banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নারীদের সাথে অবিচার ও তাদের শোষণ করে আসছিল। নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় নিকৃষ্ট মনে করা হত। আইনের দৃষ্টিতে তাদের কোন অধিকার ছিল না। আর না সমাজে তাদের কোন মর্যাদা ছিল। তারা তুচ্ছ ভোগ্যবস্ত্ত কিংবা পরিবারের অন্যান্য আসবাব পত্রের মত ব্যবহৃত হত। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজে এটি একটি সাধারণ রীতি ছিল যে, পিতার মৃত্যুর পর ছেলেরা পরিবারের অন্যান্য সামগ্রীর মত তার স্ত্রীদেরও মালিক হত। তার মাও তখন তার স্ত্রী ও দাসী হিসেবে কাজ করত। পৃথিবীর কোন কোন অংশে নারীদেরকে আত্মাহীন একটি প্রাণী কিংবা তাদের কোন স্বতন্ত্র জীবন আছে বলে মনে করা হত না। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে যখন কোন মৃত স্বামীকে চিতায় আগুনে পোড়ানো হত; তার জীবন্ত স্ত্রীকেও সেই জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিতে বলা হত। তার কোন স্বতন্ত্র জীবন যাপনের অধিকার বলতে ছিল না। স্বামী যতদিন জীবিত থাকত ততদিনই সে বেঁচে থাকার অধিকার লাভ করত এবং যখন তার স্বামী মৃত্যুবরণ করত তাকেও তখন স্বেচ্ছায় জীবন বিসর্জন দিতে হত। এখনো ভারতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। কেননা, এটি হিন্দু মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। অনেক সমাজে নারীদের মনে করা হত দুষ্টকর্মের উৎস, যারা বেহেস্তে ঈভ (হাওয়া আ.) এর প্রথম অপরাধের কলঙ্ক বহন করছে।

ইসলামের আবির্ভাব নারীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইসলাম তাদের মর্যাদাকে পুরুষের সমান্তরালে নিয়ে আসে। তা তার সকল নৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং তার জীবনের প্রতিটি বিষয় পছন্দমত নির্বাচন করার স্বাধীনতা প্রদান করে। এটি তাকে সমাজে সকল মর্যাদা ও সম্মানের প্রতিমূর্তিতে পরিণত করে এবং তাকে সব ধরনের শোষণ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে।

কোরান মাজিদ বারংবার নারী ও পুরুষকে পৃথক সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী সমান। কোরান মাজিদ বলে:

নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফেরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। (আল-আহযাব, ৩৩:৩৫)

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আত-তাওবা, ৯:৭১)

আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহা সফলতা। (আত-তাওবা, ৯:৭২)

আর তোমরা আকাঙ্খা কর না সেসবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (আন-নিসা, ৪:৩২)

কোরান মাজিদ আরও ঘোষণা করে যে, পুরুষ ও নারী একই উৎস থেকে এসেছে এবং আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানসিক ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতার বিচারে উভয়েই সমান। কোরান মাজিদ বলে: হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। (আন-নিসা, ৪:১)

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য
কোরান মাজিদে নারীদের (নিসা) নামে একটি পৃথক সূরা রয়েছে। যাতে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণিত হয়েছে। যদিও পুরুষ ও নারী বিয়ের ক্ষেত্রে সমান অংশীদার, দায়িত্বের একটি বৃহত্তর অংশ বহন করতে হয় পুরুষকে । পুরুষকে পরিবারের প্রধান বিবেচনা করা হয় এবং তাকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্বভার বহন করতে হয়। এজন্যে কোরান ও হাদিস স্বামীদেরকে তাদের স্ত্রীদের সাথে আচরণের ব্যাপারে একটি সার্বজনীন ও সবিস্তার নির্দেশনা প্রদান করে। এই নির্দেশনাসমূহ সেসব নির্দেশনা থেকে অনেক ব্যতিক্রম যা স্বামীদের সাথে স্ত্রীদের আচরণের প্রেক্ষিতে প্রদান করা হয়েছে। নারীদের মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য অন্য কোন ধর্ম কিংবা মানব সমাজ এত বেশি গুরুত্ব দেয় নি। নিম্নে কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর তা থেকে খুশি হয়ে যদি তারা কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। (সূরা আন-নিসা, ৪:৪)

