banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 4, 2025

 

সুন্দর ত্বকের জন্য কয়েকটি ঘরোয়া প্যাক

সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন নানারকম যত্নআত্তি। যত্নের অভাবে সুন্দর ত্বকও অনেকসময় ম্লান হয়ে যায়। শুধু যত্ন নিলেই হবে না, প্রয়োজন যত্ন নেয়ার সঠিক উপায়টি জানা। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন ঘরে তৈরি কিছু প্যাক। আর সেজন্য বাড়তি তেমন কিছুরই দরকার পড়বে না। আপনার হাতের কাছেই থাকে এমন কিছু দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন ত্বকের উপযোগী কার্যকরী কিছু প্যাক।

এক টেবিল চামচ শসার রস, এক চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ হলুদের গুঁড়ো, এক চাচামচ গ্লিসারিন( শুষ্ক ত্বকের জন্য) মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কার্যকরী একটি প্যাক।

একটি পাকা কলার সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে নিন। ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ কলা ত্বকের কালো দাগ দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে দেয়।

এক টেবিল চামচ বেসন, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, এক চাচামচ হলুদ গুঁড়ো এবং গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ম্যাসাজ করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বকের কালো দাগ দূর করে থাকে এই প্যাকটি।

মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে লোমকূপের ছিদ্রগুলো ছোট করে দেয়। যারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান, এটি ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের বলিরেখা রিংকেল দূর করতে স্ট্রবেরি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্রবেরি ম্যাশ করে সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া স্ট্রবেরির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। প্রথমে এটি ত্বকে কিছুটা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। কিছুক্ষণ পর তা চলে যায়। ভাল ফল পেতে সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করতে পারেন।

 

একাকিত্ব যেভাবে আপনাকে শক্তিশালী করবে

মানুষ এমন একটি প্রাণি যে একা পৃথিবীতে আসে কিন্তু একা থাকতে পারে না। মানুষ সবসময় সঙ্গী খুঁজে ফেরে। যার সাথে সে তার মনের কথাগুলো খুব সহজে খুলে বলতে পারবে। যাকে সে তার মতো করে না হলেও সেই মানুষের মতো করে তার মনে জায়গা করে দিতে পারে। কিন্তু খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন মানুষ একা থাকতে চায় না কিন্তু তাকে একা থাকতে হয়। আর এই একাকিত্ব মানুষকে একদিকে যেমন দুর্বল করে দেয় আবার অন্যদিকে করে তোলে শক্তিশালী।

সামলে নেয়া
আপনি যখন কোনো কারণে আপনার পরিবার থেকে দূরে থাকবেন কিংবা পরিবারের সাথে কোনো কারণে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না তখন আপনার মাঝে চরম আকারের একাকিত্ববোধ কাজ করবে। আর এই একাকিত্ববোধ আপনাকে শুধু নিঃস্ব করবে না, আপনাকে কিছু জিনিস শিখিয়ে যাবে। আপনি জীবন কিভাবে একা একা কাটাবেন, কেউ যখন আপনার পাশে না থাকবে তখন নিজেকে কিভাবে সামলে নেবেন একাকিত্ব আপনাকে তাই শেখাবে।

যোগ্যতা
আপনি যখন একা থাকবেন, হাজারো মানুষের ভিড়ে আপনি যখন একা থাকবেন তখন আপনি নিজের যোগ্যতা অনুভব করতে পারবেন। আপনি নিজেকে কতটা সময়ের সঙ্গে উপযুক্ত করে তুলতে পেরেছেন তা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার এই যোগ্যতার ওপর। অনেকে অনেক কথাই বলবে। সবার কথার আড়ালে আপনি নিজেকে খুঁজে পাবেন কেবল এই একা থাকার সময়টুকুতেই।

বন্ধু
আপনার জীবনে আসল বন্ধু কে তা এই একা থাকার সময়টুকুতে বুঝতে পারবেন। আপনার বন্ধুদের আপনার জীবনে কতটুকু দরকার আর কে কে আপনাকে সত্যিকার অর্থে আপন ভাবে তা কেবল বোঝা যায় এই একা থাকার সময়টাতেই।

 

সহজেই রাঁধুন লবস্টার তন্দুরি

রেস্টুরেন্টে গিয়ে লবস্টার তন্দুরি নিশ্চয়ই অনেক খেয়েছেন। তবে চাইলে আপনি ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু এই খাবারটি। রেসিপি জানা নেই? রইলো রেসিপি-

