banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

যে চতুর প্রশ্নটি অবশ্যই করবেন ইন্টারভিউ বোর্ডে

চাকরির ইন্টারভিউ এমন একটি বিষয় যা চাকরিদাতা এবং প্রার্থী উভয়কে স্ট্রেস দেয়। আপনি যখন ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তখন আপনার উপর থাকে নানান প্রেশার। প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য একটি মানুষকে বেছে নেওয়া কিন্তু কঠিন একটি কাজ। যোগ্যতা তো শুধু কাগজে কলমে থাকলে হবে না, থাকতে হবে বাস্তবে। প্রতিভার প্রকাশ থাকতে হবে কাজে।
কিভাবে একজন যোগ্য কর্মী খুজে নেবেন আপনি? ইন্টারভিউ বোর্ডে চাকরিদাতা এবং প্রার্থী উভয়ের মস্তিষ্কেই চলতে থাকে একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে আসলে অনেক সহজ হয়ে যায় খালি পদটিতে যোগ্য লোক নিয়োগ করা। প্রশ্নটি হল- ‘একসাথে কাজ করা কি সম্ভব হবে?’
অবাক হচ্ছেন? খেয়াল করে দেখুন, কর্মী যদি হয় আপনার মনের মত তাহলে তাকে দিয়ে দরকারি কাজটি করিয়ে নেওয়া কিন্তু সহজ। বস এবং কর্মীর জুটি যত ভাল হয় সে প্রতিষ্ঠান তত বেশী লাভবান হয়। কর্মী যদি অবাধ্য হন তাকে দিয়ে কাজ বের করে আনা মুশকিল হয়ে পড়ে। কর্মীও চান তার বস যেন বুদ্ধিমান, সহনশীল, অমায়িক একজন মানুষ হন।
কিন্তু আপনার মনের এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে জানবেন আপনি? ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রার্থীকে প্রশ্ন করুন ‘আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সে পদে সফল হতে হলে কি করতে হবে?’ অথবা প্রশব করুন ‘সফল হতে হলে কি কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?’আপনি যে উত্তর পাবেন তা থেকে কিন্তু মানুষটি সম্পর্কে বিস্তর তথ্য পেয়ে যাবেন নিশ্চিত।
আপনি যদি প্রার্থী হন সেক্ষেত্রেও কিন্তু প্রশ্নটি কার্যকরি। বিনয়ের সাথে ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা আছেন তাদের কাছে জানতে চান, তারা কি আশা করেন আপনার কাছ থেকে। প্রশ্নটি করে আপনি কিন্তু প্রথমেই সুনজরে পরবেন। কারণ আপনার ভবিষ্যত উদ্ধতন কর্মকর্তারা ভাববেন আপনি কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। তাই যদি চাকরি পেতে চান তাহলে অবশ্যই প্রশ্নটি করুন এবং একই সাথে তাদের উত্তর শুনে আন্দাজ করে নিন তারা কেমন বস হবেন!
তবে আপনি যেহেতু চাকরি প্রার্থী তাই অবশ্যই নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ কোনভাবে আপনার প্রশ্নটি যদি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে তবে অন্যান্য পারফর্মেন্স যতই ভাল হোক না কেন যাদুকরি প্রশ্নটিই হবে আপনার কাল। মনে রাখবেন, ইন্টারভিউ বোর্ডে সবাই সারাক্ষণ আপনাকে পরখ করছেন। আর যেহেতু চাকরি ক্ষেত্রেই আমরা আসলে আমাদের বেশীরভাগ সময় কাটাই তাই জায়গাটি যতটা সম্ভব স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এবং আনন্দের হওয়া জরুরি।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

ভক্তকে চড় মারলেন জন?

বলিউড অভিনেতা জন আব্রাহাম শান্তশিষ্ট বলেই পরিচিত। এই ঠান্ডা মেজাজের মানুষই কিনা রাগের মাথায় চড় মেরে বসলেন এক ভক্তকে। গত বৃহস্পতিবার এই তারকার আসন্ন ছবি ‘ফোর্স টু’-এর ট্রেলার উদ্বোধনীর পর এই ঘটনা ঘটে।
একটি সূত্র জানায়, ট্রেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর এক ভক্ত জনের সঙ্গে সেলফি তোলার আরজি করেন। পরিস্থিতি তখন স্বাভাবিক ছিল না। ঘটনার একপর্যায়ে জন সেই ভক্তের গায়ে হাত তুলে বসেন। কিন্তু এই নায়কের এক মুখপাত্র আবার বলছে ভিন্ন কথা। তাঁর দাবি, জন কখনোই ইচ্ছা করে কারও গায়ে হাত তোলেননি। বরং ওই ভক্তই পরে নিজে থেকে জনের বাড়িতে এসে দেখা করে গেছেন। তিনি তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য নাকি ক্ষমাও চেয়েছেন এই অভিনেতার কাছে।
কিছুদিন আগে বলিউডের কাপুর পরিবারের দুই ভাই রণধীর কাপুর ও ঋষি কাপুরও প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের গায়ে হাত তুলেছিলেন। সে সময় এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

পেটে ব্যথা হলে কী করবেন?