মোহরানা প্রদান বিয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। যখন কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব করে তখন তাকে একটি বিশেষ পরিমাণ মোহরানা প্রদানে স্বীকৃত হতে হয়। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, তাকে সমাজে তার নিজের অবস্থান ও স্ত্রীর মর্যাদা অনুসারে মোহরানার পরিমাণ ধার্য করতে হবে। কোরান মাজিদ বলে:

তোমাদের কোন অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও, এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোন মোহর নির্ধারণ কর নি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর উপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের উপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের এটি আবশ্যক। (বাকারা, ২:২৩৬)

মেয়েদের সেই মোহরানায় স্বীকৃত হওয়া কিংবা তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রয়েছে। মোহরানার উপর রাজি হওয়া ব্যতিরেকে বিয়ে বৈধ হয় না। কোরান মাজিদ বলে:

হে নবি, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ…। (আল-আহযাব, ৩৩:৫০)

তোমরা তাদেরকে বিয়ে করলে কোন অপরাধ হবে না, যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহরানা প্রদান কর। (আল-মুমতাহিনা, ৬০:১০)

মোহরানা একবার দিয়ে দেয়া হলে তা স্ত্রীর নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়। স্বামী তা পুনরায় ফিরিয়ে নিতে পারে না; এমনকি যদি সে তাকে তালাকও প্রদান করে। কোরান মাজিদ বলে:

আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোন কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে? (আন-নিসা, ৪:২০)

মৌলিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হওয়া
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। (আন-নিসা, ৪:৩৪)

এই আয়াতের উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, স্ত্রীর জীবনের মৌলিক চাহিদার যোগান দেওয়া একজন স্বামীরই দায়িত্ব। যদি সে তা না করে তবে সে আল্লাহ তাআলার আদেশ লংঘন করে। অধিকন্তু মুসলিম পরিবারে স্ত্রীকে উপার্জন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় নি। অবশ্য সে স্বামীর অনুমতি স্বাপেক্ষে কোন কাজ করতে পারে। আর যে অর্থ সে উপার্জন করবে তা তার নিজস্ব এবং তার সম্পদের উপর স্বামীর কোন বৈধ অধিকার নেই।

নারীদের সমান অধিকার
তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। (আল-বাকারা, ২:১৮৭)

আর নারীদের আছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের উপর (পুরুষদের) অধিকার। ( আল-বাকারা, ২:২২৮)

আরও উল্লেখ্য যে, পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমানাধিকারের ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও পশ্চিমা ধারণার মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে। ইসলাম উভয়কে একই ধরনের মৌলিক মানবাধিকার প্রদান করে। কিন্তু সমান দায়িত্বভার অর্পণ করে না। একজন পশ্চিমা নারীকে রান্নাঘরে কাজ করতে হয়, শিশুদের খাওয়াতে হয়, ছেলেমেয়েদের লালন পালন করতে হয়, আবার যুগপৎভাবে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করার জন্যে স্বামীকে সহযোগিতাও করতে হয়। সে সমরাস্ত্রও বহন করে এবং দেশ প্রতিরক্ষায়ও অংশ নেয়। ইসলাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে এমন দায়িত্বসংক্রান্ত সমতার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। তা বুঝে যে, পুরুষ ও নারীর শরীরতন্ত্র ও শারিরিক গঠনের ক্ষেত্রে অনেক ভিন্নতা এবং তাদের উভয়ের মাঝে বিশেষ যৌন স্বাতন্ত্র রয়েছে। অধিকন্তু তাদের আবেগিক চাহিদা ও মানসিক বিচার বুদ্ধির ক্ষেত্রেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। একারণে ইসলাম পুরুষ ও নারীকে ভিন্ন ভিন্ন দুই গোচ্ছ দায়িত্ব প্রদান করে। মুসলিম সমাজে পুরুষ হল পারিবারিক কর্মকান্ডের প্রধান। তাদের প্রথমিক দায়িত্ব হল পরিবারের সদস্যদের জন্য উপার্জন করা। পক্ষান্তরে, নারীরা ঘরের ঘরের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের প্রধান দায়িত্ব হল সন্তান লালন পালন করা। পুরুষরা এভাবে দায়িত্বের একটি বড় বোঝা বহন করে। কোরান মাজিদে তা খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে:

আর নারীদের আছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের উপর (পুরুষদের) অধিকার। আর পুরুষদের রয়েছে তারে উপর মর্যাদা এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। ( আল-বাকারা, ২:২২৮)

