banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

বিয়ে ও পরিবার – ২

কানিজ ফাতিমা


ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজ কর্মের জন্য দায়ী হবে। নিজের প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেকে দিতে হবে, অন্যের কর্মের জন্য সে দায়ী থাকবে না। অন্যের জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে না। কাজেই একজন মুসলিমকে সর্বদা সচেতন থাকতে হয় নিজের সম্পর্কে, নিজের দোষ খুঁজে বের করে তা শুধরানোর জন্যই তাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়।

অন্যের দোষ খোঁজার সময় তার হাতে কমই থাকে। একান্তই অন্যের দোষ-ত্রুটি যখন প্রকাশ্য ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনই সে তা দেখতে পায় এবং সঠিক নিয়তে শুধরানোর উদ্দেশ্যে সহানুভূতি সহকারে ঐ দোষ সম্পর্কে কর্তাকে অবগত করে।

অপরপক্ষ একদল ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে তার কঠোর সমালোচনায় এত বেশী মনোযোগী হয় যে তার নিজের দোষ দেখার সময়ই তার হয় না। তারা ভুলে যায় ইসলাম অন্যের সমালোচনার আগে নিজের দোষ শুধরানোর বেশী পক্ষপাতী। ‘জিহাদ’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় ও মুখ্য জিহাদ হল নিজের অহংবোধ (Ego)এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সঠিক কাজটি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
নিজের দোষ স্বীকার করা কঠিন একটি কাজ, নিজের অহংবোধে আঘাত লাগে। অন্যপক্ষে অন্যের দোষ ধরে সমালোচনা করে তাকে ছোট প্রমাণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা সহজ ও সুখকর।

কিন্তু ইসলাম চায় মুসলমানগণ নিজের এই অহংবোধের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাক। প্রতিটি মুসলিম স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।

সর্বক্ষণ স্বামী বা স্ত্রীর দোষের পেছনে না লেগে থেকে নিজের উন্নয়নে চেষ্টা করা অনেক বেশী কল্যাণকর।

ধরুন, আপনার উন্নতির জন্য (চারিত্রিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত) আপনাকে একজন সঙ্গী দেয়া হবে। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কি একজন কড়া সমালোচককে সঙ্গী হিসেবে চান যে আপনার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে আর
ছোট-বড় সব ত্রুটির সমালোচনা করবে।

নাকি এমন একজন সাহায্যকারী চান যিনি আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্যের হাত (Co-operative) প্রসারিত করবে?

নিঃসন্দেহে বলা যায়, আপনি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বেছে নেবেন, একইভাবে আপনার উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনাকে ‘সমালোচক’ না, ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে পেতে চায়।

বিবাহ ও পরিবারে যোগাযোগের (Communication) ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তার দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করলাম, এবার আসা যাক শ্রোতার দায়িত্বে। যদিও যোগাযোগে বক্তার দায়িত্ব অনেক বেশী তবুও এতে শ্রোতারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

শ্রোতার প্রথম দায়িত্ব হল মনোযোগ দিয়ে শোনা ও আগ্রহ প্রকাশ করা (showing interest)। শ্রোতার উচিত বক্তার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করা। বুঝতে চেষ্টা করা যে সে শ্রোতাকে কী বলছে। শ্রোতার বক্তব্যের কোন অংশ পরিষ্কার না হলে প্রশ্ন করে বুঝে নেয়া। অনেক সময় শ্রোতা তাড়াহুড়া করে, বক্তার পুরো কথা না শুনেই ধরে নেয় যে বক্তা এটা বলতে চাচ্ছে। শ্রোতাকে বক্তার পুরো কথা শুনতে হবে, কথা অর্ধেক থাকতেই ‘আমি বুঝে ফেলেছি’ মনোভাব দুর্বল যোগাযোগ এর লক্ষণ। আবার অনেক সময় বক্তা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। শ্রোতা পাল্টা প্রশ্ন করে তথ্য সম্পূর্ণ করার পরিবর্তে কিছু একটা ধারণা করে নেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতার ধারণা সঠিক হয় না এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

যেমন স্বামী স্ত্রীকে বললো ‘কাল রেডি হয়ে থেকো, আমরা বেড়াতে যাবো’ স্ত্রী ধরে নিলো কাল স্বামী অফিসে যাবে না। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। স্বামী হয়তো ভেবেছে অফিস থেকে ফিরে সে বেড়াতে যাবে। এক্ষেত্রে বক্তাও বলেনি কখন বেড়াতে যাবে আর শ্রোতাও জিজ্ঞাসা না করে ধারণা করে নিয়েছে। অনেক সময় শ্রোতা বক্তার কথায় প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না। এতে বক্তা কথার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ব্যাপারটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতি নিয়ত ঘটতে থাকলে তা তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

যেমন একবার এক কানাডিয়ান মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে কেন ডিভোর্স হয়েছে বলতে গিয়ে বললো যে, তার স্বামী তাকে কোন গুরুত্বই দিতো না, সে যখন তার স্বামীকে কোন কিছু বলতে চাইতো হয়তো স্বামী কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখেই বলতো ‘আমি শুনছি’ অথবা অন্য রুমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলতো – ‘বলো, শুনছি’। মূলত: একজন বক্তার দায়িত্ব হল শ্রোতার দিকে তাকানো এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (facial expression) দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে সে শ্রোতার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনছে।

স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় শর্ত হল যে দু’জন দু’ জনের কথা আগ্রহ নিয়ে শুনবে।

(চলবে)

পর্ব-১

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য ২

ডা.ফাতিমা খান


রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না… সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময় যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পুরো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

সাহরীতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। সাহরীতে চা পান করলে এই মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।

রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া।