banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

কোনটা কবর জিয়ারত এবং কোনটা কবরপূজা?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তাকে আহ্বান করে, আর ঐ অবস্থায় (ঐ কাজ থেকে তাওবা না করে) মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তোমার রব চুড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩]

অনুরূপভাবে শাফাআতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুসীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত-নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দোয়া করাও শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন, বল তো কে নিঃসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহ্বান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]

অনেকেই উঠতে, বসতে বিপদাপদে পীর মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেওয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোনো বিপদে বা কষ্টে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফাঈ। কেউ যদি ডাকে ‘আইদারূসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবন উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস”। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৯৪]

কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সাজদাহ করে, তার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযুর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন, তাদের থেকে অধিকতর দিক ভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোনো খবর রাখে না। [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত: ৫]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তাকে আহ্বান করে, আর ঐ অবস্থায় (ঐ কাজ থেকে তাওবা না করে) মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

কবর পূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মূণ্ডন করে। তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী আউলিয়া বা সাধু-সন্তানদের কবরকে বুঝে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি আপনার রব্ব আপনাকে কোনো অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সেটার বিমোচনকারী নেই। আর যদি তিনি আপনার কোনো মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রূখবারও কেউ নেই। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭]

একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মান্নত করাও শির্ক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মান্নত করে অনেকেই এরূপ শিরকে জড়িয়ে পড়েন।

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

কলসিন্দুরে আলো জ্বলার পর

আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল ছোট্ট রায়হান মিয়া। সাবিনাদের বাড়ি খুঁজছি এমনটা বুঝেই এগিয়ে এল সে। খালি গা, পরনে হাফপ্যান্ট। ‘আপনারা এইহান দিয়া আইছুন ক্যা! রাস্তা তো পিছনে!’ পথ চেনার সুবিধার্থে রায়হানকে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হলো। সরু, কাদাময় রাস্তা ধরে কিছুদূর গিয়ে থামাতে হলো মোটরসাইকেল। এবার হাঁটাপথ। রায়হান বলল, ‘ওই যে, ওই মুহে।’ ওর কথায় ভরসা না পেয়ে অবশেষে পথচারীর দ্বারস্থ হলাম। তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘কোন সাবিনা? ফুটবল খেলে যে…?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, ফুটবলার সাবিনার বাড়ি খুঁজছি।’

আলোকিত হয়েছে তহুরাদের ঘরও। ছবি: জগলুল পাশাঢাকা থেকে ময়মনসিংহ। সেখান থেকে ধোবাউড়ার কলসিন্দুর। তারপর রানীপুর গ্রাম। সেই ভোরে শুরু হওয়া ভ্রমণ বিকেলে এসে শেষ হলো বুঝি। মাথা নাড়তেই সেই পথচারী দেখিয়ে দিলেন সেদিকেই, যেদিকে রায়হান এগিয়েছে খানিকটা। পুকুর পাড়, খেতের আইল পেরিয়ে টিনের চালা ও বেড়ায় ঘেরা সাবিনাদের বাড়িতে পৌঁছার আগেই থামতে হলো। মাটির বাড়ির দেয়ালে একটা বৈদ্যুতিক মিটার। অন্য কোথাও হলে এই বস্তুতে বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু কলসিন্দুরে বৈদ্যুতিক মিটার মানে অন্য রকম ব্যাপার। তাই সেটা দেখার জন্য না থেমে উপায় কি? ততক্ষণে আমাদের দেখে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন বাড়ির বয়সী মানুষ হেলেনা খাতুন। বললেন, ‘কারেন পাইছি ওই সাবিনার জন্যই। অহন আর রাত্রে বেলা ঘুটঘুইটা অন্ধকার থাহে না। ঠিকঠাক চোহে দেহি। আর ওই যে পুকুরটা দেখেন, ওইটার মাঝখানে একটা লাইট জ্বালায়া দেই। পোকামাকড় আইসা পানিতে বসে। মাছ সেই পোকামাকড় খায়। এইবার শিং মাছের চাষ খুব ভালা হইছে।’

মাটির ঘরে জানালা দিয়ে ততক্ষণে মুখ বের করে দিয়েছে হেলেনা খাতুনের ছোট্ট নাতি। তাকে দেখিয়ে বললেন, ‘আগে আমার নাতি পড়ত কুপি জ্বালাইয়া, আর এহন পড়ে কারেনের আলোতে।’ হেলেনা খাতুন কখনো ভাবেননি তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ আসবে। এ কারণেই তাঁর কাছে এই বৈদ্যুতিক আলোর গল্প বেশ দীর্ঘ। সে গল্প শোনা শেষ হলে আমরা পা বাড়াই সাবিনাদের বাড়ির দিকে। তাদের বাড়ির সামনে বিদ্যুতের নতুন খুঁটি। ঠিকঠাক করে বললে, খুঁটির বয়স হয়েছে ছয় মাসের বেশি।