আর তোমরা আকাঙ্খা কর না সেসবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের রয়েছে অংশ তারা যা উপার্জ করে তা থেকে। (আন-নিসা, ৪:৩২)

স্ত্রীর প্রতি দয়া প্রদর্শন
আর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যান রাখবেন। (&আন-নিসা, ৪:১৯)

এমন কোন নারী পাওয়া দুষ্কর যে তার জীবনের সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এভাবে কোন কারনে অপছন্দ করা শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে কোরান মাজিদ স্বামীকে বলে, তার দুর্বলতাকে এড়িয়ে যেতে এবং তার সাথে দয়া ও সহানুভূতির আচরণ করতে। কোরান মাজিদ আরও সুসংবাদ প্রদান করে যে, স্বামীর এই কাজের জন্য আল্লাহ তাআলা তাকে প্রভূত কল্যান দান করবেন।

স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া
হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। (আত-তাগাবুন, ৬৪:১৪)

কোন কোন ক্ষেত্রে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের চাহিদা আল্লাহ তাআলার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। পরিবারের এধরনের সদস্যরা আমাদের শত্রু। কোরান মাজিদ আমাদেরকে বলে যে, আমাদের পরিবারের এসব সদস্যদের কেবল ক্ষমা করে দেয়াই উচিৎ তা নয়, বরং তাদের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতাকে গোপন রাখতে হবে। তাদের দোষ প্রকাশ করলে তা তাদের জন্য মানহানির কারণ হবে, যা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।

স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা
যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব। (আন-নূর, ২৪:২৩)

আর তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে, তোমরা তাদের উপর তোমাদের মধ্য থেকে চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত কর। (আন-নিসা, ৪:১৫)

ইসলামি আইনে কোন অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্যে তার অপরাধ প্রমাণ করতে দুইজন স্বাক্ষী আবশ্যক হয়। ইসলামে একজন নারীর সম্ভ্রম ও সতীত্বকে এতই মর্যাদা দেয়া হয়েছে যে, ইসলামি আইন তার অপরাধ প্রমাণের জন্য চারজন স্বাক্ষী পেশ করাকে অপরিহার্য করেছে। অন্যথায় সে নিরপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

সালিশ নিয়োগের সমান অধিকার
যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোন দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোন মীমাংসা করলে তাদের কোন অপরাধ নেই। (আন-নিসা, ৪:১২৮)

স্ত্রীর প্রতি দয়া প্রদর্শন, এমনকি তালাক প্রদানের পরও
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। (আল-বাকারা, ২:২৩২)

এগুলি কোরান মাজিদের এমন কিছু নির্দেশনা, যা ইসলাম নারীদের যে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে তার চিত্রকে ফুটিয়ে তোলে। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম কিংবা সমাজ এমনকি এর ধারে কাছেও আসে না।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

 

সাত শরীকের কোরবানি এবং কারো নিয়তে সমস্যা থাকলে?

মাসআলা : সাত শরীকের কুরবানী, সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। [বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭]

মাসআলা : কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে, যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। [বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯]

মাসআলা : শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

লিখেছেন : মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
গ্রন্থনা সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
সৌজন্যে : মাসিক আল কাউসার

 

মেঘলা দিনে রোমান্টিক সারিকা-ইমন

মেঘলা দিন। সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সব মিলিয়ে এক রোমান্টিক আবহ। উত্তরার শুটিং বাড়ি ‘ক্ষণিকালয়ে’র বারান্দায় দাঁড়িয়ে এমনটাই যেন অনুভব হচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম কাজ বলেও যে একটা কথা আছে। আর তারই কারণে এই শুটিং বাড়িতে আসা। তাই সেই আবহের মগ্নতা কমিয়ে কাজেই মনোযোগ দিতে হল। এই শুটিং বাড়িতে জনপ্রিয় নির্মাতা সাজ্জাদ সুমনের নাটকের দৃশ্যধারণের কাজ চলছে। তার এই নাটকে দ্বিতীয়বারের মতো জুটিবদ্ধ হয়েছেন সারিকা এবং ইমন। একটু পরেই শট দিবেন সারিকা-ইমন তাই পরিচালক সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন। শটের জন্য সাদা টি-শার্ট আর জিন্স পরনে সুদর্শন ইমন হাজির। নেই শুধু সারিকা। হঠাৎ সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। তাকিয়ে দেখতেই লাল শাড়ি পরনে সারিকাকে দেখা গেল।