হঠাৎ পেটে ব্যথা। বুঝতে পারছেন না এটি গ্যাস্ট্রিক নাকি অন্য কিছু। কী ওষুধ খাবেন, কার কাছে যাবেন, তা-ও বুঝতে পারছেন না। পেটে ব্যথার সঠিক স্থান, ধরন-ধারণ, আনুষঙ্গিক উপসর্গ ইত্যাদি মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো আছেই। প্রথমেই খেয়াল করতে হবে ওপর পেটে ব্যথা হচ্ছে, না তলপেটে। ওপরে হলে ব্যথা এক আঙুল দিয়ে নির্দেশ করলে সেটা কোন জায়গায় ওপর ডান, নাকি ওপর বাম? ব্যথাটা কোন দিকে ছড়াচ্ছে? কামড়ে ধরে আছে নাকি চিনচিন করছে, না জ্বালা করছে? সঙ্গে বমি, অরুচি, পায়খানার সমস্যা ইত্যাদি আছে কি না। কোনো কিছু খেলে বাড়ে নাকি খালি পেটে বাড়ে?

কেমন হতে পারে পেটে ব্যথার ধরন?
* পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সাধারণত পেটের ওপর দিকে মাঝখানে শুরু হয়। এটি খালি পেটে বাড়ে, কখনো চিনচিনে, কখনো জ্বালাপোড়ার মতো মনে হয়। এর সঙ্গে বমিভাব, টক ঢেকুর, পেট ফাঁপা ইত্যাদি থাকতে পারে। অ্যান্টাসিড বা অন্য গ্যাস্ট্রিকের ওষুধে বেশ উপশম মেলে।
* একই জায়গায় বা একটু বাঁ দিকে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। কিন্তু এই ব্যথা প্রচণ্ড তীব্র, পেছন দিকেও অনুভূত হয়। রোগী ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। সামনে ঝুঁকে থাকলে আরাম মেলে। সঙ্গে বমি থাকতে পারে।
* ওপরের পেটের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে পিত্তথলিতে প্রদাহ বা পাথর থাকলে। এই ব্যথাও ডান দিকে পেছন পর্যন্ত ছড়ায়, সঙ্গে বমি হতে পারে। বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এটি বাড়ে। যকৃতের প্রদাহেও একই জায়গায় ব্যথা হয়। চিনচিন করে ব্যথা, সঙ্গে জ্বর, জন্ডিস, অরুচি ইত্যাদি হেপাটাইটিস বা যকৃতে প্রদাহ নির্দেশ করে। যকৃতে ফোঁড়া হলে এই ব্যথা তীব্র হয়, সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর।
* পেটের ওপরের দিকে ডান অথবা বাঁ কিডনিতে পাথর, প্রদাহ বা সংক্রমণ হলে সেই পাশে ও পেছনে ব্যথা হয়। এই ব্যথা ক্রমেই নিচে নেমে তলপেটেও ছড়ায়। কিডনির ব্যথা প্রচণ্ড তীব্র হয়, একটু পরপর ছাড়ে, আবার আসে। সঙ্গে বমি, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর থাকতে পারে।
* নাভির মাঝখান থেকে ব্যথা যদি ক্রমেই তলপেটের ডান দিকে ছড়িয়ে যায়, সেখানে হাত দিলেই ব্যথা হয়, ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়তে থাকে, তাহলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি না, ভাবতে হবে।
* তলপেটে ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ও জ্বর প্রস্রাবের সংক্রমণ নির্দেশ করে। মেয়েদের জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের নানা সমস্যায় ব্যথা হতে পারে।
* সাধারণ আমাশয়, ফুড পয়জনিং ও বদহজম থেকে ব্যথা পেটজুড়ে থাকে। বমি বমি ভাব, পেটে শব্দ, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হয়। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও পেটে ব্যথা হয়।
* দীর্ঘদিনের পেটের ব্যথার সঙ্গে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা ইত্যাদি সতর্কসংকেত। অন্ত্রে ক্যানসার বা টিবিরও লক্ষণ এই পেটে ব্যথা। তাই পেটের ব্যথাকে ছোট করে দেখবেন না।

