banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৮


কানিজ ফাতিমা


মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয় তা নারীর কর্মক্ষমতা ও পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নারীর পরিবারের সদস্যরা ও সহকর্মীরা তার আচরণে আহত ও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

গতপর্বে বলেছিলাম এ সময়ের প্রধান তিনটি মানসিক সমস্যা হলঃ
দুঃখবোধ বা বিষন্ন হওয়া, অস্থিরচিত্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া। এ পর্বে থাকবে এ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা।

সব মহিলা তার জীবনের এই পরিবর্তিত অবস্থাকে সমানভাবে মেনে নিতে পারেনা। যারা আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং পরিবার থেকে সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা পায় তারা অন্যদের তুলনায় এই পরিস্থিতি অধিক সহজভাবে মোকাবিলা করে। যেমন কোন মহিলা যদি মনে করে যে, সে তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলছে ফলে সে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তবে তার মানসিক সমস্যা অন্যদের থেকে বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। যদি সে আশঙ্কা করে যে তার স্বামী আর একটি বিয়ের দিকে আগাতে পারে তবে সে আরও বেশি বিচলিত হতে পারে। এমতাবস্থায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও নিজেকে মূল্যবান প্রমাণের জন্য সে স্বামী, পুত্র-কন্যা ও পুত্রবধুর সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে পরিবারের অন্যদের দায়িত্ব হল তাকে নিশ্চয়তা দান করা ও তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাতে সে বুঝতে পারে পৃথিবীতে সে মূল্যহীন হয়ে যায়নি। এ সময় মা তার পুত্রের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ চাইতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই পুত্রবধুকে তার প্রতিদ্বন্দী মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে পুত্রকে সচেতনতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। একদিকে মা আঘাত পায় এমন কাজ থেকে যেমন তাকে বিরত থাকতে হয় আবার অন্যদিকে মায়ের অযাচিত আবদারকেও সচেতনভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এ সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য তাকে (মাকে)মেনপজের ওপর বই, আর্টিকেল পড়তে দেয়া যেতে পারে ।
কর্মজীবী মহিলা, যারা তার চাকুরী ও আয় নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের ওপর মেনোপজের প্রভাব তুলনামূলকভাবে গৃহিনী ও যারা কোন প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় সেসব নারীদের থেকে সাধারণত কম হয়ে থাকে। ফলে এ সময় তাকে সমাজসেবামূলক কোন কাজে উৎসাহী করা যেতে পারে; বাগান করা বা বাড়ীর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাকে দেয়া যেতে পারে। এতে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করবে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। ফলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার অস্বাভাবিক পন্থাগুলো থেকে নিজে থেকেই সরে আসবে।
মেনোপজ নারীদেহের বার্ধক্যের নির্দেশক। শৈশব থেকে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পণ করার সব ক’টি বয়সের ধাপকেই মানুষ স্বাগত জানায়। কিন্তু যৌবনের পরে বার্ধক্য আসাকে মানুষ কখনওই স্বাগত জানায় না। ফলে অধিকাংশ নারীই এ সময়ে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলে। সে তার যৌবন ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলার শোকে ভোগে। ফলে কখনও সে অসহায় বোধ করে এবং পরমুহূর্তে রাগ অনুভব করে। একারণে সে খেয়ালী ও জেদী আচরণ করে। তাছাড়া মেনোপজে যে শারীরিক সমস্যার তৈরি হয় সেগুলো অনেক সময় নিদ্রাহীনতার জন্ম দেয় এবং নিদ্রাহীনতা থেকে মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে ভাবের জন্ম হয়।
মেনোপজের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থাগুলো যুক্ত তার বিস্তারিত একটি তালিকা নীচে দেয়া হল-
0 Less energy and drive (শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া)
0 Irritability (বিরক্তি ভাব)
0 Mood changes (মেজাজের ভারসাম্যহীনতা)
0 Headaches (মাথাব্যথা)
0 Feeling of unworthiness (নিজেকে মূল্যহীন মনে করা)
0 Loss of self-esteem (আত্মসম্মানবোধের অভাব)
0 Loss of self-confidence (আত্মবিশ্বাসের অভাব)
0 Feeling unable to cope (খাপ খাওয়াতে না পারা)
0 Difficulty in concentrating (মনোযোগ দিতে না পারা)
0 Feelings of aggressiveness (ঝগড়াটে বা আক্রমণাত্মক হওয়া)
0 Depression (হতাশ বোধ)
0 Anxiety (দুশ্চিন্তা বোধ)
0 Forgetfulness (ভুলোমনা)
0 Fear of loneliness (একাকীত্বের ভয়)
0 Unusually prove to tears (কারণে অকারণে কান্না পাওয়া)
0 Tired (ক্লান্তিবোধ)
মেনোপজের এই লক্ষণগুলো কার ক্ষেত্রে কতটুকু হবে তার অনেকখানি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক সংস্কৃতির উপর। সাধারণত যেসব দেশে নারীরা নিজেদেরকে অভিজ্ঞতার আসনে দেখতে পছন্দ করে ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন না, সেসব দেশের নারীরা মেনোপজে কম মানসিক সমস্যা বোধ করে। উপরন্তু অনেক সময়ই বার্ধক্যকে তারা অধিক সম্মান ও যত্ন পাবার সুযোগ হিসাবে মনে করে। তাছাড়া যেসব দেশে সন্তানরা বাবা-মা’র কাছাকাছি থাকে (Collective Society) সেসব দেশেও মেনোপজের সমস্যা নারীরা তুলনামূলকভাবে কম অনুভব করে। অপরপক্ষে, Individualistic Society- যেখানে নারীরা শরীর ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রচণ্ড সচেতন এবং যারা সন্তান সন্তুতির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তাদের মধ্যে মেনোপজের সমস্যা তুলনামূলক বেশি হয়। একারণে গবেষণায় দেখা গেছে জাপানের নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় এ সম্পর্কিত সমস্যায় কম ভোগে।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় সচেতনতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারটি মোকাবিলা করলে বা সামলে নিলে নারীদের জন্য মেনোপজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হয় এবং এ কারণে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তিগুলো সহজেই কমিয়ে আনা যায়।

