগের শিরোনাম’ ছিল “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা”, রোগীটি কোন রকম সৌজন্যতার তোয়াক্কা না করে পত্রিকাটি নিয়ে পড়তে লাগলো, আমরা রোগের তীব্রতা বুঝতে সাধারণতঃ এ ধরনের রোগী-কে প্রশ্ন করে থাকি, কি করেন, কি করতে পারেন,কি হতে ইচ্ছা করে, কি হতে চান? মজার ব্যাপার হলো এরা এদের কাছেপিঠে যা আছে তা নিয়েই কল্পনাপটু হয়ে ওঠে, তাই প্রশ্ন করা মাত্রই রোগী-টি নির্বিঘ্নে উত্তর দিলো
–“আমি ঋনখেলাপী হবো; এমন মজার পেশা আর নাই, আমি হবোই।
কেন হতে চান, জিজ্ঞেস করতেই তার কথার তুড়ি ছুটতে লাগলো…
–“বড় বড় কোম্পানি খুলবো,ব্যবসাসফল ব্যক্তিত্ব হবো, দেশ বিদেশ ঘুরতে থাকবো, ক্রিকেট টিম বানাবো, আমার এলাকায় দাতব্য চিকিৎসালয়ে আপনাদের মতো দুই ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুষবো, লোকের বাহাবা পাবো, নির্বাচন করে নেতা হবো, বেশী সমালোচনা হলে ঋন অবলোপন করাবো, বার্ধক্যকালে হজ্জ করে একটি বিশাল মসজিদ তৈরী করবো,,,”
তার কথা থামছেই না, আমরাও অনেকাংশে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওর সাথে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছিলাম,
এ ধরনের ম্যনীক রোগকে Infectious Manic Episode বলা হয়।
আমার junior Colleague বললো – ওনাকে Injection দিতে হবে, অন্তঃবিভাগে ভর্তি করতে হবে, সে ওয়াড বয় ডেকে ওকে তড়িঘড়ি করে Injection দিচ্ছে, কিন্তু রোগী-টি তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে আর বলছে…
–“আমাকে কেন Injection দিচ্ছেন, আমি কি ভুল বলেছি, আমি অনেক বড় হতে চাই, অনেক অনেক বড়,,,, তাইতো ঋনখেলাপী হতে চাই —-অন্যায় কি বললাম, আমি রোগী না, আপনারাই রোগী।”
এই প্রথম আমার সত্যি নিজেকে রোগী মনে হলো,মনে হলো চিকিৎসক, সেবিকা,ওয়াড বয়কে বলি, ওকে Injection দিয়োনা,ও-তো সত্য বলেছে,পারলে Injection গুলো তাদের দাও যারা কক্ষনো সত্য বলেনা, যারা পরের টাকায় পোদ্দারি করতে করতে পগার পার হয়ে যায়, কক্ষনো ধরা পড়েনা, ধরা পড়লেও জামাই আদরে থেকে দ্রুততম সময়ে জামিন নিয়ে নেয়, কিন্তু জামিনের শর্ত পালন করেনা, পুনরায় ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করে,,,,,, কিন্তু মুখে থাকে জনদরদ, কক্ষনোই ঋনখেলাপি হওয়ার প্রকৃত কারন মেনে নেয়না, মিথ্যাচারণ করে সব ঢেকে দেয়।

 

‘স্বার্থলোভী মানুষের দল’ -জিনাত তাসনিম

অগোচরে অন্তরালের রক্ত ক্ষর বুঝিবা
অমাবশ্যার মধ্যরাতে নিস্তব্দ কোন বাড়ির কলঘরে
জল গড়িয়ে যায়

টপ টপ টপ…

সব শূণ্যতার ধোয়ায় দম আটকে যায়
সময়,বিশ্বাসের বেলীতলে শীতের শুস্কতায় ভাসে,
আজকাল স্বপ্নের অনাগোনা নাই
দুঃস্বপ্নের দল মশকের মতন করে গুনগুন।

পদ্মের জল দেখিনা
সাগরের জলেও ভাসিনা
কেবল কুয়াশা মাখা ভোরে
কাকের শব্দ শুনে জেগে উঠি
স্বার্থলোভী মানুষের দল।

 

পিতামাতা ও সন্তানের সম্পর্ক শক্তিশালী করার ১০টি উপায়

সন্তানকে রোজ জড়িয়ে রাখুন বুঝতে দিন আপনার লক্ষ্য তার সাথে থাকা[Aim for 12 hugs (or physical connections) every day]সন্তানকে অত্যন্ত ভালবাসেন তা যেন আপনার প্রতিটি স্পর্শে অনুভূত হয়। সন্তানের বয়স যাই হোক এমনি সম্পর্কের অবনতি কোন ক্রমে তবুও সন্তানকে ভালবাসা বুঝতে দিন। হাতটি আলত করে ধরুণ বলুন আপনি তার সাথেই আছেন।
img20171121_152510
সন্তানদের সাথে খেলুন(Play)
একসঙ্গে খেলাধুলা করুন যে কোন খেলা হতে পারে দৌড়াদৌড়ি বা ওদের পছন্দমত কোন খেলা। খেলছেন এটা বড় কথা। আনন্দমুখর পরিবেশ বজায় রাখুন।
img20171121_152544
সন্তানকে সময় দেবার সময় সকল প্রযুক্তি বন্ধ রাখুন(Turn off technology when you interact)
যতটুকু সময় থাকুন না কেন সন্তানের সাথে মোবাইল, লেপটপ, কম্পিউটার যে কোন ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
img20171121_152643
বন্ধনকে মজবুত করুন সন্তানের ভুল সংশোধন করার আগে(Connect before transitions)
ভুল সংশোধনের সময় সন্তানের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন। যদি সন্তানদের কোন বিষয় আপনার অপছন্দ হয় তবে তাদের বুঝিয়ে বলার আগে তাদের সাথে একান্তভাবে বসুন মত বদলানোর চেষ্টায় আগে বন্ধনকে মজবুত করুন । জোর করবেন না।
img20171121_152430
প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্বাচন করুন( Make time for one-on-one time)
প্রতিটি কাজের জন্য থাকে মৌলিক কিছু সময়। প্রতিটি সন্তানের সুন্দর জীবন অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে চাইলে প্রতিটি সময়কেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করুন। সন্তানদের সমস্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওয়ান টু ওয়ান শেয়ারিং খুব প্রয়োজন।
img20171121_162922
সন্তানকে ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্যায়ন করুন(Welcome emotion)
সন্তানকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে সন্তানদের প্রতিটি আবেগ বুঝা, গুরুত্ব দেওয়া এবং ক্লান্তি বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় সন্তানের চাহিদা ও বিশ্বাসের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
img20171121_163127
কথাগুল মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং উপলব্ধি করুন(Listen, and Empathize)
প্রতি দিন অন্তত ১০ বা ১৫ মিনিট সময় সন্তানকে দিন এবং ঐ সময় সন্তানদের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের আনন্দ, বেদনা অনুভূতিগুল ঠিক বাচ্চাসুলভ ভাবেই বুঝার চেষ্টা করুন।
img20171121_201157
ধীরে ধীরে বন্ধনের গভীরে ঢুকে পড়ুন যাতে চারপাশটি প্রশান্তিময় হয়(Slow down and savor the moment)
সন্তানরা সব সময় বুঝতে পারে কখন আপনি তাদের প্রতি যথেষ্ট মনযোগী। আপনার গভীর মনোযোগ ধীরে ধীরে মজবুত বন্ধনের দিকে এগিয়ে যাবে আর বাবা-মার সাথে প্রতিটি মুহুর্ত্বই সন্তানরা উপলব্ধি করবে আনন্দ অনুভূতির সাথে।
img20171121_201240
ঘুমতে যাওয়ার সময় গল্পের রাজ্যের মজাদার আবেশে জড়িয়ে ফেলুন(Bedtime snuggle and chat)
সন্তানকে রোজ ঘুমানোর সময় তাদের সাথে শিক্ষণীয় আর মজার মজার গল্প করুন যাতে আবেশে তাদের চোখ বুঁজে আসে।
img20171121_211354
সন্তানের সাথে উপস্থিত থাকুন বুঝতে দিন(Show up)
দৈনন্দিন কাজে সন্তানদের সাহায্য নিন পাশাপাশি তাদের কাজে আপনিও সাহায্য করুন এবং তারা যেন বুঝতে পারে যে, তাদের বাবা-মা তাদের সাহায্য, মতামতকে বেশ গুরুত্ব দেন।
img20171121_201353

 

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’- ডা.কবীর জুয়েল

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস-২০১৭।
received_1774602615884743
১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস প্রবর্তন করে বিশ্বের লাখো শিশুর মাঝে একাত্মবোধ, জাগ্রতবোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। লাখো শিশুর অব্যক্ত কথাগুলো শোনার জন্য। কিন্তু আমরা কি শুনতে পাই আমাদের শিশুদের না বলা কথাগুলো? তাদের মনের মাঝে বয়ে চলা কত শত অভিব্যক্তি, কষ্ট, ভয়, একাকীত্ব, প্রশ্নের ঝড়?

আমাদের শিশুদের সাহায্য করার জন্য, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের মাঝে যে মনরোগের লক্ষণসমূহ দেখা যায় তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করছি—–
>> অটিজম বা ভাবের আদান-প্রদানে সমস্যা
>> অতি চঞ্চলতা ও মনোযোগহীনতা
>> অতিরিক্ত রাগ, জিদ, ভাংচুর করা
>> তোতলামী ও পঠনে সমস্যা
>> লিখাপড়ায় অনীহা বা অমনোযোগহীনতা
>> স্কুল পালানো, স্কুলভীতি
>> লিখাপড়ায় ক্রমাবনতি
>> স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা
>> নিরীহ মানুষ, পশু-পাখির সাথে রুঢ় আচরণ করা
>> অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা বলা
>> ক্রমাগত হুমকি প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করা
>> আগুন লাগিয়ে আনন্দ করা
>> বিছানায় প্রস্রাব করা
>> আত্মঘাত বা নিজেই নিজেকে আঘাত ও কষ্ট দেওয়া।

আপনার শিশুর মাঝে যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো হতে একাধিক লক্ষণ দেখতে পান, তবে দেরী না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। উপযোগী কাউন্সিলিং এবং অল্প কিছু ঔষধ আপনার শিশুকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে উদ্ধার করতে পারে। মনোরোগ অন্য সব রোগের মতো একটি রোগ যা সময়মতো চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। লোকলজ্জা, ভয়, সামাজিক গোঁড়ামি বা অজ্ঞতায় থেকে নিজের সন্তানের বিপদ বৃদ্ধি করবেন না। প্রতিটি শিশুর জীবন হোক সুন্দর, নিরাপদ ও আনন্দদায়ক, এই প্রত্যাশা আজকের বিশ্ব শিশু দিবসে।
received_1774602985884706

 

ঘরের সৌন্দর্য (ছোট্টশিশুর ঘর)

ছোট্ট শিশুর ঘর সাজাতে গেলে আপনাকে একটু ভাবতে হবে কারণ একটি শিশু আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রুচি বা পছন্দ একরকম নাও হতে পারে। শিশুর ঘর সাজানোর সময় মনে রাখতে হবে ঘরটা কোন বয়সী শিশুর জন্য সাজানো হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত শিশুর নিজস্ব মতামত আছে কিনা। শিশুটি হাসিখুশি থাকলে আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে তাই শিশুর মত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর সাজানো-গুছানো ঘর শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুর ঘরটি আকর্ষণীয় হতে হলে সর্বপ্রথম রং এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
img20171120_095041
ঘরের রঙ(The color of the house)
উজ্জ্বল রঙের প্রতি শিশদের ঝোঁক থাকে যেমন গোলাপি, বেগুনী, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট্ট শিশুর মতামতের উপর কখন কখন গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখুন সেই রঙের ছোয়া যেন জিনিসপত্রেও থাকে।
img20171120_095349
দেয়ালের সাজ(Wall decoration)
ঘরের রঙের সাথে মিল রেখে দেয়ালকে সাজিয়ে তুলতে হবে। বয়স অনুযায়ী শিশুর পছন্দের কার্টুন, ফুল, পেইন্টিং দিয়ে ফুটিয়ে তুলা যায় ঘরের দেয়ালটি। নানান নকশা আর রঙের ওয়াল পেপার শিশুদের ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
img20171120_190308
ঘরের পর্দা নির্ধারণ(Define the screen of the house)
গাঢ় রং এর দেয়ালের সাথে মিলিয়ে হাল্কা রঙ ব্যবহার করতে পারেন। সুতি বা কটন কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করা যেতে পারে।
img20171120_095148
আলো-বাতাস(Light-air)
বাচ্চাদের ঘরে জোড়ালো আলো হলেই ভালো হয়, কারন কম আলোয় ওদের পড়াশোনা করতে অসুবিধে হবে৷
img20171120_095623
শিশুর ঘরের আসবাবপত্র(Baby furniture)
সাধারণত আসবাব পত্রের রঙ উজ্জ্বল হওয়া দরকার। আসবাবপত্রের সাইজ আর রং যেন শিশুর পছন্দসই হয় নজর রাখুন।
img20171120_095738
বিছানাপত্র(Bedding)
চাদর যেন আরামদায়ক হয়। রঙের ক্ষেত্রে রঙ যেমন লালসে বর্ণের, হাল্কা সবুজ, গোলাপি, নীল রঙ যাতে বাচ্চারা ময়লা করলে সহজে বোঝা না যায়। খুব গাঢ় রঙের চাদর পরিহার করায় ভাল।
img20171120_184427
মেঝের উপর খেলা(Play on the floor)
শিশুর ঘরের মেঝের এক পাশে খেলার জিনিসপত্র দিয়ে আপনি সাজিয়ে দিতে পারেন। একটি সুন্দর রঙের মাদুর বা কার্পেট বিছিয়ে রাখা যেতে পারে যাতে বাচ্চারা সেটার ওপর বসে খেলে।
img20171120_184307
গাছ ঘর(Plant the trees)
শিশুর ঘরের ভেতর জানালা বা দেয়ালে অর্কিড বা আকর্ষণীয় কিছু গাছ লাগান। শিশুটির ঘরটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠবে।
img20171120_190336
পড়াশুনার রাজ্য(State of Education)
দেওয়ালে বই রাখার ব্যবস্থা করে যেতে পারে তাছাড়া বিছানার পাশে টেবিল রাখতে পারেন৷ খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা যেন নাগালের মধ্যে পায়৷

 

“মুঠোফোনে পর্ণগ্রাফী” ১৪ বছরের কিশোর দ্বারা ৭ বছরের শিশু ফারজানা ধর্ষণের পর হত্যা