পেটে ব্যথা হলে কী করণীয়?
যদি গ্যাসের কারণে পেটে ব্যথা মনে করেন এবং এর সঙ্গে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণগুলো প্রকাশ না হয়, তাহলে গ্যাসের ওষুধ দিতে পারেন। সিরাপ দিতে পারেন। ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ওষুধ আছে সেগুলো দিতে পারেন। তবে নিশ্চিত হতে হবে আপনার ঝুঁকির বিষয়গুলো হয়নি। হঠাৎ করে সমস্যা হয়েছে কি না, বমি হয়েছে কি না, জ্বর আছে কি না—এই বিষয়গুলো সঙ্গে না থাকলে খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করলেই হয়।

 

আকাশজুড়ে মেঘের খেলা

পাহাড়ে নেমে এসেছে রাত। চারদিকে গাঢ় অন্ধকার। কিন্তু এই রাতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সামনে পাহাড়ের সারি। আকাশভরা তারা। প্রকৃতি আলো করে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। মায়াবী এই আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে কেমন যেন রহস্যময় করে তুলেছে। আমরা অনেকজন, মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে শুনছি ব্যাঙের ডাক—ঝিঁঝি পোকার একটানা শব্দ। জোনাকি পোকার দল আলো জ্বেলে আমাদের চারপাশে উড়ছে। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে প্যাঁচা বা বাদুড়ের ডাক। আরও, আরও অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে জাহাজবন্দরের বিদ্যুতিক বাতির আলোকসজ্জা। এ যেন অপার্থিব কোনো দৃশ্য, যা আমাদের কাছে খুব অচেনা। ভালো লাগায় ভরে গেল মনটা।

রাতের এই রূপ দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। পাখির ডাকে সকাল হলো। কিন্তু এ কী! সূর্য কোথায়? এ যে মেঘের পালক। চারদিকে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ। এমনকি ঘরের জানালা–দরজা দিয়ে মেঘ ঢুকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের। একসময় একপশলা বৃষ্টিও নিয়ে এল সেই মেঘ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা পাওয়া গেল। হঠাৎ করেই যেন দৃশ্যপট পাল্টে গেল। উজ্জ্বল সোনালি আলোয় ঝকঝক করে উঠল প্রকৃতি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। রঙিন প্রজাপতি, ফড়িংয়ের দল উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবারও মনে হলো এ কী স্বপ্ন, না সত্যি?

আমাদের চারপাশের এই সৌন্দর্য কোনো কল্পনা নয়, এ সত্যি। আমরা দাঁড়িয়ে আছি বান্দরবানের উঁচু পাহাড়ের ওপর হিল রিসোর্ট সাইরুর খোলা অলিন্দে। বান্দরবান পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বলে রাতের রূপ দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের সময়। খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে মনে হলো নজরুলের সেই গানখানি, ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ।’ খোলা বারান্দায় সকালের নাশতা করতে করতে দেখা যায় নীল আকাশ, পাহাড়, সবুজ বনবনানী, নিচে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী। পাহাড়ের কোলজুড়ে সাজানো আছে ছোট ছোট পাহাড়ি বাড়িঘর।

এখানে নাশতাপর্বের শেষে ঘুরে বেড়ানো যায় রিসোর্টের চারপাশ। একদম উঁচুতে রয়েছে অভিনব একটি সেতু, যা দুটি পাহাড়কে এক করেছে। সেখানেই তৈরি হচ্ছে সুইমিংপুল। ইচ্ছে হলে গা এলিয়ে দিয়ে বসে চা পান করতে পারেন বা গান শুনতে পারেন। একা বসে বই পড়তে চান? খোলা বারান্দায় বসে ছবি আঁকতে চান? দল বেঁধে বসে গল্প করতে বা গান গাইতে বা আড্ডা–হুল্লোড় করতে চান? অথবা দুজনে নিভৃতে বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান—তাহলে চিম্বুক পাহাড়ের পাশে এই সাইরুতে যেতে পারেন। বান্দরবান শহর থেকে এক ঘণ্টার পাহাড়ি পথ। রিসোর্টটির সুন্দর স্থাপত্য, আধুনিক সুবিধা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে সহজেই।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। বারান্দায় বসে সামনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখতে পেলাম আকাশজুড়ে মেঘের যে খেলা চলছে, তারই ছায়া পড়েছে পাহাড়ে। যেখানে কালো মেঘ, সেখানে পাহাড় কালো; যেখানে রোদ, সেখানে প্রকৃতি উজ্জ্বল। পাহাড়ে একসঙ্গে এত রূপ, আমি কখনো দেখিনি আগে। জুন থেকে অক্টোবর মানে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কবির ভাষায়, ‘আকাশজুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা/ দেশে দেশে খেলে বেড়ায় কেউ করে না মানা।’ আর জেনে নিন সাইরু নামের একটি পাহাড়ি মেয়ের ভালোবাসার গল্প, যা লেখা আছে এই পাহাড়ে। শীতকালটা আবার অন্য রকম ভালো। মেঘ আর রোদের আনাগোনা চলতেই থাকে।