শটের জন্য প্রস্তুত তারা। পরিচালক অ্যাকশন বলতেই আয়নার সামনে বসে থাকা সারিকাকে পিছন থেকে এসে ইমন বলে উঠলেন, ‘চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার দিশা’।

জীবনানন্দের কবিতার লাইনটি যেন আবারো বাইরের রোমান্টিক আবহের কথা মনে করিয়ে দিল। অবশ্য পরিচালকের কাছ থেকে জানা গেল এই দৃশ্য রোমান্টিক হবে। বাহ, রোমান্টিক আবহে রোমান্টিক দৃশ্য। দৃশ্যটি যখন নেয়া হচ্ছিল তখন মনিটরে এক পলক তাকিয়ে রইলাম। তিন বছর পর অভিনয়ে ফেরা সারিকা এখনও যেন তার জায়গায় সেই আগের সারিকা। ইমন আর সারিকা রোমান্টিক দৃশ্য এক শটেই ওকে। পরিচালকও খুশি।

ইমন সারিকার বন্ধুত্বের কথা কারো অজানা নয়। কিন্তু এই বন্ধুত্ব জীবনে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জুটি বেধে কাজ করছেন তারা। নাটকে নীলা চরিত্রে আছেন সারিকা আর আবির চরিত্রে ইমন। নাটকটি রচনা করেছেন মেজবাহ উদ্দীন সুমন। নাম ‘নীল ঘুম’।

নাটকের নাম শুনে গল্পটি জানার আগ্রহ বেড়ে গেল। সেই আবদার থেকে পরিচালককে জিজ্ঞেস করা।

পরিচালক সাজ্জাদ সুমন বলেন, ‘জীবনে অনেক পরিচালনা করেছি। তবে এবারেরটা আমার জন্য বেশ স্পেশাল। বেশ সুন্দর গল্প এবং হৃদয়স্পর্শ করবে সবার। নীলা-আবির সুখী দম্পতি। তাদের দিন ভালো মতই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জীবনে আসে এক দুঃখজনক দিন। এর বেশি কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না। তবে দর্শকদের ভালো লাগবে আশা করি।’

পরিচালক গল্পের কিছুটা বলতে গিয়েই যেন কিছুটা শান্ত। তখন কিছুটা আঁচ করা গেল কিছু একটা স্পর্শকাতর গল্পই হবে।

সারিকার সঙ্গে এই পরিচালকের প্রথম কাজ। তাই কেমন অনুভূতি জানতে চাওয়া হল। তিনি বলেন, ‘গল্পের জন্য একটু সুন্দর, মিষ্টি মেয়ের দরকার ছিল। যার জন্য সারিকা একদম ঠিক। গল্পের চরিত্রের সারিকাকে একদম মানিয়েছে। সে খুবই ভালো একজন অভিনেত্রী’।

অভিনয়ে ফিরে যার এতো প্রশংসা সেই সারিকাকে শট দেয়ার পর ছবির জন্য কিছু সময় বের করে নেয়া হল। সঙ্গে সুদর্শন ইমন। আর ছবি তুলতে তুলতেই কথা হল তাদের সঙ্গে।

প্রথমে ইমন বলে উঠলেন, ‘কাজটি বেশ স্পেশাল আমার জন্য। এর গল্প খুবই সুন্দর। গল্পে সারিকা আর আমি সুখী দম্পতি। সারিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব অনেক দিনের। কিন্তু কাজ কম। তারপরও একবারের জন্য মনে হচ্ছে না যে আমরা আগে কখনও কাজ করিনি’।

এবার যে সারিকার পালা। মিষ্টি মেয়ে সারিকার মুখেও ইমনের প্রশংসা। গল্প নিয়েও বেশ খুশি তিনি। ফেরার পর ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ে ফেরার পর থেকে একটি দিনও শান্তি নেই। শুটিং নিয়েই ব্যস্ত। বাসায় বাচ্চাকেও সময় দিতে পারছি না। তবে পুরনো জায়গায় ফিরে বেশ উচ্ছ্বসিত আমি।’

ছবি তোলার মধ্যেই যেন সারিকা ইমনের গভীর বন্ধুত্বের ছাপ দেখা গেল। তাদের এই মিষ্টি বন্ধুত্ব সম্পর্কের ছবির পর্ব শেষ হতেই কথার পালাও শেষ। কারণ এর পরেই আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন তারা দুজন। আর তাদের মেঘলা দিনের রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলো লাক্স নিবেদিত ‘নীল ঘুম’ পর্দায় দেখা যাবে ঈদের দ্বিতীয় দিন আরটিভিতে।