১৭ সেপ্টেম্বর চাচা রহমত আলীর বাড়ির পেছনে পাওয়া যায় ফারজানার হাত-পা বাঁধা লাশ। ফারজানার বাবা ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিরাজনগর এলাকায় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয় তার মেয়ে ফারজানা আক্তার (৭)। নিহত শিশু ফারজানের বাবা কবির হোসেনের (৩৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
কবিরের সঙ্গে চাচা রহমত ও তাঁর সন্তানদের অনেক দিনের জমি নিয়ে বিরোধ। তাঁরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফারজানাকে হত্যার অভিযোগ এনে চাচাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কবির (৩৫)। সেখানে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন, এঁরাই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। পরে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ চাচাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
হত্যার এজাহারভুক্ত আসামিদের অস্বীকারের মুখে ১৫ দিন পর মামলার তদন্তভার আসে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে। ডিবির কাছেও কবির একই অভিযোগ করেন। কিন্তু নিবিড় তদন্তে জেলা ডিবির এসআই মো. মনিরুজ্জামান দেখেন, ফারজানাকে খুন করেছেন অন্য আরেকজন। সেই খুনি? তাঁর পরিচয় কি?
তার তদারক কর্মকর্তা হলেন জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) দীপক কুমার সাহা।
দীপক কুমার বলেন, ফারজানাকে খুনের অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও তারা যখন অস্বীকার করে আসছিলেন, তখন তারা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ফারজানার লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্থান টানা তিন দিন পরিদর্শন করেন। ফারজানার বাবা কবিরের কাছ থেকে জানতে পারেন, মুক্তিপণের জন্য ৫ লাখ টাকা চেয়েছিল কথিত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। টুকে নেন সেই মুঠোফোন নম্বর। বের করেন মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর)। দেখা যায়, কথিত অপহরণকারীরা কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ফোন করেছেন।
কবিরের দেওয়া তথ্যমতে, কে বা কারা মুক্তিপণের টাকা চেয়েছিল কবিরের কাছে, এর রহস্য খুঁজতে শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার। কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেই মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হয়ে আবার কবিরের বাড়িতে আসেন তারা।
পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দেখেন, কবিরের অন্য এক চাচার ছেলে বাড়িতে নেই।
দীপক কুমার বলেন, ‘কিশোর ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল তাকে ঘিরে? যে ছেলে সব সময় বাড়িতে থাকে, সে কেন হঠাৎ বাড়ি ছাড়া হলো? কৌশলে তাকে আমরা নজরদারি করতে থাকি। তার গতিবিধি অনুসরণ করা হয়। তার বন্ধুবান্ধব কারা, এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকি। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও চালাক। সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু তার আচরণের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সারাক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকত।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ফারজানা মারা যাওয়ায় একা একা ঘরে থাকতে তার ভয় লাগে। এ জন্য সে সেখানে থাকে না।
কবির এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে একই কথা বলেন কিশোরের মা। আরো জানা যায়, ওই কিশোর পিইসি ও জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে সেখানকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগের এই কিশোর এলাকায় মেধাবী ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া এই কিশোর ফারজানাকে খুব আদর করত। ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই কিশোর তাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। সবার সামনে অনেক কান্নাকাটিও করেছে। মারা যাওয়ার পর বাড়িতেও সে ছিল।
৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার করার পর ওই কিশোর ফারজানাকে খুন করার কথা অস্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, ফারজানাকে সে মেরে ফেলতে চায়নি, অসাবধানতায় মারা গেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বললেন, ‘যখন কিশোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তখনো হাতে পৌঁছায়নি। যখন হাতে আসে, তখন দেখি, সাত বছরের ফারজানাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে। ওই কিশোর তার জবানবন্দিতে ধর্ষণ করার কথা অস্বীকার করেছে।’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারজানাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। যৌনাঙ্গে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।’
ফারজানা খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর এখন সংশোধন কেন্দ্রে আছে। তার বাবা মারা যান বিদেশে। দাদা আর মাকে নিয়ে সে থাকত। ফারজানার বাবা কবির এই কিশোরের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। দেখা হলে সে সালাম দিত। তার সঙ্গে বা তার পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। ভালো ছাত্র হিসেবে তাকে স্নেহ করতেন। ওই কিশোর কেরানীগঞ্জের যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বললেন, ওই কিশোর আগে এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়ত। সেখান থেকে খুব ভালো ফলাফল করে। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ না থাকার কারণে তার দাদা তাকে তার স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ছেলেটি গত কয়েক মাসে স্কুলে আসেনি। দেয়নি কোনো পরীক্ষা। আর নিহত ফারজানার বাবা কবির দেখেছেন, প্রায় সময় কিশোরের হাতে মুঠোফোন থাকত। কার সঙ্গে যেন কথা বলত। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। তার মুঠোফোনটি বেশ দামি ছিল।
দীপক কুমার বলেন, কিশোর তাদের বলেছে যে মুঠোফোনটি সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ফারজানাকে হত্যার অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। গ্রেপ্তার করা আসামিরা এখন জামিনে আছেন।
দীপক কুমারের ধারণা, কিশোরটি মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত এমন কিছু দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আর আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে থাকতে পারে।
ফারজানার কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদেন বাবা কবির। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে খুন করেছে, তার ফাঁসি চাই। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি চাই না।’

সমাজের অধঃপতনের চিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোরটি হাতে মুঠোফোন। যার মাধ্যমে নিয়মিত পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ। ধর্ষণের অপরাধ ধামাচাপা দিতেই হত্যা করা হয় শিশুটিকে।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা।

আমার বাচ্চা খায় না! -ডা. মারুফ রায়হান খান

আমার-আপনার পরিচিত যতো মানুষ আছে সম্ভবত তাদের অধিকাংশের বাচ্চাই খায় না! ডাক্তার হোন বা না হোন এই অভিযোগ শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা বেদম কম।

আমি একটু কঠিন সত্যি কথা বলে ফেলি। আসলে শিশু তার প্রয়োজনমতোই খায়–ঝামেলা যা করে থাকেন তা করেন অতি সেন্সিটিভ মায়েরা! মা প্রথম দিকে মনে করেন তার বাবুটি বুঝি পেট ভরে খেলো না; তাই তিনি জোর করে আরও খাওয়াতে চেষ্টা করেন। এতে হয় কী বাবুটা মনে করে খাওয়া-দাওয়া ব্যাপারটা তার কাজ না, বরং এটা তার আম্মুর কাজ। তো আমি কেন খাব! ফলে ও খেতে চায় না।

মনোবিজ্ঞানী এম ই ল্যাম্ব একবার একটা মজার পরীক্ষা করলেন। তিনি একটা ঘরে বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্যে প্রয়োজনীয় খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণ না খাইয়ে রেখে বাচ্চাগুলোকে ঐ ঘরে ছেড়ে দিলেন। দেখা গেলো, যে বয়সী বাচ্চার যে ধরনের খাবার প্রয়োজন তা তারা খুঁজে খেতে থাকলো। অর্থাৎ শিশুরা তাদের চাহিদা ও পছন্দমাফিক খাবার নিজ থেকেই খায়।

আরেকটা ব্যাপার আছে। শিশুটির খাওয়া নিয়ে যে মা দুশ্চিন্তা করেন এটি তারা বুঝে ফেলে। ফলে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে শিশুটি এমন করতে পারে। যদি সে বলে ‘খাব না’–তাহলে মা তার সাথে অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করবে। মা-কে কাছে রাখার একটা ট্রিক হতে পারে এটা!

তো চিকিৎসা কী!

মায়ের জন্যে কষ্টসাধ্য হলেও শিশু খেতে না চাইলে কিছুক্ষণ না খাইয়ে রাখা উচিত। ক্ষুধা লাগলে বাচ্চা শেষ পর্যন্ত খাবেই।

আরেকটা ব্যাপার। বাচ্চা খেলে তাকে এমনভাবে পুরস্কৃত করা শুরু করবেন না যেন সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল নিয়ে এসেছে! যদি একটু খাওয়াতেই তাকে এটা-সেটা গিফট দিয়ে ভরে ফেলেন, আখেরে কিন্তু বিপদে পড়তে যাচ্ছেন এই বলে দিলুম কিন্তু!

ও হ্যাঁ, আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। শিশুর মা-বাবার মাঝে যদি প্রকাশ্য ঝুটঝামেলা চলতে থাকে, তাহলে কিন্তু বাচ্চার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে–এ কারণেও ক্ষুধাহীনতা প্রকাশ করতে পারে। নিজেদের ঝামেলা দূর করুন, বাচ্চাকে নির্বিঘ্নে খেতে দিন!

 

সুখের মুহুর্তগুলো(ইটালি সফরের) -আফরোজা হাসান

img20171117_231842
ভিক্সিনের একটি পার্ক 
জীবনটা যে কতো সুন্দর সেটা নাকি ফেলে আসার পরই বোঝে মানুষ। আমিও অবশ্য এমনটাই মনেকরি। তাই তো জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনার স্মৃতি আমার কাছে খুব বেশি মূল্যবান। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, আনন্দ-বেদনা এবং পাওয়া-না পাওয়ায় ভরা আমাদের জীবন…জীবনের প্রতিটা দিন…প্রতিটা ক্ষণ। জীবন থেকে না পাওয়া, অপুর্নতা, কষ্ট এসব কিছুই কাম্য নয় আমাদের কারোই। কিন্তু যেহেতু এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই সেগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে, মুছে ফেলার চিন্তা না করে কিভাবে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া যায় এবং সেই শিক্ষার দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসমূহ থেকে দূরে থাকা যায় এমন চেষ্টাই থাকে আমার। আরেকটা চেষ্টা থাকে আমার সেটা হচ্ছে আনন্দময় মুহুর্তগুলো নাগালের মধ্যে রেখে একই আনন্দ বার বার উপভোগ করে জীবন ভাণ্ডারে আনন্দের মাত্রা বাড়ানো। ইটালি সফরও আমার জীবন ভাণ্ডারে এনে দিয়েছে অমূল্য কিছু স্মৃতি নামক রত্ন। 
নাকিব বড় হবার পর ওকে নিয়ে এই প্রথম ট্রেন জার্নি ও প্লেন জার্নি করলাম। ইমগ্রেশন, চেকিং কোন জায়গাতে নাকিবের পাসপোর্ট শো করা লাগছিলো না যেহেতু সে জন্মসূত্রে ইউরোপিয়ান কিন্তু আমাদেরটা শো করতে হচ্ছিলো। বাচ্চাদের সতর্ক ও কৌতূহলী দৃষ্টি ও মন সেটা এড়াতে পারলো না। কেন তার পাসপোর্ট কোথাও দেখাচ্ছে না জানতে চাইলো বাবার কাছে। আমরা এশিয়ান আর ও ইউরোপিয়ান জানার পর তো শুরু করলো প্রশ্নের বাণ ছোড়া। আমার আর ওর বাবার জন্ম, বিয়ে, স্পেন আসা পুরো ইতিহাস জেনে তবেই শান্ত হলো। জবাব দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন হাসান। উনার সেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়েও হাসি মুখে ছেলের ননস্টপ প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাওয়ার মুহুর্তটা মনে পড়লে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। 
img20171117_231150
প্লেনের জানালার কাছে বসে বাইরে মেঘ থেকে মোটে চোখই সরাচ্ছিলো না নাকিব। খুবই সিরিয়াস মুড। চোখে সতর্ক দৃষ্টি। কারণ কি জানতে চাইলে বলল, যে কোন সময় মেঘদের মধ্যে এঞ্জেল দেখা যেতে পারে সেটা সে মিস করতে চায় না। একঘণ্টা পর ক্লান্ত হয়ে বলল, বাবা এঞ্জেল কখন আসবে? বাবা বুঝিয়ে বলার পর তো এঞ্জেল দেখতে পারবে না জেনে প্রচণ্ড আশাহত হয়ে বিরাট বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ নাকিব। ইশশ…এখনো ভাবতে মজা লাগে সেই মুহুর্তটা। 
স্কাইপে আফনান-সারা ওদের সাথে নিয়মিত দেখা হলেও সামনাসামনি প্রথম দেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। সাদিয়া আপুকে দেখার পর ভালোবাসাময় সেই আলিঙ্গন। একদিন ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়ে রেখে আমি আর আপু বেড়িয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। সেই দিনটার কথা খুব মনেপড়ে। সারাপথ দুজন ননস্টপ বকবক করেছি। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা এমন একটা মুহুর্ত ছিল কিন্তু মনে মনেও না আবার একা একাও না। সাথে ছিল সাথী হয়ে মনের মতো বোন…বান্ধবী। আলহামদুলিল্লাহ্‌…
img20171117_231308
এই পথ ধরেই হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম
img20171117_231354
ভিক্সিন গিয়ে একদিন বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে গল্প করতে করতে নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে এতো দূর চলে গিয়েছিলাম যে ফেরার পথে আর পা চলছিলো না কারো। পাহাড়ি এলাকা উঁচু-নীচু, আঁকা-বাঁকা পথ কিন্তু যখন হাঁটছিলাম তখন টেরই পাইনি। হাসান বললেন, পাশে যখন নির্ভরযোগ্য সাথী থাকে তখন পথ যতই এবড়ো থেবড়ো হোক না কেন মানুষ নিশ্চিন্তে আর নির্ভিঘ্নে পথ পারি দিতে পারে। কি প্রমাণ পেলে তো আমি যে তোমার নির্ভরযোগ্য সাথী? উনার হাসি আর দুষ্টুমিতে ভরা এই বাক্যটিও অনেক বড় প্রাপ্তি আমার জন্য। 
img20171117_231442
ট্রেন থেকে তোলা পাহাড়ের ছবি 
পুরো ইউরোপ জুড়েই বইছে মন্দা হাওয়া। বাঙ্গালী ভাইয়েরা নানান ধরনের জটিলতা ফেস করছেন। ট্রেন ষ্টেশনে পরিচয় হলো এমন একজনের সাথে। বললেন উনার কষ্টের কথা, অভিমান ঝরে পড়লো ভাগ্যর উপর। যদি সামর্থ্যে কুলায় পৃথিবীর সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আমরা। তবে সেটা যে শুধু জাগতিক হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। একটু পাশে থেকে, দুঃসময়ে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে, মনের কোনে জমে থাকা অভিমানের মেঘকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেতে, উৎসাহমূলক কয়েকটা বাক্য দিয়েও মানুষকে সাহায্য করা যায়। ট্রেনে উঠার সময় সেই ভাইয়ের প্রশান্ত চেহারাটা দেখে আবারো এটা অনুভব করেছিলাম। 
img20171117_231544
পাহাড় 
সফরের কোন এক বাসার পরিবেশ ঢুকেই অনুকূল মনেহয়নি আমার কাছে। সম্পুর্ন ভিন্ন লাইফ স্টাইল আমাদের থেকে। হাসান বললেন, তুমি তো সারাক্ষণ সবাইকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার পরামর্শ দাও। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর অর্থ হচ্ছে, ভালোটা খুঁজে বের করা। কল্যাণটা যে করে হোক উপলব্ধি করা। মনে নেই রাসুল (সঃ) কি বলেছেন, “কারো কোন একটা খারাপ দিকের কারণে তাকে সাথে সাথে অপছন্দ করো না। তার অপর কোন একটা ভালো দিক থাকতেও পারে যার জন্য তুমি তাকে পছন্দ করতেও পারো।” সত্যিই উনাদের আতিথিয়তা আর আন্তরিকতা মুগ্ধ করেছে আমাকে। 
img20171117_231604
পাহাড়ি নদী
কাস্তেল ফ্রাঙ্কোতে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি সবজী বাগান। একদিন বেড়িয়ে ছিলাম আইসক্রিম খেতে। তিনজন মিলে আইসক্রিম হাতে গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সেই স্মৃতিটা খুব নাড়া দেয় মনকে। পুরো সফরে ছেলে আর ছেলের বাবাকে এনজয় করতে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিমাসে একবার করে বের হবো উনাদের সাথে ঘুরতে। আশেপাশের গ্রামগুলোকে ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যাওয়া যায়। নিজের ঘরকুনো স্বভাবের কারণে স্বামী-সন্তানকে যে অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছি সেই জিনিসটা খুব ভালো মতো উপলব্ধি করেছি। 
img20171117_231643
বলোনিয়ার মাছের পার্ক
জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোর হিসাব এতো বেশি করি আমরা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখগুলো দেখেও যেন দেখি না। অথচ ইচ্ছে করলেই জীবন থেকে খুঁজে নেয়া যায় আনন্দময় মুহুর্ত। আর যদি একটু নীচে তাকানো যায়। আমরা তো সুখী শুধুমাত্র আল্লাহ যে অবস্থানটা দিয়েছেন সেটার কারণে। কোন কারণে যদি অবস্থানটা বদলে যেতো তাহলে এতটা সুখী নাও হতে পারতাম। নিজেকে নিয়ে সুখী হবার জন্য মনেহয় এই উপলব্ধিটুকুই যথেষ্ট। 
(ছবি সংগৃহীত)

 

