banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

বাংলাদেশের গোল বন্যা পাকিস্তানের জালে

নারী সংবাদ


থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগেই উপস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকেল থেকেই মাঠে বসে ছিলেন ভারতীয় বাংলাভাষী কুচবিহারের বাঙালিরা। প্রথম ম্যাচে ভারতকে সমর্থন করার পর তারাও বসেছিল বাংলাদেশের খেলা দেখতে। একই সাথে সমর্থন জানানোর জন্যও। তা বাংলা ভাষাভাষী এবং বাঙালি বলে। তা ছাড়া এ বাঙালিরা কাজ করেন বাংলাদেশ দলের হোটেলের পাশেই। সাথে ভুটানে বেড়াতে আসা বাংলাদেশী পর্যটকেরাও উপস্থিত মাঠে। এদের আকুণ্ঠ সমর্থনকে সম্মান দেখিয়ে বিশাল জয়ও তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা দল। কাল আসরের ‘বি’ গ্রুপে পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করেছে শামছুন্নাহার, তহুরা, মনিকা, মারিয়ারা। হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছেন জুনিয়র শামছুন্নাহার। লাল-সবুজদের আগ্রাসী ফুটবলের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন খেলাতেই জয়ের ধারাই অব্যহত রাখল বাংলাদেশ। মারিয়া-মনিকাদের পরের ম্যাচ ১৩ তারিখে নেপালের বিপক্ষে।
তিন বছর ফিফার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছে পাকিস্তান। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের পক্ষে ভালো ফুটবল উপহার দেয়া সম্ভব নয়। কাল এর ব্যতিক্রম করা সম্ভব হয়নি দেশটির অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েদের পক্ষে। তাদের পাড়া মহল্লার দলে পরিণত করে বিশাল জয় তুলে নিয়েছে গোলাম রাব্বানী ছোটনের দলের। এ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ডিফেন্ডার ছোট শামছুন্নাহার। তার হ্যাটট্রিকে দারুণ জয়ে আসর শুরু বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। গোল আরো বেশি হতে পারত। কিন্তু আনু চিং মগিনি অতি মাত্রায় মিস করলে বাড়েনি গোলের সংখ্যা। তবে এ আসরে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। গত বছর উদ্বোধনী ম্যাচে নেপালকে ৬-০তে পরাজিত করেছিল তারা।
সাত মিনিটে তহুরা খাতুনের গোল দিয়ে লাল-সবুজদের উৎসব শুরু। ১৮ মিনিটে মনিকা চাকমার ফ্রি-কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ। ২১ মিনিটে তহুরা তার দ্বিতীয় গোল করেন চমৎকার ব্যাক হেডে। ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন ভাসিয়েছিলেন লবটি। ৩৩ মিনিটে নিজের প্রথম গোল করেন হ্যাটট্রিক করা ছোট শামছুন্নাহার। বিরতির পর ৫০ ও ৫৪ মিনিটে আরো দুইবার বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। ৫৭ মিনিটে করেন নিজের চতুর্থ গোল। এর আগে ৪১ মিনিটে অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা এবং ৪২ মিনিটে আঁখি দূরপাল্লার শটে গোল করেন।
প্রথমার্ধে ৬-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল বিরতির পর ৬০ মিনিটের মধ্যে আরো ছয়বার বল পাঠায় পাকিস্তানের জালে। ৫৮ মিনিটে সাজেদা নিজের দ্বিতীয় এবং ৬০ মিনিটে আনাই মগিনি গোল করেন। ৮৯ মিনিটে আনাই তার দ্বিতীয় গোল করেন। ৯০ মিনিটে শেষ গোল সিনিয়র শামসুন্নাহারের। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ…. ১ম পর্ব

তাহনিয়া খান


ঘটনা # ১
বেগম “ক’’ এর বাসায় বহুদিন কোনো কাজের মানুষ নেই। যৌথ পরিবার উনার। বহু কষ্টে একে ধরে তাকে ধরে একজন সাহায্যকারী যোগার করলেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারলেন আগেই ভালো ছিল। সাহায্যকারীর নিত্য নতুন যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। হঠাত বেগম “ক” আবিষ্কার করেন তার দাঁত মাজার ব্রাশটি তিনি ছাড়াও আরেকজন সেটা ব্যবহার করে। শ্যাম্পুর বোতলে প্রায়ই কেউ পানি ভরে রাখে। এসব তার সাহায্যকারীর কাজ। একদিন দাওয়াত থেকে বাসায় এসে দেখেন, বাসার সব চামচ চ্যাপ্টা হয়ে আছে। বাসায় বসে থাকতে থাকতে নাকি সাহায্যকারীর বোরিং লাগছিল, তাই সে বসে বসে চামচ চ্যাপ্টা করে ফেলেছে।

ঘটনা # ২
বেগম “খ” এর বাসায় বিশ বছর ধরে কাজ করেন তার সাহায্যকারী। অসম্ভব বিশ্বস্ত। এতই বিশ্বস্ত যে, বেগম “খ” এর শাড়ি গহনা সব সেই সাহায্যকারী গুছিয়ে রাখে। একদিন দাওয়াত খেয়ে ফিরে এসে দেখেন, মেইন দরজা খোলা। বাসায় ঢুকে দেখেন, তার বিশ বছরের সাহায্যকারী দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা তার শখের দামী দামী গহনাগুলো নিয়ে পালিয়েছে।

ঘটনা # ৩
বেগম “গ” এর ছোট দুটো ফুটফুটে বাচ্চা। চাকরী করে বাচ্চা সামলানো অনেক কষ্টের ব্যাপার। উনার কষ্ট দেখে উনার মা একজন সাহায্যকারী পাঠালেন। বিশ্বস্ত মানুষ পেয়ে বেগম “গ” এর ভালোই দিন কাটছিল। তিনি যেখানে থাকতেন তার চারপাশে নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছিল। মাঝে মাঝে খেয়াল করতেন তার সাহায্যকারী সেইসব বিল্ডিঙের লেবারদের সাথে আকার ইঙ্গিতে কথা বলে। বাসার দারোয়ানের সাথে গল্প করে। সাবধান করে দিয়েছিলেন তিনি। হঠাত জরুরী কাজে বেগম “গ” কে চট্টগ্রামে তার মায়ের বাসায় যেতে হয় স্বামী সন্তান্দের নিয়ে। বাসা রেখে গেলেন বিশ্বস্ত সাহায্যকারীর কাছে। পাঁচ দিন পরে ফিরবেন। তিন দিন পার হতেই বেগম “গ” এর স্বামীকে অফিসের জরুরী কাজে ঢাকায় আসতে হলো। বাসায় এসে কলিং বেল না চেপেই বাসার চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই হাসাহাসির শব্দ পেলেন তিনি। আস্তে করে নিজের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বাসার সাহায্যকারী আর নতুন দারোয়ান কে দেখে হতভম্ব হয়ে যান। দারোয়ানের দোষ যেন নিজের ঘাড়ে না আসে, সেজন্য তাড়াতাড়ি বাইরে থেকে বেডরুমের দরজা লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর আশেপাশের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন।

ঘটনা # ৪
বেগম “ঘ” এর হিসাবের সংসার । বাড়তি কোনো আয় নেই তার ঘরে। তাই খুব হিসাব করে চলতে হয় তাকে। প্রতি মাসেই তিনি জানেন কতটুকু চাল ডাল লাগবে তার সংসারে। কিন্তু জিনিসের বরকত পান না তিনি। চাল, ডাল, আলু, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, তেল, তরিতরকারি সহ সব কিছুই গায়েব হয়ে যেত। একদিন তার সাহায্যকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে তার সাহায্যকারী নিজের বাসায় এসব পাচার করতো। এত হিসাবের মাঝে থেকেও তিনি তার সাহায্যকারীকে খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে কার্পণ্য করেননি কখনো। অথচ তার সাহায্যকারী আশেপাশের সবাইকে বলে বেড়িয়েছে যে বেগম “ঘ” তাকে ঠিকমত কোনো খাবার দাবার দিতেন না।

ঘটনা # ৫
বেগম “চ” এবং উনার স্বামী ডাক্তার। তাদের তিন মেয়ে। ছোট মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে। বাসার নতুন সাহায্যকারী অসম্ভব মজার রান্না করে। একদিন বিয়ে বাড়ির খোঁজ নিতে বেগম “চ” এর দেবর সকাল সকাল বাসায় এসে হাজির। এসে দেখেন বাসার দরজা খোলা এবং সবাই ঘুমে অচেতন। সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। অন্যদের ঘুম ভাঙলেও বেগম “চ” এর ঘুম ভেঙ্গেছে পাঁচ দিন পর। নতুন সাহায্যকারী খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করে সব কিছু নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল।