সাইরু থেকে ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন চিম্বুক, শৈলপ্রপাত। কিনতে পারেন পাহাড়িদের তৈরি পোশাক, পেঁপে, জাম্বুরা, আনারস, জুমের সবজি, বাংলা কলা, হলুদের ফুল, আদার ফুল, স্কোয়াশ।

 

পূজার সাজে

শারদীয় উৎসবের দিনগুলোয় ঐতিহ্যবাহী সাজটা তো মানাবে ভালোই। তবে এখন দুনিয়া হাতের মুঠোয়৷ আঙুলের ছোঁয়াতেই স্মার্টফোনের পর্দায় ভেসে ওঠে ফ্যাশন-দুনিয়ার নানা খবর। এ জন্য পূজার সাজপোশাকে তার একটা প্রভাব দেখা যায়। তারপরও ঐতিহ্যের পোশাকগুলোও মাত করবে পুজোর ফ্যাশন—এমনটাই ধারণা ফ্যাশন ডিজাইনারদের।

রাতের সাজে শাড়ি পরতে না চাইলে বেছে নিন জমকালো নকশার সালোয়ার-কামিজ। পোশাক ও গয়না: আড়ংরাজধানীর ফ্যাশন বাজারে দুর্গাপূজার পোশাক-আশাক এসে গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, পোশাকের কাটছাঁট এবং রং-নকশায় আন্তর্জাতিক ফ্যাশনধারার প্রভাবটা রয়েছে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে দুই ঈদ ও পূজা অনেকটা কাছাকাছি সময়েই হয়ে আসছে৷ সে জন্য চলতি বছরের ঈদের ফ্যাশনধারাটা বজায় থাকছে পূজার উৎসবে। এমনটাই জানালেন আড়ং, মায়াসীর, অঞ্জনস, দেশালসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার ও পোশাক বিক্রেতারা৷ আর তাই তো কামিজের সঙ্গে লম্বা কোটি, ঘের দেওয়া পালাজ্জো, স্কার্টের সঙ্গে কামিজ দেখা যাচ্ছে। আবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনি চকের দোকান থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউসগুলো শাড়ির সঙ্গে কোট বা কেইপকে একটু দেশীয় ঢঙে উপস্থাপন করেছে।

গরদ শাড়ির আবেদন এখনো হারায়নি। শাড়ি: দোয়েল সিল্কএদিকে কলকাতার সব উৎসবকে ছাপিয়ে যায় শারদীয় দুর্গোৎসব৷ সেখানকার অনলাইন এবং পূজাসংখ্যাগুলোতে চলছে এই বছরের পূজার ট্রেন্ড নিয়ে মাতামাতি৷ একটু চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ফিউশনধর্মী পোশাকের আধিপত্যটা থাকছে সেখানে৷ জিনসের সঙ্গে জর্জেট বা শিফনের শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে কেইপ, এমনকি কামিজের সঙ্গে শাড়ি, হাতাকাটা ফুলেল ছাঁটের কামিজ—এমনটা হবে এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ড (সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, এবেলা)৷ ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, ‘কলকাতায় সারা বছরের ফ্যাশনধারাটাকে পূজার সময় তুলে ধরা হয়৷ এদিকে আমাদের এখানে পয়লা বৈশাখ বা ঈদুল ফিতরের সময় উঠে আসে ফ্যাশনধারা। সেগুলোর ছাপই পড়ে পূজার বাজারে। পাশাপাশি সামাজিক সংস্কৃতিও একটা বিষয়৷ সে কারণে কলকাতার পূজার ফ্যাশনের প্রভাব এখানে ততটা দেখা যায় না৷ ক্রেতাদের দিক থেকেই গরদ, সিল্ক, জামদানি বা সুতির শাড়ি আর পোশাকের চাহিদাটাই এখানে বেশি থাকে।’