“বই কাব্য” -আফরোজা হাসান

“ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।” কথাটা কে বলেছেন মনে করতে পারছি না! কিন্তু বই বিশেষ করে জীবনী পড়ার সময় আমার সত্যিই মনে হয় যেন কথা বলছি সেই বইয়ের লেখকের সাথে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনিষীদের
চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-কল্পনার মাঝে অবগাহন করে তুলে নিতে চেষ্টা করি মূল্যবান সব মোতি।
img20171117_134600
ছোটবেলায় ভাইয়ার কাছ থেকে জেনেছিলাম, পৃথিবীর শুরু থেকে যুগে যুগে কত শত জ্ঞানী-গুণীরা এসেছেন। আমাদের মতো তারাও কাটিয়েছেন নানারঙের দিন, তাদেরও ছিল জীবনকে ঘিরে আনন্দ-বেদনার কাব্য। তাদের সবার সান্নিধ্য পাওয়া তো সম্ভব নয়। তবে তাদের সেই সব মূল্যবান অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানতে পারি তাদের লিখে যাওয়া বইয়ের মাধ্যমে।
img20171117_134333
আসলেই বই এক অদ্ভুত মিরাকল। বইয়ের আছে পাখীর মত ডানা। আমাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে যেখানে যেতে চাই সেখানেই। বইতে সওয়ার হয়ে আমরা ঘুরে বেড়াতে পারি পৃথিবীর আনাচে, কানাচে, গহীন আমাজন জঙ্গলে, গভীর সমুদ্রে, বহু আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্রহে, চন্দ্রে এমনকি ব্ল্যাকহোলের ভেতরেও।
img20171117_134455
এমন মানুষ যারা কোনদিনও নিজ দেশের বাইরে যেতে পারবে না তারাও বইয়ের আয়নাতে চোখ রেখে দেখতে পারে পৃথিবীর সুউচ্চ শৃঙ্গ হিমালয়, পিরামিড, নীলনদ, মরুভূমির সেই পথ। সেই গুহা যা এক সময় আলোকিত ছিল আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) এর স্পর্শ আলোতে। যেখানে রচিত হয়েছিল মুসলিমদের প্রথম বিজয়ের উপাখ্যান।
img20171117_134427
স্পেনের সেই উপকূল যেখানে ইউরোপের ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান গেয়েছিলেন তারিক বিন যিয়াদ। মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির শৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডোমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে পাঠানো সেই বার্তা “সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্যবীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।” ইতিহাস কি? ইতিহাস হচ্ছে যে কোন জাতির দর্পন। যে দর্পনের আলোতে জাতি আত্মপরিচয়ের সৌভাগ্য লাভ করে, এবং পায় চলার পথের সন্ধান, প্রেরণা, দিক নির্দেশনা। বইয়ের কল্যাণে আমরা জানতে পারি আমাদের সেই অতীত ইতিহাস। যেই ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়ানো রয়েছে আগামীর জন্য শত সহস্র শিক্ষা।
img20171117_134648
মুসলিম বিশ্বের বিপর্যয়ের কারণ সমূহ পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম যে, এই বিপর্যয়ের মূলে বড় তিনটি কারণ হচ্ছে আদর্শ বিমুখতা, বিজ্ঞান বিমুখতা ও ইতিহাস বিমুখতা। আর মুসলিমদের আদর্শ চেতনা ততদিন পর্যন্ত ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠতে পারবে না, যতদিন পর্যন্ত না তাদের মধ্যে গভীর ইতিহাস চেতনা সঞ্চারিত হয়। কেননা ইতিহাস জানা না থাকলে মুসলিমরা তাদের প্রকৃত শত্রু-মিত্রকে চিনতে পারবে না! জানতে পারবে না ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কত ছদ্মবেশে, কত কৌশলে, কত রঙে, কত রূপে শত্রুরা মুসলিম জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে, ধোঁকা দিয়েছে, বিপর্যস্ত করেছে। আমাদেরকে তাই আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। পড়তে হবে বেশি বেশি বই……………।

 

নিজেদের বাচ্চাদের ফার্মের মুরগী বানাবেন না -ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা

ফাইয়াজ হবার পর প্রথম প্রথম আমার সবকিছুতে খুব বেশি চিন্তা হত। ঠিক মত ফাইয়াজের কাথা পরিষ্কার হল কিনা,বার বার নিজের হাত সাবান দিয়ে ধুতাম যেন আমার থেকে ফাইয়াজের ইনফেকশান না হয়। এমনকি বাইরে থেকে কেউ আসলেও তাদের সহজে ফাইয়াজকে কোলে নিতে দিতাম না। তাদের হেক্সিসল দিয়ে হাত এন্টিসেপটিক করে নিয়ে ফাইয়াজ কে আদর করতে দিতাম।
প্রথম মা বলে সবকিছুতে অতিরিক্ত চিন্তা। এমনকি ফাইয়াজের স্বাভাবিক সর্দি,কাশিতেও আমার চিন্তায় ঘুম আসতনা। সাথে সাথে স্টেথো দিয়ে ওর ফুসফুস চেক করতাম, শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি মাপতাম, হার্ট বিট দেখতাম। যখন দেখতাম সবকিছুই নরমাল রেইঞ্জের মধ্যে তখন একটু স্বস্তিতে থাকতাম।
দুইদিন পরপরই বেড শিট চেইঞ্জ করতাম, স্যাভলন দিয়ে সবকিছু ওয়াশ করতে দিতাম। আর কেউ যদি আমার সামনে ফাইয়াজ কে চট করে হাত না ধুয়ে আদর করত সাথে সাথে বিভিন্ন ছুতায় ফাইয়াজকে নিজের কাছে নিয়ে নিতাম।
একদিন দেখি ফাইয়াজের হাতে মশার কামড়ে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। সেটা দেখেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। অজানা আশংকায় রোগ পূর্ববর্তি ইনকিউবেশান পিরিয়ড কাউন্ট করতে লাগলাম,যখন দেখলাম দশ-বার দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু ফাইয়াজের কিছুই হয়নি তখন মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলতাম।
এরকম মোটামুটি দুই থেকে আড়াই মাস পর আমার অতিরিক্ত সচেতনতা কিছুটা কমল।
ছয় মাসের সময় থেকে যখন ওকে বাইরের খাবার দেয়া শুরু করলাম তখন ওর পেট খারাপ হল একবার, প্রচুর পাতলা পায়খানা।সাথে বমি। হাসপাতালে ডিউটি সত্বেও যেতাম না, ফোনে সি.এর কাছে ছুটি চেয়ে নিতাম।ভাবতাম ফাইয়াজের প্রতি কেউ খেয়াল করছেনা তাই নিজেই সারাদিন ফাইয়াজের টেইক কেয়ার করতাম।
ফাইয়াজের ফিডার দিনে চৌদ্দবার গরম পানিতে ফুটাতাম। আমার অবস্থা তখন এমন ছিল পারলে সব কিছু অটোক্লেভ করতাম।
এরপর যখন পেডিয়াট্রিকসে ডিউটি পড়ল তখন হাসপাতালে বাচ্চাদের অবস্থা দেখে রীতিমত শিউরে উঠতাম। সরকারি হাসপাতাল। খুব গরীব গরীব রোগীদের আবাস।
একটা ছয় মাসের বাচ্চার নিউমোনিয়া,সাথে মায়ের কোলে দেড় বছরের বাচ্চা। সেই মা একইসাথে দুইটারেই সামলাচ্ছে। রোগ জীবানুর মধ্যেই বাচ্চাগুলা থাকছে। ঠিকমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন হচ্ছেনা। যে হাতে মা একজনের ভেজা কাথা ধরছে, আবার সেই একই হাত দিয়ে অন্যজনকে দুধ খাওয়াচ্ছে।
এরকম দৃশ্য দেখে সি.এ কে বলতাম, ভাইয়া এসবের মধ্যে বাচ্চারা কেমন করে চিকিৎসা পায়? ভাইয়া হেসে বলত, এসব বাচ্চাদেরই ইমিউনিটি বেশি। ওরা এখনের ধকল গুলা সামলালেই পরে একেবারে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
ততদিনে নিজের বাচ্চার প্রতি আমার আদিখ্যেতা কিছুটা হলেও কমেছে। আর এখন তো পুরাই ছেড়ে দিয়েছি।
আমার আম্মা সবসময় বলে যে বাচ্চাদের ছেড়ে দিলে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। এখন বুঝি সেটার মর্ম।
যদিও আগেই জানতাম, কিন্তু ইদানিং ব্যাপারটা খুব লিটারেলি পালন করছি।
হাইজিন হাইপোথিসিস বলে, যেসব বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে জীবানুর সাথে যুদ্ধ করে বড় হয় তাদের অটোইমিউন রোগ,ক্যান্সার এসব হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
এখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম,রোগ বালাই নিয়ে যত পড়াশুনা করি তত ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়।
আমাদের বাসায় ফাইয়াজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল ঘরের চিপা চাপা জায়গা গুলা। দরজার পিছনে, খাটের নিচে, টেবিলের তলে।সেদিন দেখলাম ওর পুরা জামা তে ধুলা বালি, ঝুল ময়লা লেগে আছে, আর সে সেগুলা চেটে চেটে খাচ্ছে। এমনকি জানালার গ্রিল ধরেও সে জিহবা দিয়ে চাটতে থাকে। এসব দেখে এখন আর ভয় পাইনা। খুব স্বাভাবিক ভাবে জামা কাপড় চেইঞ্জ করে, হাত পা সাবান দিয়ে ধুয়ে আবার খেলার জন্য ছেড়ে দেই। সে আবার পূর্ণ উদ্যমে ধুলা বালির সাথে খেলায় মেতে উঠে।
সাদিয়া আপুর ওয়ালে দেখলাম যায়নাব কে কাদার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে, আর সে ইচ্ছা মত কাদাতে লাফালাফি করছে। অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে আপু যে তাকে এত ইউনিক ভাবে ইমিউন সিস্টেম ম্যাচিউর করতে পারছে এটা তো বিশাল ব্যাপার।
আমি নিজে দেখেছি স্পুন ফিডিং কিছু বাচ্চার মায়েরা আছে তারা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে এতই চিন্তিত থাকে যে দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে আসলে বিদেশ থেকেই বাচ্চার খাবার দাবার এমনকি পানি পর্যন্ত প্রিসার্ভ করে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের খাবার,পানি খেলে নাকি তাদের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমি দেশে ও দেশের বাইরে থাকা এসব মেন্টালিটির মাদের বলব, প্লিজ আপনারা বাচ্চার ভাল চিন্তা করতে গিয়ে ওদের লং টার্ম ক্ষতির মধ্যে ফেলবেন না। ফার্মের মুরগি কিন্তু অনেক যত্নে পালিত হয় কিন্তু তাদের আয়ু খুবই কম। নিজেদের বাচ্চাকে এরকম ফার্মের মুরগি বানাবেন না।
জীবন যুদ্ধে যাবার পূর্বে ওদের নিজের ইমিউন সিস্টেমের সাথে যুদ্ধ করে ম্যাচিউর হতে দিন, প্লিজ।

বি.দ্র. বাচ্চার প্রথম ছয়মাসে ওদের ইমিউন সিস্টেম খুব নাজুক থাকে। এসময় সচেতন থাকা আদিখ্যেতা না। সচেতন থাকাটা বরং জরুরি।

 

ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ – ডা. মারুফ রায়হান খান

গতকাল ১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর জরিপে দেখা যায় নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেশি। ডায়াবেটিসে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, খাওয়ার ক্ষেত্রেও জারি হয় অনেক বিধি নিষেধ। বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি নারী এই রোগের শিকার।

♦ডায়াবেটিক কি?
ডায়াবেটিস মেলিটাস(ইংরেজি: Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

♦কখন বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায় কন্টিনিউয়াস, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

♦ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ
ডায়াবেটিক রোগীদেরকে যে এক্সারসাইজ করতে বলা হয়, তা হচ্ছে “মডারেট ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ “। এর মানে হচ্ছে একজন মানুষের হার্ট রেট সর্বোচ্চ যতো হতে পারে তার যেন ৫০-৭০% হার্ট রেট হয় এক্সারসাইজের মাধ্যমে। আমাদের দেশে সাধারণত হাঁটার মাধ্যমেই এক্সারসাইজ করা হয়। সহজে বোঝানোর জন্য বলা হয়ে থাকে স্বাভাবিক হাঁটার চেয়ে দ্রুত হাঁটতে হবে। শরীর যেন ঘেমে যায় সেভাবে হাঁটতে হবে।

-এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে।
-তার মানে হচ্ছে কেউ যদি ৩০ মিনিট করে হাঁটে, তবে সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটতে হবে।
-১ দিন পরপর হাঁটলে ৫০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
-একসাথে টানা দুদিন বা ৪৮ ঘণ্টা হাঁটা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না।
– একনাগাড়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট না হাঁটলে সাধারণত সেটাতে কোনো উপকার হয় না।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, হাঁটা শুরু করার সাথে সাথেই খুব জোরে হাঁটা শুরু না করতে বলা হয়ে থাকে। কেউ যদি ৩০ মিনিট হাঁটে, তাহলে প্রথম ৫-৭ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নেবে, তারপরের ১৫-২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটবে, আবার তারপরের ৫-৭ মিনিট ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে নিয়ে আসবে।

#বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৭

 

ঘরের সৌন্দর্য…

গাছ দিয়ে রূপকথার নগরী সাজাব আজ। রংয়ের বৈপরীত্য ফুটিয়ে তুলার দিকে নজর দিন গাছ বাছায় করার সময়। লাল, বেগুনী, অরেঞ্জ কালার, সানসেট অরেঞ্জ, মাড রেড, ইয়োলো, ল্যাভেন্ডার প্রভৃতি রঙ বৈচিত্র্য আনতে পারে আপনার ঘরকে। ঘরে গাছের উপস্থিতি বাতাসকে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। আর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছপালা তুলনামূলক সস্তাও বটে।
img20171114_161453
বেলকুনীতে গাছ
বেলকুনীতে আড়াআড়ি ভাবে একটি লোহার রড বা ষ্টীলের তার দিয়ে লাইন বানিয়ে নিন। এরপর টব নির্বাচন করুন, প্লাটিকের টব বা বিভিন্ন সাইজের বোতলের অথবা বাড়ির পেইন্টিঙের জন্য আনা প্লাস্টিকের বালতিটিও ব্যবহার করতে পারেন। 
img20171114_160608
গাছ যখন জানালায়
জানালায় উজ্জ্বল রঙের ফুল বা অর্কিডের গাছ, ছোট্ট ঝুলন্ত পাতাবাহারের গাছ রাখতে পারেন। টবটি জানালায় ঝুলিয়ে দিন। এ সময় সবার আগে মনে রাখতে হবে তা হল বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে যেন জানালাটি পুরো গাছপালা দিয়ে ভরে না যায়। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি না জমে  যেন।
img20171114_161611
বড় বারান্দায় গাছের বাগান
গুল্ম, ফুলগাছ, ক্যাকটাস এসবই বারান্দায় জায়গা পেতে পারে। বড় বারান্দার গ্রিলে খোপার মত ঝুলে রাখা যেতে পারে মানিপ্ল্যান্ট।
img20171114_161010
ড্রয়িংরুমের সাজসজ্জায় গাছ
বাসার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও রুচিপূর্ণ ঘর। তাই দরজার পাশে ফুলের বা সুন্দর একটি গাছ রাখা যেতে পারে। ঘরের কোণায় কোণায় বিভিন্ন পাতাবাহার, বা ফুল গাছের টব জায়গাগুলর চেহারা পালটে দিবে।
img20171114_160657
ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত গাছ
পুরো ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে বদলে দিতে পারে দেয়ালে থাকা গাছের পাতা আর ফুল। রঙ বেরঙের গাছ আর পাতা ব্যতিক্রম করে তুলবে পুরো রূপনগরী। দেয়াল সজ্জায় স্মরণীয় আলোকচিত্র ঝুলাতে পারেন, সাথে থাকতে পারে পেইন্টিং কিন্তু অল্প খরচে গাছপালাও সেই সৌন্দর্য ডেকে আনতে পারে।
img20171114_160824
উঠোনে গাছের সমারোহ
বাসার বাইরে উঠোনে গাছের সমারোহ পুরো বাসার সৌন্দর্যকে আরোও বাড়িয়ে তোলে।সবুজ উঠোন হতে পারে আপনার ভাললাগার জায়গা অনায়াসে।

 

‘ছায়া সঙ্গী…’ ফাতিমা শাহীন

আমি প্রায় প্রতিদিনই রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নারীটিকে ম্যাপল গাছটির নিচে বসে থাকতে দেখতাম!