 

গ্রামীণ ইউনিক্লো’র ঈদ কালেকশন

ঈদের খুশিতে প্রতিটি মানুষই চায় প্রতি মুহূর্তে আনন্দে থাকতে। তাই উৎসবের বিভিন্ন মুহূর্তের সাথে মানিয়ে গ্রামীণ ইউনিক্লো নিয়ে এসেছে ঈদ কালেকশন। হোক সে ঈদের দিনে বেড়ানো বা প্রিয়জনের সাথে আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়ার, দূর দূরান্তে ঘুরে বেড়ানো বা প্রকৃতিকে উপভোগ করার সব মুহূর্তেই চাই আরামদায়ক ও পরিবেশ উপযোগি পোশাক। ঈদে গ্রামীণ ইউনিক্লো নিয়ে এলো এমনই আরামদায়ক ও যেকোন পরিবেশ উপযোগি পোশাকের সমারহ।

ঈদে অন্যান্য পোশাকের সাথে লিনেন শার্ট পাচ্ছেন ১৪৯০টাকায়, পোলোশার্ট পাচ্ছেন ৯৯০টাকায়, বিভিন্ন ফাংশনাল জিনস পাচ্ছেন ১৫৯০ টাকায়, চিনোপ্যান্ট পাচ্ছেন ১৬৯০ টাকায়, গ্রাফিকটি-শার্ট পাচ্ছেন ৪৯০ টাকায়। এছাড়া মেয়েদের কামিজ পাবেন ১৬৯০ ও ২৪৯০ টাকায়। কামিজের সাথে মানানসই লেগিংস পাবেন ৩৫০ টাকায় ও পালাজ্জো  ৭৯০ টাকায়। এছাড়াও ট্রেন্ডি পেন্সিলপ্যান্ট পাচ্ছেন ৯৯০টাকায় । ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সফট এন্ড কালেকশনে একের অধিক কিনলেই পাবেন ছাড়।

গ্রামীণ ইউনিক্লো এর বর্তমানে ৯টি আউটলেট আছে। গ্রামীণ ইউনিক্লো আউলেট লোকেশন: বসুন্ধরাসিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডি সাইন্সল্যাব মোড়, কাঁটাবন মোড় (এলিফ্যান্ট রোড), খিলগাঁও তালতলা, নয়াপল্টন, মিরপুর-০১, মোহাম্মদপুর রিং রোড এবং গুলশান বাড্ডা লিংক রোডে। আরোও জানতে লগ ইন করুন: http://www.facebook.com/grameenuniqlo

 

ঈদে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার

ঈদুল আজহার ছুটি থেকে শুরু হচ্ছে প্রতীক্ষার পর্যটন মৌসুম। ঈদে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল, মোটেল ও বার্মিজ মার্কেটগুলো প্রস্তুত।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটক শূন্য। তবে ঈদের ছুটি কাটাতে দীর্ঘ এ সৈকতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। তাই পর্যটকদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো সাজছে নতুন সাজে।

হোটেল মালিক সমিতি বলছে, পর্যটকদের কাছে ঈদের ছুটিকে আনন্দময় করে তুলতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আর পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার নিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশও।

পর্যটকদের নানান সুযোগ-সুবিধা দিতে যাবতীয় প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। বসে নেই বার্মিজ দোকানের ব্যবসায়ীরাও। তারাও দোকানকে নতুন সাজে সাজাতে ব্যস্ত। পর্যটন নগরীতে ছোট বড় ২ শতাধিক হোটেল মোটেল ও ২ শতাধিক গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন দেড় লক্ষাধিক পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জোন ট্যুরিস্ট পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বী।

 

সানজিদার জয়ের গল্প

‘২০০৩ সালে পত্রিকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখি। নারী শিক্ষকদের যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি। এইচএসসি পাস আমার মনটা আনন্দে ভরে যায়। ভাশুর ও স্বামীর হাতে চাকরির দরখাস্ত দিতে থাকি। টানা ছয় বছর। কিন্তু কখনোই লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাইনি। এভাবে সন্দেহ হয়, তাঁরা হয়তো আমার আবেদন পোস্টই করেন না।’ কথাগুলো বলেন নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার ৫৯ নম্বর বন্দর মোল্লাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সানজিদা জামান। ২০১৩ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য তাঁকে ‘জয়িতা’ সম্মাননা দেয়।