‘পোশাকের নকশায় জমকালো ফিউশন না থাকলেও মোটিফে পূজার নানা অনুষঙ্গের ব্যবহার থাকে এখানে। শারদীয় উৎসবে একটা নিজস্ব ধারা এখানে গড়ে উঠেছে।’ বললেন রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ৷ বিভিন্ন সংস্কৃত শব্দ আর বাক্য, স্বস্তিকা, বেলপাতা, চক্রসহ দুর্গাপূজার আরও নানা অনুষঙ্গের ব্যবহারে পোশাকটি গায়ে জড়ালেই ফুটে উঠবে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ৷ দুর্গাপূজা মানেই সারা দিন ঘুরে বেড়ানো। তাই পোশাকে আরামের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই পোশাকের কাপড় বেছে নেওয়া হয়েছে।
সারা দিনের ঘোরাঘোরিতে আরাম দেবে পালাজ্জো আর টপ। পোশাক: বিশ্বরঙ, আবহাওয়ার কারণে মেকআপ হালকা রাখাই ভালো। পোশাক: রঙ বাংলাদেশ, গয়না: আড়ং, স্কার্টের সঙ্গে ভারী এথনিক গয়না সাজে নিয়ে এসেছে ভিন্নতা। পোশাক ও গয়না: বিশ্বরঙ
বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘সকালে অঞ্জলি দিতে হালকা নকশার সুতি পোশাকটাই বেশি আরাম দেবে৷ বিকেলে ঘুরতে বের হলে অবশ্যই পোশাকে থাকতে হবে রঙের আধিক্য৷ আবার চার দিনজুড়ে নতুন পোশাক না পরা গেলেও একটু বদলেই আনতে পারেন ভিন্নতা৷’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বললেন কামিজটা একই রেখে সালোয়ার আর ওড়নার পরিবর্তনে সাজে আসতে পারে ভিন্নতা। একইভাবে বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্লাউজ বা শাড়ি পরার ঢঙে পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

উৎসবের সাজে নতুনত্ব আনতে চান অনেকেই। তবে সেটা বেশি জমকালো যেন না হয়। চোখে যাতে আরাম লাগে সে দিকটা মাথায় রাখার পরামর্শ দিলেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান৷ তিনি বললেন, ‘পূজার সময় সারা দিনই যেহেতু বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হয়, সে জন্য বেসটা হালকা রাখাই ভালো৷ চোখের মেকআপ গাঢ় করতে পারেন৷ সে সময় ঠোঁটে হালকা রঙের ম্যাট লিপস্টিক ভালো লাগবে৷ এদিকে যাঁরা গাঢ় রঙে ঠোঁট রাঙাতে চান, তাঁরা চোখের পাতায় শুধু কাজল লাগাতে পারেন৷’ তবে মেকআপের চেয়ে পূজার সাজে গয়নাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিলেন নুজহাত খান৷ এই সময় জাঙ্ক বা ফাঙ্কি জুয়েলারি নয়; বরং এথনিক জুয়েলারি পূজার সাজে আনবে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক আমেজ৷

পূজার সাজের ধারা নিয়ে ডিজাইনার শৈবাল সাহা বললেন, ‘একটা সময় ছিল যখন লাল পেড়ে সাদা গরদ বা জামদানিতে সেজে একে অপরের পায়ে আলতা দিয়ে মেতে উঠত পূজার কাজে৷ হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলতা-সিঁদুর পবিত্রতার প্রতীক৷ ধারণা করা হয় যে সিঁদুর-আলতার লাল রং আর কাশবনের সাদা—এই থেকেই পূজার পোশাকে এসেছে এই লাল–সাদার আধিক্য।’ প্রতিবছরের মতো এবারও পোশাকে এই দুটি রংকে ভিত্তি করে কমলা, ঘিয়া, নীল, সবুজের মতো রঙের আধিক্য দেখা যাবে। গয়না এবং মেকআপেও থাকবে এসব রং। পূজার সাজ–পোশাকে এই রংগুলোর ব্যবহার অবশ্য এসেছে ফ্যাশনের চলতি ধারা থেকে।

Save

Save

Save

 

চেনা মাছে ভিন্ন স্বাদ

মাছ ভাজা, মাছের ঝোল না হলে মাছের কোপ্তা, খাবার পাতে মাছ না হলে কি চলে? কথায় তো আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। চেনা মাছের ভিন্ন কিছু রেসিপি দিলেন আল্পনা হাবীব

চিংড়ি ভর্তা

উপকরণ: চিংড়ি (মাঝারি আকারের খোসা ছাড়ানো) এক কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, আদাকুচি ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ৫ টি, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, চিনি আধা চামচ, ধনেপাতাকুচি তিন টেবিল চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: চিংড়িগুলোকে লবণ-পানিতে হালকা সেদ্ধ করে নিন। এরপর পানি ঝরিয়ে সেগুলো ১০ মিনিট বরফপানিতে ভিজিয়ে রাখুন। চিংড়িগুলো চৌকো করে কেটে নিন। চিংড়ি বাদে সব উপকরণ ভালো করে হাত দিয়ে চটকে নিন। এবার কেটে রাখা চিংড়িগুলো দিয়ে আলতো করে মেখে নিন।

কাঁচকি মাছের পাতুরিকাঁচকি মাছের পাতুরি
উপকরণ: লাউপাতা প্রয়োজনমতো, কাঁচকি মাছ ১ পোয়া, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ১০ টা, ধনেপাতাকুচি আধা কাপ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, নারকেল দুধ ২ কাপ, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচবাটা আধা কাপ।