আমার ছেলেমেয়ে দুটি খুবই দুষ্টু হয়েছে। একটি বছরও হয়নি ওদেরকে এই স্কুলটিতে ভর্তি করিয়েছি , এরই মধ্যে এ দুটো চঞ্চলমতি হিসেবে স্কুলে নাম করে ফেলেছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর এ দুটো আমার কাছে আসতে আসতে নালিশের তুফান তুলে ফেলে। ওদের সামলাতে সামলাতে যখন পার্কিংয়ে রাখা গাড়ির দিকে এগোই, তখনও নারীটিকে স্থির ও অচঞ্চল ভাবে একই জায়গাতেই বসে থাকতে দেখি। মাঝে মাঝে কৌতুহলে ফেটে পড়তে চাইতাম, ইচ্ছে হত তার পাশে গিয়ে বসি, কথা বলি। কিন্তু কখনই কাউকে তার সাথে কথা বলতে ও মিশতে না দেখে ইচ্ছেটাকে আবার নিজের মাঝেই দমিয়ে ফেলতাম। 

আমার বাচ্চা দুটো ছুটির ঘন্টা বাজলেই বুলেট গতিতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ত, তাই নারীটির সন্তানকে তার কাছে ফেরার দৃশ্য কখনই আমার দেখা হতনা। মাঝে মাঝে হয় এরকম, ক্লাস শেষ হবার পর বই ব্যাগ গুছিয়ে শান্ত সুবোধ বাচ্চারা ধীরে সুস্থে অপেক্ষায় থাকা বাবা মায়ের হাত ধরে বাড়ীর পথ ধরে। সবাই তো আর আমার দুটোর মত অস্থিরমতি চঞ্চল চড়ুই পাখিটি নয়!

তবে, সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকা মায়ের চোখ যেমন সন্তানের আগমন পথের দিকে তাকিয়ে প্রতীক্ষার ক্ষণ গুনে চলে, তাঁর চোখে কি আমি কখনো তেমন প্রতীক্ষা দেখেছি? দেখেছি হয়তবা, অথবা দেখিনি! তার দৃষ্টি যেন পথ হারিয়ে যাওয়া পাখির মত সুদুর পানেই বিদ্ধ থাকত সারাক্ষণ। বয়স তাঁর কপালে গভীর কয়েকটি বলিরেখা এঁকে দিয়েছিল, যা হয়ত সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছিল তার ফেলে আসা অতীতের, সুখে দুখে মেশানো বিপুল অভিজ্ঞতার! 

সময় কেটে যেতে লাগলো সময়ের নিয়মেই। ম্যাপল গাছটির পাতাগুলো তাদের তারুণ্য হারিয়ে সময়ের সাথে সাথে জীর্ণ হতে লাগলো। উষ্ণ বাতাসে একসময়ে লাগলো শীতল স্পর্শ। কিন্তু নারীটির অবস্থান বদলায়নি কখনই। এমনকি অন্যরাও ওই বেঞ্চটি বাদ রেখে অন্য কোথাও বসত বা জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু বেঞ্চটি খালি থাকলেও কাউকে কখনো ওখানে বসতে দেখিনি। ভেততে ভেতরে আমি ভীষণভাবে তাঁর ব্যাপারে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু তাঁর কাছে গিয়ে, তাঁর পাশে বসে সেই কৌতুহল নিবৃত্ত করার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছিলাম না কিছুতেই!

এমনি সময়ে ঘটনাটি ঘটল। তখনও স্কুল ছুটি হয়নি, একটি ছোট বাচ্চা লাফাতে লাফাতে এগিয়ে আসতে গিয়ে হঠাত জুতার ফিতায় পা বেঁধে হাঁটু মুড়ে আছড়ে পড়ল সিমেন্টের বাঁধাই করা চত্বরটিতে, ওই নারীটির ঠিক সামনেই! ছোট্ট শিশুটির এই আকস্মিক আঘাতপ্রাপ্তি যেন পাথরের একটি প্রতিমাকে জাগিয়ে তুলল নিমেষে! নারীটি ছুটে গিয়ে বাচ্চাটিকে তুলে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়ে বিমূঢ়! আমার মত অনেকেই ভেতরে ভেতরে নারীটিকে নিয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন হয়ত! আমাদের এতদিনের কৌতুহলের নিবৃত্তি ঘটল অবশেষে। স্কুল অফিসের রিসেপশনিস্ট মাঝবয়েসী মিসেস গিলবার্ট আমাদেরকে যা বললেন তা শুধু বিস্ময়ের ই নয়, বরং করুণ, মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শীও বটে!

নারীটির ছেলে এই স্কুলেই পড়ত। বছর পাঁচেক আগে ক্যাম্পিং এ গিয়ে সবার চোখের আড়ালে বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে সাঁতার কাটতে গিয়ে খরস্রোতা নদীতে ভেসে গিয়েছিল। ব্যাপক অনুসন্ধান করে দুদিন পর তার নিরব নিস্পন্দ দেহ পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকেও প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায়। সেই থেকে নারীটি হারিয়ে ফেলেছেন তার জীবনের স্বাভাবিকতা। আগে তিনি তাঁর নাড়ীছেঁড়া ধনকে পরম মমতায় সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরতেন, আর গত পাঁচটি বছর ধরে তিনি প্রতিদিনই এসে ম্যাপল গাছের নিচে পাতা বেঞ্চটিতে আগের মতই এসে বসে থাকেন, কিন্তু ঘরে ফেরার সময়টিতে তিনি ফেরেন একাকী, এক বুক যন্ত্রণা ও নি:সঙ্গতাকে সাথী করে! আর এতগুলো বছর ধরে তার অকূল অসীম বেদনার মূক সাক্ষী হয়ে ম্যাপল গাছটি পরম মমতায় তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে! এ যেন ‘ মাদার অফ ম্যানভিল ‘ এর উল্টো প্রতিরূপ! 

আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অসম এই দুই সঙ্গীর দিকে। আমার ভাবনায় সাড়া দিতেই যেন পাতা ঝরার এই শেষ লগ্নেও যে কয়টি শুকনো নির্জীব পাতা প্রাণপনে পরম আশ্লেষে আঁকড়ে ধরে ছিল গাছের শাখা, আজ সেই পাতা কটিও যেন তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাহাকার ভরা হৃদয়ের ওই শোকাতুরা মায়ের গায়ে ঝরে পড়ল হালকা হিমেল হাওয়ায়, যেন বা সান্ত্বনাই পরশ বুলিয়ে দিল তাঁকে, আর সব নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল যে কত স্বল্পস্থায়ী আমাদের জীবন, কতইনা ক্ষীন আমাদের আয়ুষ্কাল! হায়, সময় থাকতেই যদি আমরা বুঝতাম ……..! 

 

“মন ও আমি”- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর “মন ও আমি” কবিতাটি থেকে কিছু লাইন খুঁজে দেখা
রং বেরঙ্গের ছবির আলোকে…

মন ও আমি
img20171112_141810
মন! তুমি কোথায় কোথায়?
দিবানিশি খুঁজে, বেরায় পাইনা তোমায়।
আত্মহারা মন! তুমি কোথায় কোথায়?
ঘুরিয়া বেড়াও তুমি কিসের আশায় ?
img20171112_140357
কোন শ্মশানের ঘাটে, কোন নির্জন মাঠে ;
কোন তটিনীর স্রোতে ভাসায়েছ কায়?
তাই কি খুঁজিতে গিয়ে পাই না তোমায়?
img20171112_140015
যথেষ্ট হয়েছে মন! যেয়ো নাক আর
ভ্রমিতে কল্পনা রাজ্যে ছাড়িয়ে সংসার|
এস শান্ত হও ভাই, আর ঘুরে কাজ নাই,
জান তুমি চিরবন্দী সংসার-রাজার ?
অলসের বেড়ী পায়, কত দূরে যাবে, হায়!
তব অপেক্ষায় আছে গৃহকারাগার|
ভুলিয়ে আপন পর ত্যজি এ মায়ার ঘর,
যেযো না স্বপনরাজ্যে খেলিতে আবার!
img20171112_140232
“মনের উক্তি”
সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায়
আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়!
img20171112_140138
খুঁজিব তারার দলে কোন্ গগনের তলে,
আমার সে নিরমাতা রয়েছে রয়েছে কোথায়,
যেজন স্বপন ঘোরে পাগল করেছে মোরে,
এমন উদাসী যেই করেছে আমায়;
img20171112_135930
যাহার বাঁশীর স্বরে থাকিতে পারি না ঘরে,
যাহার যশের গান জগত শুনায়;
img20171112_135827
সে অনন্ত প্রেমময় কেন চাহে এ হৃদয়
অলক্ষিত আকর্ষণে কোথা লয়ে যায়?
দেখা দাও জগদীশ! রয়েছ কোথায়?
শীতল প্রলেপরূপে বিরাজ তথায়?
দেখা দাও প্রেমময়! রয়েছ কোথায়?
কোথা আছ প্রেম-সিন্ধু জগত-ঈশ্বর?
img20171112_140809
আমি যদি হইতাম চারু সুধাকর,
শূন্য পথে ঘুরিতাম নীলাকাশে ভাসিতাম,
আমার আলোকে ধরা হ’ত মনোহর|
img20171112_140620
জলদ পবন ভরে উড়িয়ে গগন পরে
আসিয়া পড়িত কভু আমার উপর|
ধূসর মেঘের তলে লুকাতাম কুতুহলে
বিস্ময়ে দেখিত চেয়ে তারকা নিকর!
দেখা দাও প্রেমসিন্ধু জগৎ ঈশ্বর!
img20171112_140452
অথবা হতেম যদি আকাশের তারা
তোমারি বিধান মতে ভ্রমিয়া অনন্ত পথে,
নীলাকাশে ছড়াতেম কনকের ধারা!
ঘুরিতে ফিরিতে কভু
আপনা ভুলিয়া প্রভু,
ছুটিতাম তব পানে হয়ে আত্মহারা!
হায় ! কেন হই নাই আমি ক্ষুদ্রতারা!
img20171112_135429
সুস্নিগ্ধ জলদ প্রায় ঢাল বারি এ ধরায়
ভাস কি তটিনী-স্রোতে লহরীমালায়?
করি প্রীতি বরিষণ জুড়াও তাপিত জন,
চাহিলে তোমার পানে শান্তির আশায়?

 

ভ্যাকসিন/টিকা ও ধর্মীয় বিরোধ- ডা. মারুফুর রহমান অপু

শিরোনামে অবাক হবার কিছু নেই। জেনে অবাক হবেন আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন কোন না কোন সময় আপনার সেই একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী কেউ না কেউ ধর্মীয় কারন দেখিয়েই ভ্যাকসিনেশন এর বিরোধিতা করেছে। হোক সে খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদী বা হিন্দু! আজকে এই পোস্টটি লেখার কারন হলো আমি ইদানিং বিভিন্ন ফোরামে লক্ষ্য করছি এক শ্রেনীর মানুষ টিকার বিরোধীতা করছেন এবং নিজের সন্তান বা বংশধরদের টিকা গ্রহন থেকে বিরত রাখার মত ভয়ংকর কাজ করছেন কিছু ধর্মীয় ভুল ধারনা কিংবা অপব্যাখ্যার কারনে! কি কি কারনে তারা বিরত থাকছেন তার কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যেমন:
১) এগুলো ইহুদী বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র
– আসলে তা নয়, বহু মুসলিম বিজ্ঞানীই বিভিন্ন সময়ে দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রেখেছেন। আর ভ্যাকসিন ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকল দেশেই ব্যবহার করা হয়। এটি শিশুদের জন্মগত অধিকার, সুস্থ থাকার জন্য।
২) ভাকসিন শুধুমাত্র গরীব আর মুসলিম দেশেই দেয়া হয় তাও বিনাপয়সায়, ধনী দেশেরা নেয়না
– কথাটি মোটেও সত্য নয়। সারা পৃথিবী শিশুদের মৃত্যুহার কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাই বরং উন্নত দেশে ভ্যাকসিন গ্রহনের হার আরো বেশি। পৃথিবীর সকল শিশু যেন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেচে থাকতে পারে তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে দেয়া হয়। এটি আপনার শিশুর অধিকার।
৩) রোগ সৃষ্টি ও সুস্থ করার মালিক আল্লাহ তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করার চেস্টা অনৈসলামিক
– বরং উলটো, বেশ কিছু সহীহ হাদিস অনুসারে নবী (স:) বলেছেন রোগ প্রতিরোধ এর কথা, তা হবার আগেই। ইসলামিক ফতোয়া প্রদানকারী বিভিন সংস্থার আলেমগণ তাই ভ্যাকসিন গ্রহনের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশেই টিকা নিষিদ্ধ নয় কেননা ভ্যাকসিন গ্রহনের কারনে যদি কেউ সুস্থ থাকে তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে কেননা তিনিই এটিকে কবুল করেছেন।
৪) ভ্যাকসিন নিলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে কারন এতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে
– এটি একটি ভুল ধারনা। ভ্যাকসিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে বা বাড়ায়। এ প্রক্রিয়ায় জৈবনিক বিক্রিয়ার অংশ হিসেবেই অনেক সময় কোন কোন শিশু (সবাই নয়) কিছুটা অসুস্থ বোধ করতে পারে যেমন জ্বর হওয়া। এটি একটি সাধারন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা দ্রুতই চলে যায়। তবে অনেক সময় অন্যান্য আরো কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে এমনকি মারা গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে যেগুলোর কারন খতিয়ে দেখা গেছে ভ্যাকসিন এর সাথে অসম্পর্কিত। সুতরাং ভ্যাকসিন নেবার পর শিশু অসুস্থ বোধ করলে ভয়ের কিছু নেই, শিশুকে নিকটস্থ চিকিতসকের কাছে নিয়ে পরামর্শ গ্রহন করুন।
৫) ভ্যাকসিনে মূল জীবানুই শরীরে ঢোকানো হয় যা ক্ষতিকর এবং উলটো রোগ তৈরি করে।
– ভুল ধারনা। এটি সত্য যে ভ্যাকসিনে মূল জীবানুকেই বা তার অংশ বিশেষকে ব্যবহার করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত জীবানু বা তার অংশ বিশেষ ব্যবহার করা হয় যার রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নেই কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা আছে। অনেকটা এমন যে বাচ্চাদের চোর বা ডাকাতের ছবি দেখিয়ে বলা তারা দেখতে এরকম, এদের থেকে দূরে থাকো। তাই পরে আসল চোর ডাকাত (রোগ) এলে আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকায় ক্ষতি হয়না। কিছু ক্ষেত্রে জীবিত জীবানূ ব্যবহার করা হয় তবে সেসব ক্ষেত্রে জীবানুগুলো ইনএকটিভেটেড অর্থাৎ রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম করে ফেলা হয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়। তাই ভ্যাকসিনে কোন দূষিত বা ভয়ংকর কিছু নেই যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
৬) ভ্যাকসিনের কারনে শরীরে ক্যান্সারের মত রোগ সৃষ্টি হতে পারে
– একেবারেই বিপরীত ধারনা বরং অনেক ক্যান্সারেই প্রতিরোধ করে ভ্যাকসিন যেমন হেপাটাইটিস এর ভ্যাকসিন লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, জরায়ূমুখ ক্যান্সার ভ্যাকসিন জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এসব ভ্রান্ত ধারনা সাধারনত অস্বীকৃত কোয়াক ডাক্তার বআ হোমিও আয়ুর্বেদ প্র‍্যাকটিশনার যাদের স্বীকৃত যোগ্যতা নেই এমন লোকেরাই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রচারনা করেন।
৭) ভ্যাকসিন ক্ষতিকর এ কারনে হোমিওপ্যাথিতে কোন ভ্যাকসিন নেই।
– আসলে হোমিওপ্যাথিতেও ভ্যাকসিন আছে! তবে পৃথিবীর বহু দেশেই এটিকে বন্ধ করা হয়েছে এমনকি খোদ ইউরোপেই।
নাগরিকের সুস্থতা নিশ্চিত করা রাস্ট্রের দ্বায়িত্ব, সন্তানকে সুস্থ রাখাও বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব। তাই আপনি যদি ভ্রান্ত ধারনায় পড়ে আপনার বাচ্চাকে টীকা না দিয়ে ঝুকিতে রাখেন তাহলে আপনি তার অধিকার নস্ট করলেন, বাবা-মা হিসেবে আপনার দ্বায়িত্বের অবহেলা করলেন এবং রাস্ট্রকেও ব্যার্থ করলেন এমনকি ইসলাম কিংবা আপনার ধর্মের দৃষ্টিতেও রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকার চেস্টার বিরোধিতাও করলেন। সুতরাং এসব ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন। মনে কোন প্রশ্ন থাকলে নিকটস্থ চিকিতসক, ইসলামিক স্কলার এর নিকট জিজ্ঞেস করুন, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞানভান্ডার থেকে তথ্য নিন।
একসময় গুটি বসন্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে, প্লেগ রোগে মহামারীতে মরেছে, আগে ৮-১০টি বাচ্চা হতো তার মাঝে ২-১ মারা যেত অধিকাংশ পরিবারেই এখন এসব কিছুই নেই। পৃথিবীতে গুটি বসন্ত আজ বিলুপ্ত, প্লেগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে, বাংলাদেশ আজ পোলিওমুক্ত এই সবই ভ্যাকসিনের কল্যানে। তাই আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানের আশির্বাদ গ্রহন করুন, নিজে সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারকেও সুস্থ রাখুন।
FB_IMG_1510419749452

 

এক টুকরো সুখের গল্প -ফাতিমা শাহীন

বইগুলো বক্স থেকে বের করে ধুলো ঝেড়ে বুক শেলফে তুলে রাখছিল সেমন্তি। নতুন বাসায় উঠে এসে এখন অবধি আর ফুরসত মেলেনি বইগুলো গোছাবার। এই হলের হাউস টিউটর কোয়ার্টার এ নতুন উঠেছে ওরা , ওরা বলতে ও আর সাদমান। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে তবে এই কোয়ার্টারটি মিলেছে। হলটি অনেক পুরনো, প্রচুর গাছ গাছালি আর তার চেয়েও প্রচুর আছে পাখি। খুব ভোরে পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সেমন্তির, তখন এত ভালো লাগে ওর!