ঘটনা # ৬
বেগম “ছ” রান্না করতে বেশ পছন্দ করেন। দুপুর বেলা ভাতের সাথে কমপক্ষে চারটা আইটেম থাকতেই হবে। সারা বছর উনার বাসায় দুইজন সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভার থাকে। উনার বাসায় ৪/৫ পদের আইটেম থাকলেও বাসার সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভারকে ১/২ পদের তরকারী দেওয়া হয়। তাদের জন্য আলাদা করে মোটা চালের ভাত রান্না হয়। বেগম “ছ” এর ড্রাইভার আফসোস করে বলেছিল, সারা বছর স্যারের সাথে গিয়ে ঝাকা ঝাকা মুরগি কিনি, কিন্তু খাবারের সময় মুরগি পাই না।

ঘটনা # ৭
বেগম “জ” তার সাহায্যকারীকে অনেক টাকা বেতন দিয়ে রেখেছেন। সাহায্যকারী রাখার সময় বলেছিলেন কাজ শেষ হলে ছেড়ে দিতে হবে। বেতন উসুল করতে তাকে দিয়ে সারাদিন যতটুকুন পারেন কাজ করিয়ে নেন। কাজ আগে শেষ হলেও তাকে বাসায় যেতে দেন না, বসিয়ে রাখেন। বেশ কয়েক রকম রান্না হয় বেগম “জ” এর বাসায়। যথেষ্ট পরিমানে খাবার থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র এক ধরণের তরকারী ও আগের দিনের বাসি ভাত দেওয়া হয় সাহায্যকারীকে, সাথে থাকে ফ্রিজের ২/৩ দিনের বাসি খাবার।

ঘটনা # ৮
বেগম “ঝ” মানসিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু সেটা কেউ বুঝতে পারে না। স্বামী সন্তানদের কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে, টানা পোড়নের সংসার জোড়াতালি দিতে দিতে তিনি হাপিয়ে যান। কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করতে পারেন না কারো কাছে। ভিতরের চাপা রাগ, দুঃখ আর অভিমানের ঝালগুলো ঝেড়ে ফেলেন সাহায্যকারীর উপর। যখন তার সাহায্যকারী কোনো ভুল করে ফেলে তখনি তিনি অশ্লীল বাক্য ও মারধর করে নিজের মনকে হাল্কা করে ফেলেন।

ঘটনা # ৯
বেগম “ট” বেশ বিত্তবান মহিলা। তার সাহায্যকারী অনেকদিন থেকেই তার সাথে থাকে। বেগম “ট” বছরের ছয় মাস দেশে থাকেন, আর ছয় মাস বিদেশে থাকেন। দেশের বাইরে থাকার সময় তার পুরো সংসার দেখাশোনা করেন তার সাহায্যকারী। তিনি সেই সাহায্যকারীকে বিয়ে দিয়েছেন, তার স্বামীকে চাকরী দিয়েছেন, তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন, এমনকি সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। তার সাহায্যকারী অকৃতজ্ঞ হয়নি কখনো।

ঘটনা # ১০
বেগম “ড” এর সাহায্যকারী এখন তার বাসায় কাজ করে না। কিন্তু বছরে ২/৩ বার বেগম “ড” এর সাথে দেখা করতে আসে। আসার সময় হাত বোঝাই করে গাছের ফল, তরিতরকারি, পালা মুরগি, পিঠা সহ হরেক রকম জিনিস নিয়ে আসে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেগম “ড” নিজের হাজারো সমস্যা মাথায় নিয়েও তার সাহায্যকারীর বিপদে আপদে হাত বাড়িয়েছেন সব সময়। সেটা ভুলে যায়নি তার সাহায্যকারী।

সাহায্যকারী, গৃহপরিচারিকা বা কাজের বুয়া, যে নামেই ডাকি না কেনো, তারা যেমন ব্যবহার করে ও ব্যবহার পায় আমাদের সমাজে, তার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরলাম এখানে। প্রতিটা ঘটনা বাস্তব এবং আমার পরিচিত জনদের পরিবারের কিছু ঘটনা।

আমরা সব সময় বিভিন্ন পত্রিকাতে বা টেলিভিশনে গৃহপরিচারিকাদেরকে অত্যাচারের খবর পড়ি বা দেখি। অর্থাৎ মিডিয়া শুধু সাহায্যকারীদের উপর নির্যাতনকেই হাইলাইট করে। কিন্তু বাসার সাহায্যকারীরা যেভাবে মানুষদের অত্যাচার করে তা সহজে মিডিয়াতে আসে না বা গুরুত্বও পায় না।

চলবে….