প্রণালি: লবণ লাউপাতায় মেখে ভালো করে ধুয়ে নরম করে নিন। একটি পাত্রে কাঁচকি মাছ, পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ (ফাঁড়া করে দিতে হবে), হলুদ, মরিচ, রসুনবাটা, ধনেপাতাকুচি, সরিষাবাটা ও সরিষার তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। লাউপাতার ভেতরে পুর ভরে পার্সেল বানিয়ে নিন। এবার প্যানে তেল গরম করে তাতে বাকি মসলা কষাতে থাকুন। মসলায় নারকেল দুধের অর্ধেকটা দিয়ে কষানো হলে মাছের পাতুরিগুলো দিয়ে দিন। এবার ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। কিছুক্ষণ পর তা উল্টে দিন। পাতুরির ওপর বাকি নারকেলের দুধ দিয়ে ১০ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন।

ইলিশসারা রাত ইলিশ
উপকরণ: গোটা ইলিশ মাঝারি আকারের ১ টা, মল্ট ভিনেগার ১ কাপ, বড় লেবু ১ টা, চিনি ১ কাপ, মরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, লবণ ১ চা-চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, বেবি অনিয়ন ১০ থেকে ১৫ টা, কাঁচা মরিচ ৬ টা, পানি (মাছ ডোবানোর জন্য) পরিমাণমতো, অ্যারারুট ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: মাছের আঁশ ফেলে বুকের কাছ থেকে লম্বা করে চিড়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে নিতে হবে। মাছের কানকোর নিচ থেকে ফুলকা বের করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, মাছটা যেন ভেঙে না যায়। এবার একটা ছড়ানো পাত্রে সব উপকরণ (অ্যারারুট বাদে) নিন। মাছটাকে দিয়ে ডুবো পানিতে ঢেকে রাখুন। আটা দিয়ে পাত্রের চারপাশ ভালো করে মুড়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ২০ মিনিট মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। পানি কমে এলে ঢিমা আঁচে চুলায় অন্তত আট ঘণ্টা রাখতে হবে। চুলা থেকে নামানোর আধা ঘণ্টা পর ঢাকনা খুলে ইলিশ তুলে সার্ভিং ডিশে রাখুন। পাশে পেঁয়াজ আর মরিচগুলো সাজিয়ে দিন। এবার মাছের পানিটা চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন। পানি কমে এলে অ্যারারুট গুলে দিন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ইলিশের ওপর ঢেলে দিন। এবার ইলিশের ওপর অল্প পানি দিয়ে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রিতে আধা ঘণ্টা বেক করলেই হয়ে যাবে সারা রাত ইলিশ।

সুরমা মাছের কোপ্তা
উপকরণ: সুরমা মাছের পেস্ট ১ কাপ, রসুনবাটা ও আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, লবণ সিকি চা-চামচ, ডিমের সাদা অংশ ২ টি, পেঁয়াজবাটা আধা চা-চামচ, অ্যারারুট ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ২ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ১ চা-চামচ ও নারকেল দুধ ২ কাপ।
প্রণালি: মাছের পেস্ট, ডিমের সাদা অংশ, কর্নফ্লাওয়ার, অ্যারারুট ও লবণ এগবিটার দিয়ে ভালো করে বিট করে নিন। এর মধ্যে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ দিয়ে ভালো করে মেখে মাছের বল গড়িয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল ও ঘি গরম করে আদা, রসুন, পেঁয়াজকুচি ও মরিচগুঁড়া ভালো করে কষিয়ে নিন। আরেকটি বাটিতে মিষ্টি দই ও ময়দা ফেটিয়ে নিন। এবার ফেটানো দই মসলার মিশ্রণে দিয়ে দিন। কষানো হলে নারকেল দুধ দিন। মসলা একটু ঘন হয়ে এলে মাছের বল বা কোপ্তাগুলো দিয়ে দিন। আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। এবার বাকি নারকেল দুধ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ২ মিনিট নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন।
নারকেল সরিষার তেল কইনারকেল সরিষার তেল কই
উপকরণ: কই মাছ ৮ টি, নারকেল দুধ ১ টিন, সাদা সরিষাবাটা ৬ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ ও আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ (ফালি করে কাটা) ১০ টি, কালিজিরা আধা চা-চামচ, মেথি ১ চিমটি, সরিষার তেল ৬ টেবিল চামচ ও সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: কই মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার মাছের গায়ে ছুরি দিয়ে গভীরভাবে ছয়টি দাগ কেটে নিন। হালকা হলুদ ও লবণ দিয়ে মাছগুলোকে মেখে সয়াবিন তেলে অল্প করে ভেজে নিন। এবার নারকেল দুধে সব বাটা মসলা দিয়ে মেখে নিন। আরেকটি পাত্রে সরিষার তেল গরম করে কালিজিরা, মেথি আর কাঁচা মরিচ ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজকুচি দিন। পেঁয়াজ লাল হয়ে এলে মাছগুলো ছেড়ে কষাতে থাকুন। মাছ কষানো হলে বাকি মসলা দিয়ে অল্প আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন।