উপকরণ : লবস্টার ৫০০ গ্রাম, গোলমরিচ সিকি চা চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ, সরিষা বাটা আধা চা চামচ, মাখন ১ চা চামচ, অলিভ অয়েল ১ চা চামচ, ডিমের হলুদ অংশ ১ চা চামচ, বেড ক্রাম ২ টেবিল চামচ, চিজ ৫০ গ্রাম, গাজর টুকরা ১০ গ্রাম, ছোলোরি ১০ গ্রাম ও লবণ আধা চা চামচ।

প্রণালি : ফ্রাইপ্যানে মাখন ও অলিভ অয়েল অল্প গরম করুন। আস্ত লবস্টার পরিষ্কার করে লবণ, গোল মরিচ, মরিচগুঁড়া ও সরিষা বাটা দিয়ে মেরিনেট করে রাখুন। এরপর ফ্রাইপ্যানে অল্প ভেজে তুলে ফেলুন। এবার ফ্রাইপ্যানে বেডক্রাম, গাজর, ছোলোরি ও ডিমের হলুদ অংশ একত্রে মিশিয়ে সস তৈরি করে নিন। লবস্টার তৈরি করা সসের সঙ্গে মাখিয়ে চুলায় দিয়ে ৫ মিনিট রান্না করে নামিয়ে ফেলুন। এরপর লবস্টারের ওপরে চিজ দিয়ে মাইক্রোওভেনে দুই মিনিট বেক করে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

দেশসেরা সবজিচাষি বেলি বেগম

শীতের সকালে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে সবজিচাষি বেলি বেগম সবজি খামারে এলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, চোখ ভরে দেখছিলেন নিজের সবুজ খেত। এক ফসলি জমি ছিল এখানে। এখন সেই বিস্তীর্ণ খেতজুড়ে সবজির সমারোহ। সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে এ গ্রামে। আর এই সবজি চাষে বিপ্লবের কারণে দেশসেরা সবজিচাষি হিসেবে ৭ জানুয়ারি কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বেলি বেগম।
বেলি বেগম এখন দেশের একজন আদর্শ সবজিচাষি। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে বেলি বেগমের বাড়ি। স্বামী সিদ্দিকুর রহমান। তিনিও জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক। বেলি বেগম তাঁর নিজ চেষ্টায় শূন্য থেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন ‘বেলি কৃষি খামার’। ৪০ বিঘা জমির এই খামার বর্তমানে সবজি চাষের দেশসেরা অন্যতম আদর্শ খামার। এই খামার থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন কৃষি কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং ঢাকা খামার বাড়ির কৃষি কর্মকর্তারা আসেন। তাঁর এই কৃতিত্বের কাহিনি শোনালেন বেলি বেগম নিজেই।
বেলি বেগমের পুতুল খেলার বয়স পেরিয়ে যেতে না যেতেই বিয়ে হয়ে যায়। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ায় ছোট ভেবে শাশুড়ি তাঁকে খুব আদর করতেন। পরিবারে ছিল অসচ্ছলতা। থাকতেন পাকশী রেল কলোনিতে। সেখান থেকে চলে আসেন সলিমপুরের জগন্নাথপুর গ্রামে। গ্রামের বাড়ির আঙিনায় শাশুড়ি চালকুমড়ার চাষ করতেন। হাটে বিক্রির পর সেই টাকার কিছু অংশ তাঁকে দিতেন। সেখান থেকে পুঁজি বানিয়ে বেলি বেগম প্রথমে ১০টি মুরগির বাচ্চা কেনেন। কিন্তু কষ্টে তাঁর প্রাণ কেঁদে ওঠে। কারণ, ১০টির মধ্যে ৮টি বাচ্চা মারা যায়। তবু বেলি বেগম হতাশ হননি। সেই দুইটি মুরগি বড় হয়ে ডিম দেয়। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন বেলি বেগম। এভাবে ডিম থেকে ৪০টি মুরগির বাচ্চা পান। ডিম বিক্রি করে ২ হাজার ৫০০ টাকা পুঁজি হয়। এরপর কিছু টাকা ঋণ করে কেনেন একটি গরু। ছয়-সাত মাস রাখার পর সেটি বিক্রি করে দেন। এরপর কেনেন ২৬ হাজার টাকায় একটি গাভি। এক বছর পর গাভি একটি বাচ্চা দেয়। সেটিও ছিল গাভি। সেই দুইটি গরু থেকে প্রতিদিন সাত কেজি দুধ পাওয়া যেত। এভাবে বছর খানেক পর তাঁর জগন্নাথপুর গ্রামের বাড়ির আঙিনায় তিন কাঠা জমিতে গড়ে তোলেন একটি কুলের নার্সারি। সেখান থেকে কুলের চারা বিক্রি করতেন। বেলি বেগম তাঁর সেই নার্সারি থেকে শুরু করেন কুলের চারা বিক্রির কাজ। ২০০৭ সালে তিনি প্রথম আয় করেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এভাবে ৪ বছরে তিনি ৪৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন।
নিজ নামে কেনেন এক বিঘা পাঁচ কাঠার একটি জমি। সেখানে গড়ে তোলেন সবজি ও ফলের বাগান। তাঁর এই সবজির খামারে বর্তমানে গাজর, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতাসহ নানা জাতের সবজি ও ফসল উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে। এখন আর বেলি বেগমকে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। খামার থেকে প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা আয় করেন।
বেলি বেগম বলেন, তাঁর এ সবজির খামার দেখে এলাকার অনেক নারী-পুরুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাঁরাও গড়ে তুলেছেন সবজির বাগান।
তবে শুধু সবজি চাষই নয়, তিনি সামাজিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। বেলি বেগম তাঁর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি তো তেমন লেখাপড়া জানি না। কিন্তু একজন নারী শিক্ষিত হওয়ার পরও স্বামী বা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন অনেক সময়। তবে আমি কষ্ট হলেও নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমার মতো দেশের সব নারীকে এভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।’ বেলি বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর পাশাপাশি তাঁর মেয়ে স্মিতা খাতুনও তাকে এ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে। খামারে প্রতিদিন ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। স্মিতা খাতুন খামার শ্রমিকদের নির্দেশনা দেয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রওশন জামাল বলেন, বিষমুক্ত ও বাণিজ্যিকভিত্তিক সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি বেলি বেগম দেশের একজন অন্যতম নারী কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁকে দেখে সবাই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, এটা দেখে ভালো লাগছে।