বইগুলো গুছিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায় ও। পুরনো একটা সাহিত্য ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বেডরুমে ঢুকতে গিয়েও না ঢুকে বেরিয়ে পড়ল। সাদমান টক শো দেখছে বেডরুমের টিভিতে, এই সময় ওর হাতে ম্যাগাজিন দেখলেই খেপে যাবে, দরকার কি ঝামেলা বাড়িয়ে! কিন্তু এত সাবধানতা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হলনা, দেখেই ফেলল সাদমান:

আবার ও ওসব ছাইপাশ নিয়ে বসেছ তুমি? শুধু শুধু এগুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট কর, বুঝিনা! পড়াশুনার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কর, লেখালেখি কর! ইসলামী সাহিত্য, মুসলিম ঐতিহ্য , সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা, জ্ঞানার্জন তো করতেই হবে , কারণ এগুলোই ত আমার আত্মার তৃপ্তির রসদ জোগায়। কিন্তু সমকালীন সাহিত্য না পড়েও যে থাকতে পারিনা আমি! বাস্তবের যাপিত জীবনের অনুসঙ্গগুলো এত নিবিড় আর সুক্ষ্মভাবে এই সাহিত্যের প্রতিটি লাইনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে, যা আমাকে বর্তমান সমাজ ও জীবনবোধ নিয়ে ভাবনার খোরাক জোগায়। আর সাহিত্যের একজন ছাত্রী হিসেবে এটি নিশ্চয়ই আমার চিন্তাধারার কোনো গুরুতর ভুল হিসেবে নেবেনা তুমি!

( একটুখানি হেসে ) না, এটি কোনো ভুল বা অপরাধ কিছুই নয়। কোনো উপন্যাসে তুমি একবার ডুবে গেলে তোমার আর নাগাল পাওয়া যায়না, এজন্যই বলছিলাম!

বলতে বলতে সাদমান উঠে দাঁড়ালো, এগোলো দরজার দিকে।

একি, তুমি এখন আবার বেরোচ্ছ নাকি?

(জুতা পড়তে পড়তে) হ্যা, একটু ডিপার্টমেন্টে যাব, বেশ কিছু

এসাইনমেন্ট জমেছে, দেখে দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি … কেন, কিছু বলবে?

একটু দ্বিধা করলো সেমন্তি, এবারের পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলো ভিন্ন স্বাদে, ভিন্ন বৈচিত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তারই একটা যে দারুন পছন্দ হয়েছে, তা কেমন করে এই ক্ষণে মুখ ফুটে বলবে ও!

কি হলো, বলবে কিছু? মনে হচ্ছে কিছু চাচ্ছ মনে মনে?

কিছু একটা চাচ্ছি, সেটা ঠিক। কিন্তু তোমার কাছে অনুমতি চাচ্ছি বলে ভেবোনা যে ওটি নিজে অর্জন করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি এজন্যই চাচ্ছি যে, আমার প্রতিটি কাজে তোমার উতসাহ ও সমর্থন থাকলে প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি প্রাপ্তিই আমার কাছে অন্যরকম আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।

তো, কি এমন চাও যাতে আমার সমর্থন দরকার হয়ে পড়ল?

(একটু দ্বিধা করে) একটা ঈদসংখ্যা কিনব কিনা ভাবছি , না….না…কোনো জ্ঞান বিতরনমূলক কোনো কথা বোলোনা কিন্তু আবার! ….. কি হলো, অমন করে দুষ্টু হাসি হাসলে যে…!

সাদমান একটুখানি এগিয়ে এসে সেমন্তির নাকটা একটু নেড়ে দিল। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মুখ ঘুরিয়ে একটু হেসে ছোট্ট করে বলল:

নো!

রাগে গা জ্বলে গেল সেমন্তির। এমন বদ স্বামী পৃথিবীতে আর কোনো মেয়ে পেয়েছে কিনা সন্দেহ! দরজাটা বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে সোফায় বসতে যাবে, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো। তাড়াতাড়ি মুখে নেকাব জড়িয়ে দরজা খুলে দেখল হলের দারোয়ান রশিদ মিয়া দাড়িয়ে আছে। সালাম দিয়ে একটা ব্রাউন পেপার প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল:

আপা, স্যার যাওয়ার সময় এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলে গেছেন।

আচ্ছা, ঠিক আছে, অনেক শুকরিয়া।

অবাক হয়ে প্যাকেটখানি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একখানি নয়….দুখানি নয় ….তিনখানা ঈদ সংখ্যা! তাও আবার মোটা, ঢাউস সাইজের একেকটি ভলিউম! আলাদা করে একটি হাতে নিতেই গড়িয়ে পড়ল একটি চিরকুট, তাতে লেখা:

“পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটির জন্য তার ‘বদ জামাইয়ের’ পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার! কি, রাগ কি কমাতে পেরেছি একটুও?”

বিস্ময়ে, আনন্দে, অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সেমন্তি। মনে মনেই এক ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাদমানের বুকে। মনে হলো কোথাও যেন সেতারে সংগীতের সব কটি রাগ রাগিনী এক সুরে বেজে উঠলো, পাখিরা গেয়ে উঠলো মিলনের গান। আর অজস্র ভালবাসা আর সুখের অনুভূতিরা নানা রঙের ফুল হয়ে ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো মিষ্টি এই স্বপ্নালু দম্পতির উপর!

 

“রান্না ঘরের টিপস”

রান্নার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় সহজ ও মজার কিছু টিপস। যা কাজে লাগবে প্রতিদিনের রান্নায়।
img20171111_142758
রসুনের খোসা(Garlic peel)
একসাথে অনেক রসুন ছাড়াতে সময় বেশি লাগে। আস্ত রসুন ফুটন্ত জলে মিনিট দুয়েক ভিজিয়ে হাতে ঘষলে ওপরের খোসা ছেড়ে যায়।
img20171111_142858
দেশলাই বাক্স(Boarding box)
দেশলাই বাক্সে কয়েকটা শুকনো চাল রেখে দিলে বর্ষাকলেও দেশলাই কাঠির বারুদ ভাল থাকে।
img20171111_143308
আচারে ভিনেগার(Seasoning Vinegar)
আচার তৈরি করার সময় তেলে একটু ভিনিগার মিশিয়ে নিলে আচার অনেকদিন ভালো থাকে।তেলে আচার ডুবিয়ে রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
img20171111_143418
ব্লটিং পেপার(Blotting paper)
বিস্কুটের টিনের ভেতরে ব্লটিং পেপার রেখে দিলে বর্ষাকালেও বিস্কুট মছমছে থাকে।
img20171111_143533
হাতের যত্ন(Hand care)
তরকারি কাটার সময় আঙ্গুলে দাগ পড়লে ভিনিগার অথবা লাবুর রসে লবণ মিশিয়ে আঙ্গুলে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিলে দাগ উঠে যায়। যে সব সবজি বা আনাজ কাটলে হাতে কালচে দাগ হয় তা কাটার আগে হাতে সরষের তল মাখলে কালচে দাগ আর হবে না।
img20171111_143058
বেগুন ভাজা(Fried eggplant)
ভাজার জন্য কেটে রাকা বেগুন বেশ কিছুক্ষণ আগে লবণ-হলুদ মাখিয়ে রাখলে ভাজতে তেল কম লাগে।
img20171111_143020
মসলা সংরক্ষণ(Spice conservation)
বাড়তি বাটা মসলা সামান্য তেল ও লবণ মাখিয়ে রেখে দিলে কয়েকদিন পরও ব্যবহার করা যায়।
img20171111_143607
কেরোসিনের ব্যবহার(Use of kerosene)
পানিতে সামান্য কেরোসিন মিশিয়ে রান্নাঘর মুছলে মাশা-মাছি ও পিঁপড়ের উৎপাত কমে যায়।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (১) -আফরোজা হাসান

রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও। জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।

-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনে হয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-হেসে, আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যার ফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

 

কিভাবে “আবেগ” পরিচালনা করতে হয় আপনার শিশুকে শেখান

শিশুদের ‘আবেগ’ দক্ষতার সাথে বুঝতে শেখানো হচ্ছে প্যারেন্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আবেগ এক ধরনের ভালোবাসা, ঘৃণা, সুখ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা, রাগ, বিশ্বাস আর ভয়ের সম্মিলিত রূপ। শিশুদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে।আবেগ শূন্য মানুষ নাই। মানুষের আবেগ বিকশিত হয় ছোটবেলায়। তাই ছোটবেলা থেকে ইতিবাচক আবেগ গড়ে তোলা দরকার। আর মা বাবা সন্তানের জন্য, সুখী এবং সুস্থ ভবিষ্যত সাজাতে সাহায্য করেন।
তাই আসুন শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌ।শল শিখে নেই।
img20171110_114139
প্রচুর ইতিবাচক শব্দ শেখান(Use feeling words when speaking to your child)
কথা বলার সময় কোন শব্দ দিয়ে কিরূপ মনের ভাব প্রকাশ পায় তা শিশুদের শেখান। কোনো পরিস্থিতিকে কোন আবেগীয় শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এছাড়া শিশুদের উদাহরণ দিয়ে শেখান ‘দুঃখ’ আসলে কিরূপ অনুভূতি ‘হতাশ’ বলতে আমরা কি বুঝায়। মনে রাখবেন শিশুদের শেখানোর সময় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে ইতিবাচক কথা বেশি বলুন।
img20171110_113857
শিক্ষিত নয় বরং কৌতূহলী মনের বিকাশ ঘটান (Be more curious and less educating)
আপনার শিশুর অস্বস্তিকর যে কোন অনুভূতি সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাস করুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের অনুভূতিগুল প্রকাশ করার জন্য কৌতূহলী করে তুলুন। সন্তানের যে কোন অনুভূতি দুঃখ বা ভুল দেখে সে সম্পর্কে কৌশলে জানতে চান। কিন্তু কোনো ক্রমে সন্তানকে শেখাবেন না যে, দুঃখ পাওয়া ঠিক না। ছেলেদের কাঁদতে হয় না অথবা তাদেরকে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করার সময় লজ্জা দিবেন না। ছি ছি এত বাচ্চা এমন কাজ করে না।
img20171110_113948
গণনা করে রাখবেন না(Don’t keep score)
সন্তানরা যে সমস্ত ভুল করে সেগুল হিসাব করে ধরে রাখবেন না এবং পরবর্তীতে সেগুল নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা যাবেন না। যদি আপনি তার ভুলগুল বার বার ধরিয়ে দিতে থাকেন তার মধ্যে হীনমন্যতা জন্ম নিবে। তাই আপনি যদি বুঝতে পারেন বা নাও বুঝতে পারেন তবুও সন্তান ‘কেন’ ভুল করল এই প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যান।
img20171110_113419
বিরূপ অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন (Talk about negative emotions)
যে সব বিষয় আপনার সন্তানের মনে বিরূপভাবে আবেগপ্রবণ করে তোলে, সে বিষয়ে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। কারো মাধ্যমে কষ্ট পেলে, কেউ অপমান করতে, কেউ দোষারোপ করলে সেই বিষয়গুল নিয়ে সরাসরি কথা বলে সমাধান খুঁজতে আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। Respect the uncomfortable feeling and remember it will change. অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলোও খন্ড জীবনের অংশ, সেই সব অনুভূতি গুলকে সন্মান করা এবং বিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন এগুলও পরিবর্তন হবে।
img20171110_113654
আবেগের সাথে পরিচিত করুন(Get a poster of emojis)
ছোট থেকে দুঃখ, কষ্ট, রাগ, হতাশা আর আনন্দ অনুভূতি প্রকাশিত ছবি, ইমেজিং রূপ এর সাথে সন্তানের সাথে পরিচিত করিয়ে দিন।
প্রতিটি ছবির নিচে অনুভূতির নাম লিখতে উৎসাহ দিন।
img20171110_113529
রোজ খুশি আর কষ্টের অনুভূতিগুল নিয়ে আলোচনা করে একটি লিস্ট তৈরি করুন(Talking about the pleasant and unpleasant feelings)
রোজ কিছুটা সময় সন্তানকে নিয়ে বসুন তার অনুভূতি জানার চেষ্টা করুন। কি ঘটনার কারণে আনন্দ বা কষ্টের সৃষ্টি হয়েছে তার উপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং অনুভূতিকে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে আলোচনা বসুন।

 

“সায়াহ্নের দ্বীপশিখা” -ফাতিমা খান

বাড়ীওয়ালার ছেলের বউ আজও বাখুর জ্বালিয়েছে। বিশেষ কিছু সুগন্ধী পাথর বা স্যান্ডেল কাঠের গুড়োর সাথে আরো কি সব তেল টেল মিশিয়ে যেন বাখুর তৈরি হয়। এগুলোকে জ্বলন্ত কয়লার টুকরার উপর রেখে জ্বালানো হলে খুশবুওয়ালা ধোয়া বের হয়। আরবদের আভিজাত্যের অংশ এই বাখুর। আমি নিজেও মাঝে মাঝে জ্বালাই। সুগন্ধী বাখুরের চেয়ে আমার ভাল লাগে ওদের বাখুরদানী গুলো। স্বর্ণ, রূপা বা অন্যান্য ধাতু বা চীনামাটিতে খোদাই করে ডিজাইন করা শৌখিন জিনিস, সেইরকম গর্জিয়াস! রাত গভীর হলে বাড়ী ওয়ালার ঘরে এই বাখুর জ্বলে। তাদের অন্দরমহল ছাপিয়ে বাখুরের খুশবু প্রায়ই আমার ঘরে চলে আসে। আমি চোখ বন্ধ করে থাকি। ভদ্রমহিলাকে এই স্বর্গীয় সুগন্ধীর ট্রেড নেইমটা জিগেস করতে হবে। পুরাই মাতাল করা খুশবু!

