banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

বেলাল খানের সুরে তিন তারকার ‘একই স্বপ্ন’

সংগীতের দুই তারকা বোন ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরী। ব্যক্তিজীবনে দু’জনার মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকলেও সচরাচর এক অ্যালবামে পাওয়া যায় না তাদের গান। তবে এবার সেটি পাওয়া যাচ্ছে। দু’জনে গেয়েছেন ‘একই স্বপ্ন’ শিরোনামের একটি বিশেষ অ্যালবামে।

এতে দুই বোনের সঙ্গে এবারই প্রথম অ্যালবামে গাইলেন সংগীতের আরেক প্রিয় মুখ শারমিন রমা। গানের পাশাপাশি যাকে সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও জেনে থাকেন দর্শকরা। আসছে ঈদ উপলক্ষে সদ্য রেকর্ড শেষ হওয়া বিশেষ এই অ্যালবামটির সুর করেছেন বেলাল খান। গান লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন ও নীহার আহমেদ।

এই ঈদে সিএমভির ব্যানার হয়ে জিপি মিউজিকে প্রকাশ পাচ্ছে তিন গানের ‘একই স্বপ্ন’। অ্যালবামটি প্রসঙ্গে বেলাল খান বলেন, ‘এটা আমার সৌভাগ্য। তিনজন অসম্ভব গুণী শিল্পীর কাজ করেছি এবার। আমি চেষ্টা করেছি নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে উনাদের সহযোগিতাও পেয়েছি। আশা করছি উনাদের কণ্ঠে এবার নতুন কিছু পাবেন শ্রোতারা।’

এদিকে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘বেলাল খুবই ভালো কাজ করছে এখন। আমাকে অসাধারণ একটি গান গাইতে দিয়েছে সে। এক কথায় মুগ্ধ গানটি গেয়ে।’

‘একই স্বপ্ন’ অ্যালবামের গান তিনটি হলো, ‌’পিপিলিকা’, ‘একই স্বপ্ন’ এবং ‘আমি প্রশ্ন হয়ে যাই’।

 

তাহাজ্জুদের নামাজ কি, কেন এবং কীভাবে আদায় করতে হয়?

রাসূল (সা.) যেভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন- কখনও মধ্যরাতে, কখনও তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মিসওয়াক ও অজু করে নামাজ পড়তেন। অর্ধ রাতের পরে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি। এর ব্যবহার পবিত্র কোরআনে আছে। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯ নং আয়াতের অর্থ এই যে, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। আয়াতে উল্লেখিত ‘বিহী’ সর্বনাম দ্বারা কোরআন বোঝানো হয়েছে। (মাজহারি)। কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামাজ পড়া। এ কারণেই শরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়। সাধারণত এর অর্থ এভাবে নেয়া হয় যে, কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের নামাজ। কিন্তু তফসিরে মাজহারিতে এভাবে বলা হয়েছে, আয়াতের অর্থ এতটুকুই যে, রাতের কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর জাগ্রত হয়ে নামাজ আদায় করলে যেমন এ অর্থ ঠিক থাকে, তেমনি প্রথমেই নামাজের জন্য নিদ্রাকে পিছিয়ে নিলেও এ অর্থের ব্যতিক্রম হয় না। তাই তাহাজ্জুদের জন্য প্রথমে নিদ্রা যাওয়ার শর্ত কোরআনের অভিপ্রেত অর্থ নয়।

তাছাড়া কোনো কোনো হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদের এ সাধারণ অর্থ প্রমাণ করা হয়েছে। হজরত হাসান বসরি (রা.) বলেন, এশার পরে পড়া হয় এমন প্রত্যেক নামাজকে তাহাজ্জুদ বলা যায়। তবে প্রচলিত পদ্ধতির কারণে কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর পড়ার অর্থে বোঝা দরকার। এর সারমর্ম এই যে, তাহাজ্জুদের আসল অর্থে নিদ্রার পরে হওয়ার শর্ত নেই এবং কোরআনের ভাষায়ও এরূপ শর্তের অস্তিত্ব নেই; কিন্তু সাধারণত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তাই এভাবে পড়াই উত্তম। (ইবনে কাসির)। তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছিল তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ সর্বপ্রথম পাওয়া যায় সূরা মুজ্জাম্মিলের প্রথম দিকের আয়াত নাজিল হওয়ার পর। আর সূরা মুজ্জাম্মিল যেহেতু ইসলামের শুরুতে কোরআন অবতরণের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই বলা যায়, ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই তাহাজ্জুদের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকে তাহাজ্জদু নামাজ ফরজ ছিল।