কলসিন্দুরের মেয়ে ফুটবল দলের একজন সাবিনা আক্তার। ২৫ জুন ওদের বাড়িতে পা রেখেই কানে এল ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক পাখার শব্দ। সাবিনার কাছে জানতে চাই, ‘খেলোয়াড় জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?’

 ফুটবল মাঠে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে কলসিন্দুরের এই মেয়েরা। ছবি: প্রথম আলো‘এহন গাঁয়ের লোকজন আমাগো পছন্দ করে। আদর করে। আর রাস্তায় বের হলে যেখানেই যাই কোনো গাড়িওয়ালা ভাড়া নিতে চায় না। শুধু ফুটবল খেলি বইলাই তো এত কিছু।’ বাড়ির বারান্দায় বসে লাজুক মুখে উত্তর দেয় সাবিনা। কলসিন্দুর ফুটবল দলের মধ্য মাঠের খেলোয়াড় সে। পুরো মাঠ আগলে রাখার মতো করে পুরো গ্রামটাই আগলে রাখে যেন!
গন্তব্য এবার ‘মেসি’র বাড়ি!
শুধু দলে নয়, গ্রামের মানুষও তাকে মেসি নামেই ডাকে। আসল নাম শরাবন তহুরা। আর্জেন্টিনার মেসি দেশকে কোনো শিরোপা দিতে পারেননি সত্যি, কিন্তু এই ‘মেসি’ ঠিকই মুক্তাগাছা গ্রামে আলো জ্বালিয়েছে। সুপারিগাছের সারি, মাছের ঘের, আর বেশ কয়েকটা খেতের আইল পেরিয়ে যখন ওদের বাড়িতে পৌঁছালাম, তখন বিকেল। ওর বাড়িতে পৌঁছার আগেই তহুরা-বন্দনা করলেন ওদের পাশের বাড়ির নুর আলী। বললেন, ‘এর আগে দুজনকে টাকা দিছিলাম কারেনের জন্য। কেউ আইনা দিতে পারে নাই। আর এই মেসি আমাগো ঠিকই কারেন আইনা দিল। অয় যে আরও কত কী করব কে জানে! বাইত্তে আপাতত দুইটা লাইট লাগাইছি। কয়েক দিনের মধ্যে ফ্যানও লাগামু।’ বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তহুরা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কদিন আগে ঢাকা থেকে ফিরেছে। তহুরাসহ কলসিন্দুর ফুটবল দলের ১০ জন খেলোয়াড় এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ঢাকায়। সেখান থেকে হঠাৎ ছন্দপতন তার। তবে এরই মধ্যে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে সে। খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা যেতে চায় তহুরা।

সাবিনাদের বাড়ির পাশেই বসেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি‘এত মানুষ প্রশংসা করছে, কেমন লাগে?’ প্রশ্ন শুনে তহুরা হাসে। ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া মেয়েটি যাবতীয় উত্তর যেন এক হাসিতে দিয়ে দেয়। হাসতে হাসতেই বলল, ‘ভালো। আমি আরও ভালো খেলতে চাই।’ বিদ্যুৎ, প্রশংসা কিংবা পড়াশোনা—এত কিছুর পেছনে শক্তি এই খেলাই। আমরা ওর পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। পড়ন্ত বিকেলের রোদে ঝকঝক করছে বিস্তীর্ণ মাঠ, দূরের কয়েকটা গাছ। এত সুবিশাল মাঠের সামনে বসে যে মেয়েটি পড়ে, তার স্বপ্ন তো এমনই হবে।
‘এখন টিভিতে ওগো খেলা দেহি’
ময়নাকে খুঁজছি জেনে আশপাশের কয়েক বাড়ি থেকে লোকজন চলে এল। ময়না এল খানিক পরে। দেরির কারণটাও বোঝা গেল হাতে ফুটবল দেখে। পাশেই অনুশীলন করছিল সে। ঢাকায় যে ১০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে নেই বালশ্রী মানখিন ময়না। পরের বার যেন এই সুযোগ মিস না হয়, এ কারণেই বাড়তি পরিশ্রম। এখন টিভিতে কোনো ফুটবল খেলা দেখালেই বসে পড়ে সে। তার সঙ্গে এ পাড়ার অনেকেই। দল বেঁধে টিভি দেখার ব্যাপারটি শুরু হয়েছে মাস ছয়েক হলো। কারণ গামারিতলার ২০ ঘরে বিদ্যুৎ এসেছে ময়নার কল্যাণে। তাদের কাছে ময়না এখন রীতিমতো ‘নায়ক’। ময়না বলল, ‘আগে মানুষজন চিনত না অতটা। এখন চেনে। বিদ্যুৎ আসাতে যে এত পরিবর্তন হবে, আগে বুঝি নাই।’