ধোয়া ওঠা চা নিয়ে বসেছি। “সোনালি ফয়সালা” বইটা সাথে, চমৎকার শিক্ষনীয় বই। রাত বাজে একটা সাঁইত্রিশ। চায়ের পানিতে বলগ আসার আগে একটু খানি এলাচ গুড়া মিশিয়েছিলাম। আধো রাতে এই লা-জাওয়াব স্বাদের এলাচ চা আমার খুব পছন্দের। “You can never get a cup of tea large enough or a book long enough to suit me “-কথাটা কে বলেছেন মনে নেই, কিন্তু আমার জন্য একশ ভাগ সত্যি ।

আজ সারাদিন শুধু সত্তর বছর বয়সী Alzheimer এ আক্রান্ত রোগীটার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে।মিষ্টি গোলগাল চেহারা। মায়াবী চোখ দুটোতে উদাস চাহনী। দাঁতের কোন কমপ্লেইন তিনি বলতে পারেন নাই। উনার এ্যটেন্ডেন্ট ছিল ছেলের বউ। তিনিই বলতে শুরু করলেন ঠিক এভাবেই…

“ডক্টর, আমার শ্বাশুড়ী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন প্রায় দশ বছর। অবস্থার অবনতিই কেবল হচ্ছে দিনকে দিন। এখন তেমন কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না। এমনকি কখনও কখনও আমাদেরকেও চিনতে পারেন না। আজ দুদিন ধরে দেখছি রাতের বেলা মুখের ভেতর একটু পরপর আংগুল দেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, কই কিছুই তো হয়নি। কাল রাতে তাই আমি উনার পাশেই বসেছিলাম, শুধু এটুকু বোঝার জন্য যে উনার ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে। টু এক্সক্লুড দা ডেন্টাল প্রব্লেম, আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। ”

রোগী দেখতে দেখতে ছেলের বউ এর সাথে অনেক কথাই হল। ত্রিশোর্ধ এই ভদ্রমহিলা মক্কার বাসিন্দা। জেনেটিক্স এ রিসার্চ করছেন। স্বামী ফরেন মিনস্ট্রি তে কর্মকর্তা, অফিসের খাতিরে আমেরিকা গিয়েছেন সফরে। বিয়ের পর থেকে শ্বাশুড়ির দেখাশোনা নিজেই করেন। ডিমেনশিয়ার কারণে দ্রুত সব কিছু ভুলে বসেন বলে একসময় পরিবারের সদস্যদের সাথে মায়ের ঝামেলা হয়ে যেত বেশ। শেষ পর্যন্ত এই ছেলের বউ তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। শ্বাশুড়ীর প্রতি নিজের এই যত্নশীলতাকে তিনি খুব সহজ অথচ ভারী একটা ইবাদত বলেই মনে করেন। খুব সাবলীল ভাবেই বললেন, ” তিনি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা ইবাদত। হয়ত আমি প্রতিদিন কাবাঘরে যেতে পারিনা, কিন্তু আমি আমার মালিকের একজন অসুস্থ বান্দার সেবা করতে তো পারছি, বিনিময়টা আল্লাহর কাছেই চেয়ে নেব। ”

আমি মুগ্ধ!
এত সুন্দর মানসিকতা শুধু জ্ঞানীদেরই কি হয়?

সোনালী ফয়সালা বইটায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাখুরের খুশবু এতক্ষণে বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছে। বইটা দ্রুত শেষ করতে হবে.. একটানে পড়ে যাওয়ার মতই একটা বই। শেষ না করে আজ ঘুমও আসবে না!

 

“তোমার জন্য মা”- ফাতিমা খান

” আমার বয়স কতই বা হবে তখন, বড়জোর পাচ কি ছয়। আমার মায়ের জন্মদিনে ‘সাম্পাগিতা’ (বেলী ফুল) ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে ছিলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে মায়ের চোখে তাকিয়ে ছিলাম।স্বপ্নহীন, আশাহীন এক শূন্যতা ছিল তার দুই চোখে, এখনো ভুলিনি।”

লোরেন আমার নার্স। একটানা বলেই যাচ্ছে মায়ের কথা। ওর চোখ দুটো ছলছলে। মানুষের চোখে একই সাথে আনন্দ আর কষ্টের অশ্রু বড় মায়াবী দেখায়!

“আমার মায়ের খুব পছন্দের ফুল সাম্পাগিতা, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি জেসমিন। আমাদের বাড়ির ছোট্ট বাগানটায় জেসমিন ফুলের গাছটা মা ই লাগিয়ে ছিলেন। গাছটা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের স্বপ্ন গুলোও বড় হচ্ছিল প্রতিদিন। বাবা মার বিয়ের সময় আমার মায়ের গহনা বলতে ছিল শুধু এই ফুলের মালা। সাদা গাউন আর সাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো মাকে ব্রাইডাল ফটো গুলোতে এঞ্জেল এর মত লাগছিল! আমার সেই রুপবতী মায়ের সাথে আজকের মায়ের চেহারার সামান্যই মিল খুঁজে পাই।

সাম্পাগিতা আমাদের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার, ডক। তাগালোগ ভাষায় “সাম্পা- কিতা ” অর্থ হল ”আই প্রমিস ইউ”। আমার মাকে বাবা সাম্পাগিতার মালা পরিয়েছিলেন ঠিক বাট হি ডিড নট কিপ হিস প্রমিস।

বাবার নেশা ছিল মদ আর বার বণিতায়। বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাকে গালিগালাজ করতেন, খুব মারতেন। আধা রাতে বাড়ি এসে “লোরেনা……” বলে আমাকে ডাক দিতেন দরজা খুলে দিতে। বাবার স্মৃতি বলতে আমার এটুকুই মনে আছে। মা অনেক কষ্ট পেলেও হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। মায়ের এই গুণটা আমি পেয়েছি। আমিও সূক্ষভাবে এই কাজটা করতে পারি। ভেবে দেখেন দিনের একটানা আটঘন্টা আপনি আমার সাথে কাটান। বাট কুড ইউ এভার প্রেডিক্ট মাই মাইন্ড ডক?..আই বেট, নো। হাহাহা। ”

শুনছি আর ভাবছি সত্যিই তো! আমি তো এই লোরেন কে চিনতাম না। আমি যে লোরেন কে চিনি সে এক জন টিপিকাল হাসিখুশী প্রফেশনাল নার্স।

“মা রাত জেগে ব্র‍্যান্ড বেকারীর অর্ডার গুলো রেডি করতেন। আলো না ফোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো কেক আর বান রুটিগুলো নিয়ে যেতাম ব্র‍্যান্ড বেকারি তে। আমার দুই বছরের ছোট ভাইটা আমার সাথে ছুটে চলত তার ছোট ছোট পায়ে। আমার সাথে আসার তাড়াহুড়োতে তার জুতা পরা হত না। মা চলে যেতেন সাহেব দের বাড়ির লণ্ড্রীর কাজ করতে, বড় পাচ ভাইবোন চলে যেত স্কুলে। মায়ের বানিয়ে রেখে যাওয়া গরম গরম বান এক হাতে আর অন্য হাতে ছোট ভাইটার হাত ধরে আমি চলে যেতাম পাহাড়ের কাছে।

ইউ নোউ ডক, আমাদের প্রভিন্সটা নীল আর সবুজে সাজানো একটা হেভেনলি প্লেস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটো চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন। একতো আমাদের মা আর দ্বিতীয় হল পাহাড় আর সাগর ঘেরা আমাদের এই প্রভিন্স। উইকেন্ডে মা আমাদের নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতেন। মায়ের হাতের লেমন গার্লিক ফিশ গ্রীল…. উফফ! পাহাড়ের পাদদেশে রক্তজবার বাগানের (Gumamela garden) পাশে বসেই আমরা লাঞ্চ শেষ করতাম।
..সেই দিনগুলো আর তো ফিরে আসবে না। কষ্টের সময়গুলো একা একাই পার করেছেন মা,সবটুকু একাই সয়ে নিতেন, শুধু সুখের পুরোটুকু দিতেন আমাদের।

আমি বড় হয়েছি পাহাড়ের গায়ে ছিটকে পড়া সূর্যকিরণ আর সমুদ্রজল লাল করা সুর্যাস্ত দেখে দেখে। সমুদ্র পাড়ের একটা বড়সড় কালো রকে বসে থাকতাম যখন ইচ্ছে। নোনা পানির জোয়ার ভাটা দেখতাম। মুখে ফেনা তোলা ঢেউগুলো দৌড়ে এসে আছড়ে পড়ত পাড়ের বুকে। নীল আকাশে গোল গোল মেঘগুলো দাদুর জটলাপাকানো সাদা চুলের খোপার মত মনে হত।

Have patience, do sacrifice. Bad times will fly like an arrow- মা বলতেন। শুধু যুগের ব্যবধান, আমরা সত্যি সত্যি মায়ের জন্য সাত রত্ন হয়ে গেলাম একদিন। আমার বড় ভাইটা যেদিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করল সেদিন মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। এরপর একে একে আমরা সব ভাইবোন প্রফেশনাল হয়ে গেলাম।

মাকে নিয়ে আমরা ম্যানিলায় চলে আসি। মা আমাদের নতুন বাড়ির নাম দিলেন Heaven of Seven.
ম্যানিলার পশ সোসাইটির মা রাও আমার মাকে আজ ঈর্ষা করে এ‍্যন্ড উই আর প্রাউড অফ হার। “

 

যে সাতটি নিয়ম মেনে বাড়তি মেদকে গুডবাই বলবেন

অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমরা চাই বা খুঁজি খুব দ্রুত ওজন কমানোর নানান কৌশল। অনেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এটা সঠিক সমাধান নয়। কিছু কৌশল আর ব্যায়াম আছে যা বেশ দ্রুতই ওজন কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
আসুন জেনে নেই কৌশল সমুহ:
img20171107_234749
১.রাতের খাবারের ৪ ঘন্টা পর ঘুম
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন রাতে, এতে খাবারের অতিরিক্ত চর্বি ক্ষতি করবে না। রাতে জেগে থাকলে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন না। এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়। ফলে শরীরে মেদ জমে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন।তাহলে ঘুমানোর আগেই হজম হয়ে যায়।
img20171107_235139
২.পাচঁফোড়ন সম্মিলিত মশলা
রান্নায় আমরা নানান রকম মশলা খেয়ে থাকি। তার মধ্যে বেশ কিছু পাঁচ ফোড়ন মশলা ওজন কমাতে সহায়ক। তারমধ্যে গোল মরিচ, আদা, দারচিনি ইত্যাদি মশলা ওজন কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। ওজন কমাতে ও হার্ট ভালো রাখে।
img20171108_000224
৩.গ্রিন টি
গ্রিন টি ওজন কমাতে উপকারী। প্রতিটি দানায় রয়েছে মানুষের শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক পলিফেনল ও কোরোজেনিক এসিড। তাই দৈনিক ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারলে বছরে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যেতে পারে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিসান দিয়েগোতে একটি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে যে গ্রিন টি ওজন কমায়।
img20171108_000552
৪.ফজরের পর পরই ঘুম থেকে উঠুন
ওজন কমাতে হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারলে তা শরীরকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে, শরীরে বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয় ফলে ওজন কমে। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে থেকে কিছুক্ষণ হাঁটা যেতে পারে।
img20171108_000741
৫.পানি পান করুন পর্যাপ্ত
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ওজন কমানো অন্যতম সহায়ক। পানি পানে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সহজে পুষ্টিগ্রহণ করতে পারে। পানি পান করলে শরীর থেকে দূষিত চর্বি জাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। তাই ওজন কমাতে হলে পানি পানের কোন বিকল্প নেই।
img20171108_001046
৬.সরবত (লেবু-মধু):
ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানির সাথে দুই চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। লেবু-মধু পানীয় ওজন কমাতে দারুণ পদ্ধতি।

এছাড়া ওজন কমানোর জন্য কিছু ব্যায়াম বা খেলাধূলা

গ্রীষ্মকালের লম্বা দিন ও আবহাওয়ার উষ্ণতা – ওজন কমাবার যথার্থ সময়।
img20171108_001701
সাঁতার :
সাঁতার হল পুরো শরীরের জন্য একটি সুন্দর ব্যায়াম। নিয়মিত সাঁতার কাটলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আরো কর্মক্ষম হয়।সাঁতারের ফলে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ পর্যন্ত ক্যালরি ক্ষয় হয় ।
img20171108_001540
শিখুন সাইকেল চালানো:
সাইকেল চালানোর ফলে পায়ের পেশির সংকোচন প্রসারণ হয় যা খুব ভাল ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে, ওজন বাড়ানোর প্রবণতাও তেমনও কমে যায়।
img20171108_001627
ভলিবল :
খেলার মধ্যে সব ধরনের খেলা গুরুত্বপূর্ণ তবে
ওজন কমাতে চাইলে ভলিবল খেলতে পারেন। ভলিবল একটি মজার এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ ওজন কমানোর কৌশল। ভলিবল খেলা ক্যালরি ক্ষয়ের সাথে সাথে হাত ও চোখের জন্য উপকারী।

 

টুকিটাকি টিপস রান্নাবান্নার

রান্না-বান্না করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলায় হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক রান্না-বান্নার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস।
img20171107_185756
মুগডালের উজ্জ্বলতা
কাঁচা মুগডাল ভেজে পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন, তাহলে ডালের রঙ আর কালো হবে না। ধুয়ে রান্না করলে ডালটাকে দেখতে উজ্জ্বল দেখাবে।
এছাড়া ডালে বাগার দিবার সময়, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে।
img20171107_185550
দ্বিগুণ স্বাদে মাছ রান্না
মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে।
img20171107_191645
বেরেস্তা স্বাদ
গোস্ত জাতীয় রান্না করে শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
img20171107_185526
সুস্বাদু ডিম
ডিম সিদ্ব করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না।
img20171107_185609
তৈলের ব্যবহার
কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।
img20171107_185423
রান্নায় সাবধানতা
চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে। ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। যে কোন মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন।
img20171107_185123
শুকনো মরিচের ঝাঁজ
শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাঁচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন।
img20171107_185008
সুন্দর সবজীর রং
সবজীর রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।

 

সন্তানদের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (পর্ব-২)- ফাতিমা খান

আমার বাচ্চাদের সাথে ডিলিংস এর ব্যাপারে যেটুকু জ্ঞান জন্মেছে তার থেকে কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স শেয়ার করছি। হয়ত সময়ে অসময়ে আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে।
img20171107_104806
♥ছোট হোক বা বড়, সন্তানের যেকোন সাফল্য বা ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করুন। বাচ্চাদের জন্য প্রশংসার চেয়ে বড় টনিক হয়ত দুটো নেই।
img20171107_112231
♥অসফলতা বা কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে সন্তান উদ্বিগ্ন হলে তাচ্ছিল্য না করে সাহস দিন। ” আমি জানি তুমি পারবে, না পারলেও চেষ্টা করে দেখো ” জাতীয় উতসাহমূলক কথাগুলো আজ না হলেও পরবর্তীতে তাদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করবে।
img20171107_111310
♥তাদের শখের কাজগুলোকে মূল্যায়ন করুন। সম্ভব হলে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন। মাঝে মাঝে নিজেদের হাতে গড়া পুরানো শিল্পগুলোর দিকে তাকিয়ে তারা অনেক উদ্দীপিত হবে।
img20171107_112045
♥অবসরে প্রাকৃতিক পরিবেশে একসাথে ঘুরে বেড়ানো বা সময় কাটানো যেতে পারে। এতে করে পারিবারিক বন্ধন শক্ত হওয়ার সাথে সাথে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে।
img20171107_111439
♥ঘরে বসেও অবসরে মজার কোন মুভি দেখা, গান শোনা, ছবি আকা বা গল্প বলার প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সৃজনশক্তি বাড়াতে এর জুড়ি নেই।
img20171107_111847
♥পারিবারিক অশান্তি বা মনোমালিন্যের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুগুলো সাধারনত বুজদিল হয়ে থাকে। ইতিবাচক চিন্তা করার মত সাহস তারা হারিয়ে ফেলে।
img20171107_104855
♥সন্তানদের রাগ, দুঃখ বা ক্ষোভকে প্রকাশ করতে দিন। এতে তার মন ভারমুক্ত হবে। বাচ্চা জেদ করে কান্নাকাটি করা কালীন ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া মারাত্নক খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সারাজীবন তার মনে এর নেগেটিভ প্রভাব রয়ে যায়।
img20171107_111340
♥সারাদিনে কি কি ভাল কাজ করল তার একটা ডায়রী মেইন্টেইন করতে দিন। সপ্তাহ বা মাস শেষে এগুলোর জন্য পুরষ্কার দিন। দেখবেন ওই ভাল কাজগুলো একদিন না একদিন তার অভ্যাসে পরিণত হবে।
img20171107_104634
ছোটবেলা থেকে পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখালে বয়সের সাথে সাথে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। পজিটিভ এনার্জি সঞ্চিত বাচ্চাগুলো অনেক বিরূপ পরিস্থিতেও সহজে বিচলিত হয়না, বিষন্নতায় ভুগে না। ইতিবাচক চিন্তা তাদের মনোবলকে বলিষ্ঠ করে, জীবনীশক্তিকে বাড়িয়ে দেয় অনেক বেশী। শারিরীক সুস্থতা তো বটেই, মানসিকভাবে সুস্থ সন্তান আমাদের কার না কাম্য!

