banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব -৪


আফরোজা হাসান


উমায়ের, নুবাইদ, আয়াত আর নাযীবের জন্য একই রুমের চারকোণায় চারটা বিছানা থাকলেও নাযীব নিজের বিছানায় খুব কমই ঘুমায়। একেকদিন একেক ভাইয়ের সাথে ঘুমায়। কখনো কখনো আবার বড় দুই ভাইয়া কিংবা আপ্পির সাথেও ঘুমোতে চলে যায় নাযীব। দুষ্টু-মিষ্টি কথা আর কর্মকান্ডের জন্য ভাইবোনদের সবার কাছেই অতি প্রিয়, অতি আদরের নাযীব। অবশ্য একইরকম অতি আদরের আর অতি প্রিয় বাড়ির বড়দের কাছেও নাযীব। তাই তো স্বাতীর বেনিআসহকলা’র ‘লা’ অর্থাৎ, লাল রঙ টা হচ্ছে নাযীব। নাযীবের স্পর্শে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ। লাল রঙের বৈশিষ্ট্যও তাই। আরো উজ্জ্বল, আরো মনোহর করে তোলে চারিপাশ। রুমে ঢুকে উমায়েরকে জড়িয়ে ধরে নাযীবকে ঘুমোতে দেখে হাসি বিস্তৃত হলো স্বাতীর চেহারায়। ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তাই খুব সাবধানে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে কপালে আদর এঁকে দিলো দুই ছেলেরই। নাযীবের উপর থেকে চোখ সরিয়ে উমায়ের এর দিকে তাকাতেই একরাশ স্বিগ্ধতার ঢেউ খেলে গেলো স্বাতীর মনে। বেনিআসহকলা’র প্রথম এবং স্বাতীর ভীষণ প্রিয় রঙধারী উমায়ের। বেগুনি রঙটা উমায়ের কে দেবার পেছনে আরভের যুক্তি ছিল উমায়ের এর স্বভাবগত স্বিগ্ধতা। উমায়ের মানেই ছোট থেকে ছোট অনুভূতিগুলোকেও খুব যত্ন করে নিজ মনে লালন করা। ভীষণ ইমোশনাল উমায়ের। একটুতেই খুশি হয় আবার একটুতেই অভিমান করে। ওর ব্যাপারে তাই বাড়তি খেয়াল ও মনোযোগ রাখতে হয় সর্বদাই। আসমানি রঙটা আয়াতকে স্বাতীই দিয়েছিল। আসমানি শুদ্ধতার রঙ। জগতের প্রতিটি শিশুই শুদ্ধ। কিন্তু কেউ কেউ সেই শুদ্ধতার প্রতীক থাকে। আয়াত ঠিক তেমন একটি শিশু। মাত্র সাড়ে সাত বছর বয়সেই নিজের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে খুবই সচেতন আয়াত। বিশাল উদারতা নিয়ে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেবার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। অনেকটা আয়াতের মতোই নুবাইদ। অবশ্য হতেই হবে দুজন জমজ বলে কথা। সেজন্যই নীল রঙটা নুবাইদের দখলে। নীল বিশালত্বের রঙ, গভীরত্বের রঙ। প্রিয়জনদের তরে ভালোবাসার টলটলা গভীর সরোবর প্রবাহিত ছোট্ট নুবাইদের বিশাল অন্তরে। সাবধানে আয়াত আর নুবাইদকেও আদর করে দিয়ে ড্রয়ার থেকে সেলফোন নিয়ে বড় তিন সন্তানের রুমের দিকে পা বাড়ালো স্বাতী।