ময়নার খালা লুতিমা মানখিন ঘরের দেয়ালে বৈদ্যুতিক মিটার দেখিয়ে বললেন, ‘কারেন আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। সন্ধ্যা হলেই চইলা যায়।’ বলতে বলতে বিদ্যুৎ একবার বিদায় নিল। অবশ্য ফিরে আসার একটু আগেই দেখা হলো ময়নার এনে দেওয়া বিদ্যুতের সঙ্গে। খালা বললেন, ‘এখন টিভিতেই ওগো খেলা দেহি। কী যে ভালো লাগে!’

বাড়ির সবাইকে নিয়ে টিভি দেখছে ময়না (ডানে চেয়ারে বসা‍)আরও কিছুর আশায়
কলসিন্দুর ফুটবল দলের ১৯ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে দুজনের বাড়িতে আগে থেকেই বিদ্যুৎ ছিল। বাকি ১৭ জনের বদৌলতে বিদ্যুৎ পেয়েছে নয় গ্রামের ৮০৩টি পরিবার। এ তালিকায় স্কুলের সভাপতি এমনকি সেই শিক্ষার্থীদের প্রিয় ‘মফিজ উদ্দিন স্যার’ও রয়েছেন। স্কুলের মাঠে বসে কথা হলো মফিজ স্যারের সঙ্গে। বললেন, ‘প্রথম আলোর কারণেই আমার শিক্ষার্থীদের চিনেছে সবাই। আর আনিসুল হকের কারণে এত তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ এসেছে। আর সরকারের আন্তরিকতা তো ছিলই। আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া এটা।’
বলে রাখা ভালো, ২০১১ সালে কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মফিজ উদ্দিন স্যার মেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলেন ফুটবল টিম। এই দলটি ধীরে ধীরে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় দুবার। এখন অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলের ১৮ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ১০ জনই কলসিন্দুর উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়ে। গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কামরান পারভেজ শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনে লেখেন ‘ফুটবল রাঙাচ্ছে কলসিন্দুরের মেয়েরা’। ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো এই মেয়েদের নিয়ে তৈরি করে প্রামাণ্যচিত্র ‘অদম্য মেয়েরা’। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় ওই গ্রামের ২০ ফুটবলার, কোচ মফিজ উদ্দিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনতি রানী শীল আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে।

এই শিক্ষার্থীদের চাওয়াতেই গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়া হয় কলসিন্দুরসহ আশপাশের গামারিতলা, পশ্চিম গামারিতলা, পঞ্চদন্দপুর, দক্ষিণ রানীপুর, মুক্তাগাছা, রামসিংহপুর, গৌরীপুর ও সোহাগীপাড়া গ্রামে।

আমরা যখন ফিরছি তখন দিনের আলো নিভে গেছে। আস্তে-ধীরে জ্বলে উঠছে বৈদ্যুতিক বাতি। মাঠ পেরিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি দূরে। পেছনে আলোকিত হয়ে আছে ‘মেসি’দের গ্রাম!

ঈদ কেটেছে আনন্দে…

কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের ঈদ কেটেছে আনন্দে। তবে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় অনুশীলন করতে যাওয়া ১০ জনকে ঈদ পালন করতে হয়েছে ঢাকায়। মফিজ উদ্দিন বললেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ওদের ফেডারেশন থেকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। আর ঈদের দিন ভালোমানের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। ঈদের পরদিন থেকে যথারীতি আবার অনুশীলন শুরু হয়েছে ওদের। এ কারণে আর বাড়ি ফেরা হয়নি কারোরই।’ ১০ জনের মধ্যে তহুরা অসুস্থতার কারণে বাড়িতে গেলেও ঈদের আগেই এসে যোগ দিয়েছে ওই দলে। সবার সঙ্গে তার ঈদটাও দারুণ কেটেছে। ১০ জন ঢাকায় ঈদ করলেও বাকি ৯ জন ঈদ করেছে গ্রামে। ঈদের পরে কথা হলো সাবিনা আক্তারের সঙ্গে। বলল, ‘ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা ও জুতা কিনেছি। ঈদের দিন পাশের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। আর ঈদের পরে গিয়েছিলাম আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। সবাই অনেক আদর করেছে।’