 

দাম্পত্য (১১) – নুসরাত রহমান

আজকের বিষয়টি একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে। দাম্পত্যের একটি পর্যায়ে আপনার সত্যিই জানা দরকার মেনে নেয়া কাকে বলে।
যদি একই বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার ঝগড়া হয়ে যায়, এর পরেও কোন পরিবর্তন না আসে, একটু ভেবে দেখার দরকার আছে, এই অবস্থা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব কি না। কিছু বাস্তব উদাহরণ দেই –


নাবিলা প্রকৃতি অসম্ভব ভালোবাসে। বৃষ্টি হলে সব এলোমেলো হয়ে যেতে চায় তার। ওর বর ঘরের বাইরে যেতেই চায়না। অফিস এর পর বাকি সময় ল্যাপটপে নাক গুঁজে থাকতেই তার যত আনন্দ। একেকটা দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ওর খুব ইচ্ছে হয় নুপুর পায়ে রাস্তায় হাঁটতে। কিন্তু কার সাথে? একা? একটুও ভালো লাগে না ওর। পূর্ণিমা কত অজস্র বার সমস্ত পৃথিবীতে স্বপ্নের তুলি বুলিয়ে গেল – কিন্তু পার্থ কোনদিনই তাই নিয়ে উচ্ছ্বসিত হল না।
এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, কান্নাকাটি, অভিযোগ, বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া – এমনকি কাকুতি মিনতিও করেছে। ভদ্রতা করে পার্থ সময় দেয়, কিন্তু তাকে যে একটুও ছোঁয় না এসব বুঝতে পেরে নাবিলাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।


আরিফ চটপটে স্মার্ট একটা ছেলে। সংসার, ক্যারিয়ার সবই সময় মত গুছিয়ে নিয়েছে। এখন থেকে আগামি দশ বছরের প্ল্যান মাথায় আঁকা আছে তার। পঁচিশে নিজের খরচে বিয়ে, ঊনত্রিশে নিজ এপার্টমেন্টে প্রথম সন্তান – এগুলো কোনটিই তার পরিকল্পনার বাইরে ছিল না। শুধু, শুধু … ভাবতে ভাবতে ভুরূ কুঁচকে যায় ওর। শুধু এই মিথিলাকে নিয়েই হয়েছে যত বিপদ। চার বছরেও একটু সংসারি হল না মেয়েটা। মানুষের চিন্তায় ঘুম নেই, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নেই, চাকুরিতে মন নেই – কেবল কীভাবে কার কী হল না হল – কাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় – আরে বাবা! নিজের উন্নতি হলেই না দেশের উন্নতি। এত বলে, একটু টাকা পয়সার হিসাব কর, নিজেকে সেটল করার চেষ্টা কর – কীসের কী! মিথিলা ডুবে আছে দশের চিন্তায়।


মুনা ও ইশতিয়াকের বিয়ের বারো বছর হতে চলল। ওদের ঘর টিপটপ সাজানো গোছান। এক কণা ধুলোও পড়তে পারেনা। মুনার মাত্রাতিরিক্ত শুচিবাই এর যন্ত্রণায় ঘরের মানুষগুলি তটস্থ হয়ে থাকে একেবারে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলে খণ্ডপ্রলয় হয়ে যায়। ইশতিয়াকের পরিবার কেবল না, মুনার বাবা মাও অনেক চেষ্টা করেছে। একসময় ইশতিয়াক ভেবেছিল সন্তান আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়নি। সন্তানের যত্নআত্তি সব করেও মুনা কী করে যেন ঠিকই সময় বের করে নেয়।


জামান সাহেব পলিটিক্স এর পোকা। রাতভর টিভি তে টক শো, দিনে সবগুলো পেপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া – লং ডিস্টেন্স কলে লম্বা লম্বা আলাপ জমানো – উনার আর কিছু নেই, পলিটিক্সই ধ্যান জ্ঞান। উনার স্ত্রী চাকুরি, সন্তান বড় করা, ঘরকন্না সব করেও ভদ্রলোকের মনের থই পান না। স্বাভাবিক ভাবেই উনার মনে জমে আছে অসংখ্য অভিযোগ। যাকে পান তার কাছেই বলে মনের বোঝা হালকা করেন। না, জামান সাহেব পরিবার কে অর্থকষ্টে রাখেন নি কোন দিন, কিন্তু অর্থ সরবরাহের বাইরে সত্যিকার অর্থে তেমন কিছু আর করেনও নি।

এই গল্পগুলো একটাও কি আজগুবি মনে হচ্ছে? নিশ্চয় না। অমন জমে থাকা পুরনো ক্ষোভ কোন্‌ দম্পতির না থাকে? স্বামীটা মনের মত হয়নি, বা স্ত্রী তার নিজের জগতে থাকে – এমন অভিযোগ ছাড়া দম্পতি পাওয়াই ভার। অভিযোগের বৈশিষ্ট্যই এই, একের পর এক প্রলেপ পড়তে পড়তে গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়। যেহেতু অনেকবার চেষ্টা করেও বদলানো যায়নি – তাই যতবার ব্যর্থ হয়েছে ততবার এক পোঁচ করে তিক্ততার রঙ লেগেছে। এরপর যত সময় যাবে, একেকটা অভিযোগ পুরনো সবগুলো স্মৃতির বোঝা সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। তখন ঐ ছোট্ট ঘটনাটাও ক্রমাগত অভ্যাসের কারণে বড় হয়ে দাঁড়াবে। বলে না – ছোট পাপও বার বার করলে বড় পাপ হয়ে যায় – ছোট দুঃখও বার বার ছাপ ফেলতে ফেলতে গভীর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এখানেই ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে। যখন অপরজনের একটা অভ্যাস বা স্বভাব আপনার মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে, কিন্তু সবরকমের চেষ্টা করেও বদলাতে পারেন নি – আপনার পক্ষে কি সম্ভব তাকে মেনে নেয়া? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন –
এই অভ্যাস কি তার মজ্জাগত?
আমি কি আমার পক্ষে যত ধরণের চেষ্টা সম্ভব সব ভাবে চেষ্টা করেছি?
ঐ বিরক্তিকর অভ্যাস/স্বভাবটার বাইরে বাকি সময়টা কি আমাদের সুন্দর কাটে?
ঐ স্বভাবের কারণে আমি যা হারাচ্ছি তাকে মেনে নিয়ে কি আমি সুখে থাকতে পারবো?

উপরের উদাহরণগুলোতে দেখুন, মিথিলা স্বভাবগত ভাবেই পরোপকারী। ওর চিন্তাগুলো এমনভাবেই বিকশিত হয়েছে। ওর পক্ষে আরিফের মত করে চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব, যেমন অসম্ভব আরিফের পক্ষে নিজের জীবনের প্ল্যানের উপরে অন্যের জন্য উপকার করাকে স্থান দেয়া। মুনার ভয়ানক শুচিতার স্বভাবটা না থাকলে ওদের পরিবারে আরও অনেক বেশি আনন্দ থাকত হয়তো, কিন্তু এতে করে ইশতিয়াককে ঘরকন্না সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা প্রায় করতেই হয়না। উপরন্তু ও একটা টিপটপ সাজানো গোছান সংসার পেয়ে যাচ্ছে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলে!

একইভাবে, বৃষ্টিভেজা পথে নাবিলা পার্থকে না পেলেও বৃষ্টির সৌন্দর্য মিথ্যে হয়ে যায়নি। নূপুরের শব্দের প্রতি কোন মোহ না থাকলেও পার্থ তার নিজের মত করে নাবিলাকে ভালবেসেছে। হ্যাঁ, নাবিলার স্বপ্নের মত হয় নি, কিন্তু বাস্তবটাও সুন্দর, অন্যরকম। ঠিক তেমনি করে, মিসেস জামানের এই মানুষটার প্রতি অনেক ক্ষোভ থাকলেও তিনি বুঝে গেছেন, এর বাইরে আর কিছু হবার নয়। যদি জামান সাহেব অন্য রকম হতেন, উনিও অন্য রকমের এক স্ত্রী হতেন। লতায় পাতায় শান্তি অশান্তি সুখ অসুখের মধ্য দিয়েই কেমন করে যেন জীবনটা কেটে যাচ্ছে। উনার চাওয়ার ১০০ ভাগ উনি কোনদিন পান নি, কিন্তু যে পঞ্চাশ ভাগ পেয়েছেন, তার চারপাশেই বৃত্ত রচনা করে আশার পরিধি ছোট করে এনেছেন। দিন শেষে সুখের পূর্ণতার খোঁজে সবাই যে কেবল দিকভ্রান্ত হয়ে ফেরে, তা বুঝতে উনার ভুল হয়নি।

ছাড় দেয়া ক্ষেত্র বিশেষে মহৎ, আবার ক্ষেত্র বিশেষে অন্যায়ও। ইবাদতে ফরজ আর নফলের মাঝে যেমন পার্থক্য স্পষ্ট, সহনশীলতার বেলায়ও তেমনি বিভাজনরেখাটা স্পষ্ট থাকা উচিৎ। অনেক সময় ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার নারী/পুরুষটিকে উপদেশ দেয়া হয় সংসারের স্বার্থে মেনে নিতে। বা স্ত্রীর বা স্বামীর অবশ্যকর্তব্যগুলি পালন করেন না এমন মানুষের বেলায় বলা হয় “তারপরেও তো তোমার সাথে একজন আছে। না থাকলে কী করবা?” উল্লেখ্য, ছাড় দেয়ার বোধ নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে, অন্যে যেন জোর করে রাজি না করায়। আর অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে নিজের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করাকে ছাড় দেয়া বলে না, অন্যায় বলে। আমরা যখন বুঝব অদূর ও সুদূর ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য দাম্পত্যে কোন বিষয়গুলি অপরিহার্য, তখন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটাও সহজ হয়ে আসবে।

 

বই বৃক্ষের চারা- আফরোজা হাসান

জ্ঞানার্জনের পথে চলতে গিয়েই আমার সাক্ষাৎ ঘটে বইয়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম বই পড়ার আনন্দ। একটা সময় সেই আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। মনেহল বই পড়ার আনন্দ যারা উপভোগ করতে জানে না, তারা এক অর্থে সব আনন্দ থেকেই বঞ্চিত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য বইয়ের মতো উৎকৃষ্ট জিনিস আর কিছুই নেই। কারণ বই সেই মানুষ তৈরি করে যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিগৃহীত হতে পছন্দ করে না। তাই আমরা যদি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
img20171104_224846
মনের নরম মাটিতে ছোট্ট একটা বইবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলাম, আজ চেয়ে দেখি মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে আমার মনের সেই বইবৃক্ষ…………
img20171104_224411
বৃক্ষে ধরেছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী নানা ধরণের বই………..
মাতাল হাওয়ায় পরশে মাঝে মাঝেই ঝরে পড়ে যার কিছু পাতা……….
তারপরও তাদের স্পর্শে চিরসবুজ-চিরসজীব থাকে মনের বনভূমি…..
জেগেছে যে নেশা প্রাণে মৃত্যু অবধি ছেড়ে যেন না যায় কভু মোরে………
img20171104_224637
বই সম্পর্কিত আমার প্রিয় কিছু বাণী-

গ্যেটে বলেছেন- কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

@ ভিক্টর হুগো বলেছেন- বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন- পৃথিবী আর সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত, বই পড়া এবং তারজন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন- আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

প্রতিভা বসু বলেছেন- বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

-ওমর খৈয়াম বলেছেন- সুর্যের আলোতে যেরূপ পৃথিবীর সবকিছু ভাস্কর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

-কবি জসিমুদ্দিন বলেছেন- বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। সৃষ্টির আদিকাল হইতে মানুষ আসিয়াছেন আর চলিয়া গিয়াছেন। খ্যাতি-মান-অর্থ-শক্তি কিছুই কেহ রাখিয়া যাইতে পারে নাই। কিন্তু বইয়ের পাতা ভরিয়া তাহারা তাহাদের তপস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের নৈরাজ্য, কি হইতে চাহিয়া কি তাহারা হইতে পারেন নাই সবকিছু তাহারা লিখিয়া গিয়াছেন। বই আপনাকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সকল কালে নিয়া যাইতে পারে। যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নাই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সেই দেশে যাইতে পারিবেন।”
img20171104_223247
আমারো ম্যাক্সিম গোর্কী’র মত বলতে ইচ্ছে করে-আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।
আলহামদুলিল্লাহ!

 

সন্তানের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (১ম পর্ব) -ফাতিমা খান

মার ছেলে দুজন গল্প শুনতে খুব ভালবাসে। গল্প বলার কথা বললে যেকোন কাজ ছেড়ে আমার পাশে এসে বসে যায়। বড়জন শোয়া অবস্থায় থাকলে বসে পড়ে। গল্প শোনার সময় তার চোখের পলক পড়ে না, মাথাটা কাঁধের আরো কাছে নামিয়ে গাল-গলা ফুলিয়ে গল্প শোনে। তখন দেখতে শান্তশিষ্ট গাদুম গুদুম বিড়ালের মত দেখা যায়। ছোটজন সোজা কোলের মধ্যেই এসে বসে পড়ে, একদম মাথাটা আমার থুঁতনির সাথে লাগিয়েই বসে, যেন এখানে এ্যন্টিনা জাতীয় কোন সরাসরি সংযোগের ব্যবস্থা আছে। ওদের এই আগ্রহ দেখে আমারও ভাল লাগে কিন্তু সমস্যা হল এভাবে ওদের নিয়ে গল্প বলার সময় পাই খুব কম।
img20171103_231344
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, বাচ্চারা ইতিবাচক গল্প পছন্দ করে। যদি কোন গল্পের সমাপ্তি নেতিবাচক হয়, যেমন- শেয়াল কুমিরের বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলল, বা বাচ্চা ডাইনোসর টা পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে গেল, তাহলে আমার দুজনই মন খারাপ করে। বড়জন বলেই ফেলে “গল্পটা এভাবে শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে, আপনি বাকিটা বানিয়ে বলেন”। এই ”বাকিটা বানিয়ে বলেন” এর অর্থ হল “একটা শুভ সমাপ্তি” তারা শুনতে চায়। আমি বানিয়ে টানিয়ে গল্পের একটা খুশী খুশী সমাপ্তি টেনে দেই ( অভ্যাসবশত এই কাজটা মনে হয় আমি ভালই পারি)। ছোটজন গল্প শুরু করার আগেই বলে রাখবে ” আম্মু গল্পটা কিন্তু মজার হতে হবে, আমি স্যাড গল্প পছন্দ করিনা।” তো আমিও ওদের জন্য মজার মজার গল্প জোগাড় করি, না পেলে বানিয়ে বানিয়ে বলি। ওরা তন্ময় হয়ে শোনে।
img20171103_231213
ইদানিং ছোটু আমার অজান্তেই আমার ফোনে “স্টোরিয অফ প্রফেটস” নামের একটা এ্যপ ডাউনলোড করেছে। সেদিন দেখি বসে বসে নবীদের গল্প রিডিং করছে। খুব ভাল কথা, কিন্তু সমস্যা হল গল্পগুলো ঠিক শিশুতোষ ছিল না। হয়ত দশ বারো বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য ওটা একদম পারফেক্ট এ্যপ কিন্তু ওর বয়সোপযোগি মোটেও না। তাই নবীদের এই গল্পগুলো পড়ার পর তার মনে অনেক প্রশ্ন। যেমন- “আম্মু, আদম (আ) কেন ফরবিডেন ট্রি থেকে ফ্রুট খেয়েছিল? উনি কেন আল্লাহর কথা না শুনে ডেভিল এর কথা শুনেছিল?” কিংবা, “নুহ (আ) কেন ছেলে কেনানকে রেখে বিগ উডেন বোট এ করে চলে গিয়েছিল?” এরকম হরেক প্রশ্ন। তার উত্তরগুলো দিতে আমাকে ভাবতে হয়েছিল। উত্তরগুলো এমনভাবে সাজাতে হয়েছে যেন তার মনে ধর্মের প্রতি অভক্তি না আসে আবার উত্তরগুলো সঠিক ও তার কাছে গ্রহনীয় হয়। ধর্ম শিক্ষার ব্যাপারেও সাধারনত আট নয় বছর বয়সের আগে পাপের শাস্তি কিংবা বিয়োগাত্নক ব্যাপারগুলো না বলাটাই ভাল। তাতে ওদের কোমল মনে ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
img20171103_231059
দেশে গিয়ে দেখলাম,ছোট ছোট বাচ্চা গুলো একাকি বা আর সদস্যদের সাথে বসে স্যাটেলাইটের চ্যানেল গুলোতে দেশী বিদেশী ড্রামা সিরিয়ালগুলো নেশার মত দেখছে। নাটকের ক্লাইমেক্স এ তাদের উত্তেজনা থাকে টানটান, plচোখ মুখের ইম্প্রেশনে এটা স্পষ্ট যে তারা মন মস্তিষ্কের সবটুকু দিয়েই ব্যাপারগুলো গ্রহণ করছে। সময়ে অসময়ে ঠিক নাটকের মত সাজ, কথা বা কাজ করতে তারা একটুও পিছপা হয় না।
ছোটকালের শোনা গল্প, দেখা নাটক, ছবি বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কিংবা ওদের সাথে ঘটে যাওয়া উভয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক আচরণগুলো ওদের জন্য শিক্ষার অনেক বড় অংশ হয়ে যায়, বড় হওয়ার পরও এর বিপরীতে কোন কথা বা উপদেশ সহজে গ্রহন করতে চায় না, হোক ভাল বা মন্দ। আজকের পৃথিবীর বেশীরভাগ কিশোর কিশোরী বা যুবক যুবতিদের প্রধান সমস্যা ডিপ্রেশন,যার অংকুর তৈরী হয়ে যায় শিশুকালে।
img20171103_231301
ছেলেদের মাঝে পজিটিভ থটস বা ইতিবাচক চিন্তা আর আদর্শিক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আমি সময় পেলেই চাইল্ড সাইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ি। কখনো একই বিষয় বারবার পড়ি। এই ব্যাপারে আমার একটা ফ্যান্সি আছে। “বড় হয়ে কি হবে?” জাতীয় একটা কমন প্রশ্ন যদি আমার বাচ্চাদের করা হয়, তাহলে আমি চাই ওরা বলুক “একজন ভাল ও সুখী মানুষ হতে চাই”।