একই রুমের একপাশে বড় ছেলে মুসআব আর অন্যপাশে মেঝ ছেলে নাহিবের বিছানা। তবে রুম একটা হলেও দুইপাশের জগত ভিন্ন। মুসআব যতটা গোছানো স্বভাবের নাহিব ঠিক ততটাই এলোমেলো স্বভাবের। রুমে ঢুকে মুসআবের দিকে তাকাতেই শান্তি শান্তি আবহ ঘিরে ধরলো স্বাতীকে। এক টুকরো সজীব প্রকৃতি মনেহয় মুসআবকে। স্বভাবেও ভীষণ শান্ত, বয়সের তুলনায় অনেক সমঝদার। তাই তো স্বাতীর কাছে মুসআব সবুজের আহবায়ক। আর নাহিব মানেই একদন্ড স্থিরতা নেই যার মাঝে। মাথাভর্তি নিত্যনতুন আইডিয়া আর মনের মাঝে থইথই আবেগ। যুক্তি প্রদর্শনে জুড়ি নেই নাহিবের। একই সাথে আবার অন্যের যুক্তি যে কান দিয়ে শোনে সে কান দিয়েই বের করে দেয়ায়েও জুড়ি নেই নাহিবের। অস্থির, পাগলাটে ছেলেটার জন্য তাই হলুদ রঙটাকেই বেছে নিয়েছিল স্বাতী। তবে স্বভাবে যতই অমিল থাক না কেন দুই ভাইয়ের ঘুমের ধরণ একদম অভিন্ন। এই প্রচণ্ড ঠান্ডার রাতেও মুসআব আর নাহিব দুজনই কম্বল ফেলে ঘুমোচ্ছে বেঘোরে। দুই ছেলের গায়ে কম্বল ঠিক করে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে কন্যার রুমে রওনা করলো। মিসেস রাবেয়া নাতনীকে আদর করে ডাকেন বাসন্তী পরী। নানুমণির দেয়া নামটা ভীষণ পছন্দ মহিমার। কন্যার জন্য নামটা ভীষণ পছন্দ স্বাতীরও। বাবা-মার জীবনে কন্যারা তো বসন্তেরই প্রতীক। আরভ স্বাতীর জীবনেও বারোমাসি বসন্ত মহিমা। চঞ্চল, মায়াবী, বর্ণিল এক প্রজাপতি মনেহয় মহিমাকে। যায় উপস্থিতিই যথেষ্ট মনকে খুশির রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য। মহিমার রুমের দরজায় আরভকে দাঁড়ানো দেখে হাসি মুখে সালাম দিলো স্বাতী।
সালামের জবাব দিয়ে আরভ বলল, কন্যা তো ঘুমোয়নি এখনো। গল্পের বই পড়ছে নিমগ্ন হয়ে। একদম মায়ের আত্মমগ্নতার গুণে গুণানিত্বা কন্যা। মায়ের যেমন কোন কাজে ডুবলে চারপাশের কোনকিছুর খবর থাকে না। একই অবস্থা মায়ের কন্যারও। পাঁচমিনিট ধরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। কন্যার কোন খেয়ালই নেই।
বই হাতে আত্মমগ্ন বাসন্তী পরীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে স্বাতী বলল, যদি পথে পাওয়া কোন পাবলিসিটিতেও চোখ বুলাও গভীর মনোযোগের সাথে বুলাবে। তাহলে দেখবে তারমধ্যেও কোন না কোন শিক্ষা পেয়ে যাবে। এই বাণী কন্যার মায়ের না, কন্যার পিতার। তাই মনোযোগের সাথে অধ্যায়নরত হইয়া কন্যা মূলত পিতৃ পরামর্শকেই সম্মান প্রদর্শন করছেন।
হেসে ফেললো আরভ। হাসতে হাসতে বলল, তা কিছুক্ষণ আগে কন্যার মাতা কার পরামর্শকে সম্মান প্রদর্শন করছিলেন লেখনীতে নিমগ্ন থেকে? কন্যার আগে তার মাতার দরজাতেও পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থেকে এসেছি। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে আসার আগেই কন্যার মাতা টের পেয়ে দরজা ধরে অপেক্ষা করতো। আর এখন বাড়িতে পৌঁছে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও তার মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব হয়না।
জ্বি পরিবর্তনশীলতাই জীবনের ধরণ, না করে আহাজারি করে নিন একে বরণ। তাহলে অকারণ বাড়বে না মনের ওজন, সুখানন্দ তুলবে প্রতিক্ষণে জোনাক জোনাক গুঞ্জন। হাসতে হাসতে বললো স্বাতী।