 

নারীর মানসিক স্বাস্থ্যও অবহেলিত

পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন বেশি, কিন্তু চিকিৎসা পান কম। দেশের প্রধান দুটি মানসিক হাসপাতালে নারীদের জন্য শয্যার সংখ্যাও অনেক কম। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার পথে বাধা—লোকলজ্জা, কুসংস্কার আর পরিবারের অবহেলা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ) সাধারণ মানসিক অসুস্থতাগুলোর লক্ষণ বুঝতে এ বছর দুটি এলাকায় এক জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, নারী-পুরুষনির্বিশেষে জরিপে অংশগ্রহণকারী লোকজনের ৩৩ শতাংশ বিষণ্নতা, উদ্বেগ, শুচিবাই, সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য কোনো মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তবে নারীদের মধ্যে এই হার বেশি। তাঁদের ৩৭ শতাংশ এমন অন্তত একটি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। পুরুষদের মধ্যে এমন সমস্যা রয়েছে ২৭ শতাংশের।

প্রকোপ বেশি বিষণ্নতার

জরিপে অংশগ্রহণকারী লোকজনের ১৩ শতাংশই বিষণ্নতায় ভুগছেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক আহসানুল হাবীব অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অব সাইকিয়াট্রির বরাত দিয়ে বলেন, দুনিয়াজুড়ে নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ। আর আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর ৪০ শতাংশই বিষণ্নতার কারণে ঘটে থাকে।

 আহসানুল হাবীব বলেন, মাসিকের সময়, গর্ভধারণের সময়ে, প্রসবের পর ও মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার সময়ে মেয়েদের বিষণ্নতাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা না নিলে, পরে সেগুলোই মানসিক রোগ ডেকে আনে। এভাবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মানসিক অসুস্থতা বেশি হতে দেখা যায়।

এনআইএমএইচের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক আলম  বলেন, নারীরা সাধারণত বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হিস্টিরিয়া বা স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় বেশি ভোগেন। প্রজননচক্রের প্রভাব তো আছেই। মেয়েদের থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যাও বেশি হয়, যা থেকে এ ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসায় পিছিয়ে

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের হাসপাতাল। সম্প্রতি এই প্রতিবেদক হাসপাতালটিতে যান। তখন দুপুর ১২টা। বহির্বিভাগে ১০৫ নম্বর কক্ষের সামনে সাতজন রোগীর লাইন। নারী রোগী মাত্র একজন। ১০৩ নম্বর ঘরের সামনেও একই রকম দৃশ্য। এই ইনস্টিটিউট ও পাবনার মানসিক হাসপাতালের চিত্র বলছে, নারীদের সেবা নেওয়ার হার পুরুষের তুলনায় কম।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ রোগী এসেছেন ২১ হাজারের বেশি। তুলনায় বহির্বিভাগে ১৬ হাজারেরও কম নারী চিকিৎসা করিয়েছেন। ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা ছিল নারীর দ্বিগুণ।

পাবনা মানসিক হাসপাতালে অবশ্য বহির্বিভাগে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি এসেছেন। কিন্তু রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা নারীর সংখ্যার প্রায় চার গুণ। কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে এল শয্যাসংকটের কথা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের হাসপাতালে মোট শয্যা আছে ২০০টি। এর মধ্যে নারীর জন্য বরাদ্দ মাত্র ৬৯টি। এসব শয্যায় শিশুদেরও রাখা হয়। পাবনা মানসিক হাসপাতালের ৫০০ শয্যার মধ্যে নারীদের জন্য আছে মাত্র ১০০টি।

ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. ফারুক আলমের মতে, পুরুষেরা যেহেতু হাসপাতালে বেশি আসেন, তাই তাঁদের জন্য বেশি শয্যা। তবে তিনি বলেন, নীতিগতভাবে বা রোগের ধরন অনুযায়ী মেয়েদের জন্য শয্যা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দরকার। তিনি লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।

এদিকে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক তন্ময় প্রকাশ মুঠোফোনে  বলেন, নারীদের মানসিক অসুস্থতা বেশি হওয়ায় তাঁরা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন বেশি। কিন্তু শয্যা কম থাকায় অনেকে ভর্তি হতে পারেন না।

অবহেলা, লোকলজ্জা

অধ্যাপক মো. ফারুক আলম মনে করেন, বেশির ভাগ পরিবারে মূল উপার্জনকারীরা পুরুষ। তাই পুরুষের অসুখ-বিসুখে দ্রুত   ডাক্তার দেখানো হয়। মেয়েদের অসুখের কথা পরিবার আমলে   নেয় না, বিশেষ করে  শ্বশুরবাড়িতে। তা ছাড়া কোনো নারীর মানসিক সমস্যা হলে পরিবারের সদস্যরা বদনামের ভয়ে তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিতে চান না। নারীরাও নিজেদের রোগ সম্পর্কে সচেতন নন। তাঁদের মধ্যে রোগ লুকোনোর একটি প্রবণতা থাকে।

ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে এনআইএমএইচের হাসপাতালে এসেছেন এক মা। মেয়ে তিন বছর ধরে বিষণ্নতায় ভুগছেন। কিন্তু চিকিৎসা শুরু হয়েছে দুই মাস আগে। মা বলেন, ‘মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে তো। এ জন্য চেষ্টা করেছি যাতে আমার পাড়াপ্রতিবেশী না জানেন।’ এখন অসুখের বাড়াবাড়ি হওয়ায় হাসপাতালে এনেছেন।

আরেক মা ঝিনাইদহ থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। এইচএসসি পাসের পরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিছুদিন পার হতেই মেয়ে কথা বলা কমিয়ে  দেন। এখন একদম চুপচাপ হয়ে গেছেন, শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। মেয়ের এমন অবস্থা পর্যায়ে এসেছে ছয়    বছরে। মা বলেন, ‘এত দিন বাড়িতে চিকিৎসা করে ভালো   করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দিন দিন মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এর জন্য অনেক টাকাও জমাতি হইছে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, মানসিক রোগ হলে অনেকে সেটা বুঝতে পারেন না। মেয়েদের উচিত হবে লুকিয়ে না রেখে মানসিক সমস্যার কথা খুলে বলা। আর পরিবারকে বুঝতে হবে এটি একটি রোগ। সময়মতো এর চিকিৎসা করানো দরকার।