হজরত আয়েশা (রা.) ও বাগভী (রহ.) বলেন, সূরা মুজ্জাম্মিলের নির্দেশানুযায়ী তাহাজ্জুদ তথা রাতের নামাজ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সমগ্র উম্মতের ওপর ফরজ ছিল। ওই আয়াত দ্বারা তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল ফরজই করা হয়নি, বরং তাতে রাতের কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ মশগুল থাকাও ফরজ করা হয়েছিল। কারণ আয়াতের মূল আদেশ হচ্ছে কিছু অংশ বাদে সারা রাত নামাজে মশগুল থাকা। ইমাম বাগভী (রহ.) বলেন, এ আদেশ পালনার্থে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশ রাত তাহাজ্জুদের নামাজে ব্যয় করতেন। ফলে তাদের দুই পা ফুলে যেত এবং আদেশটি বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এভাবে পূর্ণ একবছর অতিবাহিত হওয়ার পর সূরা মুজ্জাম্মিলের শেষ আয়াত নাজিল হওয়ায়, দীর্ঘক্ষণ নামাজে দ-ায়মান হওয়ার বাধ্যবাধকতা রহিত করে দেয়া হয় এবং বিষয়টি ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়ে ব্যক্ত করা হয় যে, যতক্ষণ নামাজ পড়া সহজ মনে হয়, ততক্ষণ নামাজ পড়াই তাহাজ্জুদের জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়বস্তু আবু দাউদ ও নাসাঈতে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে। তাহাজ্জুদ নামাজের এ বিধান বলবৎ ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ফরজ হুকুম রহিত হয়ে যায়। তবে তারপরও তাহাজ্জুদ সুন্নত রয়ে যায়। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন। (মাজহারি)। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে থাক। এ নামাজ তোমার জন্য অতিরিক্ত। শিগগিরই আল্লাহ তোমাকে মাকামে মাহমুদ দান করবেন। (বনি ইসরাইল : ৭৯)।

হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, যে বান্দা আমাকে ভালোবাসার বাদী করে অথচ সারা রাত ঘুমিয়ে কাটায় সে তার দাবিতে মিথ্যাবাদী। এ জন্য যে, সে কেমন প্রেমিক যে, তার মাহবুবের মহব্বত কামনা করেন। অথচ আমি তার অপেক্ষায় থাকি। সে যদি তার দাবিতে সত্যবাদী হতো তাহলে অবশ্যই আমার ডাকে সাড়া দিত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যখন মদিনায় তাশরিফ আনেন, তখন প্রথম যে কথাগুলো তাঁর মুখ থেকে শুনি তা হলো- হে লোকজন! ইসলামের প্রচার-প্রসার করো, মানুষকে আহার দান করো। আত্মীয়তা অটুট রাখো, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়তে থাকবে। তাহলে তোমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে। (হাকেম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামাজ হলো রাতে পড়া তাহাজ্জুদ নামাজ। (মুসলিম, আহমাদ)।

রাসূল (সা.) যেভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন- কখনও মধ্যরাতে, কখনও তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মিসওয়াক ও অজু করে নামাজ পড়তেন। অর্ধ রাতের পরে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর পড়লে তাহাজ্জুদের সুন্নত আদায় হবে। তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন দু’রাকাত। সর্বোচ্চ আট রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। দু’রাকাত দু’রাকাত করে যথাসম্ভব রুকু, সেজদা ও কেরাত লম্বা করে একাগ্রচিত্তে পড়া ভালো। তাহাজ্জুদের নামাজ ঘরে পড়া উত্তম। তবে মসজিদে পড়লেও ক্ষতি নেই। রমজান ছাড়া মাঝে মাঝে জামাতে পড়া জায়েজ আছে। তবে নিয়মিত নয়। কিরাত আস্তে অথবা জোরে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্ট হলে আস্তে পড়া ভালো।