Save

Save

Save

Save

Save

 

পাড়াগাঁয়ের পারলার

তাপসী রাবেয়া বড় হয়েছেন ঢাকা শহরে। কিন্তু বিয়ে হলো নিভৃত গ্রামে। বাড়িটাও মাটির। এটা দেখে তাঁর মন খারাপ হয়নি। হয়েছিল গ্রামের মেয়েদের দেখে। তারা শহরের মেয়েদের দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। বলে, শহরের মেয়েরা কী সুন্দর! তাপসী ভাবেন গ্রামের মেয়েরাও সুন্দর। কিন্তু তারা নিজের সৌন্দর্য হয়তো সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে না। এই মেয়েদের কথা ভেবে তিনি নিভৃত গ্রামের এই মাটির বাড়িতে একটি বিউটি পারলার গড়ে তুললেন। একে একে গ্রামের মেয়েরাও বিউটি পারলারে আসতে লাগল। খবর রটে গেল এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। এখন ১৫-২০টি গ্রামের মেয়েরা প্রতিনিয়ত আসে বিউটি পারলারে। শুধু তারা সাজতে আসছে তা-ই নয়, আসছে কাজ শিখতেও।

মাটির বাড়ির বিউটি পারলার

গ্রামটির নাম কালিগ্রাম। এটি নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবিস্থত। সম্প্রতি গ্রামের রাস্তাটা পাকা হলেও মানুষের বাড়িঘর এখনো মাটিরই রয়ে গেছে। এই গ্রামেই ১৯৯৭ সালে বউ হয়ে আসেন তাপসী রাবেয়া। পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা হলেও তাঁর জন্ম ঢাকা শহরে। বড় হয়েছেন ঢাকাতেই। শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখেন, মাটির রাস্তা, মাটির ঘরবাড়ি। মানুষগুলো যেন মাটির মতন। শহরের মেয়েদের সাজ দেখে তারা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। তাদের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় তাঁর মাথায় বিউটি পারলারের ভাবনা আসে। কিন্তু কিছুতেই গুছিয়ে উঠতে পারেন না। অবশেষে ২০১১ সালে তিনি ঢাকায় গিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে কাজটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারলেন না। অনেকেই নিরুত্সাহিত করলেন। গাঁয়ে এটা চলবে না। শুধুই টাকা নষ্ট হবে। কিন্তু তাঁর মন মানে না। ২০১৩ সালে আবারও ঢাকায় কিছুদিন থেকে প্রশিক্ষণ নিলেন। এবার সিদ্ধান্ত নিলেন কাজটা তিনি শুরু করবেনই। কিন্তু টাকার দরকার প্রায় দেড় লাখ। নিজের কিছু ছিল। ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা নিলেন। তাও হলো না। শেষ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিলেন।

শুরু থেকেই গ্রামের মেয়েরা ভিড় জমাতে শুরু করে এই পারলারেঅবশেষে ২০১৪ সালের শুরুতে যাত্রা শুরু হলো ‘নবরূপা বিউটি পার্লার’-এর। গ্রামের বাড়িঘর যেহেতু মাটির। তিনি মাটির ঘরেই আয়োজন করলেন। মাটির ঘরটা সুন্দর করে রং করে নিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের মেয়েদের সাজ বদলে যেতে থাকল। এ খবর ছড়িয়ে পড়ল পাশের গ্রামগুলোতে। পর্যায়ক্রমে কালিগ্রাম থেকে শুরু করে উপজেলার কির্ত্তুলী, দেলুয়াবাড়ী, মহানগর, চৌবাড়িয়া, সাবাইহাট, কেশরহাট কামারপাড়া, কুসুম্বা, গাইহালা, কালীনগরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের মেয়েরা আসতে শুরু করে।
সম্প্রতি রাজশাহী শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কালিগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি দ্বিতল মাটির বাড়ি ঠিক ইটের বাড়ির মতো রং করা হয়েছে। গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রঙিন এই মাটির বাড়িটি যে কারও নজর কেড়ে নেবে। দূর থেকেই এই সাইনবোর্ড চোখে পড়বে ‘নবরূপা বিউটি পার্লার’। মাটির দেয়ালেই লেখা রয়েছে ‘এখানে অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ানদের দ্বারা বউ সাজানো, ভ্রুপ্লাক, ফেসিয়াল, ম্যানিকিওর, পেডিকিওর, হেয়ার রিবন্ডিং, চুল কাটা, চুল কালার করা এবং মেশিন দ্বারা নাক-কান ফোঁড়ানোসহ মেয়েদের যাবতীয় রূপচর্চার কাজ করা হয়।’

