banner

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 15, 2024

 

দাম্পত্য -৩

কমফোর্ট আর স্বস্তি একটা ঘরে সুখের ফোয়ারা বইয়ে দিতে পারে সত্যি, কিন্তু এর বাইরেও দাম্পত্য জীবনে অনেক কিছুই করার আছে।

..
স্বামী স্ত্রী উত্তম বন্ধু রূপে শুধু একে অপরকে নিরাপত্তাই দিয়ে যাবে জীবনভর, এর বাইরে আর কিছু নয় – ব্যাপারটা এমন নয়। আর চাহিদা অনুযায়ী পরিপূর্ণ আরাম না পেলেই যে সংসার উচ্ছন্নে যাবে – তাও না। পুরোপুরি স্বতন্ত্র দু’জন মানুষের আচরণ সব সময়ই পছন্দ মত হবে – এমন ভাবাটা ঠিক না। পদে পদে কমফোর্ট নষ্ট হবে, কমিউনিকেশন এর সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে, ক্ষুদ্রতা দেখে বুক ভেঙে যাবে – সম্মানের বদলে জায়গা করে নেবে করুণা – এমন অনেক কিছুই হতে পারে। তখন কি আল্লাহর প্রতিশ্রুত শান্তি সে ঘর থেকে হারিয়ে যাবে? বিয়ের উপর যে এত বার করে গুরূত্ব আরোপ করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স) যে বলেছেন, দ্বীন এর অর্ধেক হচ্ছে বিবাহ – তা কি দুটো ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যেই ভুল হয়ে যাবে? তা কী করে হয়?

..
আমার কাছে মনে হয় দাম্পত্যের দ্বিতীয় স্তরের পূর্ণতা আসে যখন স্বামী স্ত্রী সত্যি সত্যি একে অপরকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে। যখন একজন অপরজনের দোষত্রুটি গুলি চিহ্নিত করে সেগুলি বদলানোর জন্য কাজ করে। আমি ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাপার কিচ্ছু বুঝি না, আমার স্বামী ধৈর্যের সাথে অল্প অল্প করে একটু করে কাজ দিয়ে আমাকে মানুষ করার চেষ্টা করছে। অপর দিকে তার লেখা নিয়ে একটা ভীষণ রিপালশন কাজ করে। আমি চেষ্টা করছি প্রতি সপ্তাহে ছলে বলে কৌশলে যে করেই হোক একটা করে তার কাছ থেকে লেখা আদায় করতে। ও লেখায় সরগর না হলে কি আমার ঘর ভেঙে যাবে? আমার কী দায় পড়েছে ওকে দিয়ে লেখাতে? কিন্তু আমরা ত আগামী অনেকগুলো বছর ইনশাল্লাহ একসাথে থাকব, আল্লাহ ছয়শ কোটি মানুষের মধ্যে থেকে আমাদের দুজন কেই এক সাথে জীবন কাটানোর সুযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে কি আল্লাহর এতটুকু প্ল্যান ছিলনা, যে আমার উইকনেস ও দূর করবে, ওর টা আমি?

..
একই কথা স্পিরিচুয়ালিটির বেলায়ও। স্পিরিচুয়ালিটি আর স্বামী স্ত্রী নিয়ে ভাবতে গেলে আমার কেবল একটা উদাহরণই মনে আসে। লতানো গাছ দেখেছেন, ঐ যে ছোট ছোট আঁকশির মত বের হয়ে একটা কিছু ধরে বেয়ে ওঠে? এমন দুটো গাছ যেন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একজন আরেকজনের থেকে সাপোর্ট নিয়ে দ্রুত উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এই গাছ দুটোর একটা শক্ত দৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড়ানোও হতে পারে, আরেকটা তার উপর ভর দিয়ে উপরে উঠবে। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর একজন বেশি প্র্যাক্টিসিং, অপরজন কমও হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাপোর্ট দিয়ে দিয়ে টেনে তুলতে হবে। ভেবেই দেখুন না, কী একটা জুটল কপালে – এই ভেবে কপালকে দোষ না দিয়ে এভাবেও ত দেখা যায় – আল্লাহ আপনার স্ট্রেংথ জানেন, আল্লাহ পারফেক্ট কম্প্লিমেন্ট খুঁজে দিয়েছেন আপনার জন্য। এখনকার যে অশান্তি হচ্ছে, তা হচ্ছে এ কারণে যে আপনি আপনার করণীয় সবটুকু করছেন না। আপনার কথা ছিল অনেক বেশি নিজেকে উন্নত করার, আর উদাহরণের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে অপরজন কে শেখানোর। আপনি তা না করে আরো ভাল কিছু পেতে পারতেন এই আফসোস এ মাথা কুটে মরছেন।
এমনকি ভাল, আরো ভাল – এই মাপকাঠিটাও ত মানুষের জন্য অসম্পূর্ণ। সে হয়ত বিচার করার সময় একটা স্বভাবের দোষ ধরে ভাগ্যকে ধিক্কার দিচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে হয়ত তাদের মধ্যে এত সুন্দর সামঞ্জস্য – যেটা তার কাছে এতই ন্যাচারাল যে টেরও পাচ্ছেনা এর মূল্য কত।

...
আগের লেখায় একটা পাথরের কথা বলেছিলাম না? আপনি হয়ত আপনার সম্পর্কের এবড়ো খেবড়ো অংশটাই শুধু দেখছেন, একটু সময় নিয়ে উল্টে দেখুন, তার অনেক ভালো দিকও চোখে পড়বে।

..
রাসুলুল্লাহ (স) ত বলেছেন, স্ত্রীদের সাথে নরম আচরণ কর, কারণ তার এক আচরণ তোমার অসন্তুষ্টির কারণ হলেও, অন্য আচরণ তোমায় সন্তুষ্ট করবে। স্বামীদের জন্য এটা আরো বেশি সত্যি। কারণ আমরা স্ত্রীরা অভিযোগে মুখর হতে খুবই পারদর্শী।
আমি ঘরের কাজে অপটু, বাইরের কাজে অকর্মণ্য। ভাবনার জগতে ক্রীড়ণক, বাস্তব জীবনে জড়ভরত। আমার অতি প্র্যাক্টিকাল স্বামীর অভাবে আমি অর্ধেক না, এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকতাম বোধহয়। কিন্তু আমার যেটুকু অগুণ আছে তাই দিয়ে ঠেলেঠুলে এমন একটা জায়গা করে নিয়েছি যে জানি ওই জায়গার দখল পাকাপাকি ভাবে আমার হয়ে গেছে। গুণ যেখানে কম, অধ্যবসায়ের সেখানে পুরো ব্যবহার ত করতেই হবে, তাই না? তাই ওর অদক্ষতাগুলোতেই আমার যত জোর। আল্লাহকে ধন্যবাদ ও দেই, অন্তত একটা কিছু যোগ করার মত যোগ্যতা ত আমার আছে। যদি কমফোর্টই সুখের একমাত্র ইয়ে হত, তাহলে আমি ফেল করতাম নির্ঘাত।

১
এক রাতে প্রচণ্ড গরমে পুরো আড়াই ঘন্টা লোডশেডিং ছিল আমাদের এলাকায়। খুব দেশ দেশ লাগছিল সময়টাকে। আমরা অন্ধকার ঘরে মনের সুখে গপ্পো করেছি অনেকক্ষণ। লোডশেডিং হওয়াতে আমাদের মনে এতই ফুর্তি হয়েছিল, গল্পের ফাঁকে সে নিজে গান বানিয়ে সুর দিচ্ছিল। আমি তখন ওকে বললাম, আমি তখন ওকে বললাম, Thanks to Allah, He joined a composer with a singer, a speaker with a writer, a philanthropist with a pure mind.

(পরের পর্বের জন্য অপরাজিতার সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)