চলবে….

পর্ব-৩

 

নারীর নির্যাতনের আরেক রূপ

নারী সংবাদ


ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠানগরের উত্তর হরিপুর গ্রাম থেকে অর্ধবস্ত্রহীন হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধুকে রোববার সন্ধায় উদ্ধার করেছে পুলিশ । ওই গৃহবধুর কেটে ফেলা হয়েছে মাথার চুল । চার দিন ধরে বাঁধা তাহেরা আক্তার রিনা নামের ওই গৃহবধুকে বোতলে ভরে জোরপূর্বক স্বামীর প্রসাব পান করান সহ সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ।

জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের মৃত আমিনুল আহছান বাবুলের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এতিম মেয়ে তাহেরা আক্তার রিনাকে (২০) ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের উত্তর হরিপুর গ্রামের হাজারী বাড়ির দুই সন্তানের জনক মনজুরুল আলম বাদল হাজারীর (৫৪) সঙ্গে গত বছরের মার্চ মাসে বিয়ে হয়। মেয়ের মা বিবি ফাতেমা পারুল ও তার মামারা মিলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রিনাকে বাদল হাজারীর কাছে বিয়ে দিলেও বিয়েতে রিনার মত ছিল না।

বিয়ের পর রিনা জানতে পারে এর আগে বাদল হাজারীর আরো দুইটি স্ত্রী ছিল। তাদেরকে সে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা। বিয়ের পর থেকে বাদল চৌধুরী ও মেয়ের মাসহ স্বজনদের চেষ্টার পরও রিনা বাদল হাজারীকে স্বামী হিসেবে মেনে না নিয়ে পালিয়ে যায়।

গত কয়েকদিন আগে রিনা ঢাকা থেকে কুমিল্লার ছিওয়াড়ায় তার নানীর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে তাকে মামা, মা ও ছোট ভাই ধরে স্বামীর হাতে তুলে দেয়। গত চার দিন ধরে বাদল চৌধুরী তার বাড়িতে রিনাকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে নির্জন কক্ষে আটকে রাখে।

পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তার মাথার চুল কেটে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে তার কাপড়-ছোপড়। স্বামীর কথা মানতে অস্বীকার করায় শরীর থেকে জোরপূর্বক বেশিরভাগ কাপড় খুলে অর্ধবিবস্ত্র করে রাখা হয় তাকে। রিনার সামনে প্রস্রাব করে বোতলে ভরে জোরপূর্বক প্রসাব পান করানোসহ কয়েক দিন ধরে তার ওপর চালানো হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এ কথাগুল থানায় বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিনা ।

নির্যাতনের ফলে তোড় শোর চিৎকার করে সাহায্য চাইলেও তার স্বামীর ভয়ে বাড়ির কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ এতিম রিনার।

এলাকা থেকে গোপনে সংবাদ পেয়ে রোববার বিকেলে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এসআই নাঈম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাড়ি ঘেরাও করে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের তালা ভেঙ্গে শিকলসহ রিনাকে উদ্ধার করে । পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী বাদল চৌধুরী পালিয়ে যায়। নির্যাতিতা গৃহবধু তাহেরা আক্তার রিনা তাকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানান, গৃহবধূকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে ।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন বাড়ছে : বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের একটি বেসরকারী সংস্থার পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে দেশটিতে নারী নির্যাতন বাড়ছে এবং গত তিন বছরে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারী সংস্থা, ব্র্যাক, বুধবার ঢাকায় গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে যে বিভিন্ন জেলা থেকে তারা নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা গেছে এসময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছেন এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের একশ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঐ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ব্র্যাকের গবেষকরা বলছেন যে ২০০৬ সালের জুন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের প্রায় তিন হাজার তথ্য সংস্থাটির ঢাকা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিলো। ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের নিজস্ব কর্মীরাই এসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

এসব তথ্য বিশ্লেষন করেই নারী নির্যাতন সম্পর্কিত ব্র্যাকের গবেষণা রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের উর্ধতন গবেষক ড. ফজলুল করিম।

তিনি বলেন যে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষিতা হলেও ২৫-৩০ বছরের মহিলাদের মধ্যে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৩৮ শতাংশ।

অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই
ড. করিম
এটা দেখা গেছে যে বয়স যত বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা তত কমেছে, আর ধর্ষনের শিকার বেশী হচ্ছেন স্কুলগামী মেয়েরা।

ড. করিম বলেন যে অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই।

আর তাই গবেষণায় দেখা গেছে যে আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে ধর্ষনের শিকার অনেক কিশোরীই হয় নিরবে তা সহ্য করেছেন কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

তিনি বলেন বাংলাদেশের আইন-কানুন এমন যে অনেক সময় ধর্ষনের ঘটনা আদালতে প্রমান করার ক্ষেত্রে ধর্ষনের শিকার মেয়েদেরকে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। সূত্র: নয়াদিগন্ত