তাহাজ্জুদের নামাজ হলো আল্লাহর দিদার লাভের সর্বোত্তম উপায়। যুগে যুগে যত মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের প্রধান আমল ছিল রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। অতএব আমাদের সবার উচিত তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব দেয়া।

সময়
অর্ধ রাতের পরে। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে।

রাকাত সংখ্যা
সর্বনিম্ন দুই রাকাত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। এরপরে বিতর নামাজ পড়া।

পড়ার নিয়ম
দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া।

পড়ার স্থান
ঘরে পড়া উত্তম। তবে মসজিদে পড়াও জায়েজ আছে।

কেরাত
উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।

জামাতে পড়া
রমজান ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ আছে। তবে নিয়মিতভাবে নয়।

লিখেছেন : মুহাম্মদ আরিফুর রহমান জসিম
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান

 

নতুন কোম্পানির নাম হবে কেমন?

নামে কি আসে যায়? শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, “a rose by any other name would smell as sweet”। কিন্তু কোম্পানির ক্ষেত্রেও কি তাই? না। একটা কোম্পানির নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তখন অবশ্যই নাম নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব দিন। খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলো-
 
সহজ একটি শব্দ নিন
জটিল অর্থবহ কোন শব্দকে নাম হিসেবে বেছে নিতে হবে এমন নয়। বরং নামটি হতে পারে একেবারেই সাধারণ একটি শব্দ। যেমন- অ্যাপল। সহজ একটি শব্দ। কিন্তু সহজেই মনে থাকবে, উচ্চারণে সহজ, পরিচিত একটি শব্দ। এধরণের শব্দ আমাদের মনে ছাপ ফেলে দ্রুত।
পরিচিত শব্দ
ভিন্ন ভাষার শব্দের চেয়ে পরিচিত দেশী কোন শব্দ বেছে নিতে পারেন। বিদেশী শিব্দ হলেও সেটা যেন জনসাধারণের শব্দ ভান্ডারের কোন শব্দ হয়। যেমন, ইংরেজী শব্দগুলো বিদেশী হলেও আমরা বুঝতে পারি। গ্রীক অনেক শব্দই আমাদের পরিচিত। এই বিভিন্ন ধরনের শব্দ থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দেরটি।
প্রাসঙ্গিকতা জরুরী নয়
আপনার কোম্পানি হয়ত পোশাক বিক্রী করবে। তাই বলে কোম্পানির নামও পোশাক সংশ্লিষ্ট হতে হবে তা নয়। বেশীরভাগ বিখ্যাত কোম্পানির দিকে খেয়াল করুন, তাদের পণ্য এবং নাম একেবারে আলাদা। এটা ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের একটি কৌশল। ভিন্ন একটি শব্দ সহজেই মনে খটকা তৈরি করে, প্রশ্ন তৈরি করে। ফলে সেটার প্রতি মনোযোগ বেশী দেওয়া হয়।
কমন কিন্তু ভিন্ন একটি শব্দ নিন
বাজারে অনেক কোম্পানি। নতুনভাবে আপনার কোম্পানির নাম শুনে ক্রেতা কিভাবে সেটা মনে রাখবে এই দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। এমন একটি শব্দ নাম হিসেবে বেছে নিন যেটা মূহূর্তে ভাল লাগা তৈরি করে। অ্যাপলের কথাই ভাবুন। সফটওয়্যার কোম্পানি কিন্তু ফলের নামে নাম। নাম শুনেই আপনার মনে হবে, এটা কেমন কথা! কিন্তু নামটি মনে রয়ে যাবে আপনার ওই প্রশ্নটির জন্যই।
দীর্ঘসময়ের কথা চিন্তা করুন
আপনার কোম্পানি নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে। নাম একবার রেখে পরিবর্তন করা, নতুন নাম আবার পরিচিত করা খুবই ঝামেলার কাজ। তাই আগেই দেখুন, যে নামটি আপনি নিচ্ছেন সেটি আগেই অন্য কোন কোম্পানি ব্যবহার করছে না তো? ভাল করে যাচাই-বাছাই করে নিন। শুধু অনলাইনে নয়, অফলাইনেও। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাম নিবন্ধনের সময় জানা যায় নামটি আগেই নিবন্ধিত। দীর্ঘমেয়াদে কাজে লাগাতে হলে সব দিকে খোঁজ নিন।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার

 

সবুজ আপেল যে কারণে বেশি বেশি খাওয়া ভালো

সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় যে ফলটি তা হচ্ছে আপেল। বেশিরভাগ মানুষই লাল আপেল খেয়ে থাকেন। যেহেতু লাল আপেল হজমে সাহায্য করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, দাঁতের ছিদ্র হওয়া প্রতিরোধ করে এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে। আপেল নিয়ে প্রচলিত জনপ্রিয় প্রবাদ – “প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়না” এর কথা মনে আসলেই আমাদের মনে পড়ে লাল আপেলের কথা। লাল আপেলের নিকটাত্মীয় হচ্ছে সবুজ আপেল যার কৃতিত্বের স্বীকৃতি সে পায়না। সবুজ আপেল ভিটামন এ, সি ও কে তে সমৃদ্ধ। এছাড়াও সবুজ আপেল আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত সবুজ আপেল খাওয়ার উপকারিতাগুলোর বিষয়ে জেনে নিই চলুন।

১। ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

গবেষণায় জানা যায় যে, সবুজ আপেল খেলে অ্যাজমার ঝুঁকি কমে যেহেতু এটি ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ। অ্যাজমার ঝুঁকি কমানোর সাথে ফ্ল্যাভোনয়েড সম্পর্কযুক্ত বলে  দাবী করেন গবেষকেরা। এটি ছাড়াও সবুজ আপেল ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নারীদের ক্ষেত্রে ২১% পর্যন্ত।

২। ব্লাড ক্লট প্রতিরোধে সাহায্য করে

সবুজ আপেলে রুটিন নামক রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতির কারণে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর কারণ হচ্ছে রুটিন রক্ত জমাট বাঁধার এনজাইমকে আটক করে ফেলে। গবেষকেরা বলেন এই আবিষ্কারটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস  সবুজ আপেলের জুস বা আস্ত সবুজ আপেল খেলে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

৩। মেটাবোলিজমের উন্নতি ঘটায়

সবুজ আপেল হজমের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি পেট ফাঁপা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং পাকস্থলী থেকে যেকোন বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। সবুজ আপেলে ফাইবার থাকে বলে সহজে হজম হয় এবং বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হতে পারে আদর্শ স্ন্যাক্স যা ক্ষুধা নিবারণ করে এবং অন্য চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

৪। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

সবুজ আপেল খাওয়া নারীদের জন্য বিশেষ উপকারী কারণ এটি পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে এ পরিপূর্ণ থাকে। গবেষণায় জানা গেছে যে, ভিটামিন কে নারীদের অষ্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে এবং সার্বিক হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।

৫। অকালে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে

সবুজ আপেল ভিটামিন এ, সি এমনকি অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ও ভালো উৎস। তাই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে সবুজ আপেল।

৬। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে

যদি আপনি আপনার চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চান তাহলে সবুজ আপেল খাওয়া শুরু করুন। যেহেতু সবুজ আপেলে ভিটামিন এ থাকে তাই এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।

৭। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো

যদি আপনি ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে লাল আপেলের পরিবর্তে সবুজ আপেল খান। ডাক্তারদের মতে সবুজ আপেলে লাল আপেলের তুলনায় চিনির পরিমাণ কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে। সবুজ আপেল টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

৮। কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ প্রতিরোধ করে

সবুজ আপেল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ অন্যান্য খাদ্য খেলে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের ঝুঁকি ৩৫% কমে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত নারীরা লাল ও সবুজ আপেল উভয়টিই নিয়মিত খান তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ১৩-২২% পর্যন্ত কমে। এর কারণ এই ফলটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।

 

লিখেছেন-
সাবেরা খাতুন
ফিচার রাইটার

 

সিঙ্গাপুরের জালে বাংলাদেশের গোল উৎসব

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের জয়রথ ছুটছেই। প্রথম ম্যাচে ইরানকে ৩-০ গোলে হারানোর পর আজ সোমবার সিঙ্গাপুরের জালে গোল উৎসব করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল।

সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে সিঙ্গাপুরকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে গোল করেছেন কৃষ্ণা রাণী ও অনুচিং মগিনি। বাকি গোলটি করেন মৌসুমী।

এদিন খেলার শুরুর থেকেই সিঙ্গাপুরকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে সানজিদা-মারজিয়া-মৌসুমীরা। বাররার প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগ পরাস্ত করলেও গোলমুখে এসে খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তারা।

প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। সানজিদার উড়ন্ত ক্রসে ডি বক্সে দাঁড়ানো কৃষ্ণা জোরালো হেডে বল জড়িয়ে দেন জালে। ১-০ গোলের লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতির পর দ্বিতীয় মিনিটেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। এবারো গোলদাতা কৃষ্ণা। মারিজিয়ার বাঁকানো ক্রসে বল পান কৃষ্ণা। সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক নুর ইজ্জাতিকে পরাস্ত করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি তাকে।

৮৩ মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। বদলি ফরোয়ার্ড অনুচিং মগিনি করেন গোলটি। আরেক বদলি ফরোয়ার্ড তহুরার মাটি কামড়ানো শট নুর ইজ্জাতির হাত ফসকে গেলে তাতে টোকা দিয়ে গোলটি করেন তিনি।

তিন মিনিট পর আবারও গোল। এবার বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মৌসুমি। এরপর শেষ বাঁশি বাজার কিছুক্ষন আগে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান অনুচিং মগিনি। ফলে ৫-০ এর বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

এই বাছাই পর্বের গ্রুপসেরা দল পাবে ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে মূল আসরে খেলার টিকেট। তাতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশের মেয়েরা। বাংলাদেশের পরবর্তী খেলা কিরগিজস্তানের বিপক্ষে, ৩১ আগস্ট।

 

না​ইবা দেখতে পেলাম

পারুল, হোসনে আরা, হাসনা হেনা, রেণু আরা—তাঁরা চার বোন। চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবে রান্নাসহ সংসারের প্রায় সব কাজ নিজেরাই করেন। শুধু এই চারজনই নন, তাঁদের আপন ভাইয়ের ছেলে ও মেয়েও চোখে দেখেন না। অনেক আগে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। তবে কোনো লাভ হয়নি। চার বোনই এখন সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। আট বোনের মধ্যে চার বোনই এখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁদের চার ভাই চোখে দেখেন।

গত ৩১ জুলাই ময়মনসিংহ শহরের ব্রাহ্মপল্লির ১১৫/এ বকুলতলা ঠিকানায় গিয়ে দেখা মেলে দুই বোন ও ভাতিজা-ভাতিজির। এক বোনের কাছ থেকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে অন্য দুই বোনও হাজির হন। দুই বোন এক ভাইয়ের আশ্রয়ে আছেন। অন্য দুই বোন এক যুগের বেশি সময় আগে সরকারের কাছ থেকে একটি করে ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সেসব ঘরে মূলত তাঁদের ছেলেরা থাকছেন। ছেলেদের সংসারে তাঁরা খুব একটা ভালো থাকছেন, তা জোর দিয়ে বলতে পারলেন না। কথা হলো চার বোনের সঙ্গে।

ভাইয়ের আশ্রয়ে পাওয়া টিনের ছোট এক চিলতে ঘর হোসনে আরার। ঘরে একটি খাট, সস্তা কাঠের নেট লাগানো ছোট একটি আলমারি, ছোট টেবিলে একটি গ্যাসের চুলা আর পাশেই একটি চেয়ার। ঘরে দিনের আলোতেও তেমন কিছু দেখা যায় না। ঘরটি এতটাই ছোট যে, বিছানা থেকে নামার পর কাজ করতে গেলে বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়।

হোসনে আরা এই প্রতিবেদকের সামনেই সকালের নাশতা খাওয়ার জন্য নুডলস রান্না করলেন। গ্যাসের চুলা ধরানো, মরিচ, পেঁয়াজ কাটাসহ সব কাজ একাই করলেন। তিনি জানালেন, বেশ কয়েক বছর একজনের বাসায় রান্নার কাজও করেছেন।

জাতীয় প্রতিবন্ধী সেবা সংস্থা নামের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান হোসনে আরা। বিভিন্ন ধরনের ২৬২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এ সংগঠনের সদস্য। অর্থের অভাবে বর্তমানে সংগঠনটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

হোসনে আরা জানালেন, একটু বড় হওয়া পর্যন্ত চোখে দেখতেন। এখন কিছুই দেখেন না। স্বামী তাঁকে ফেলে চলে গেছেন। ১২ বছর বয়সী ছেলের দায়িত্বও এখন হোসনে আরার কাঁধে।

হাসনা হেনার বিয়ে হয় ছোট বয়সেই। তাঁর চোখের সমস্যারও শুরু অল্প বয়স থেকেই। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে ১০ দিন থাকার পর স্বামী তাঁকে ফেলে চলে যান। এখন থাকেন হোসনে আরার পাশের ঘরে, ভাইয়ের আশ্রয়ে। ভাইয়ের সংসারের রান্না করা ছাড়াও কাপড় ধোয়া, ঘর ঝাড়ু দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে দেন। হাতের ইশারায় সব করতে পারেন বলে জানালেন।

আরেক বোন পারুলের বয়সের কারণে সামনের দুটি দাঁত পড়ে গেছে। স্বামী মারা গেছেন। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। একবার রান্না করার সময় গায়ে আগুন লেগে গিয়েছিল। তিনি এবং তাঁর আরেক বোন রেণু আরা ১৩ বছর আগে সরকারের কাছ থেকে একটি ঘর পেয়েছেন। ওই ঘরে থাকলেও পরিবারের আপনজনেরাই অনেক সময় এমন কথা বলেন, যা শুনে তাঁদের কষ্ট হয় বলে জানালেন।

রেণু আরার এক ছেলে, এক মেয়ে। তাঁরও স্বামী মারা গেছেন। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ঘরে ছেলে ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকেন। এখন ভিক্ষা করে রেণু আরা নিজের খাদ্যের সংস্থান করেন। ছেলের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ নেই। তিনি বললেন, ‘ছেলেরই সংসার চলে না। ১০ জনের কাছে চাইলে একজন কিছু দেয়। তা দিয়েই চলে আমার।’ এই চার বোন সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন মাসে ১ হাজার ৫০০ করে টাকা পাচ্ছেন।

এই চারজনের আরেক বোন (চোখে দেখেন) রুমা বললেন, ‘দুই বোন সরকারের কাছ থেইক্যা ঘর পাইছে। অন্য দুই বোন দরখাস্ত দিছে। কিন্তু এখন তো টাকা চায়। টাকা না দিলে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। এই দুই বোনের একটা গতি হইলে সবাই বাইচ্যা যাইত।’

হোসনে আরাসহ চার বোনের অনেক কষ্টের স্মৃতি আছে। হোসনে আরা বলেন, ‘ছেলের মুখ দেখতে পাইলাম না আজ পর্যন্ত। খালি চোখের পানি ফালাই। ছেলের মুখটা যদি দেইখ্যা যাইতে পারতাম।’ তিনি চার বোনের মধ্যে সবার ছোট।

হাসনা হেনা বললেন, ‘মানুষ কানা ডাকলে খারাপ লাগে। এইটা তো একটা গালি। তার চাইতে অন্ধ কইলেও হয়। ঘরের বাইরে বাইর হইলেই মানুষ খারাপ কথা কয়।’

এক বোন ছাড়া অন্য তিন বোন মানুষের কাছে হাত পাতেন না। তবে কেউ কিছু দিলে তা ফিরিয়ে দেন না। কেননা মানুষের সহায়তায় তাঁরা এখন পর্যন্ত অন্তত বেঁচে তো থাকতে পারছেন।

বাবার রেখে যাওয়া সামান্য সম্পত্তি নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের জের আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানালেন হোসনে আরা। যে ভাইয়ের আশ্রয়ে দুই বোন থাকতে পারছেন, ওই ভাইও তাঁদের ফেলে দিলে তাঁদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। হোসনে আরা বললেন, ‘আমরা বেশি কিছু চাই না। খালি চলার মতন একটি গতি হইলেই খুশি।’

 

সাফল্যের দৌড়ে সুমি

গল্পটা এভাবে বলি। ভাবুন, এ দেশেরই কোনো গ্রামের দুরন্ত এক কিশোরী। সারা দিন দৌড়ঝাঁপ আর খেলাধুলায় দিন কাটে তার। অন্য মেয়েদের মতো রান্নাবাটি খেলায় মন নেই, সারা দিন শুধু দুরন্তপনা! স্থির হওয়ার সময় যেন তার নেই। তাকে ছুটতে হবে, দূর থেকে বহু দূরে। যত দূরে গেলে মুঠো ভর্তি করে নেওয়া যায় সাফল্যের রত্নভান্ডার!

ক্রীড়াবিদ হতে হবে—এটাই জানেন সুমি l ছবি: এভারেস্ট একাডেমিগল্পের চরিত্রটার নামও জেনে নেওয়া যাক তবে। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ১২ আগস্ট এভারেস্ট একাডেমি আয়োজন করে ‘ঢাকা উইমেন্স ম্যারাথন’-এর প্রথম আসর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে এই ম্যারাথনে প্রথম হয়েছেন সুমি আক্তার। বলছিলাম তাঁর গল্পই! সেনাবাহিনীর এই সৈনিক দৌড়েছেন ১০ জন নয়, ১০০, ২০০-ও নয়, অন্তত ৩০০ মেয়ের সঙ্গে। আর ৪৮ মিনিট ২২ সেকেন্ড খরচ করে প্রথম হওয়ার আগে ছুটেছেন টানা ১০ কিলোমিটার পথ!
সুমি আক্তারের পরিচয়টা অবশ্য এতটুকুই নয়। এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি। গত বছর তো ৮০০ মিটার, ১০০০ মিটার ও ১৫০০ মিটার—তিন ইভেন্টেই জিতেছেন সোনা। অপেক্ষায় আছেন এ বছরের জাতীয় পর্যায়ের ইভেন্টের।
সুমি ছোটবেলা থেকেই জানতেন, আর কিছু নয়, ক্রীড়াবিদই হতে চান। ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি, খেলাধুলা ছাড়া কিছুতেই আমি তেমন ভালো করতে পারব না। খেলাধুলাটা আমি ভালো পারি, তাই সেদিকেই আমার এগোনো উচিত।’

এগোতে চাইলেই নিশ্চয় তা খুব সহজ হয় না। জন্ম মানিকগঞ্জের এক গ্রামে। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া তো তা অসম্ভবের কাছাকাছি! দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পরিবারে সবার ছোট মেয়ে সুমি নিজেও বললেন তা-ই। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া দৌড়ে যত পারদর্শীই হন না কেন, এত দূর আসা হতো না কখনোই! তবে তাঁর মুখের কাঠিন্য ও আত্মবিশ্বাসটা এমন, যেন ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা কখনো মনে উঁকিও দেয়নি!

১০ কিলোমিটারের এই ম্যারাথনেও শুধু অংশগ্রহণের জন্য নয়, জিততে পারেন, এই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই অংশ নিয়েছিলেন, ‘আমরা যারা সেনাবাহিনীতে আছি, আমাদের প্রতিদিনই সাত-আট কিলোমিটার দৌড়াতে হয়। যখন ম্যারাথনের কথা জানলাম, ভাবলাম অল্প একটু চেষ্টা করলে জিতে যেতেই পারি।’ আর দৌড়ের সময় অর্ধেক পথ পার করে অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিলেন, এই দুস্তর পারাবার তিনিই সবার আগে পেরোবেন!

সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৪ সালে। পড়ালেখার আগ্রহটাও হারাননি, আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন তিনি। অগ্রযাত্রাতেই যাঁর সাফল্য, ভবিষ্যতে তিনি নিশ্চয়ই পেরোবেন আরও অনেক পথ। বললেনও তা-ই, ‘ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনতে চাই। দেশকে নিজের নাম দিয়ে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে চাই বিশ্বের মানচিত্রে।’

এই ম্যারাথন যে জন্য, অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন, সে ব্যাপারে কী ভাবেন সুমি? সুমির ভাবনা, ‘সমাজ ও জীবনের সব পর্যায়ে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারা এবং সে পথেই নিজের জীবনকে পরিচালনা করার পর্যায়ে পৌঁছানোই নারীর ক্ষমতায়ন।’

কথাবার্তা শেষের পথে, ছবি তোলার পালা। জয়ে যে খুব উচ্ছ্বসিত তিনি, এমনটা ছবি তোলার সময়ও মনে হলো না। যেন ‘এ আর এমন কী, আমাকে তো ছুটতে হবে আরও অনেক, অনেক দূর’!

সুত্রঃ প্রথম আলো

Save

Save

Save

Save