Save

Save

Save

Save

 

তরুণ নেতা হয়ে জাতিসংঘে

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে সারা বিশ্ব থেকে ১৭ জন ‘তরুণ নেতা’ অংশ নেওয়ার সুযোগ পান, যাঁরা নিজ নিজ দেশে জাতিসংঘ-ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ১৭ জনের মধ্যে ছিলেন ময়মনসিংহের মেয়ে সওগাত নাজবিন খান। ছুটির দিনের পাঠকদের জন্য লিখেছেন তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা

সওগাত নাজবিন খান ছবি: সুমন ইউসুফআমি তখন জামার্নিতে। আরডব্লিউটিএইচ আচেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিন এনার্জির ওপর স্বল্পমেয়াদি গবেষণা করছিলাম। সে সময়ই জাতিসংঘের ‘ইয়াং লিডার’ হওয়ার জন্য আবেদন করি। সেটা গত জুন মাসের কথা। তারপর কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে আগস্টের শেষে জাতিসংঘ মহাসচিবের যুবদূত-বিষয়ক অফিস থেকে পাওয়া ই-মেইল আমাকে আনন্দের সাগরে ভাসাল! জানানো হলো, আমি বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের তরুণ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।
তখন ঘটনার শুরু। কারণ, আমি ভেবেছি, যুবদূত হিসেবে জাতিসংঘের কোনো আয়োজনে হয়তো আমাদের ডাকবে। তবে ৩১ আগস্ট যে ই-মেইল পেলাম, তা ছিল অকল্পনীয়। সেদিন জার্মানি থেকে দেশে ফিরছিলাম। আবুধাবিতে বসে দেশে ফেরার বিমানের অপেক্ষায় তখন। সেখানে বসেই ই-মেইল চেক করছিলাম। তখনই জানতে পারলাম, জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশন চলার সময় আমাকে নিউইয়র্কের পথ ধরতে হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। কারণ, সাধারণ অধিবেশনে ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর যুবদূতদের থাকতে হবে। হাতে তখন মাত্র দিন পনেরো সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ঘটনাটি অনেকটা গল্পের মতো বলা যায়। যুবদূত হওয়ার জন্য সারা বিশ্ব থেকে ১৮ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে। পুরো নির্বাচন-প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষের। যখন ভিসার জন্য আবেদন করি তখন হাতে ছিল মাত্র ১০ দিন। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ দিন ছিল ঈদের ছুটি। ভিসা পাব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। ১৭ সেপ্টেম্বর একবার মার্কিন দূতাবাসের ভিসা প্রদান সেন্টারে ফোন করলাম। অনেক কিছুর পর তাঁরা জানালেন, আমার পাসপোর্ট তাঁদের হাতে! অর্থাৎ আমার ভিসা হয়েছে। সেদিন দুপুর ১২টায় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে রাতের ফ্লাইটে নিউইয়র্কের বিমানে উঠি।
নিউইয়র্কের দিনরাত
অধিবেশনে অংশ নেওয়ার আগেই আয়োজকেরা আমাদের নিয়ে ফেসবুকে একটি ক্লোজড গ্রুপ খোলেন। সেখানে এসডিজি ইয়াং লিডার হিসেবে আমরা যে ১৭ জন নির্বাচিত হয়েছি, তাঁদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তবে তা ছিল ‘হাই-হ্যালো’ পর্যায়ে। কারণ, তখন আমরা সবাই ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে নিজেরা গোছগাছ করতেই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। তখন ভাবতাম, নিউইয়র্কে যাওয়ার পর সবার সঙ্গে বেশ আড্ডা হবে, গল্প হবে। কিন্তু সেখানে পা রাখার পরই কঠিন হিসাবের মধ্যে সময় কাটাতে হলো। তাই নিজেদের মধ্যে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।
সেখানে আমাদের দিন শুরু হতো সকাল ছয়টায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বিভিন্ন সম্মেলনে আমাদের অংশ নিতে হতো। আমাদের কাজই ছিল অধিবেশনে যোগ দেওয়া বিশ্বনেতা, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শুভেচ্ছাদূতসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করা। এ কাজ চলত সকালের নাশতার টেবিল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
আমাদের সে কাজের শুরু ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে। সেদিন গ্লোবাল গুড সামিটের মাধ্যমে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের যুবদূত আহমেদ আলহানডাউ আমাদের সবার নাম ঘোষণা করেন। সারা বিশ্ব থেকে আসা বিখ্যাত সব মানুষ তখন আমাদের দেখছেন। সে সময় দারুণ উত্তেজিত ছিলাম। এবারের অধিবেশনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলাম কিন্তু আমরা এই ১৭ তরুণ। জাতিসংঘের সম্মানজনক আমন্ত্রণের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর ভবনের একটি অংশের সামনে লেখক। ছবি: সংগৃহীতদ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর আমরা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যাই। সেখানে আমাদের জন্য সকালের নাশতার আয়োজন ছিল। বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ আরও সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে বসে আমরা নাশতা করি। শুধু নাশতা করেছি এমন নয়, তরুণ নেতৃত্ব ও এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
কমনওয়েলথ যুব পুরস্কার নিচ্ছেন লেখকএর পরের পর্বটি ছিল বেশ মজার। আমাদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘ভিআইপি সোশ্যাল মিডিয়া জোনে’। সেখান থেকে ইনস্টাগ্রাম, স্নাপচ্যাট, ফেসবুক লাইভ, টুইটার ও মিরর ওয়েবে সরাসরি সম্প্রচার করে। বিশ্বখ্যাত ভ্যানিটি ফেয়ারআমাদের ছবি তুলে ইতালীয় ভাষায় তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করে। ছিল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কর্মশালা। ইউএনডিপিতে এক বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কর্মশালা ছিল। তৃতীয় দিন আমরা ইউএনএফপিএ দপ্তরে কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়।