পর্ব-৭

 

দক্ষ নারীর কর্মের প্লাটফর্ম ‘টু আওয়ার জব’


মাহবুব আলম


নারী মমতাময়ী মা, কখনো নারী বোন, আবার এই নারী-ই প্রাণের প্রিয়তমা; সেই নারী উদ্যোক্তাও। যিনি স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেন সংসারের। সে ক্ষেত্রে নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া চাই নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। তেমনই ঘরে বসে নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের প্লাটফর্ম ‘দ্য টু আওয়ার জব’। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা ঘরে বসে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছেন।
এই উদ্যোগটি গড়ে তুলেছেন নারী উদ্যোক্তা সানজিদা খন্দকার। প্রথমে বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করলেও সংসার ও ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে একসময় তা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার মতো অন্য নারীদের কথা চিন্তা করেই গড়ে তোলেন অনলাইন উদ্যোগ ‘দ্য টু আওয়ার জব.কম।’
অনলাইন এই পোর্টালে ৯টা থেকে ৫টা অফিস নয়, নিজের ঘরে বসেই নারী পছন্দের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানে নিজ যোগ্যতায় সময় ও সুবিধা মতো কাজ করে পছন্দের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন নারীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘টু আওয়ার জব’-এর কার্যালয়ে বসেই নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সানজিদা খন্দকার।
‘টু আওয়ার জব’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রফেশনাল মেয়েদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর তারা চাকরি ছেড়ে দেন। সন্তান-পরিবারসহ নানা কারণে আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমনকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও ক্যারিয়ার হারিয়ে ফেলেন তারা। যোগ্যতাসম্পন্ন এসব নারী যাতে তাদের সুবিধামতো কাজ করতে পারেন ও তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন সে লক্ষ্য থেকেই ‘দ্য টু আওয়ার জব.কমে’র প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, ‘নিজের পরিস্থিতি থেকেই আমার মতো অন্যদের কথা বিবেচনা করে এই পোর্টাল তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। আমার বিয়ের পরও আমি ট্রান্সকম কোম্পানির একটি শাখার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম। সেখানে অফিস ছিল ৯টা থেকে ৬টা। আমার প্রথম সন্তান জন্মের পর তাকে বেশি সময় দিতে হতো। তখন দেখলাম এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় সন্তানকে দেখার মতোও কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জব ছাড়তে হয় আমাকে।’
সানজিদা বলেন, ‘পরে আমাকে সারাদিন সন্তান ও সংসার নিয়ে থাকতে হতো। মনে হতো আমার ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। এই বিষয়টি নিয়ে আমি খুব হতাশায় ভুগতাম। একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো তার মা হওয়া। কিন্তু সেই সন্তান কেনো তার হতাশার কারণ হবে? কোনো নারীর সংসার ও সন্তানকে তার ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা মনে না করে, তাদের জন্যই এই ‘টু আওয়ার জব’।’
জানালেন, ‘টু আওয়ার জব’র ওয়েবসাইটে পেশাদার লেখা, ব্যবসায় সহায়তা, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি, গ্রাফিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অডিও সাপোর্ট, মার্কেট রিসার্চ, বিনোদন, গবেষণা, বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করে দেন দক্ষ নারী প্রফেশনালরা।
এসব বিষয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমে ‘টু আওয়ার জব’-এর ওয়েবসাইটে দক্ষ প্রফেশনালদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অর্ডার আসার পর যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের কাজ দেওয়া হবে।
বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান সানজিদা খন্দকার।
ওয়েবসাইটে কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। ওয়েবসাইটটা সেভাবেই তেরি করা হয়েছে। কারণ, আমরা চিন্তা করে দেখেছি যারা এখানে কাজ করবে তারা হয়তো কখনো ফ্রিল্যান্সিং করেনি। কারণ, একজন ডাক্তার কখনোই ফ্রিল্যান্সার হবেন না। তিনি হয়তো অনলাইন কনসালট্যান্ট হবেন। তাই স্টেপ বাই স্টেপ সাজিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। এখানে শুধু নাম, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা দিয়েই সাইন ইন করা যাবে। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অনান্য তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এর মাঝ থেকেই বেছে নিই যোগ্যতাসম্পন্নদের।
এ জন্য একটি টিম সব সময় অ্যালার্ট রয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা। তার মতে, এই টিমের কাজ হলো সবসময় ফোনে অ্যাকটিভ থেকে কাজ করা। যাতে যে কোনো সমস্যার সমাধান ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় মেয়েরা ছেলে-মেয়ের কারণে বাইরে বের হতে পারেন না। তখন প্রয়োজনে তাদের বাসায় গিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করাই হচ্ছে ওই টিমের কাজ।
এ উদ্যোগে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জানিয়ে সানজিদা বলেন, প্রথমে ভাবিনি এভাবে এই উদ্যোগ নারীরা গ্রহণ করবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

যেহেতু অন-লাইনে বায়ারদের সঙ্গে কাজ করছি, তাই নারী কর্মীদের তথ্য খুব সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হয়। কারণ, কেউ কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ছেন কিনা তাও দেখতে হয়।

সূত্রঃ বাসস।