banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

মে দিবসে শ্রমজীবি নারী

অপরাজিতা ডেক্স


মে দিবস, ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই সোনার বাংলা গড়তে চাই।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১৮ সালের মে দিবস পালিত হচ্ছে। শোষণ, বঞ্চনা আর অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে মুক্তির দাবীতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

শ্রমজীবী নারী

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী শিক্ষা আনুপাতিক হারে কম আমাদের দেশে। ফলে নারীর স্বীকৃতি মিলছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী হিসেবে। বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান, দিনমজুর থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।

কি কি কাজে নিয়োজিত

নারী শ্রমিকরা মুলত নানানমুখী কাজ করছে।
১.গৃহকর্মী হিসেবে।
২.গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা। গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের শতকরা ৮০/৯০% ভাগই নারী। ৩.কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ।
৪. ইটভাটায়ও কাজ ।
সর্বস্তরেই কোন কাজেই নারীরা পিছিয়ে নেই। নারী শ্রমিকদের প্রতি সম আচরণ ও সমান সুযোগের ঘোষণা গৃহীত হলেও নারী শ্রমিকরা কার্যত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

শ্রমজীবী নারীদের বেতন বৈষম্য

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, “নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ থেকে জানা যায়, শতকরা ৬১ জন নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং শতকরা ৩২ জন দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান”। অন্যদিকে, শতকরা ৫৬ জন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

শ্রমজীবি নারীদের আইনগত সচেতনতা

মূলত চারটি আইন সম্পর্কে শ্রমজীবী নারীদের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এগুলো হলো :
১. মুসলিম পারিবারিক আইন
২. নাগরিক অধিকার রক্ষা আইন।
এর দু’টো ধারা রয়েছে :
ক. সাংবিধানিক ও খ. ফৌজদারি আইন
৩. মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এবং
৪. ভূমি আইন।
একজনকে শ্রমজীবিকে লিখিত সহায়িকা, ছবি সম্বলিত চার্ট, ক্লাস নোট প্রভৃতির মাধ্যমে সহজভাবে ক্লাসে করে করে বিভিন্ন আইনের ধারাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।

শ্রমজীবি নারী বা সাধারণ সকলের প্রতি সংবেদনশীল আইনও নারীদেরকে আশ্রয় দিতে হবে, ছায়া দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে কিন্তু আদৌ কি পারছে এই সমাজ? মুলত সমাজে পুরুষ এবং নারীর অবস্থা ও অবস্থান যে সম পর্যায়ের নয় এবং তার নাম ঠিকানা পত্রিকায় প্রকাশ যে তার জন্য আজীবন অভিশাপ বয়ে আনে এ বোধ সাংবাদিকদেরকেও ভাবতে হবে। জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এসব নারী শ্রমিকদের অবদান অনেক।

 

নবজাতকের যত্ন

ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এর চেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

  • মায়ের গর্ভ থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
  • জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
  • জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
  • কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
  • বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
  • কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া 

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্য রকমের বিশেষ নিয়ামত। বাচ্চাকে এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতো বার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমাণ্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধোবে, তারপর মাথা মুছে ফেলবে। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করবে। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড় চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

ডা. মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