ওই তিন দিনে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও কেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থার প্রধান এবং তারকাদের সঙ্গে। নিঃসন্দেহে এই পরিচয়ের সুযোগ পাওয়াকে জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোর একটি বলতেই হবে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, আমরা কী ধরনের কাজ করি সেসব বিষয়ে। তবে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে তরুণ নেতাদের ছবিযেকাজনির্বাচকদের নজর কাড়ে

ঢাকায় বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করার পাশাপাশি আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করি এইচএ ডিজিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে চালু হলেও সেটার কাজ শুরু হয়েছিল বলা যায় ২০১১ সালে। তখনো আমার স্নাতক শেষ হয়নি। এরপর তো ভারতে চলে গেলাম। তবে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজের পরিকল্পনা থেমে থাকেনি। দেশে ফিরেই আমাদের পারিবারিক জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করি। বেশ বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন ছিল সে সময়। তখন পরিবারের সদস্য ও এলাকার কয়েকজন মানুষ অনুদান দিয়ে আমার কাজকে এগিয়ে নেন। এমন ২৫ জন রয়েছেন যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।

স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে শুরুর দিকে বেশ সময় দিতে হয়েছে। তখন আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। স্কুলে সময় দিতে হয় বলে সপ্তাহে শুধু দুদিন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বাকি দিনগুলো কাটাতাম স্কুলেই। এভাবে কয়েক মাস পার করার পর সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে। এখন তো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসীও উদ্যোগী। এ ছাড়া খায়রুজ্জামান নামে এক চাচা সেখানকার পুরো বিষয়গুলোই দেখভাল করেন।

এসডিজি বিষয়ে সবাইকে জানানোর কাজটি শুরু করব আমার স্কুল থেকেই। জাতিসংঘের তরুণ নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই স্কুলের কাজটা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া কমনওয়েলথ যুব পুরস্কার, জার্মানির গ্রিন লিডার পুরস্কারও নির্বাচকদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। এদিকে গত বছর জাপানে এসডিজি নিয়েও গবেষণা করি। সেই গবেষণার কাজটিও তরুণ নেতাদের তালিকায় আমাকে জায়গা করে দিতে সহায়তা করেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অন্য তরুণ নেতাদের সঙ্গে সওগাত নাজবিন খানএখন আমাদের কাজ

ইয়াং লিডার হিসেবে আমাদের কাজ হবে নিজেদের প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি আমার কাজ হবে এসডিজি বাস্তবায়নে তরুণদের যুক্ত করা, উদ্বুদ্ধ করা। তবে আমাদের কাজের পরিধি শুধু আমাদের কমিউনিটি বা আমাদের দেশ নয়। জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে আমাদের বিভিন্ন দেশে এসডিজি নিয়ে বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। এ ছাড়া আমরা একটি বা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করলেও কথা বলতে হবে এসডিজির ১৭টি বিষয়েই।

এখন আমরা এই ১৭ তরুণ হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রত্যেকে নিজেদের কাজের আপডেট দিই। জাতীয় পর্যায়ে তাঁরা কেমন সাড়া পেয়েছেন, সেসব নিয়েই কথা হয়।

Save