‘২০০৯ সালে নিজেই দরখাস্ত জমা দিই। পরীক্ষা দিয়ে ২০১০ সালে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তবে এটা সহজ ছিল না। এর জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।’ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ আগ্রহ ছিল সানজিদার। মা-বাবাকে কখনো বলতে হয়নি, ‘পড়তে বসো।’ বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সার্জেন্ট। নিজে ‘বড়’ চিকিৎসক নন বলে স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে দেশের নামকরা চিকিৎসক হবে। তা ছাড়া মা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন বলে সানজিদার মধ্যেও চিকিৎসক হওয়ার বাসনা পোক্ত হতে থাকে।

বাবা সরকারি চাকরিজীবী হলেও তাঁর বেতন-ভাতা ছিল খুব কম। চার ছেলেমেয়ের সংসারে অভাব লেগেই ছিল। মা সংসারের চাহিদা মেটাতে দরজির কাজ করতেন। সানজিদা বলেন, ‘তখন আমি ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মাকে একদিন বললাম, প্রাইভেট পড়া দরকার। মা কিছু না বলে খুব কেঁদেছিলেন। বুঝতে পারি সম্ভব নয়। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল।’ বাবা বদলি হলে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন সানজিদা। কুমিল্লা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিছুদিন ক্লাস করে চলে আসেন গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দরে। বাড়ি থেকে চার মাইল দূরের সোনাকান্দা উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস করতে থাকেন। এক আত্মীয়ের পরামর্শে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মা সানজিদাকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ান। ‘মায়ের যুক্তি, সংসারে অভাব। তার ওপর মেয়েদের পড়াশোনা তাড়াতাড়ি শেষ হলেই ভালো। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও খুব খেটে পরীক্ষা দিই। ১৯৯৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে রেকর্ড নম্বর পেয়ে পাস করি।’ বলেন সানজিদা।

এখানেই শেষ নয়। সানজিদা বলেন, ‘ভাগ্য বলতে কিছু আছে, এটা আমি বিশ্বাস করি। তবে জীবনের মোড় এভাবে ঘুরে যাবে, তা ভাবতে পারিনি। ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের জন্য আমার মতো কুমিল্লা বোর্ডের প্রায় হাজার পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত করা হয়। বোর্ড পর্যন্ত গিয়ে ফলাফল জানতে পারি, রেকর্ড নম্বর পেয়েও আমি বিফল!’

দমকা হাওয়ার মতো এক নিমেষেই জীবনের লক্ষ্য, স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সানজিদা। এক বছর বিরতি দিয়ে আবার ১৯৯৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। আবারও স্টার মার্কস পেয়ে পাস করি। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের তিন মাসের মাথায় বিয়ে হয় সানজিদার।

‘একান্নবর্তী পরিবারের বউ আমি। বড় সংসার। জায়েরা আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তাদের সন্তানেরা আমার সহপাঠী। বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না, এমন মানসিকতার মধ্য দিয়ে গৃহিণী হয়ে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে গুমরে মরি। রাতভর কান্না করি। পড়ার নেশা কাটেনি! আবার পড়ার উপায়ও নেই।’ বড় ভাশুরকে অনেক অনুরোধ করে অনিয়মিত ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে। কলেজে ভর্তি হলেও ক্লাস করা হয় না। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি, ক্লান্ত শরীরে রাতে বারান্দায় পড়তে বসেন। পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে প্রবাসে থাকা স্বামীর কাছেও নিজের ইচ্ছেগুলো প্রকাশ করতে পারতেন না সানজিদা।

এভাবেই বুঝে না বুঝে পড়াগুলো মুখস্থ করে কখনো গাইড বইয়ের সাহায্য নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস করেন তিনি। লেখাপড়া আবার স্থগিত! ‘তবে আমি থেমে থাকিনি। চেষ্টা করেছি কিছু একটা করতে। শেষ পর্যন্ত পেরেছি। এখন আমি দুই সন্তানের মা। তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি আমিও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০১৫ সালে বিএসএস পাস করি। এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছি।’

শিক্ষকতার পাশাপাশি সানজিদা লেখালেখিও করেন। নিজেকে ‘জয়িতা’ পরিচয় দিতে গর্বে বুক ভরে ওঠে তাঁর। ছাত্রছাত্রীদের, অভিভাবকদের সব সময় বোঝান লেখাপড়ার গুরুত্ব।