 

ওজন কমাতে জেনে নিন কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে

পৃথিবীতে সবচেয়ে মোটা মানুষ কে?
মিসরীয় এক নারী, পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা মানুষ সম্ভবত, যার ওজন ৫০০ কেজি।আবদেল আতির নামে সেই নারীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত ২৫ বছর ধরে তাদের মেয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। বর্তমানে তার ওজন ৫০০ কেজি।

মানুষ কেন মোটা হয়?
প্রতি ৩৫০০ ক্যালরি খাবার খেলে শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তাদের অন্তত আধা কেজি চর্বি শরীরে জমা হবে।
img20171102_142037
মানুষের দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন?
একজন মানুষের দেহে দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন তা একেক জনের জন্য একেক রকম হলেও একজন সুস্থ-সবল পরিপূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ১৮০০ ক্যালরি পরিমান খাদ্য দরকার হয়। অন্য আরেক জরিপে দেখা যায়, একজন সুস্থ ও কর্মক্ষম ১১০ পাউন্ড ওজনের ছেলের (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২৫০০ ক্যালোরির খাবার। একই ওজনের একজন প্রৌঢ়ের প্রয়োজন ২৩৫০ ক্যালোরির খাবার এবং একজন বৃদ্ধের প্রয়োজন ১৯৫০
ক্যালোরির খাবার। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১০ পাউন্ড ওজনের একজন যুবতীর (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২০৫০ ক্যালোরির খাবার।
img20171102_143121
কোন খাবারে কি পরিমাণ ক্যালরি?
ক্যালরিযুক্ত খাবার ও ক্যালরির পরিমাণঃ
কোন খাবারে কত ক্যালরি

সিদ্ধ ডিম (১টি) : ৮০
ভাজা কিংবা ওমলেট ডিম (১টি) : ১২০
মাখন লাগানো পাউরুটি (১ পিস) : ৯০
আটার রুটি (১টি) : ৬০
পুরি (১টি) : ৭৫
১টা পরোটা + ১ বাটি সবজি : ৩০০
১টা সিঙ্গারা :১০০
১ কাপ ভাত : ১৫০
১টা নান + ১ বাটি ডাল : ৩০০
রান্না মাংস (১ কাপ) : ১৭৫
রান্না সবজি (১ কাপ) : ১৫০
১ কাপ সালাদ : ১০০
১ বাটি ক্লিয়ার স্যুপ : ৭৫
১ বাটি থিক স্যুপ : ১৫০
চিনি ছাড়া রং চা / ব্ল্যাক কফি : ১০
দুধ চা / কফি : ৪৫
দুধ (১ কাপ) : ৭৫
ফলের রস : গড় ১২০
মাখন (১ চা চামচ) : ৫০
ঘি (১ চা চামচ) : ৫০
চিনি (১ চা চামচ) : ৩০
বিস্কুট (১ পিস) : ৩০
বাদাম ভাজা (১ কাপ) : ৩০০
আইসক্রিম (১ স্কুপ) : ২০০
কাবাব (১ প্লেট) : ১৫০
১ বোতল কোমল পানীয় : ২০০

সুতরাং আজকে থেকেই আপনার খাবারের প্রপার ক্যালরি মেন্যু তৈরি করুন।

 

সম্পর্কের অ্যালফাবেট -২

আধুনিক যুগে ‘দীর্ঘমেয়াদি বিবাহিত জীবন’ যেন কল্পনা হয়ে গেছে। প্রথম ধাক্কাতেই সব বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে অধিকাংশরাই দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ দিতে প্রস্তুত থাকেন।অন্যান্য সম্পর্কের মতোই বিবাহিত সম্পর্ক টেকাতেও সহায়তার প্রয়োজন হয়।
আজকের পর্বে E থেকে O পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সম্পর্কের টিপস,

Equal(ন্যায়সঙ্গত বা সমতা): সমতা মানে সমান। প্রতিটি মানুষ নাকি আলাদা, কথাটি কিন্তু একদম সত্য। তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিনগোরানি মনে করেন, দুজন দুজনের হয়ে গেছেন এটায় সমতা। প্রত্যেকেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে সুন্দর বন্ধনেরর জন্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে নিজস্ব ইচ্ছা ও চাহিদা ব্যক্ত করে একটা বন্ধনকে করে তুলতে পারে সুন্দর ।
Flexible(কোমল বা নম্রতা): কোমল আচরণ সবাই পছন্দ করে। এর ঠিক বিপরীতে একগুয়েমীতা আর জেদ। আর এ কারণে দাম্ভিকতা সম্পর্কে যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি নম্রতা দেয়ায় তখনই বন্ধনে মজবুতি বাড়ে। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে সব সম্পর্ককে সুন্দর পরিনতি দিকে নিয়ে যেতে হয়।
Generous(উদার): উদারতা হল দাম্পত্য জীবনের মুল কথা। ভোর বেলা উঠে বউ ঘুম নষ্ট করে অনেক কাজ করে। এটা বিস্তৃত একটি উদারতা। কেউ কেউ মনে করেন শুধুমাত্র উপহার দিতে পারাটা উদারতা। কেউ মনে করে ঘুরতে যাওয়া আর রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোটা উদারতা। আবার অনেক অর্থে কার মূল্যবান সময়, শক্তি, এবং প্রচেষ্টা দিয়ে সম্পর্কটিকে জাগিয়ে তোলা হল সবচেয়ে বড় উদারতা!
Honest(সততা বা সচ্চরিত্র): বিয়ে বেশ কিছু দিন পর নাকি রোমান্স মরে যায়। এর কারণে হিসেবে কেউ কেউ সততা দ্বায় দেয়।প্রয়োজনের সময় যে কোন বিষয়ে যতটা সম্ভব মন খুলে, কোনরকম রাখডাক না রেখে, সচেতনভাবে নিজের চিন্তা ও অনুভুতি প্রকাশ করতে পারলে রোমান্স টিকে থাকবে, টিকে থাকবে সততা।
Interested(কৌতূহলী): নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্ধে উঠে পাশের মানুষটির পছন্দের কাজটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ। কিছু অন্তরঙ্গ সময় কাটান। একজন আরেকজনের প্রতি মনোযোগ। এটা সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিবে।দুজন মিলে কিছু চমৎকার সময় অতিবাহিত করুন।
Just(ন্যায়পরায়নতা বা সমদর্শী): কাছের মানুষটির খারাপ এবং ভালো সবকিছু মেনে নিয়েই ত জীবন। এমন সময় কাটান যেনো একজন অপরজনের কাছে স্পেশাল হয়ে ওঠেন সব ভালো বা খারাপ চিন্তার বাইরে। পুরো মানুষটি যেমন,তেমন ভাবেই তাকে সম্মান করে তার প্রতি সুবিচার করুন।
Kind(অমায়িক দয়া বা যত্নশীল): এটা আসল বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন। দয়া বিষয়টা আসলে অনেকটা নিজের কথা বলে ত অন্যের দিকে তাকানো হয় না, সাধারণ মানুষের সাথে অনুশীলন করা দরকার পরে। সবারই উচিত অন্যের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা এবং কষ্ট টা ঠিক বোঝা, বিশেষ করে সেই সময়গুলতে যখন আপনি জানেন না বা বুঝতেই পারেন না, যে সে ঠিক কিসের সম্মুখীন হয়েছে, আর তার মোকাবেলা করাটা তার জন্য কত কঠিন। এ সময় বুঝতে পারলে দুজনের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
Loving(স্নেহশীল বা ভালবাসা): অযথা বিতর্ক টেনে নিয়ে যাবেন না। ছাড় দেন ভালবাসার মানুষটাকে। ভালোবাসা আসলে কি তা বুঝতে দিন? ভালোবাসা হল কাপেলদের উত্তর মতে, ঘনিষ্ট হওয়া, যত্নশীল আর পরস্পরের প্রতি জড়িয়ে থাকা মায়া।
Mature(পূর্ণবিকশিত বা পরিপক্কতা): দুজনের বা সংসারে,পরিপক্বতার স্বচ্ছতা অতি জরুরি বিষয়। সম্পর্কের পরিপক্কতা, যা সামনের দিনগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখাবে। সুবিস্তৃত রাস্তা বা পথ, আমি জানি না ঠিক সামনে কি আছে? তবুও সেই পথকে মেনে নিয়েছি একসাথে হাটার জন্য। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে বুঝা, দেখাশুনা, একসাথে কাজ করার সময় একজন অপর জনের দৃষ্টিকোণ বুঝতে চেষ্টা করা (বিশেষ করে যখন পরস্পরের দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ ভিন্ন)।
Nurturing(সুশাসিত বা লালন): অনেকেই মনে করেন, একজনই যত্ম নেওয়া হলে তা দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এটা বড় ধরনের ভুল ধারণা। পরস্পরের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী, যত্নবান, এবং সহযোগী বিষয়টি হল ঠিক এমনই। এক সাথে চলার পথে জীবন পরিচালনের জন্য সহযোগী বা সার্পোটার দুজন ব্যক্তি। প্রতিটি যৌক্তিক কাজে উৎসাহ প্রদান করে যত্নশীলভাবে একজন সঙ্গী অপরজনকে।
Open(মুক্ত বা অবারিত): জীবনের বিভিন্ন সময় নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে মুক্ত মনে। এসব ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে মধ্যমপন্থ অবলম্বন করতে হবে। সহজ উপায়ে অনুভূতি প্রকাশ, অনায়াসে বুঝা যায় এমন কথা বলতে হবে। হাসি কান্নার রহস্য নাই। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, সততা অনুরূপ কিছু এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে উন্মুক্ত সচেতনতা বুঝিয়েছেন। নিজেদের সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিকোণ খুঁজে তা সন্মান করার পক্ষে সবাই একমত।
সমস্যা থাকলে কথা বলার মাধ্যমে সমাধান করা খুব দরকার। পরস্পরের কথা ও কাজ মনোযোগ সহকারে শুনা এবং দেখা, তা উপলব্ধি করার পর এ ব্যাপারে একমত পোষণ করার মনোভাব গড়ে তুলুন।

 

ঘরের সৌন্দর্য্য রক্ষায় কি করবেন

ঘর পরিষ্কার করা কঠিন কাজ। পরিষ্কার ও পরিপাটি ঘরে থাকতে ভালো লাগে। পরিষ্কার করার কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও প্রশান্তিকর। সহজ কিছু কৌশল জানা থাকলে এই কাজটি খুব সহজে ও কম সময়ে করা যায়।
সামনে তুলে ধরছি কয়েকটি মজার উপায় যা আপনার ঘরকে পরিষ্কার ঝকঝকে করে তুলতে সহায়তা করবে।
img20171102_122504
ভিনেগার & অলিভ অয়েল(পুরনো টেবিল)
আধা কাপ ভিনেগার এবং আধা কাপ অলিভ অয়েল (জলপাই তেল) মিস্ক করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পুরোনো টেবিলটিকে ভাল করে ঘষুন। দাগ উঠে যাবে এবং টেবিল অনেক মসৃণ হবে।
img20171101_221515
ওয়াশিং পাউডার, হুইটেনার & বোরাক্স পাউডার(কাপড়)
এক কাপ ওয়াশিং পাউডার, এক কাপ কাপড় সাদা করার পাউডার (হুইটেনার) এবং আধা কাপ বোরাক্স পাউডার এর সাথে গরম পানি মিক্স করে বালিশ আর বিছানার চাদর ধবধবে পরিষ্কার করে তুলুন।
img20171102_070548
অয়েল & বেকিং পাউডার(কাঠের আসবাবপত্র)
এক চামচ ভেজিটেবল অয়েল এবং ২ চামচ বেকিং পাউডার মিস্ক করে ব্রাশ অথবা কাপড় দিয়ে ভাল করে দরজার হাতল ঘষুন দাগ পরিষ্কার হবে।
img20171101_221100
ভিনেগার(পানির কল)
পানির কলের মুখ পরিষ্কার এর জন্য কলটি ভিনেগার এর মধ্যে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করুন। যদি ময়লা অনেক ভিতরে থাকে, তাহলে একটি ব্যাগ দিয়ে মোড়িয়ে আরও ১ ঘণ্টা ভিনেগার এর মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরিষ্কার করুন।
img20171101_221415
লবন(লোহার জিনিস)
কাগজের মধ্যে কিছুটা লবন ছিটিয়ে আয়রন মেশিনটি রাখুন। এবার মেশিনটি চালু করে সর্বোচ্চ হিট সেট করুন এবং লবণের মধ্যে ঘষুন। ঘষার সময় পানি স্প্রে (যদি থাকে) বন্ধ রাখতে ভুলবেন না। দেখবেন খুব সহজেই ময়লা উঠে আসবে। ঢালাই লোহার কড়াই এবং অন্যান্য লোহার জিনিসপাতি এভাবে পরিষ্কার করা যায়।
img20171101_221300
উলের তুলো সাথে পাউডার (হুইটেনার) & টুথব্রাশ(গোসলখানা)
গোসলখানায় প্রথমে কিছু উলের তুলো নিয়ে ঠিক ১ সেন্টিমিটার আকারের ছোট ছোট বল বানান। পাউডার (হুইটেনার) এর মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে দাগ ওয়ালা জায়গা গুলোর উপর সারা রাত ফেলে রাখুন। সকাল বেলা টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
img20171101_221149
এমোনিয়া ক্লিনার(রান্না ঘরের চুলা)
রান্না ঘরের চুলোর লোহার অংশ থেকে তেল পরিষ্কার করার জন্য এমোনিয়া ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ এর মধ্যে চুলোর অংশটি নিয়ে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ এমোনিয়া ক্লিনার ছিটিয়ে ১২ ঘন্টার জন্য ফেলে রাখুন। এরপর পরিষ্কার করুন।
img20171101_221338
স্পিরিট(সোফা পরিষ্কার)
সোফা থেকে ময়লা দাগ দূর করতে একটি পরিষ্কার সাদা ব্রাশ নিয়ে অল্প পরিমান স্পিরিট মিশিয়ে পরিষ্কার করুন। অস্বস্তিকর গন্ধ দূর করার জন্য কিছুটা বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন।