banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

দাম্পত্য – ৬

পরিবারে একজন পুরুষের সবচেয়ে প্রিয় দুইটি নারী – মা আর স্ত্রীর মধ্যকার বিবাদের অনেকটাই চলে ভালবাসার দাবি তে। নতুন দম্পতিরা সত্যিই বুঝতে পারেন না, একে অপরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে তারা আর সবার থেকে কতটা আলাদা হয়ে গেছেন। একটা ফ্রেন্ড সার্কেলে দুজন জুটি বেঁধে গেলে অন্যদের কেমন হিংসে হয় এটা একটু কল্পনা করলে বুঝতে পারবেন
‘কাছের মানুষটা পর হয়ে গেছে’ – এই উপলব্ধি পরিবারের অন্যদের কতটা কষ্ট দেয়।
img20171010_233209
মানি, নতুন দম্পতির পরস্পরকে জানা ও চেনা প্রয়োজন। কিন্তু তা কি আর সব কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে তারপর?
img20171010_233519
দুটো গাছ একজন আরেকজনের উপর ভর করে বেড়ে উঠবে। তার জন্য কি শেকড়গুলি সব উপড়ে তবেই এক হতে হবে? লতাগুলো হয়ত পরস্পরের বাহুডোরে থেকে কিছুই টের পাবেনা। কিন্তু মাটির কান্না? মাটি সে শূন্যতা ভরবে কী দিয়ে?

তিল তিল করে বুক চিরে যে আদরের ফসল এত বড় হয়েছে, তার উপস্থিতি ছাড়া মাটির ত আর কিছুই নেই! সে বাঁচবে কী নিয়ে?
img20171010_232901
আমরা সহজে বলি, বাবা মায়েরা আমাদের যথেষ্ট ‘স্পেস’ দেয়না। সত্যি কথা কী, স্পেস দেয়ার জন্য মায়ার বাঁধন একটা একটা করে ছিঁড়ে রিক্ত শূন্য হয়ে, তবেই স্পেস তৈরি করা যায়। স্পেস মানে ত খালি জায়গা, তাই না? যে জায়গাটা বাবা মা মনোযোগ দিয়ে যত্ন দিয়ে ঘিরে রেখেছিল, স্পেস দেয়ার জন্য সেখান থেকে তাদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে, তাই ত?
img20171010_233238
গাছের উপমায় আবারো ফিরে আসি। শেকড় আর লতানো বাহু – দুটোর টানই তীব্র। দুটোর জন্যই তার আকর্ষণ অসীম। মমতাময়ী মা যেভাবে খাবার জন্য পীড়াপীড়ি করত, অসুখ হলে অস্থির হত – ওই আনন্দগুলি ত অন্যরকম! অমনি করে ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছে ত কোনদিন মরে না।
img20171010_233259
আর স্ত্রী? তার জন্য একটা পুরুষ জীবন দিতে পারে। তার যা আছে সবকিছু বিনিয়োগ করতে পারে।

ভুল হয়ে যায় তখনই, যখন ভালবাসায় অবুঝ হয়ে এই মানুষগুলো তাদের আপন আপন গন্ডি ছেড়ে আরও অনেকটা দখল করে নিতে চায়। তাই পুরুষটিকে হতে হবে খুবই সচেতন। মা যেন কখনও না ভাবে ছেলেটা বদলে গেছে। আগের মত করে সময় দিতে না পারলেও আদুরে গলায় ‘মা তোমার ঐ রান্নাটা অনেকদিন খাইনা’, বা ‘মা আমার মাথায় একটু হাত রাখ’ – এ ধরণের কথা বলে ছোট ছেলেটা হয়ে গেলে মায়ের অনেক দুঃখ দূর হয়ে যাবে।
img20171010_233147
মায়ের বয়স হয়েছে, তিনি চান বউ সংসারের দায়িত্ব নিক, কিন্তু এত যত্নে গড়ে তোলা সিস্টেম একটা আনাড়ি মেয়ের হাতে তুলে দেয়ার আগে তিনি চাইবেন মেয়েটাকে তার সিস্টেমে অভ্যস্ত করিয়ে নিতে। কিন্তু সুপারভাইজিং, ট্রেনিং বেশ কঠিন কাজ। অনেক ধৈর্য আর সহনশীলতা দরকার হয়। বিভিন্ন কারণে গুরুজনেরা এই বয়সে অনেক সময় বুঝতেও পারেন না কোন কথাটায় কতটুকু কষ্ট পেতে পারে ছেলেমেয়েরা।
img20171010_233107
এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সেনসিটিভিটি এর মাত্রা বদলায়। যুক্তি দিয়ে সরাসরি ভুল ধরাটা আমাদের প্রজন্মে কমন, উনারা হয়ত খুবই আহত হন। আবার স্বভাব চরিত্র নিয়ে একটু খোঁচা মেরে কথা বলাটা উনাদের কাছে হয়ত নিছক রসিকতা, আমরা ভীষণ অফেন্ডেড হই।

যাই হোক, নতুন বউয়ের এ ধরণের আচরণে কষ্ট লাগবে। স্বভাবতই সে সবার আগে স্বামীকে খুলে বলবে।
img20171010_233011
স্বামীর দায়িত্ব এখানে রিঅ্যাক্ট না করে পুরোটা শোনা, মা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে অকপটে স্বীকার করা, তারপর মায়ের দোষগুলোর পিছনে ওনার ভাল নিয়ত টুকু দেখানোর চেষ্টা করা, বা বুঝিয়ে বলা যে এটা জেনারেশন গ্যাপ ইত্যাদি। এতে দুটো সুবিধা আছে। স্ত্রী বুঝবে এটা একটা সমস্যা, আর তা সমাধান করার জন্য সে একা নয়, আরেকটি সহানুভূতিশীল মন তার পাশে আছে।

মায়ের দোষ ছেলে স্বীকার করলে স্ত্রী তখন ব্যাপারটাকে একটা সমস্যা হিসেবেই দেখবে, অন্যায় হিসেবে না। এতে করে সমস্যার সমাধান না হোক, সমস্যাটা আপনাদের মধ্যকার বন্ধন আরো দৃঢ় করতেই সাহায্য করবে।

আবার এদিকে মা খুবই কষ্ট পাবেন যদি ছেলে এসে তার দোষ ধরিয়ে দেয় বা বউয়ের দোহাই দেয়। আগে থেকে বাবা মা সমালোচনা গ্রহণ করতে অভ্যস্ত না হলে বিয়ের পরে সে চেষ্টা করতে যাবেন না। বরং এভাবে শুরু করতে পারেন, ‘কী মা, তোমার বউ নাকি এটা এটা করেছে!’
img20171010_233715
মায়ের প্রতি আপনার আবেগ যেন প্রকাশ পায়, বউয়ের নাম ধরে না বলে ‘তোমার বউ’ বলার মাধ্যমে তাদের দুজনের সম্পর্কের উপর জোর দিন (নিজেকে আড়াল করে), এটা করেছে – বলার মাধ্যমে হালকা একটা দোষারোপের ভঙ্গি করুন। এতে করে মায়ের মনে ‘ছেলে আমার কথা শুনবে না’ এই ধরণের ডিফেন্সিভ ভাবটা থাকবেনা। উনি মন খুলে কথা বলতে পারবেন। আপনি আন্তরিকভাবে শুনলেই উনার মনটা অনেক শান্ত হয়ে যাবে। সমস্যা যদি ঘরের কাজ সংক্রান্ত হয় তাহলে কাজটা আপনি শুরু করুন, স্ত্রীকে আগে থেকেই রাজি করিয়ে রাখবেন যাতে সেও জয়েন করে।
img20171010_233546
বউ শাশুড়ি ঘটিত সমস্যা ত আর হাদীস এ নেই, কিন্তু তার সূত্রপাত যেখানে, ভালবাসা জনিত ঈর্ষা, তার উদাহরণ কিন্তু ঠিকই আছে। আয়িশা (রা) এর ঘরে মেহমানদের জন্য রাসুলুল্লাহ (স) এর অপর স্ত্রী খাবার পাঠিয়েছিলেন। আয়িশা (রা) রাগে খাবার সহ বাটি মাটিতে ফেলে দেন। কী অস্বস্তিকর অবস্থা! রাসুলুল্লাহ (স) করলেন কী, ‘তোমাদের মা ঈর্ষায় পড়েছেন’ বলে নিজেই ভাঙা টুকরাগুলো মাটি থেকে তুলতে লাগলেন। মেহমানদের সামনে অপমান করা হয়েছে মনে করে রাগ করলেন না, শাস্তি দিলেন না, মেহমানদের কাছে বললেন ‘তোমাদের মা’; আবার অপর স্ত্রীর বাটি ভেঙে তার উপর অন্যায় করা হয়েছে, এ জন্য আয়িশা (রা) এর ঘর থেকে একটা বাটি নিয়ে উনাকে ফেরত দিলেন।
img20171010_232834
কে ঠিক আর কে বেঠিক সে বিচার করতে যাবেন না ভুলেও। দুজনেই অবুঝ, দুজনেই আপনাকে খুব ভালবাসে, দুজনেই চায় আপনার ঘরটাকে সুখ দিয়ে ভরিয়ে তুলতে। আপনার কাজ শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা করা। শেকড় থেকে জীবনীশক্তি আর সঙ্গী গাছের থেকে দৃঢ়তা পেলে একটি গাছ ফুলে ফলে ছায়ায় কত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে চিন্তা করে দেখেছেন?

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

(১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হল “পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতার পথ।”
img20171010_075948
১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছরের মত ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। । কিছু দেশে এই দিনকে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসাবে পালন করা হয় । সেই ১৯৯২ সময় ১৫০টি দেশের সমন্বয়ে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেল্থ- এর উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

গত সাত বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় কি কি ছিল?
আসুন এক নজরে দেখে আসি…
img20171010_070808
২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য:
‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়বে,এই সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের মূল উদ্দেশ্য।
img20171010_070451
২০১৬ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’

বর্তমান বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ,বংশগতি ও অন্যান্য শরীরবৃত্তিক ও মনোসামাজিক মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম দুটি কারণ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।
img20171010_070054
২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য:
‘মানসিক স্বাস্থ্য মর্যাদাবোধ’

মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও মানুষ। তাদের সমাজে অন্যান্য ব্যক্তির মতো সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
img20171010_065721
২০১৪ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সিজোফ্রেনিয়ার সাথে বসবাস’

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পায় না। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তরা যাতে সবচেয়ে ভালো সেবা এবং এই রোগ থেকে উত্তরণের সুযোগ পায়, সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
img20171010_065458
২০১৩ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ”

মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ বা বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্মিলিত বিষয়গুল নিয়ে খোলা বা উন্মুক্ত আলোচনায় উত্সাহিত করা। এবং প্রয়োজনে সহায়তা এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরদার।
img20171010_065101
২০১২ সালের প্রতিপাদ্য:
“বিষণ্নতা: একটি বিশ্বব্যাপী সঙ্কট”

পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার প্রায় দ্বিগুণ। বিষণ্নতার কারণে ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা ব্যাহত হয়।
img20171010_064845
২০১১ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ”

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যদি বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এবং কার্যকরী ও সম্মানজনক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, তবে জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরিত হবে। ফলে তা মানব ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণকর হবে।
img20171010_064238
২০১০ সালের প্রতিপাদ্য:
“নগরায়ণ: জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ”

ঐতিহাসিকভাবে,শহর হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি ইঞ্জিন,সংস্কৃতি কেন্দ্র। কিন্তু যখন মানব সম্ভাব্যতা অসীম হয়, তখন সম্পদ সীমিত। নগরায়ণ সমস্যার সৃষ্টি করে, কিন্তু সমাধান করতে হলে এখনই ভাবতে হবে।
img20171010_080942
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয় প্রতি বছর।
রেফারেন্স: Wiki, WHO.

ফাতেমা শাহরিন