নারী উদ্যোক্তাদের পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। সমাজের বাঁধা, পরিবার ও পরিচিতজনদের নেতিবাচক মন্তব্য—সবকিছু পেরিয়ে যারা এগিয়ে যান, তারাই সফল হন। আজ আমরা কথা বলছি এক এমনই অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোক্তার গল্প নিয়ে, যিনি শুধুমাত্র শখের বসে শুরু করেছিলেন ব্যবসা, আর এখন সেটাই তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে!
লালমনিরহাট জেলার বারেকটারী গ্রামের ফাতেমা পারভিন মাত্র ২৮ বছর বয়সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। করোনার সময়ে সবাই যখন গৃহবন্দী, তখন ফাতেমার মাথায় আসে এক নতুন আইডিয়া। কুষ্টিয়ার ছোট বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি শুরু করেন ‘শখের বাজার’ নামের অনলাইন ব্যবসা।
শুরুটা ছিল মাত্র ৫,০০০ টাকা বিনিয়োগে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফলে এখন তার মাসিক আয় ৪০-৫০ হাজার টাকা! অনলাইন ব্যবসার সাফল্য দেখে তিনি লালমনিরহাট শহরে ‘শখের বাজার’ নামে একটি শোরুমও চালু করেছেন।
তার ব্যবসার মূল পণ্যগুলো হলো—বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন সিঁদল, কুমড়ার বড়ি, সরিষার তৈল, গাওয়া ঘি, নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি। এছাড়াও, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রও তিনি বিক্রি করেন।
ফাতেমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নিজের পরিবারের কিছু মানুষ। তারা মনে করতেন, নারীদের ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই, বরং সংসার সামলানোই তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ফাতেমার মা তাকে সবসময় মানসিক শক্তি যুগিয়েছেন, যা তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ফাতেমা বলেন, “পরিবারের বাঁধাই হয়তো আমার জেদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি, মেয়েরাও পারে।”
ফাতেমার স্বপ্ন তার ‘শখের বাজার’ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। বিশেষ করে, তিনি চান তার প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র নারী কর্মীদের কাজের সুযোগ করে দিতে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান।
এই অনন্য সাফল্যের জন্য বিশ্ব নারী দিবস ২০২৫-এ লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ফাতেমা পারভিনকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
ফাতেমার এই যাত্রা প্রমাণ করে—সঠিক ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও লেগে থাকার মানসিকতা থাকলে শুধু শখ নয়, তা হয়ে উঠতে পারে পেশা এবং সাফল্যের পথ।
নারীদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো ছড়িয়ে দিতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন!