banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য : হাদিসের নির্দেশনা

হাদিসের নির্দেশনা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর হাদিসে কোরান মাজিদের এসব নির্দেশনর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। তা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতিদান ও স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলে।

মানুষের সর্বোত্তম ধনভান্ডার
হজরত ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে মানুষের সর্বোত্তম ধনভান্ডার সম্পর্কে বলব না, যা সে মজুত করবে? তা হল একজন গুণবতী স্ত্রী, যখনই সে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে সে তাকে সন্তুষ্ট করে, যখন সে তাকে কোন আদেশ করে সে তা পালন করে এবং সে স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে হেফাজত করে। (আবু দাউদ)

হজরত ছাওবান (রা.) বর্ণনা করেন, কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, কোন মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট বস্ত্ত কি? তিনি উত্তর করলেন, সর্বোত্তম বস্ত্ত হল এমন জিহবা যা আল্লাহর স্মরণে রত থাকে, একটি কৃতজ্ঞ অন্তর ও একজন বিশ্বস্ত স্ত্রী, যে তাকে তার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পৃথিবী পুরোটাই সামগ্রী এবং পৃথিবীর সর্বোত্তম সামগ্রী হল একজন পূণ্যবতী স্ত্রী। (মুসলিম)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি বস্ত্ত যাকে দান করা হয়েছে তাকে এই পৃথিবীর ও পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বোত্তম বস্ত্ত দান করা হয়েছে: কৃতজ্ঞ অন্তর, আল্লাহর স্মরণে রত জিহবা, বিপদে ধৈর্যশীল শরীর এবং এমন স্ত্রী যে নিজের ও তার (স্বামীর) সম্পদে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। (বায়হাকি)

এই হাদিস অনুসারে, মুমিনের সর্বোত্তম সম্পদের একটি হল পূণ্যবতী স্ত্রী। ইসলাম নারীদের মর্যাদাকেই বৃদ্ধি করে নি, বরং তাদেরকে সর্বোত্তম সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদি কোন পুরুষ একজন পূণ্যবতী স্ত্রী লাভ করে তবে যেন সে তার যত্ন নেয় এবং মূল্যবান সম্পদ হিসেবে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।

সদয় আচরণ
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীদের সাথে সদয় আচরণ করবে। তাদেরকে একটি পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পাঁজরের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হল সবচেয়ে উপরের হাড়। যদি তুমি তাকে সোজা করতে চেষ্টা কর, তবে তুমি তাকে ভেঙে ফেলবে। আর যদি তুমি তাকে একা ছেড়ে দাও, তবে তা বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব, নারীদেরকে তদনুসারে নসীহত করতে থাক। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় নারীদেরকে একটি পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যা তোমার জন্য কখনো সোজা হবে না। অতএব, তার বক্রতা সত্ত্বেও তাকে উপভোগ কর। যদি তুমি তাকে সোজা করতে যাও, তবে তাকে ভেঙে ফেলবে। আর তাকে ভেঙে ফেলা মানে হল তালাক প্রদান করা। (মুসলিম)

স্ত্রীকে অপছন্দ করার নিষেধাজ্ঞা
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ যেন কোন মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ না করে, যদিও সে তার মধ্যে একটি বিষয়কে অপছন্দ করে, সে তার মধ্যে অন্য এমন একটি গুণ খুঁজে পাবে যাতে সে সন্তুষ্ট হবে। (মুসলিম)

নারীদের অধিকার ও দায়িত্ব
হজরত আমর ইবনে আহওয়ায (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। তারা তোমাদের বাড়িতে কয়েদীর মত। যদি তারা কোন গুরুতর অপরাধ করে তবে তোমরা তাদের বিছানা পৃথক করে দেবে এবং হালকা শাসন করতে পার। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। তোমাদের স্ত্রীদের কাছে তোমাদের অধিকার রয়েছে এবং তোমাদের উপর তাদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হল যে, তারা এমন কাউকে তোমার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেবে না যাকে তুমি অপছন্দ কর। আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার হল যে, তোমরা তাদের খাওয়া পরার সুব্যবস্থা করবে। (তিরমিযি)

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা তাদেরকে বিয়ে করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তোমরা তাদের শরীরকে তোমাদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের একটি অধিকার রয়েছে। তাহল, তারা তোমাদের বিছানায় অন্য কাউকে অনুমতি দিবে না। যদি তারা তা করে তবে তাদেরকে এমনভাবে প্রহার করবে, যাতে আহত না হয়। তোমাদের উপর তাদের খাওয়া পরার অধিকার রয়েছে, তোমাদের সামর্থ অনুসারে। (বুখারি, মুসলিম)

নারীদের মৌলিক অধিকার
হজরত মুয়াবিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, একজন নারীর তার স্বামীর উপর কি অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, তাকে আহার করাও যেমনটি তুমি আহার কর। তাকে পরাও যেমনটি তুমি পরিধান কর। তার চেহারায় আঘাত করবে না। তাকে ভৎর্সনা করবে না এবং ঘরের ভেতরে ব্যতিত তোমাকে তার থেকে পৃথক করবে না। (আবু দাউদ, আহমদ, ইবনে মাজাহ)

আদর্শ স্বামী
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের বিচারে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে। (তিরমিযি)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

একাধিক স্ত্রীর সাথে সাম্যের আচরণ
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন লোকের দুই স্ত্রী থাকবে এবং সে তাদের সাথে সমতার আচরণ করবে না সে কিয়ামতের দিন শরীরের এক অংশ ঝুলন্ত অবস্থায় আসবে। (আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযি)

পরিবারের উপর ব্যয় করার প্রতিদান
হজরত আবু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মুসলমান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় নিজের পরিবারের জন্য কোন কিছু ব্যয় করবে, তা তার আমলনামায় সদকা বা দান হিসেবে পরিগণিত হবে। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত ছাওবান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম দীনার (মুদ্রা) যা মানুষ ব্যয় করে তা হল, যে দীনার সে নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করে এবং যে দীনার সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যাওয়ার জন্য প্রাণী পালনে ব্যয় করে এবং যে দীনার সে ব্যয় করে তার বন্ধুদের উপর, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। (মুসলিম)

হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যা-ই তুমি ব্যয় কর তার প্রতিদান অবশ্যই রয়েছে। এমনকি তুমি যা তোমার স্ত্রীর মুখে দাও তারও। (বুখারি, মুসলিম)

এই হাদিসসমূহ মানুষকে তাদের স্ত্রীদের সাথে কেবল দয়া ও সহানুভূতির সাথে নয়, বরং উদারতার সাথেও আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারীদের এমন সম্মানজনক মর্যাদা দান করে।

পরিবারের উপর ব্যয় না করার নিন্দা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আচ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্যে পাপ হিসেবে ইহা যথেষ্ট যে, সে তার অধীনস্তদের উপর ন্যায্য ব্যয়ে ইতস্তত করবে। (আবু দাউদ, মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন, তিনি নিজেও তার স্ত্রীদের প্রতি তেমনটি আচরণ করতেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে আদর্শ স্বামী। নিচে তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ভালবাসা ও তাদের দেখাশুনা সংক্রান্ত কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল:

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাথে ছিলেন। তিনি তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন এবং এতে তিনি (আয়েশা (রা.)) তাকে হারিয়ে দেন। পরবর্তীতে যখন তিনি ( আয়েশা (রা.)) কিছুটা ভারি হয়ে যান, তাঁর সাথে পুনরায় দৌড় প্রতিযোগিতা দেন এবং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হারিয়ে দেন। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এটি পূর্বের প্রতিযোগিতার বদলা। (আবু দাউদ)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর শপথ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার কক্ষের দরজায় দাঁড়ানো দেখতে পেলাম। তখন হাবশীরা বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। তিনি তাঁর চাদর দ্বারা আমাকে ঢেকে দিলেন, যাতে আমি খেলা দেখতে পারি। যতক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলাম ততক্ষণ তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, আমি আমার বান্ধবীদের সাথে পুতুল নিয়ে খেলা করছিলাম। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তারা আমার কাছ থেকে চলে গেল। তিনি তখন আমাকে তাদের কাছে ফেরত পাঠালেন এবং তারা পুনরায় আমার সাথে খেলা করতে লাগল। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাকে পুতুল নিয়ে খেলা করতে দেখেন। তার একটি ঘোড়াও ছিল, যার ছিল দুটি ডানা। যখন তিনি এটি দেখলেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটির উপর এগুলি কি? আমি বললাম, ডানা। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, দুই ডানাবিশিষ্ট ঘোড়া! আমি বললাম, আপনি কি শুনেন নি যে, সুলায়মান আ. এর একটি ঘোড়া ছিল, যার অনেক ডানা ছিল? তা শুনে তিনি তিনি এতই হাসলেন যে, আমি তাঁর পেছনের দাঁত পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম। (আবু দাউদ)

আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল আল্লাহর একজন রাসূলই ছিলেন না, বরং মদীনার ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধানও ছিলেন। তাঁর ছিল একটি খুব ব্যস্ত জীবন। বস্ত্তত অধিকাংশ সময় তিনি নিজেকে ইবাদতে নিয়োজিত রাখতেন। এতদসত্ত্বেও তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে সময় কাটাতেন, তাদের সঙ্গ দিতেন এবং তাদের সাথে আনন্দ বিনোদনে অংশ নিতেও সময় বের করেন। এজন্যে কোরান মাজিদ বলে, নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর জীবনে রয়েছে একটি উত্তম আদর্শ।’ (৩৩:২১) আমাদের উচিৎ, আমাদের পারিবারিক জীবনে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
হজরত আবু ওমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ভয়ের পর একজন ঈমানদার পূণ্যবতী স্ত্রীর চেয়ে উত্তম কিছু পেতে পারে না। যদি সে তাকে কোন আদেশ করে তবে সে তা পালন করে, যদি সে তার দিকে তাকায় তবে সে তাকে তৃপ্ত করে, যদি সে তার থেকে কোন প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে, সে তা পূর্ণ করে এবং যদি সে অনুপস্থিত থাকে তবে সে তার আচরণ ও তার (স্বামীর) সম্পদকে হেফাজত করে। (ইবনে মাজাহ)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন নারী সর্বোত্তম? তিনি উত্তর করলেন, যে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, যখন সে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে। আর আদেশ পালন করে, যখন সে আদেশ করে এবং তার অসন্তুষ্টির আশংকায় নিজের ব্যাপারে ও তার (স্বামীর) সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা থেকে বিরত থাকে। (নাসায়ি)

স্বামীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমি কাউকে অন্যের প্রতি সিজদা করার আদেশ দিতাম তবে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের তাদের স্বামীদের সেবা করতে। (তিরমিযি)

হজরত কায়স ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি হীরায় গেলাম এবং তাদেরকে (হীরাবাসীদেরকে) তাদের নেতাদের সিজদা করতে দেখলাম। আমি চিন্তা করলাম, সিজদা লাভের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেয়ে আরো অধিক হকদার। তাই আমি তাঁকে বললাম, আমি হীরাবাসীদেরকে তাদের নেতাদের সিজদা করতে দেখেছি; অথচ আপনি সিজদা লাভের ব্যাপারে তাদের চেয়ে আরো অধিক বেশি হকদার। তিনি আমাকে বললেন, বল দেখি, যদি তুমি আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম কর তবে কি তাতে সিজদা করবে? আমি উত্তর করলাম, না। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে সিজদা কর না। যদি আমি কাউকে অন্য কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করার আদেশ দিতাম তবে স্ত্রীদেরকে আদেশ দিতাম তাদের স্বামীদের সিজদা করতে। তা সেসব দায়িত্বের কারণে যা আল্লাহ তাআলা স্বামীদের প্রেক্ষিতে স্ত্রীদের উপর অর্পণ করেছেন। (আবু দাউদ, আহমাদ)

রোজা রাখতে স্বামীর অনুমতি
হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন নারী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতিত রোজা রাখতে পারে না। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

হাদিসের ভাষ্যকারগণ বলেন, এ থেকে কেবল নফল রোজা উদ্দেশ্য। কোন স্বামীকেই আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে আদেশ প্রদানের অনুমতি দেয়া হয় নি। যদি সে তা করে তবে স্ত্রী তার আনুগত্য করবে না।

স্বামীর ডাকে সাড়া দেওয়া
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে, অথচ সে তা প্রত্যাখ্যান করে। আর স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রী যাপন করে, তখন ফেরেস্তারা সারা রাত্রী তার (স্ত্রীর) উপর অভিশাপ দিতে থাকে। ( বুখারি, মুসলিম)

হজরত তালাক ইবনে আলী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার কামনা পূরনের জন্য আহবান করে, তখন সে যেন তার আহবানে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় ব্যস্ত থাকে। (তিরমিযি)

স্বামীর আহবান প্রত্যাখ্যান করার নিন্দা
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে এবং সে তা ফিরিয়ে দেয়, তখন যিনি জান্নাতে আছেন’ তার উপর অসন্তুষ্ট হয়, যতক্ষণ না তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট হয়। (বুখারি, মুসলিম)

যিনি জান্নাতে আছেন’ থেকে উদ্দেশ্য হলেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা। স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল তার শারিরীক চাহিদা পূরণ করা। যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। এই অধিকার আল্লাহ তাআলা প্রদান করেছেন। তাই যদি কোন নারী তার স্বামীর চাহিদা পূরণে সাড়া না দেয়, তবে সে যেন আল্লাহ তাআলারই আদেশ অমান্য করল এবং এর মাধ্যমে সে তার অসন্তুষ্টি লাভ করল। (বুখারি, মুসলিম)

স্বামীর সম্পদ যথাযথভাবে হেফাজতের প্রতিদান
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন নারী তার স্বামীর উপার্জন থেকে আল্লাহর রাস্তায় দান করে, যদিও তার অনুমতি ব্যতিত হয়, স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব লাভ করবে। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন স্ত্রী তার গৃহ থেকে খাদ্যদ্রব্য নষ্ট না করে দান করে, তার জন্যে তার প্রতিদান রয়েছে। কারণ, সে দান করেছে। তাতে স্বামীরও প্রতিদান রয়েছে। কেননা, সে তা উপার্জন করেছে। কারও প্রতিদান এতে অন্যের প্রতিদানের চেয়ে কম হবে না। (বুখারি, মুসলিম)

যেহেতু, পুরুষরাই একটি মুসলিম পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি, তাই স্ত্রী তা থেকেই দান করে থাকে যা তার স্বামী উপার্জন করে। এ দানের জন্যে উভয়ে সমান প্রতিদান লাভ করবে।

স্বামীকে কষ্ট দেওয়ার নিন্দা
হজরত মু’আয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন নারী পৃথিবীতে তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখন জান্নাতে অবস্থানরত তার আনত নয়না স্ত্রীগণ (হুরগণ) তাকে লক্ষ করে বলে, তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুক। তোমার কাছে সে কেবল একজন মেহমান মাত্র এবং সে অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আসবে এবং আমাদের সাথে যোগ দিবে। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

অবাধ্য স্ত্রীর ইবাদত গৃহিত হয় না
হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না; পলাতক গোলাম- যতক্ষণ না সে তার মালিকের কাছে ফিরে আসে। যে নারী রাত যাপন করে, অথচ স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট থাকে এবং এমন নেতা যাকে তার লোকেরা পছন্দ করে না। (তিরমিযি)

এই হাদিসটি স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের অনুগত হওয়া এবং যেসব কারণে স্বামীরা অসন্তুষ্ট হয় তা পরিহার করা সম্পর্কে আরেকটি সতর্কবাণী। যদি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে তবে তাদের ইবাদত ও প্রার্থনা কবুল হবে না। যদি স্বামী কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হয়, তবে তখন সে অপরাধী সাব্যস্ত হবে না এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে তার ইবাদতও প্রত্যাখ্যাত হবে না।

স্বামীকে সন্তুষ্ট করার প্রতিদান
হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় যে স্ত্রী মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ( তিরমিযি)

একজন ঈমানদার স্বামী তার স্ত্রীর উপর তখনি সন্তুষ্ট হতে পারে যখন সে আল্লাহ তাআলার সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং একটি পূণ্যময় জীবন যাপন করবে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন নারী দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান শরীফের রোজা রাখবে, সতীত্ব রক্ষা করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আহমদ, তাবরানি)

উপরে যা বর্ণিত হয়েছে তা প্রধানত, স্বামী স্ত্রীর জাগতিক ও শারিরীক দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত। ইসলাম মনে করে, একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় প্রয়োজন শারিরীক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রকৃত ঈমানদার প্রথম থেকেই আল্লাহ তাআলার আদেশের আনুগত্যের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভ করতে সচেষ্ট থাকে। জাগতিক প্রয়োজন ও শারিরীক প্রশান্তি তার কাছে পরবর্তী মর্যাদা লাভ করে। কোরান মাজিদ বলে,

যে দুনিয়া চায় আমি সেখানে তাকে দ্রুত দিয়ে দেই, যা আমি চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়। (বনি ইসরাইল, ১৭:১৮-১৯)

একজন প্রকৃত ঈমানদারের চুড়ান্ত সফলতা, তার ধর্মপরায়ন জীবন যাপনের মধ্যে নিহিত, যা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবে। কোরান মাজিদ বলে,

প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। (আলে ইমরান, ৩:১৮৫)

কোরান মাজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও। যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেস্তাকুল, যারা আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। (আত-তাহরীম, ৬৬:৬)

এ থেকে বুঝা যায় যে, একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর মৌলিক দায়িত্ব হল, পরস্পরকে এমন একটি জীবন যাপনে সাহায্য করা, যা পরকালে তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। যদি স্বামী তার স্ত্রীকে সর্বোত্তম বস্ত্ত সামগ্রী সরবরাহ করে, যার ফলে স্ত্রী তাকে সর্বোচ্চ ভালবাসা ও আনুগত্য প্রদান করে; কিন্তু উভয়ে পরস্পরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পেতে সহযোগিতা করে না তবে উভয়ে তাদের পারস্পরিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। নিম্নলিখিত হাদিসটি বিষয়টিকে আরও পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তোলে,

তোমাদের প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং প্রত্যেককে তাদের অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সমাজপতি তার সমাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, স্বামী তার পরিবার সম্পর্কে দায়িত্বশীল এবং স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও সম্পদ সম্পর্কে দায়িত্বশীল। (বুখারি, মুসলিম)

হাদিসটি ইসলামে পারিবারিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের গুরুত্ব বর্ণনা করে। প্রথমত, স্বামী ও স্ত্রী তাদের পারিবারিক দায়িত্বের ক্ষেত্রে সমান মর্যাদা রাখে। দ্বিতীয়ত, উভয়কেই কিয়ামতের দিন তাদের স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে কিনা। তৃতীয়ত, এই হাদিস সন্তানদের উপর মায়ের দায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করে। আর তা এজন্যে যে, ছেলেমেয়েরা তাদের মায়ের খুব কাছাকাছি থাকে। বলা বাহুল্য যে, স্ত্রীর প্রতি একজন স্বামীর এবং স্বামী ও সন্তানের প্রতি একজন স্ত্রীর মৌলিক দায়িত্ব হল, একটি ন্যায়নিষ্ঠ ও ধার্মিক জীবন যাপনে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। নিম্নলিখিত হাদিসটি বিষয়টিকে আরও পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তোলে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা সেই স্বামীকে দয়া করুন যে রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। অতঃপর সে তার স্ত্রীকেও নিদ্রা থেকে জাগিয়ে তোলে যাতে সেও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারে। যদি সে জাগ্রত না হয় তবে যেন মুখে পানির ছিটা দেয়। আল্লাহ তাআলা সেই স্ত্রীকেও রহম করুন যে রাতের বেলা জাগ্রত হয় এবং তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। অতঃপর সে তার স্বামীকে জাগিয়ে দেয় যাতে সেও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারে। যদি সে জাগ্রত না হয় তবে সে যেন তার চেহারায় পানির ছিটা দেয়। (নাসায়ি)

যখন কোন ব্যক্তি রাতের বেলা তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয় এবং উভয়ে একত্রে দুরাকাত নামাজ আদায় করে, তাদের নাম আল্লাহ তাআলার স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের তালিকায় লেখা হয়। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

এই আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইসলামে বিয়ে কেবল দুটি বিপরীত লিঙ্গের শারিরীক আকর্ষণ কিংবা স্বামী স্ত্রীর জাগতিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে হয় না। বরং, তা স্বামী- স্ত্রী থেকে জাগতিক, বস্ত্তগত, শারিরীক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজন ভাগাভাগি ও চাহিদা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে। এজন্যে ইসলামে বিয়ে একটি খুব সংরক্ষিত ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। তাই ভগ্ন পরিবার, একক মাতৃপরিবার কিংবা একক পিতৃপরিবারের ঘটনা মুসলিম সমাজে নেই বললেই চলে।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

 

ইসলামে সন্তান সন্তুতির অধিকার

ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই সন্তানের মধ্যে গণ্য। সন্তান সন্ততির অধিকার অনেক। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হচ্ছে শিক্ষা লাভের অধিকার। তবে আল্লাহর দ্বীন এবং চরিত্র গঠনের জন্যই এ শিক্ষা; যাতে তারা তাতে বেশ উৎকর্ষতা লাভ করতে সমর্থ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ [التحريم: ٦]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের নিজদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর- যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর।’ [সূরা আত-তাহরীম]

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»

তোমাদের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের রাখাল (তত্ত্বাবধায়ক) এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তাই আখেরাতে তার রাখালির (তত্ত্বাবধান) জন্য জিজ্ঞাসিত হবে, একজন মানুষ তার পরিবারের রাখাল, তাকে সে রাখালিপনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ [বুখারি, মুসলিম]

প্রকৃত প্রস্তাবে সন্তান বা ছেলে মেয়েগণ হচ্ছে পিতা মাতার স্কন্ধে এক বিরাট আমানতস্বরূপ। অতএব, কিয়ামতের দিন তাদের উভয়কেই তাদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এমতাবস্থায় পিতা মাতার দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে ধর্মীয় এবং নৈতিক তথা উভয়বিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সংশোধন পূর্বক গড়ে তোলা। এরূপ করা হলেই তারা ইহকাল এবং আখেরাতে পিতা-মাতার জন্য চোখের শীতলতা তথা শান্তি বয়ে আনবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ [الطور: ٢١]

আর সে সব লোক যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, অতঃপর তাদের সন্তানগণও ঈমানের সহিত তাদের পত অনুসরণ করেছে, তাদের সাথে তাদের সন্তানদেরকে আমি মিলিত করব। আর আমি তাদের কোন আমলই বিনষ্ট করবনা। প্রতিটি লোক যা কিছু আমল করে তা আমার নিকট দায়বদ্ধ থাকে।’ [সূরা আত-তূর: ২১]

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»

যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার তিনটি আমল’ ব্যতীত সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত তিনটি কাজ বা আমল হচ্ছে সাদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা তার মৃত্যুর পরও লোকেরা উপকৃত হতে থাকে এবং এমন কোনো সুসন্তান, যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার জন্য দোআ করে।’ [তিরমিযী, নাসাঈ]

ছেলে মেয়েদেরকে সুশিক্ষা ও শিষ্টাচারের সহিত গড়ে তোলার এইটাই হচেছ ফল, যে এই ধরণের ছেলে-মেয়েরাই পিতা-মাতার জন্য এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও কল্যাণকামী হিসেবে পরিগণিত হয়। অনুতাপের বিষয় যে, আমাদের সমাজে অনেক পিতা-মাতাই এই অধিকারটাকে অত্যন্ত সহজ মনে করে নিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের কে ধ্বংস করে দিচ্ছেন এবং তাদের কথা যেন ভুলেই গেছেন। মনে হয় যেন তাদের ব্যাপারে তাদের ওপর কোনো দায়িত্বই নেই। তাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় গেল এবং কখন আসবে, কাদের সাথে তারা চলা ফেরা করছে অর্থাৎ তাদের সঙ্গী-সাথী কারা এ সব ব্যাপারে তারা কোন খবরা খবরই রাখে না। এ ছাড়া তাদেরকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরতও রাখে না।

আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এসব পিতা-মাতাই তাদের ধন সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার প্রবৃদ্ধির জন্য খুবই আগ্রাহান্বিত থাকেন, সদা জাগরুক থাকেন, অথচ এসব সম্পদ সাধারণত তারা অন্যের জন্যই রেখে যান। অথচ সন্তান-সন্তুতির ব্যাপারে তারা মোটেও যত্নবান নন, যার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে দুনিয়া ও আখেরাতের সবস্থানেই তারা কল্যান বয়ে আনতে পারে। অনুরূপভাবে পানীয় ও আহার্যের মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য খাদ্য দ্রব্যের যোগান দেওয়া, তাদের শরীরকে কাপড় দিয়ে ঢাকা যেমন পিতার উপর ওয়াজিব তেমনিভাবে পিতার জন্য অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে সন্তানের অন্তরকে ইলম ও ঈমানের মাধ্যমে তরতাজা রাখা এবং তাকওয়া ও আল্লাহ্‌ভীতির লেবাস পরিধান করিয়ে দেওয়া, কেননা তা তাদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।

সন্তানের অধিকারের মধ্যে আর একটি অধিকার এই যে, পিতা মাতা তাদের জন্য সৎভাবে ব্যয় করবেন। তবে এ ব্যাপারে কার্পণ্য ও অমিতব্যয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন না। কারণ, এটা তাদের ওপরে সন্তানের অধিকার ও কর্তব্য। আর আল্লাহ তাআলা তাকে যে নেয়ামত দান করেছেন, সে ব্যাপারে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। এটা কিছুতেই ঠিক হবে না যে, ধন সম্পদকে পিতা তার জীবদ্দশীয় ছেলে মেয়েদের ওপর ব্যয় না করে তা কুক্ষিগত করে রাখবেন অথচ তারা মৃত্যুর পর সে ছেলে-ময়েরাই তা লুফে নিয়ে যথেচ্ছ ব্যবহার করবে।

অতএব, পিতা যদি ধন সম্পদে আসক্তিবশত সন্তানদের ওপর ব্যয় করার ব্যাপারে কার্পণ্য করেন, তা হলে তাদের জন্য বৈধ হচ্ছে তাদের প্রয়োজনমাফিক সৎভাবে সে মাল থেকে গ্রহণ করা এবং ব্যয় করা। আর এরূপ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিনদা বিনতে ওতবার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।

সন্তানের অধিকারের মধ্যে আরেকটি অধিকার এই যে, উপহার-উপঢোকন এবং দানের ক্ষেত্রে তাদের একজনকে অন্যজনের উপরে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না। অতএব, সন্তানদের কাউকে কিছু দেওয়া এবং কাউকে তা থেকে বঞ্চিত করা অনুচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটা নিতান্তই জুলুম। আর আল্লাহ কখনো জালেমদের ভালবাসেন না। এইরূপ করা হলে, যারা বঞ্চিত তাদের মধ্যে একটি বিতৃষ্ণা ও ঘৃণার ভাব উদ্রেক হয় এবং পুরস্কৃত ও বঞ্চিতদের মধ্যে একটি স্থায়ী শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এমনকি অধিকন্তু বঞ্চিত সন্তান-সন্ততি ও তাদের পিতা-মাতার মধ্যে একটি শত্রুতা ও তিক্ততা সৃষ্টি হয়।

আর কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা তাদের উপর কৃত সদ্ব্যবহার ও অনুকম্পার প্রেক্ষিতে তাদের কোনো কোনো সন্তানকে অন্যদের ওপর বিশিষ্টতা দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই যদি পিতা-মাতা তাকে দান-অনুদান এবং পারিতোষিক প্রদান করেন, তা হলে সেটা কখনো সঠিক হবে না। অর্থাৎ কারো সদ্ব্যবহার অথবা পূণ্যবান হওয়ার কারণে তার বিনিময়ে কিছু দেয়া জায়েয হবে না। কেননা, নেক কাজের পরিনাম ও ফলাফল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। তাছাড়া কোনো সৎস্বভাব বিশিষ্ট সন্তানকে যদি অনুরূপ ভাবে অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে বেশী দান করা হয়, তা হলে সে মনে মনে গর্বিত ও আত্মতুষ্ট না হয়ে পারে না এবং সে সব সময়ই তার একটি (বাড়তি) পজিশন আছে বলে ধরে নেবে, যার ফলে অন্যরা পিতা-মাতাকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করবে এবং তাদের ওপর জুলুম চালিয়ে যেতে থাকবে। অপর দিকে ভবিষ্যত সম্পর্কে আমরা আদৌ কিছু জানি না। এমনওতো হতে পারে যে, এখন যে অবস্থাটা কারো ব্যাপারে বিদ্যমান রয়েছে, তার আমুল পরিবর্তন হতে পারে। আর এ ভাবেই একজন অনুগত ও পুণ্যাত্মা আগামী দিনগুলোতে বিদ্রো্হী ও অত্যাচারী হয়ে যেতে পারে এবং একজন বিদ্রোহীও পুণ্যাত্মায় পরিণত হতে পারে। মানুষের অন্তরের বাগডোরতো আল্লাহর হাতেই নিবদ্ধ-তিনি যেদিকে চান সে দিকেই তা ঘুরাতে সক্ষম।

বোখারী এবং মুসলিম শরীফে আছে : নোমান বিন বশীর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা বশীর ইবন সাদ তাকে একটি গোলাম দান করলেন। অতঃপর এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলো। তিনি বললেন: (হে, বশীর) তোমার প্রতিটি ছেলে কি এইরূপ পেয়েছে? তিনি বললেন: না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তা হলে তা ফেরত নাও।’

অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তান-সন্তুতির মধ্যে ইনসাফ কায়েম করতে চেষ্টা কর।” তাছাড়া এভাবেও বর্ণিত রয়েছে যে তিনি বলেছেন, আমি এ ব্যতীত সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি জুলুমের ব্যাপারে ব্যাপারে সাক্ষ্য হবো না।’

মোটকথা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তান-সন্তুতির মধ্যে কাউকে কারো ওপরে গুরুত্ব দানের বিষয়টিকে জুলুম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আর জুলুম তো হারাম। কিন্তু সন্তানদের মধ্যে যদি কারো কোনো প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত হয় এবং অন্যদের তা প্রয়োজন না হয়, যেমন ছেলেমেয়েদের মধ্যে কোনো একটি সন্তানের লেখাপড়ার তথা বিদ্যালয়ের উপকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় অথবা রোগের চিকিৎসা অথবা বিবাহ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়, এমতাবস্থায় সে ব্যাপারে খরচ মেটানোর ব্যবস্থা করা আদৌ দোষণীয় নয়। কারণ এটা নিতান্ত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতেই করা হয়ে থাকে। আর এরূপ ব্যয় মূলত: সন্তান-সন্ততির খোরপোষ তথা লালন-পালনের ব্যয় ভারের মধ্যেই গণ্য হবে।

যখন পিতা তার সন্তানকে শিক্ষা-দীক্ষা দান ও তার প্রতি যা কিছু ব্যয় করা দরকার তা করার মাধ্যমে তার উপর ন্যস্ত কর্তব্য পালন করবে, তখন তার সন্তান ও পিতা-মাতার প্রতি মার্জিত আচরণ করবে এবং তার যাবতীয় অধিকারকে সংরক্ষণ করবে। আর পিতা যদি এ ব্যাপারে ত্রুটি করেন তাহলে সন্তানের অবাধ্যতার শিকার হওয়ার জন্য সে উপযুক্ত হবেই। কেননা, এই অবস্থায় সন্তান তার পিতার অধিকার অস্বীকার করবে এবং তার অবাধ্য আচরনের দ্বারা পিতাকে অনুরূপ শাস্তি প্রদান করবে। কাজেই যেমন কর্ম তেমন ফল।

মূল : শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উসাইমিন রহ.
অনুবাদ : মো. আব্দুল মতিন

 

কেমন হওয়া চাই আপনার কোম্পানির লোগো

নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন লোগোর কথা। লোগো তো চাই-ই। কিন্তু কেমন হবে সেটা? কী করলে আপনার লোগোটি হবে এমন যে চোখের এক পলকে তা মনে করিয়ে দেবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে?
মিল্টন গ্লাসার, কিংবদন্তী গ্রাফিক ডিজাইনার, তিনি সবচেয়ে বেশী পরিচিত তার “I Love New York” লোগোর কারণে। তিনি বলেন,লোগো হতে হবে সিম্পল। গ্রাফিক ডিজাইন ব্লগ ডিজাইন ইনফর্মারে তিনি বলেন, “You want to move the viewer in a perception so that when they first look at [the logo]…they get the idea, because that act between seeing and understanding is critical” গ্লাসারের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে লোগোর থাকা চাই এই চার বৈশিষ্ট্য-
ইউনিক বা অনন্য
আপনার লোগোটি অবশ্যই আলাদা হতে হবে। মার্কেটে হাজারো লোগো আছে। তার মাঝেই এমন একটি লোগো হতে হবে আপনারটি যেন চোখে পড়ে সবার আগে এবং দেখলেই চেনা যায়। সাইটপয়েন্ট.কম এর সহ প্রতিষ্ঠাতা Matt Mickiewicz পরামর্শ দেন, যেসকল আইকন যেমন গ্লোব, এরো বা তীরচিহ্ন যেগুলো ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়ে গেছে সেগুলো বাদ দিন প্রথমেই। গ্রাফিক্স ডিজাইনার ডেভিড এরে বলেন, কোম্পানি কি কাজ করে সেটা তুলে ধরা কিন্তু লোগোর কাজ নয়। “The Mercedes logo isn’t a car. The Virgin Atlantic logo isn’t an airplane. The Apple logo isn’t a computer,” তাই মনে করবেন না, আপনার কফি শপের লোগোতে কফি বিন দেখানো জরুরি। জরুরি হল লোগোর ভিন্নতা, অনন্যতা।
এডাপ্টেবল
একটি শক্তিশালী লোগো সহজেই টান্সলেট করা যায়, বিভিন্ন মিডিয়ামে ব্যবহার করা যায়। আপনি যে লোগোটি করেছেন সেটি কি বিজনেস কার্ডে যেমন মানিয়ে যাচ্ছে তেমনি মানিয়ে যাবে বিলবোর্ডেও? “Keeping the design simple allows for flexibility in size,” লিখেছেন এরি, “Ideally, your design should work at a minimum of around one inch without loss of detail”। মিকিউইজ আরও যোগ করেন, যখন একটি লোগো ছোট স্কেলে জায়গা হয় না তখন এটি ব্রান্ডের পরিচ্ছন্নতা এবং সুনামের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়ায়। আরও মাথায় রাখুন, লোগোটি কিন্তু সাদা-কালোতেও বদলানোর যোগ্য হতে হবে। নাহলে সবরকম প্রিন্টারে ভাল আসবে না। ওয়াটার মার্ক করতেও সমস্যা হবে।
সময়ের বাধাহীন
মিল্টন গ্লাসার “I Love New York” লোগোটি তৈরি করেন ১৯৭৫ সালে। আজ এত বছর পড়েও সেই লোগো শার্ট, টি শার্ট, গিফট আইটেম সহ কত কিছুতেই না ব্যবহার হয়ে আসছে। তিনি বলেন, “You look at the clean lines, the symmetry, the modernist structure, the neutrality behind it… and it really exposes the timeless quality”। আপনার লোগোটিও হতে হবে এমন। আধুনিক, নিরপেক্ষ, স্টাইলিশ, সহজ। যে কোন ভাবে ব্যবহারযোগ্য, মানানসই। কোন সময়ের গন্ডিতে বাধা পড়বে না সেটি।
যথাযথ
যে কোন মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপণের দিকে যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে আপনার টার্গেট কে বা কারা! লোগোটিকেও হতে হবে তেমন। আপনার কাস্টমার যেন লোগোটিকে াপন করে নেয়। কোম্পানির সংস্কৃতি, ক্লাস, মূল্যবোধ সবই প্রকাশ করে লোগো। রঙ এর ব্যপারে খেয়াল রাখুন। খেয়াল রাখুন উদ্দেশ্যের ব্যাপারেও। “Different colors are associated with different meanings in different cultures. It’s important to think about how the colors in your logo reflect your brand values and the services or products you sell” বলেন মিকিউইয।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

বিকেলের নাস্তায় রাখুন মজাদার ডিম পাকোড়া

বিকেলের চায়ের সাথে ভাজাভুজি কোন খাবার হলেও দারুন হয়। আর তা যদি হয় পাকোড়া তবে তো কোন কথা নেই! সাধারণত সবজি পাকোড়া, আলুর পাকোড়া তৈরি করা হয়। অনেকে আবার মাংসের পাকোড়া তৈরি করে। ডিম দিয়েও পাকোড়া তৈরি করা সম্ভব। কি, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই, ডিম দিয়ে তৈরি করতে পারেন দারুণ ডিমের পাকোড়া। যারা ডিমের গন্ধের জন্য ডিম খেতে পারছেন না, তারা এই খাবারটি খেতে পারেন।

উপকরণ:

  • ১০০ গ্রাম বেসন
  • ৩টি ডিম
  • ১ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ মৌরি
  • লবণ
  • ১/২ চা চামচ আদা রসুনের পেস্ট
  • ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা
  • তেল

প্রণালী:

১। প্রথমে ডিম সিদ্ধ করে নিন। এবার ডিমগুলো অর্ধেক করে কেটে নিন।

২। আরেকটি পাত্রে বেসন, মরিচ গুঁড়ো, লবণ, আদা রসুনের পেস্ট, বেকিং সোডা, মৌরি দিয়ে ভাল করে মেশান। তারপর এতে সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে আবার মেশান।

৩। এবার এতে পানি দিয়ে কিছুটা ঘন গোলা তৈরি করে নিন। গোলা যেন খুব বেশি পাতলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

৪। সিদ্ধ ডিম বেসনের গোলার মধ্যে ডুবিয়ে গরম তেলে  দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে পাকোড়াগুলো ভাজুন।

৫। বাদামী রং হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলুন।

৬। পাকোড়া অর্ধেক করে কেটে উপর গোলমরিচ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো ছিটিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ডিম পাকোড়া।

 

ফ্যাশনে ছোটরাও হোক অনন্যা…

দশ মাস দশ দিন বড় যত্নে মাতৃ গর্ভে পালন। মায়ের বড় আদরের ধন সে। কোনও অসুবিধা যাতে তার ছায়াও স্পর্শ করতে না পারে, তার জন্য সকলেই ব্যস্ত। ছোট্ট সোনাকে নিয়ে মাতোয়ারা বাড়ির সবাই। সদ্যজাত শিশুর চাই স্পেশাল কেয়ার। তাই আপনার ছোট্ট বেবির নিত্য প্রয়োজনের জন্য তৈরি করে ফেলুন নতুন ড্রেস। জেনে নিন, কী কী মজাদার জামাকাপড় নিজের হাতেই বানাতে পারেন। তাতে আপনার বেবিকে দেখাবে চমৎকার, আর আপনিও খুশি।

সে এতই ছোটো, কেনা জামাকাপড় তার গায়ে ফিট করে না। তাই নিজেই বানিয়ে ফেলুন ছোট পুচকিটার পোশাক। বাচ্চাদের জামার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হয়, যাতে কোনওরকম ইনফেকশন না হয়। সুতি ছাড়া অন্য কোনও ম্যাটিরিয়াল ব্যবহার করবেন না। সহজ সরল ডিজাইন বেছে নিন। ফিতে বা বোতাম দেওয়া জামাকাপড়ই বেশি ভালো। তাতে খুলতে পরতে সুবিধা হবে।

ওয়ান পিস আউটফিট

এই ধরনের জামাকাপড় ছোট বাচ্চাদের জন্য একদম পারফেক্ট। বার বার ন্যাপি পালটাতে এই জামাকাপড়ে সব থেকে সুবিধে।

শার্ট

সামনে বোতাম দেওয়া সুন্দর শার্টে আপনার ছোট্ট বেবিকে দিব্য মানাবে। শার্টের উপর পছন্দমতো ডিজাইন করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন, কাপড় যাতে বেশি মোটা না হয়। হালকা সুতির কাপড় বাচ্চার ত্বকের জন্য ভালো।

প্যান্ট

বাচ্চার প্যান্ট তৈরি করুন পছন্দমতো। তবে কোমরে ইলাস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো। তাতে বেবির নরম চামড়ায় আঘাত লাগতে পারে। বেশি টাইট করবেন না, তাতে খোলাতে পরাতে অসুবিধা হবে।

সোয়েটার

শীতে বাচ্চার জন্য বানিয়ে রাখতে পারেন রংবেরঙের সোয়েটার। তবে, সোয়েটার মাথা গলিয়ে পরালে বাচ্চারা খুব বিরক্ত বোধ হবে। কান্নাকাটি করতে থাকবে। তাই সোয়েটার বানানোর সময় অবশ্যই সামনের দিকে রাখুন।

টুপি

উল দিয়ে বানাতে পারেন টুপিও। তবে খেয়াল রাখবেন, ম্যাটিরিয়ালটি যাতে আরামদায়ক হয়।

মোজা

এত ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে মোজা মাস্ট। পায়ের থেকে সামান্য বড় সাইজের মোজা বানিয়ে ফেলুন। যাতে ছোট্ট বেবিটার ছোট্ট পা দুটি যথেষ্ট জায়গা পায় নড়াচড়া করতে।

কাঁথা

সুতির কাপড়ে বানাতে পারেন রকমারি কাঁথা। ডিজাইন করতে পারেন পছন্দমতো। বাচ্চার নাম, ফুল বা টেডির ডিজাইনও করতে পারেন।

টুপি

আপনার বাচ্চাকে ফ্যাশনেবল লুকস্ দিতে তৈরি করতে পারেন মজাদার টুপি। ঘরে-বাইরে, দু-জায়গাতেই ব্যবহার করতে পারেন এই টুপি।

এক নজরে কয়েকটি সতর্কতা

সাবধানে তৈরি করতে হবে বাচ্চার জামাকাপড়। দেখবেন যাতে তা বেশি টাইট না হয়। বিশেষ করে গলায় যেন জামা শক্ত করে বসে না থাকে।  একটু ঢিলেঢালা জামায় বাচ্চা ফ্রিভাবে শ্বাস নিতে পারবে।

বোতাম, ফিতে বা অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ দেখে শুনে ব্যবহার করবেন। দেখে নিন, এগুলোর কারণে বাচ্চার যেন কোনও ক্ষতি না হয়।

 

গৃহকর্মী নির্যাতন হচ্ছেই

১১ বছর বয়সী গৃহকর্মী আদুরি। নাম আদুরি হলেও ওর ভাগ্যে কখনো আদর জোটেনি। বরং কাজ করতে এসে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আদুরিকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয়নি কখনো। মুখে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইস্ত্রি দিয়েও গায়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান ব্লেড দিয়ে সারা শরীর কেটে দিয়েছেন। নানা ধরনের বীভৎস নির্যাতন করেও ক্ষান্ত হননি তিনি। একদিন মারতে মারতে আদুরিকে মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় পাওয়া যায় আদুরিকে। এরপর হাসপাতালে নিলে দেখা যায়, লিকলিকে শরীরের আদুরির সারা গায়ে নির্যাতনের চিহ্ন। শরীরজুড়ে দগদগে ঘা। মাথার হাড়ে ফাটল। হাতে ব্যান্ডেজ। সূত্র: প্রথম আলো

পরিবার-নিজস্ব পরিবেশ ছেড়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বহু শিশু ও নারী গৃহকর্মীর কাজ করেন। রাতদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় গৃহকর্ত্রীর মন জয় করতে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই গৃহকর্মীদের ভাগ্যে জোটে নির্যাতন। কাজ একটু এদিক-সেদিক হলেই মারধর থেকে শুরু করে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, ধারালো ছুরি-ব্লেডের আঁচড় খেতে হয়। অনেকে আবার গৃহকর্মীকে ঠিকমতো খাবারও দেন না। এমনকি গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী দুজনে মিলেই গৃহকর্মীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান। এমনকি গৃহকর্মী হত্যার ঘটনাও কম ঘটে না।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে গত পাঁচ বছরে ১৮২ জন নির্যাতিত গৃহকর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪৩ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে মোট ৭৮ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দুমুঠো খাবার আর পরিবারের খরচ জোগাতে নীলফামারী থেকে রংপুরে আসে গৃহকর্মী রেশমা (ছদ্মনাম)। ১২ বছর বয়সে যখন স্কুলে থাকার কথা, তখন কাজ নেয় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায়। কিন্তু রেশমার সে বাসায় কাজ করা হয়ে ওঠেনি। পরিবারকেও কোনো সাহায্য করা হয়নি। বরং তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। কারণ, গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন রাতেই গৃহকর্তা শিশুটির ওপর যৌন নির্যাতন চালান। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায় শিশুটি। সূত্র: প্রথম আলো

গৃহকর্মী নির্যাতনের এ রকম হাজারো উদাহরণ আছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা কমেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে মোট ৪৮ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৪ সালে সেখানে ১০৮ গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ৫৬ শতাংশ কমেছে।

এ বিষয়ে বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতন হচ্ছেই। কারণ, গৃহকর্মী শ্রমিক হলেও তাঁদের শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফলে তাঁরা শ্রমিকের কোনো অধিকারই ভোগ করতে পারেন না। তাঁদের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। ছুটি নেই। ঘুমানোর জায়গা নেই। ঠিকমতো বেতন পান না। আটকে রাখা হয়। আসলে তাঁরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করেন। এককথায় তাঁদের কর্মপরিবেশ যেমন অস্বাস্থ্যকর, তেমনি অনিরাপদ। ফলে কাজ করতে এসে তাঁরা শারীরিক নির্যাতন থেকে শুরু করে হত্যার শিকার পর্যন্ত হন।

সরকার ২০১৫ সালে গৃহকর্মীদের জন্য ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে। এতে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। গৃহকর্মীরা বিশ্রামসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও পাবেন। গৃহকর্মীরা সবেতন চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও অন্য ছুটি ভোগ করতে পারবেন। শ্রম আইন অনুসারে, ১৪ বছরের কম বয়সীদের গৃহকর্মী নিয়োগ প্রদানে বিধিনিষেধ মানতে হবে। গৃহকর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন থাকতে হবে। গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এবং শিশু সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও গৃহকর্মীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনকে দিন ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে নারীনেত্রী মালেকা বানু বলেন, সমাজের নেতিবাচক মানসিকতা গৃহকর্মীর ওপর সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতন কমাতে তাই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। পাশাপাশি একটা আনুষ্ঠানিক নিয়মের মধ্য দিয়ে তাঁদের কাজে নিয়োগ দিতে হবে। শ্রমিক হিসেবে তাঁদের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।