banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

হাজেরাদের কুরবানী

কানিজ ফাতিমা


যুবতী এক মহিলা, কালো বর্ণের দাস। জীবনের স্বাভাবিক চাওয়া গুলোও যার জন্য স্বপ্নের মতো। এমন জীবনে কালো আকাশে নক্ষত্রের আলোর মতো নেমে এলো এক চিলতে সৌভাগ্য – ইব্রাহীম (আ) এর মতো ব্যক্তির স্ত্রী হওয়া আর ইসমাঈল (আ) এর মতো পুত্র সন্তানের মা হওয়ার সৌভাগ্য।

কিন্তু সে সুখও বেশীদিন যেন কপালে সইতে চায় না। আল্লাহর নির্দেশ আসলো শিশুপুত্র নিয়ে চলে যেতে হবে সুদূর মরুভূমিতে, যেখানে জনমানব তো দূরের কথা পশু-পক্ষীও যায়না। রসহীন শুষ্ক মরু প্রান্তর – যেন মৃত্যুরই আরেক নাম।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, নিশ্চিত মৃত্যু। – কিন্তু তাতে কি ? আল্লাহর আদেশ মেনে নিলেন যুবতী মাতা। শিশু কোলে স্বামীর পেছনে চললেন বালু সমুদ্রে।

স্বামী চলে গেছেন কিছু পানি আর খাদ্য রেখে। নির্জন মরুপ্রান্তরে কেবল দুধের শিশু নিয়ে কাটালেন তিনি কয়েক দিন, কয়েক রাত। রাতে আকাশের তারার আলো ছাড়া আর কোনো আলো নেই। গহীন নিস্তব্ধতা – গা ছম ছম করা নীরবতা। তবু তিনি প্রশান্ত – যে আল্লাহ এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই রক্ষা করবেন ; তিনিই ভরসা – এমনই অটল বিশ্বাস।

কিন্তু খাবার যে ফুরিয়ে এলো, পানিও নেই; তৃষ্ণার্ত মা, ক্ষুধার্ত শিশু। বুকে একফোঁটা দুধও নেই। কি খেয়ে বাঁচবে বুকের ধন একমাত্র সন্তান ? বিচলিত মা দৌড়ে বেড়ালেন সাফা থেকে মারওয়া, মারওয়া থেকে সাফা। একবার, দুইবার, এমনি করে সাতবার।

না, একফোঁটা পানি কোথাও নেই, মানিক বুঝি আর বাঁচে না।
স্বামী নেই, সংসার নেই, সহায় নেই , বিত্ত নেই – এমন জীবনের একমাত্র সম্বল এই শিশু পুত্র -তাও বুঝি হারিয়ে যায়।

হাজেরার বুক চিরে আহাজারী; হায় সেটা শোনার জন্যও তো একটা প্রাণী নেই।

ক্লান্ত ভারাক্রান্ত মা ফিরে এলেন শিশুর কাছে –
একি? যে আর্তনাদ কেউ শোনেনি তা শুনেছেন রব
যে ত্যাগ কেউ দেখেনি তা দেখেছেন আল্লাহ;
শিশু ইসমাইলের পায়ের কাছে বইছে পানির ফোয়ারা।

যেন ফিরে এলো সুখের পায়রা;
পানি হলো ,
পানিকে ঘিরে বসতি হলো –
ছেলে বড় হতে থাকলো সুস্বাস্থ আর সুন্দর চরিত্র নিয়ে।
স্বামীও মাঝে মাঝে এসে থেকে যায় কিছু দিন। বাবা-ছেলের ভালোবাসা দেখে নয়ন জুড়ায় মা হাজেরার। দুঃখের দিন বুঝি ঘুঁচলো।

হঠাৎ একদিন স্বামীর কপালে চিন্তার রেখা –
কোনো দুসংবাদ নয়তো? জানতে চাইলেন হাজেরা।
ছেলেকে কুরবানী করার নির্দেশ এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে।

একমাত্র সন্তান
একমাত্র সম্বল
একমাত্র স্বজন
হারাতে হারাতে ফিরে পাওয়া বুকের মানিক
যাকে ছাড়া এই মায়ের আর কিছুই নেই;
তাকেই স্বামীর হাতে তুলে দিতে হবে চির বিদায় জানিয়ে।

স্বামী ইব্রাহীমের আরেক সন্তান আছে, গোত্র আছে; স্ত্রী সারাহ আছে;
দাসী হয়ে জন্মানো হাজেরার ইসমাইল ছাড়া তো আর কিছু নেই। – তাতে কি ? আল্লাহর নির্দেশ এবারেও তিনি পালন করলেন।
আগের বারতো নিজের সামনে ছেলের ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃত্যু দেখার মতো কুরবানীতে প্রস্তুত ছিলেন; এবার তবু দেখতে হবেনা। কথাতো একই – সর্বোচ্চ ত্যাগ।

এভাবেই এক মা দুই-দুইবার নিজের একমাত্র সম্বল সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন নির্দ্বিধায়।

কুরবানী কেবল ইব্রাহীম (আ) করেননি
কেবল ইসমাঈল (আ) করেননি
হাজেরাও করেছেন।

আমাদের সমাজ হাজেরাদের কোরবানী মনে রাখে তো ?

 

ঈদ মানে খুশিঃ সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

অপরাজিতা ডেক্স


ঈদুল আযহা বা ঈদুল আজহা (আরবীতে:عيد الأضحى) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’।

মহান আল্লাহর আদেশে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর আপন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার ঘটনাকে স্বরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবটি পালন করে।

এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয নিযমানুযায়ী উট,গরু,দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি করে।
এ এক অনাবিল আনন্দ, যে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। এ আনন্দ আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ। এ আনন্দ গুনাহ মাফের এবং বৈষয়িক ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে পরলৌকিক জগতের পাথেয় সংগ্রহ করার আনন্দ। এ আনন্দ গরিব-দুঃখীর সাথে একাত্ত্ব হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দ পশু কোরবানীর সাথে সাথে মনের পশুকে পরাস্থ করার আনন্দ।

অথচ বাস্তবে আমরা কি দেখি-যে আনন্দের বারতা নিয়ে মুসলমানদের ঈদ আসে সে অন্তরালে ডুকরে কাঁদে। মনের পশুকে জবেহ করার পরিবর্তে আমরা হয়ে উঠি পশু হন্তারক। অশান্তির প্রচণ্ডতায় দগ্ধ হই আমরা। কিন্তু এটাতো ইসলামের শিক্ষা নয়।

পাশবিকতাকে মন থেকে নির্মূল করে মনুষ্যত্ব ও ত্যাগের শিক্ষাদানের জন্যই বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা দান-সদকা, কুরবানীসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ মানুষের উপর আরোপ করেছেন। এসব কিছুর মাধ্যমেই আমরা যাতে আমাদের মনের পাশবিকতাকে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বসহ অন্যান্য ভালোগুণগুলো অর্জন করতে পারি।