banner

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

রুদ্রের ছবি ঘর…

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি “প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। 
কয়েকটি লাইনে তাকে দেখার চেষ্টা …..
img20171012_004438
কারো কারো স্বপ্নের সিন্দুকে থাকে আজীবন তালা,
আর কেউ ফলবান বৃক্ষের মতোন
হয়ে ওঠে বিপুল সমৃদ্ধ–
img20171012_004739
তবু শেষমেশ একটি নীলাভ প্রজাপতির জন্যও
যে যার স্মৃতির ফ্রেমে কষ্টকে বাঁধিয়ে রাখে।
img20171010_233630
দুঃখ আর স্মৃতিরা খুব বেশি দীর্ঘজীবী হয়
জীবনের অধিকাংশ অনুর্বর ভূমিতে।
img20171012_004631
যে রাত ‘পাশাপশি বসিবার বনলতা সেন’
সে রাত আমার নয়, সে রাত অন্য কারো।
img20171012_005449
প্রতিদিন কিছু কিছু ইচ্ছা মরে যায়
অনিচ্ছাকৃত মরে যেতে হয়
অযত্নে মরে যায়।
img20171012_004601
প্রতিদিনই কিছু কিছু ইচ্ছারা
নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়
নির্বাসিত হয়।
img20171012_004532
ব্যর্থ প্রেমের মতো কিছু কিছু ইচ্ছা
স্মৃতির অসুখে ভোগে দীর্ঘদিন,
img20171012_005857
কিছু কিছু ইচ্ছা স্বইচ্ছায় হত্যা করি
ইচ্ছার হননে বিবর্ন হই বারবার
তবু হত্যা করতেই হয়।

 

আগন্তুক…

একটা ট্রেন মিস হয়ে গেলেও চান্স থাকে পরের ট্রেনটা পাবো,কিন্তু জীবনে এমনও সুযোগ আসে যা একবার মিস হয়ে গেলে আর কোন দিন দ্বিতীয়বার সুযোগ আসবে কি আসবেনা সেটা কেউ জানেনা।ন্যু ক্যাম্প থেকে আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত লা নুয়েভা মার্কুয়েসা রেস্তোরায় একাকী একটা টেবিলে বসে আছি।স্পেন,ইতালী থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান খাবারও পাওয়া যায় এই হোটেলে।ওসব জিবে জল আনা খাবারের কোনটার প্রতিই আমার মন নেই।এমনকি মন নেই চোখ ধাধানো ডেকোরেশান আর নানা দেশ থেকে আগত পযর্টকদের দিকেও।দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত সুন্দরী এলসার দিকেও তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।সুদুর বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা মনটা পড়ে আছে আধা কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ন্যু ক্যাম্পে।যে মনটা একই সাথে ব্যাথিত না পাওয়ার যন্ত্রনায়।বার বার মনে হয় যদি মনের সাথে সাথে পুরো মানুষটিকেই ন্যু ক্যাম্পের কোন একটা চেয়ারে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেতাম তবে ভাল হত।কিন্তু সে কপাল নিয়ে হয়তো আসিনি আমি।

বিষয়টি খোলাশা করে বলা দরকার।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছি ফুটবলের স্বর্গরাজ্য বার্সেলোনায়।লা নুয়েভা মার্কুয়েসার দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয় সুন্দরী তরুনী এলসাও একই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে। সাত দিনের জন্য এসেছি এখানে।বার্সেলোনায় এসে ন্যু ক্যাম্পে খেলা না দেখে যাওয়া মানে অমূল্য কোহিনুর হাতে পেয়ে অবহেলায় ছুয়ে না দেখার মত।সম্মেলন গত কালই শেষ হয়েছে, হাতে আছে আজ এবং আগামী কাল।বাংলাদেশের আকাশ অতিক্রমের আগেই খোঁজ নিয়ে জেনেছি সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেরদিনই ভাগ্য ক্রমে ন্যু ক্যাম্পেই এল ক্লাসিকো আছে।মনে মনে পণ করেছিলাম সম্মেলন শেষ করে হাতে যে দুদিন সময় থাকবে তার একদিন ন্যু ক্যাম্পে এল ক্লাসিকো দেখে কাটাবো।কিন্তু সবার স্বপ্ন সত্যি হয়না।

ঢাকার ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা হোটেলে আলমারির কাঁচের ফাক দিয়ে নানা রকম মিষ্টি দেখার পরও সেসব যেমন পথ শিশুদের ভাগ্যে জোটেনা বরং স্বপ্নই থেকে যায়, ঠিক একই ভাবে আমার স্বপ্নও নিরবে খুন হয়।ক্রিড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর কাছ থেকে অনেক বার শুনেছি ন্যু ক্যাম্পের টিকেট পাওয়া আর হাতে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়া একই কথা।সে সব কথা মাথায় রেখে বার্সেলোনার মাটিতে পা রেখে সম্মেলনে যোগ দেবার আগেই ন্যু ক্যাম্পের একটা টিকেট হাতে পাওয়ার জন্য বার কয়েক ঢু মেরেছি।অনলাইনেও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

কোন টিকেট নেই জানার পর মনটা বিষিয়ে উঠেছে।আহ কী শান্তি ঢাকাতে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালিন সময়েও দু একটা টিকেট পাওয়া যায়।কিছু না হোক ব্লাকেও টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এখানে? ভেবেছিলাম উন্নত দেশ হলে কি হবে, হয়তো দু একটা টিকেট এখানেও ব্লাকে পাওয়া যাবে।নাহ পাওয়া যায়নি এমনটি বলতে চাইছিনা।পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সেই টিকেটের যে দাম তা দিয়ে হয়তো ঢাকা থেকে বার্সেলোনা দুবার যাওয়া আসার প্লেন ভাড়া হয়ে যাবে।বাড়িয়ে বলছি হয়তো কিন্তু নিদেন পক্ষে সে টাকা দিয়ে অন্তত একটা পালসার মটর সাইকেল কেনাই যাবে বলে মনে হয়েছে।ওই পরিমান অর্থ আমার নেই।ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া আসার ভাড়াই কখনো ছিল কিনা সন্দেহ আছে, সেখানে অতগুলো টাকা আমি কোথায় পাবো।বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে এসেছি সম্মেলনে অংশ নিতে।সাথে খরচ বাবদ যা বাজেট ছিল তা থেকে হয়তো একটু কৃপণতা করতে পারলে ন্যু ক্যাম্পে এল ক্ল্যাসিকোটা দেখাই যেত। কিন্তু টিকেটের দুর্ভিক্ষ আমার ভাগ্যকে সুপ্রন্ন হতে দেয়নি।

বিয়ের আসর থেকে বর পক্ষ উঠে চলে গেলে কনের বাবার যে অবস্থা হয় আমার অবস্থা হয়েছে সেরকম।ন্যু ক্যাম্পের এতো কাছে এসেও খেলা দেখা হচ্ছেনা ভেবে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।আসলে যেখানে এক মাস আগে থেকেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায় সেখানে আমি খেলার মাত্র চার পাঁচদিন আগে টিকেটের আশা করে বরং বোকামীই করেছি বলে মন্তব্য করলেন এক স্প্যানিশ ভদ্রলোক।ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার স্বপ্নটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে বাকি জীবন।এতো কাছে এসে যে স্বপ্নটা ধরা দেয়নি সেটা বাকি জীবনে ধরা দেবে বলে মনে হয়না।মনের অবস্থা তখন এমন হয়েছে যেন মনে হচ্ছে প্রিয়জন ছেড়ে গেছে আমাকে।ফুটবল পাগল এই আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় এসেও ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে না বসতে পারাটা নিশ্চই তার থেকে কোন অংশেই কম বেদনার নয়।তখন আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পই আমার প্রেমিকা।যে কাছে থেকেও অনেক দূরে।যার ছোয়া পাওয়ার আশা বুকে নিয়ে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর দেশ আমার সোনার বাংলার আকাশ পাড়ি দিয়ে সাত সমুদ্র তের নদীর এপারের এই দেশটিতে এসেছিলাম সে আমাকে ছুতে দেয়নি।ন্যু ক্যাম্প আমাকে বঞ্চিত করেছে ভালবাসা থেকে।

লা নুয়েভা মার্কুয়েসায় বসে আমার মনের মধ্যে শুধু ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার ব্যাথা বার বার মনকে উতলা করে তুলছে।টেবিলে রাখা প্রন স্যুপ থেকে সুবাশিত ধোয়া ওঠা থেমে গেছে সেই কখন তা বুঝতেই পারিনি।আমি যখন চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আর প্রেমিকা হারা প্রেমিকের মত হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে বসে আছি লা নুয়েভা মার্কুয়েসার টেবিলে একাকী তখন সামনের চেয়ারটা টানতে টানতে বসার অনুমতি চাইলেন এক বৃদ্ধ লোক।তার কথাতে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকে বসার অনুমতি দিলাম।দেখে মনে হতে পারে যেন আমি মাস্টার মশাই আর আমার সামনে বসতে চাওয়া লোকটা আমার ছাত্র এবং সে বসার অনুমতি চাইছে।এই দেশটা বড়ই সুন্দর।এখানকার মানুষের আতিথেয়তার কথা নাইবা বললাম কিন্তু এদের ভদ্রতা সত্যিই মুগ্ধকর।হোটলের চেয়ারগুলো সবার জন্যই সমান অথচ সেখানে বসার জন্যও এরা কী সুন্দর ভদ্রতা করে অনুমতি চাইছে অপর প্রান্তে বসে থাকা সুদুর বাংলাদেশ থেকে আসা ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার দুঃখে জর্জরিত এক তরুনের কাছে।

তার কথাতেই বুঝলাম তিনি স্প্যানিশ।আমার প্রনস্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তিনি ইংরেজীতেই বললেন স্যুপতো ঠান্ডা হয়ে গেছে খাওনি কেন? তোমাকে বিষন্ন লাগছে কেন?তার কথাতে মনে পড়লো স্যুপের অর্ডার দেওয়ার পর সেই কখন স্যুপ দিয়ে গেছে তা খেয়ালই করিনি।

আমি স্যুপের চামচ নিয়ে খেতে যাবো তখন ভদ্রলোক খেতে নিষেধ করলেন।ওয়েটারকে ডাকলেন।স্প্যানিশে ওয়েটারকে কামারেরো বলা হয়।ওয়েটার এসেই তাকে সালাম দিল।ওদের কায়দায় এবং তিনি তখন ওয়েটারকে বললেন আমার স্যুপটা পাল্টে গরম স্যুপ পরিবেশণ করতে।ওয়েটার তার কথা মত সত্যি সত্যি মুহুর্তেই আমার স্যুপটা বদলে গরম স্যুপ দিয়ে গেল।আমি খেতে খেতে বৃদ্ধকে দেখতে লাগলাম।তিনি সম্ভবত প্রভাবশালী কেউ নয়তো এই রেস্তোরার নিয়মিত কাষ্টমার। তা না হলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অধিকাংশ ওয়েটারই তাকে সম্মান দেখাতো না।এসবের পরও আমার মনটা ঠিকই পড়ে ছিল ন্যু ক্যাম্পে।মাত্র ঘন্টা খানেক পরই খেলা শুরু হবে।ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় থেকেও সেখানে যাওয়া হচ্ছেনা আমার এর থেকে বড় ব্যথার আর কি থাকতে পারে।এসব ভাবছি আর আনমনে স্যুপের চামচে চুমুক দিচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তিনি সম্ভবত বেশ খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। চোখে চোখ পড়তেই সেটা সরিয়ে না নিয়ে জানতে চাইলেন আমি কি কোন বিষয়ে খুব চিন্তিত কিনা।

মনে মনে ভাবলাম ন্যু ক্যাম্পে খেলা দেখার স্বপ্ন মরে গেছে এটা তাকে জানাই আবার মনে হলো তাকে জানিয়ে লাভ কি? তাতে বরং দুঃখটা আরো বাড়বে বই কমবেনা।দুঃখের সময় কেউ যখন শান্তনা দেয় তখন বরং দুঃখ কমে না গিয়ে আরো বেড়ে যায়।আমি কিছু বলছিনা দেখে তিনি আবারও জানতে চাইলেন। পরে ভাবলাম এতো করে যখন বলছে তাকে বলাই যেতে পারে।আমি বিষয়টা জানালাম।তিনি তেমন কিছু বললেন না।আপন মনে ধোয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিলেন।মনে মনে রাগ হলো।এই দেশের মানুষ দেখছি বেশ কৃপন।

বিনা পয়সায় একটু সহানুভুতি দেখাবে,টিকেট পাইনি বলে যে কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য একটু শান্তনা দেবে তার কোন নাম গন্ধ নেই?আমাদের দেশ হলে কেউ কি এরকম করতো?চারদিকে যতজনকে দেখা যেত সবাই শান্তনা দিত।বলতো এবার পাওনি তো কি হয়েছে পরে নিশ্চই পাবা।সুযোগতো বলে কয়ে আসেনা। দেখবা হুটকরে একদিন সুযোগ চলে এসেছে।আর এই স্পেনের এই বুড়ো মানুষটা মুখে টু শব্দটিও করলো না?মনে মনে ভাবলাম লোকটার সাথে আর কোন কথাই বলবো না। আমি আপন মনে স্যুপ খেতে লাগলাম।একটিবার শুধু তার দিকে তাকালাম।সে আগেই কফি শেষ করেছে।কি কারণে যেন কফি শেষ হওয়ার পরও তিনি টেবিল ছেড়ে চলে না গিয়ে বসে থাকলেন।

আমি স্যুপ খাওয়া শেষ করে টেবিল ছেড়ে উঠলাম।আশ্চর্য আমার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটাও উঠলেন।আমি কাউন্টারে গিয়ে বিল পরিশোধের জন্য মানিব্যাগ বের করতেই কাউন্টার থেকে ইংরেজীতে জানানো হলো বিল দিতে হবেনা।কেন দিতে হবেনা জানতে চাইলে তিনি পাশের বৃদ্ধকে দেখিয়ে বললেন আপনি ওনার অতিথি তাই আপনার থেকে কোন বিল নেওয়া হবেনা।আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।একটু আগেই সমবেদনা কিংবা শান্তনা দেয়নি বলে মনে মনে যাকে আমি কৃপণ বলেছি সে আমার স্যুপের বিল দিয়ে দিচ্ছে।তখন তার প্রতি আমার মুগ্ধতার সীমা নেই।তিনি আমাকে নিয়ে লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে এলেন।

ঠিক তখন খেয়াল হলো আমাকে যেমন তিনি বিল দিতে দেন নি তেমন তিনি নিজেওতো কোন বিল দিলেন না।তিনিকি সেটা ভুলে গেছেন?আর ভুলে গেলেওতো রেস্তোরার ম্যানেজার ভুলে যাবার কথা নয়।তখন মনে পড়লো সব ওয়েটার তাকে যে সম্মান দেখাচ্ছিল তার রহস্য হতে পারে তিনিই লা নুয়েভা মার্কুয়েসার মালিক।বার্সেলোনার সব থেকে সুন্দর হোটেলের একটি হলো এটি আর সেটির মালিক নিজের অতিথি হিসেবে আমাকে স্যুপ খাইয়েছেন ভাবতেই আনন্দে প্রায় আত্মহারা হয়ে উঠলাম।

জানার লোভ সামলাতে না পেরে আমি বলেই ফেললাম যে আপনিতো রেস্তোরার বিল দিতে ভুলে গিয়েছেন।তিনি তখন বললেন না ভুলিনি আসলে ওরা খাতায় লিখে রাখবে। মাস শেষে বিল নিয়ে নেবে।আমি একটা আগ বাড়িয়ে বললাম যে আমার মনে হচ্ছিল আপনিই এই জনপ্রিয় রেস্তোরাটির মালিক। বৃদ্ধ তখন আমার অনুমানকে নাকোচ করে দিয়ে জানালেন যে তিনি ওই রেস্তোরার মালিক নন বরং নিয়মিত কাস্টমারদের একজন।তখন মনে হলো তার কথাটাই যুক্তিযুক্ত এবং যেহেতু নিয়মিত কাষ্টমার তাই সব ওয়েটারই তাকে চেনে এবং সম্মান করে।লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে আমি আমার হোটেল ক্যাটালোনিয়া অ্যাটিনাসে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই হোটেলেই আমি উঠেছি। যেহেতু ন্যু ক্যাম্পে যাওয়া হলোনা সেহেতু হোটেলে ফিরে যাওয়াই সমুচিত হবে বলে মনে করলাম।বৃদ্ধকে বিদায় জানিয়ে হোটেলে ফিরবো বলতেই তিনি বললেন তার সাথে যেতে,তাকে একটু সময় দিতে।

কেন তাকে সময় দিতে হবে কিংবা কোথায় সময় দিতে হবে তা জানার দরকার হলোনা।অপরিচিত একটা তরুণকে যিনি নিজের টাকায় স্যুপ খাওয়াতে পারেন এবং যিনি বয়সে বাবার সমান কিংবা তার চেয়ে বড় তাকে একটু সময় দিলে আমারতো কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া হোটেলে ফিরে গিয়েওতো অলস বসে থাকতে হবে। আবার মনে হলো এই বিদেশ বিভূইয়ে অপরিচিত লোকটাকে সময় দেওয়াকি ঠিক হবে?হোক সে যতই বৃদ্ধ কিংবা যতই সে আমাকে স্যুপ খাওয়াক।কি মনে করে তার গাড়িতে উঠে বসলাম।একটা বক্সস্টার এস ৭১৮ মডেলের পোর্শে কার দেখেই মনে হলো লোকটা বেশ টাকাওয়ালা।আমার মত এক শুটকো তরুনকে কিডন্যাপ করেও তার কোন লাভ নেই।সুতরাং বিনা দ্বিধায় গাড়িতে উঠে বসলাম।তিনিই ড্রাইভ করছেন আর আমি পাশে বসে আছি।এই ধরনের গাড়ি আমি শুধু হলিউডের সিনেমাতেই দেখেছি।ঢাকাতে এসব গাড়ি কল্পনাও করা যায়না।

দশমিনিটের ব্যবধানে গাড়িটা থেমে গেল।তিনি আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে নিজেও নামলেন।আমি গাড়ি থেকে নেমেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।গাড়ি থেমেছে ন্যু ক্যাম্পের সামনে।তিনিকি তবে আমার কাটা ঘায়ে আরো একটু নুনের ছিটা লাগানোর জন্য সোজা ন্যু ক্যাম্পেই নিয়ে আসলেন।পরক্ষণেই হোটেলের কথা মনে করে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে নিলাম।দেখিইনা বৃদ্ধ স্প্যানিশ কি করেন। গাড়িটা পার্ক করে আমাকে নিয়ে ন্যু ক্যাম্পের গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন।অন্যরা যখন লাইন ধরে এগোচ্ছিল ভদ্রলোক তখন লাইন ছাড়াই এগিয়ে গেলেন।গার্ড এবং সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ তার সাথে হ্যান্ডশেক করলো।আমি এই বৃদ্ধ কে এবং তার ক্ষমতা আসলে কতটুকু তা বুঝতে চেষ্টা করে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম।একবার মনে হলো তিনি সম্ভবত ন্যু ক্যাম্পের বড় কোন কর্মকর্তা আবার মনে হলো সম্ভবত স্পেনের সব থেকে ধনীদের একজন তিনি তাই সবাই তাকে ওরকম সমীহ করছেন।তিনি হাটতে হাটতে বললেন আমার কাছে দুটো টিকেট আছে আজকের এল ক্ল্যাসিকোর।সাথে আমার ওয়াইফ আসার কথা ছিল কিন্তু সে অন্য একটা কাজে আটকে পড়ায় আমি একাই আসলাম।হোটেলে যখন তোমার খেলা দেখার ইচ্ছের কথা জানতে পারলাম তখন ভাবলাম তোমাকেই সাথে নিই।আমি অবাক হয়ে বললাম আপনিতো চাইলে এই টিকেটটা পাঁচশো ইউরোতেও বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে আমাকে ফ্রি নিচ্ছেন কেন?

আমার কথা শুনে বৃদ্ধ একটু হাসলেন। তার পর বললেন তোমার ফুটবলের প্রতি যে ভালবাসা দেখেছি তাতে তোমাকে দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়েছে। আর তা ছাড়া টিকেটতো আমার কেনা লাগেনি। ফ্রি পেয়েছি।তবে হ্যা সাধারণ ভাবে এই টিকেটের দাম কিন্তু ৫০০ ইউরো না! আমি জানতে চাইলাম তাহলে এটার দাম কত? তিনি আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে দিয়ে জানালেন এই টিকেটের দাম ৪ হাজার ডলার। আর ব্লাকে বিক্রি করলে এটা সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার ডলারে বিক্রি হবে।

সামান্য সময়ের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জন্য এতো ডলারের টিকেট ফ্রিতে দিতে পারে তা কল্পনায়ও সম্ভব না আর আমি বাস্তবে দেখছি। তবে মনে হলো তিনি যেহেতু ফ্রি পেয়েছেন তাই অন্য কাউকে সেটা দিয়ে দিতেও ওনার গায়ে লাগছেনা। তবে চিন্তা একটা থেকেই গেল। কে এই ভদ্রলোক যে তাকে এরকম দুটো ভিআইপি টিকেট ফ্রিতে দিয়েছে। আবারও মনে হলো তিনি নিশ্চই প্রভাবশালী কেউ নয়তো স্পেনের সেরা ধনীদের একজন। এর মাঝেই বেশ কয়েকজন এসে তার সাথে দেখা করে গেল। স্প্যানিশে কি সব বললো তার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি।

খেলা দেখলাম খুব আয়েশ করে। ন্যু ক্যাম্পের কথা উৎপল শুভ্রর মুখে যেরকম শুনেছি ঠিক তাই। অনেক উচুতে বসে যারা খেলা দেখছে আমি নিশ্চিত তারা কার পায়ে বল কিংবা কে কোথায় দৌড়াচ্ছে তা বুঝতে পারছেনা। অত উচু থেকে দেখতে পাওয়ার কথাও নয়। জায়ান্ট স্ক্রিন থাকায় কেউ কেউ সেটা দেখে খেলোয়াড় চিনছে নতুবা কেউ কেউ সাথে করে দুবীর্ন নিয়ে এসেছে। আমরা ভিআইপি টিকেটধারী হওয়ায় জায়ান্ট স্ক্রিন কিংবা দুবীর্ন কোনটারই দরকার পড়েনি। খেলার উত্তেজনায় আমি তখন কম্পমান। যেন মেসি রোনালদো নয় আমি নিজেই খেলছি। বৃদ্ধ লোকটাও মাঝে মাঝে উত্তেজিত হচ্ছেন এবং আশ্চর্য ভাবে তিনিও আমার মতই বার্সেলোনার সমর্থক। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় খেলা ড্র হলো। বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতেই বৃদ্ধ আমাকে থামালেন।তিনি বললেন আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে।বৃদ্ধর ছেলে আসবেন তার সাথে দেখা করে তার পর ন্যু ক্যাম্প ত্যাগ করবেন।আমি বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে নিলাম। যার কল্যাণে আমার আজীবনের অধরা স্বপ্ন সত্যি হলো এই ন্যু ক্যাম্পে বসে এল ক্ল্যাসিকো দেখলাম তার জন্য একটু কেন এক বছরও অপেক্ষা করা যায়।

কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধর ছেলে আসলেন। বৃদ্ধ পরিচয় করিয়ে দিলেন এটা আমার ছেলে। আমার মুখে তখন কোন কথা নেই। আকাশের ওপরে আকাশ তারও ওপরে আরেকটা আকাশ যেন আমার মাথার উপর এক সাথে ভেঙ্গে পড়েছে।বৃদ্ধ তার যে ছেলেকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাকে যে আমি আগে থেকেই চিনি। আমার সামনে দাড়ানো বৃদ্ধর সেই ছেলেটির নাম জর্ডি আলবা। বার্সেলোনা ফুটবল দলের বিখ্যাত খেলোয়াড় তিনি।
img20171011_183238

জাজাফী
ওয়েবসাইটঃ www.zazafee.com
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 

বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

img20171011_101743
বিশ্ব প্রবীণ দিবস চলে গেল। বাংলা ট্রিবিউনে ওল্ডহোমের উপর একটি ফিচার পড়ে মনটা ব্যাথায় ভরে উঠলো।
পাঁচ সন্তানের পাঁচজনই আমেরিকা,
কানাডা,অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন টাকার অভাব নেই কিন্তু ঠাই হয়নি মায়ের। আশ্রয় নিয়েছেন ওল্ড হোমে। বাদ পড়েনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের জ্ঞানী অধ্যাপক। সমাজের উচ্চশ্রেনীর অনেকের বাবা মা আজ আশ্রয় নিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে ওল্ডহোম।

আক্ষেপ করে এক মা বললেন “প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করবে না”। ওরাও নিশ্চই একদিন এখানেই আসবে। এটা শুনে মনে পড়লো নচিকেতার গাওয়া বৃদ্ধাশ্রম গানটির কথা।যেখানে মা অপেক্ষায় আছেন আরো কটাদিন বেঁচে থাকার যেন তার সন্তানও বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিবেন সেই দৃশ্যটি তিনি দেখে যেতে পারেন।ওল্ডহোম বিষয়টি প্রতিটি সন্তানের জন্য কলংঙ্ক।

ছোটবেলায় আমরা যখন অসহায় ছিলাম তখন বাবা মাই ছিলেন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঠিক তেমনি বাবা মায়ের বয়স হলে ছেলে মেয়েরাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হওয়ার কথা কিন্তু আমরা অমানুষ হয়ে গেছি। বাবা মাকে বোঝা মনে করে ফেলে রেখে আসছি ওল্ড হোমে।

আমি তখন খুব ছোট। বাবা পুকুরে সাতার কেটে গোসল করতেন। আমি বলতাম বাবা আমিও পুকুরে নামবো। বাবা পুকুর থেকে উঠে এসে আমাকে তুলে ধরতেন তার পর ছুড়ে মারতেন পুকুরের পানিতে! আমি প্রায় ডুবেই যেতাম। অনেক পানি খেতাম। বাবা তখন আমাকে তুলে নিতেন। এভাবে অনেক বার বাবা আমাকে মাঝ পুকুরে ছুড়ে মেরেছেন। আমি অবিরাম পানি খেয়েছি আর ডুবতে ডুবতে বাবা আমাকে টেনে তুলেছেন। আমার মনে হত বাবা আমাকে ভালবাসলে নিশ্চই ওভাবে ছুড়ে ফেলতেন না।

ভাইয়ার একটা সাইকেল ছিল। আমি চাইতাম সেই সাইকেল চালানো শিখবো। বাবাকে অনেকবার বলার পর বাবা আমাকে সাইকেলে চড়তে দিলেন। নিজে পিছনে ধরে রাখলেন।আমি খুব বিশ্বাস করে সাইকেলে উঠে বসলাম। প্যাডেল করলাম আস্তে আস্তে। বাবা তখন হুট করে সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি কিছুদুর গিয়ে পড়ে গেলাম। হাটু ছুলে গেল। এভাবে বাবা আমাকে অনেক বার সাইকেলে চড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিশ্চই আমাকে ওভাবে সাইকেলে বসিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিতেন না।

আমি জুতার ফিতা বাঁধতে পারতাম না। বাবাকে বলার পরও বাবা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিত না। অথচ আমার অন্য বন্ধুদের বাবা তাদের জুতার ফিতা বেঁধে দিত। বাবা আমার পাশে বসে বার বার বলতেন এভাবে বাঁধো ওভাবে বাঁধো কিন্তু নিজে বেঁধে দিতেন না। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতেন তবে নিশ্চই ছোট বেলা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিতেন।

বাবার চা খাওয়ার খুব নেশা ছিল।নিজে একা একা চা বানিয়ে খেতেন।আমি যখন বলতাম বাবা আমাকেও এক কাপ দাওনা প্লিজ। বাবা কিচেন দেখিয়ে দিতেন। বলে দিতেন কি কি করতে হবে। নিজের বানানো এককাপ চা খাওয়ার পরও বলতেন আমার জন্যও এক কাপ বানাসতো। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিজে যখন চা বানিয়েছিল আমার জন্যও এক কাপ বানাতো।

বাবা খুব গাছে চড়তে পারতো।আমারও খুব লোভ হত। বাবাকে বলতেই বাবা আমাকে কাঁধে করে নারকেল গাছের বেশ উপরে নিয়ে যেত। তার পর বলতো গাছ জড়িয়ে ধরতে। আমি যখনি জড়িয়ে ধরতাম বাবা আমাকে ফেলে রেখে তরতর করে নিচে নেমে যেত। আমার কান্না পেতো। আমি তখন আস্তে আস্তে হেচড়েপেচড়ে নিচে নামতাম আর আমার বুকটা ছুলে যেত। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে ওরকমটি করতে পারতো না।

এক প্যারেন্টস ডেতে বাবাকে নিয়ে বলতে বলা হয়েছিল আমাকে। আমি তখন এসব কথা বলেছিলাম। এ গুলোই ছিল বাবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। পরদিন বাংলা মিস ক্লাসে এসে বললেন আজ আর আমি পড়াবোনা। তোমাদের সাথে গল্প করবো।তোমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করবো তোমরা যারা উত্তর জানো তারা হাত উচু করবা আর না জানলে চুপ থাকবা। তিনি প্রশ্ন করলেন তোমাদের মধ্যে কে কে সাতার কাটতে পারো? আমি সাথে সাথে হাত উচু করলাম। মিস আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আর কেউ হাত উচু করেনি।তার মানে তারা কেউ সাতার কাটতে পারেনা। এর পর মিস একে একে প্রশ্ন করলেন কে কে সাইকেল চালাতে পারো, কে কে গাছে চড়তে পারো, কে কে নিজে নিজে জুতার ফিতা বাঁধতে পারো ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখা গেল আমি ছাড়া আর কেউ হাত উচু করছেনা।

মিস আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললেন তুমি কি বুঝতে পারছো কিছু? আমি বুঝতে পারলাম।আমার অগচরে বাবা আমাকে সব শিখিয়েছেন।আমার চোখেও তখন পানি চলে এসেছিল।সেদিন বাড়িতে গিয়ে দেখি আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কেঁদেছিলাম। বলেছিলাম বাবা তুমিই পৃথিবীর সেরা ।

হয়তো কারো কারো বাবা তাকে মাসে দু মাসে আগ্রার তাজমহল,মিশরের পিরামিড কিংবা নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে যায়।হয়তো কারো কারো বাবা তাকে আইফোন সিক্স থেকে শুরু করে অন্য সব না চাইতেই দেয়।আবার কারো কারো বাবা হয়তো সন্তানকে কিছুই দিতে পারেনা।এমনকি দুবেলা পেটভরে খাবারও দিতে পারেনা।কিন্তু বাবাদের ভালবাসার কোন কমতি নেই।যে বাবা সন্তানকে আলিশান বাড়ি দিচ্ছেন ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন প্যারিসে,ভেনিসে ট্রয় নগরিতে সেই বাবা তার সন্তানকে যেমন ভালবাসেন বাসতে চান ঠিক তেমনি ভাবে যে বাবা মা তার সন্তানের মুখে পেট পুরে খাওয়ার মত খাবারটুকুও তুলে দিতে পারছেন না তারাও তাদের সন্তানকে একই রকম ভালবাসেন।শুধু ভাগ্যের দরুন বাকিদের মত দেখাতে পারেন না।

বাবারা আসলে সন্তানের কাছে তেমন কিছু চায়না।যদিও সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল তারা যেমন আমাদের অসহায় কালে আমাদের আগলে রেখেছিলেন তেমনি তাদের অসহায় কালে আমরাও তাদের যেন আগলে রাখি।এবার একটা গল্প বলি শুনুন, এক বৃদ্ধ লোক একটা মোবাইল মেকানিকের কাছে তার মোবাইলটা দিয়ে বললেন দেখতো বাবা আমার মোবাইলটার কি সমস্যা।কল আসেনা। মোবাইল মেকানিক ভাল করে দেখে বললেন চাচা আপনার মোবাইলেরতো কোন সমস্যা নেই। বৃদ্ধা তখন মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে বললেন মোবাইল যদি ঠিকই থাকবে তবে এই মোবাইলে আমার ছেলে মেয়েদের ফোন আসে না কেন?বৃদ্ধর চোখে তখন অবিরাম অশ্রুধারা।

তার সন্তানেরা তাকে ছেড়ে গেছে ওল্ড হোমে। তাদের কারো কারো আছে আলিশান বাড়ি ঠিক যেমনটি আমরা এবারের প্রবীণ দিবসে বাংলাট্রিবিউনের করা ফিচারে দেখতে পেলাম। মায়ের একধার দুধের দাম শরীরের চামড়া কেটে জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হয়না বলে আমরা শুনেছি। অন্ধকারে ভয় পেয়ে যে মাকে জড়িয়ে ধরতাম সেই মাকে কি করে আমরা ওল্ডহোমে ফেলে যাই জানা নেই। একটিবারও কি কখনো আমরা ভেবে দেখেছি আমাদের সেই সব দিনের কথা।

যে বাবার গলাজড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসতো না।যে মা হাতে তুলে খাইয়ে না দিলে খাওয়া হত না।যে মায়ের আঁচলের তলে ছিল আমাদের সব থেকে নিরাপদ ভূবন সেই মা বাবাকে কি করে সন্তান হয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি তা ভাবতেই মনে হচ্ছে ধরণী দ্বিধা হও।নিজের স্ত্রী সন্তান যদি বাড়িতে থাকার যায়গা পায়,দু বেলা দু মুঠো ভাত পায় তবে জন্মদাতা পিতা মাতা কেন পাবেনা?

ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দিতে চাই।আমাদের দেশে আইন করা উচিত কেউ যদি বাবা মাকে ওল্ডহোমে রেখে আসে তবে তাদের জেল জরিমানা করা হবে। এতো নীতি বাক্য বলে লিখে ভাষণ দিয়ে যখন ওই সব সন্তানদের মনে বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব বুঝানো যায়নি তখন আইন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।লোকে যেমন বলে সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠেনা অনেকটা সেরকম।অন্তত তার পরও বাবা মা নিজের সন্তান পরিবারের সাথে থাকুক আমি এমনটিই চাই।পৃথিবীতে কোন মা বাবাকে যেন উহ শব্দটিও করতে না হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। আজ থেকে পণ করি নিজে খেয়ে না খেয়ে হলেও বাবা মাকে দেখে রাখবো ভালবাসবো। পৃথিবীর সব দুঃখী বাবা মার কাছে সেই সব অপরাধী সন্তানের হয়ে ক্ষমা চাই।
img20171011_101840
———–
বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০
০১ অক্টোবর ২০১৭
দৈনিক ইত্তেফাকে ৩ অক্টোবর ২০১৭ প্রকাশিত