কাজও শিখছে মেয়েরা

তাপসী রাবেয়া বললেন, তাঁর বিউটি পারলারের কারণে গ্রামের মেয়েরাও এখন সৌন্দর্য সচেতন হয়ে উঠেছে। শুধু বিয়ের সাজ নয়, নিয়মিত স্কুল-কলেজের মেয়েরা পারলারে আসছে। তিনি বলেন, তাঁর কাজ দেখে উত্সাহী হয়ে গ্রামের কিছু মেয়ে সারা দিন পারলারে এসে পড়ে থাকত। একপর্যায়ে তারা দেখতে দেখতে কাজ শিখে যায়। এদিকে তাঁর পারলারের গল্প যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কাজের চাপও বেড়ে যায়। তখন তিনি এই মেয়েদের পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। তাদের মাসে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেন। সব সময় দুজন মেয়েকে তাঁর সহকারী হিসেবে রাখতে হয়। এই মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর সঙ্গে কাজ করে। ইতিমধ্যে সাতজন তাঁর কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। তাঁদের কারও কারও বিয়ে হয়েছে। কেউ উচ্চতর পড়াশোনা করছেন।

পারলারে গিয়ে সহকারী শ্যামলী আক্তারকে পাওয়া গেল। তিনি স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, তাঁরও ইচ্ছে রয়েছে বিয়ের পরে পরিবেশ পেলে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।

দেখা গেল সকালে চারজন মেয়ে এসে ফেসিয়াল করার জন্য বসে রয়েছে। তারা সবাই পার্শ্ববর্তী মহানগর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে রিয়া খাতুন জানায়, তারা এখন পারলারের নিয়মিত মুখ। তাদের আর পারলার ছাড়া চলে না।

এই পারলার থেকে বিয়ের সাজ করেছিলেন পাকুড়িয়া গ্রামের বৃষ্টি খাতুন। মুঠোফোনে কথা হয় বৃষ্টির সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি নিয়মিত ওই পারলারে যেতেন। তাদের কাজের মান ভালো। গ্রামের ভেতরে হলেও উপজেলা সদরের চেয়ে তাদের কাজ ভালো। তাঁর বিয়ের সাজের সবাই প্রশংসা করেছে।

আসার সময় তাপসী রাবেয়া মজা করেই জানালেন, তিনি তাঁর ব্যাংকের ঋণ শোধ করে দিয়েছেন। তাঁর কিন্তু আর কোনো ধারদেনা নেই।

Save

Save

Save

Save

Save

Save

Save

Save

 

শ্রিম্প ফ্রাইড রাইস রান্না করুন সবচাইতে সহজ রেসিপিতে

সবার ফ্রিজেই সারা বছর খুঁজে পাওয়া যায় ডিম। আর এই ডিম এবং টুকিটাকি কিছু সবজি দিয়ে ফ্রাইড রাইস তৈরি করতে কারোই বেগ পেতে হয় না। এগ ফ্রাইড রাইস মোটামুটি সহজ হলেও শ্রিম্প ফ্রাইড রাইস কিন্তু অনেকেই তৈরি করতে ভয় পান, ভাবেন একটু এদিক ওদিক হলেই রান্না বরবাদ হয়ে যাবে। আসলে কিন্তু শ্রিম্প ফ্রাইড রাইস রান্না করাটা অনেক সহজ আর কম সময়েই হয়ে যায়। অল্প কিছু উপকরণ হাতের কাছে থাকলে আপনিও তৈরি করে ফেলতে পারবেন এই খাবারটি।
উপকরণ
– ২৫০ গ্রাম চিংড়ি, খোসা ও ময়লা ছাড়িয়ে নেওয়া
– দেড় কাপ ভাত
– ২টি বড় ডিম
– আধা কাপ মটরশুঁটি
– ১টি পিঁয়াজ
– লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো স্বাদমতো
– সয়া সস স্বাদমতো
– ৪ টেবিল চামচ তেল
– স্রিরাচা সস
প্রণালী
১) ওভেনে বেক করে নিতে পারেন চিংড়ি। ৩ টেবিল চামচ তেল গরম করে নিন ফ্রাইং প্যানে। এতে এক মিনিট মাঝারি আঁচে সাঁতলে নিন পিঁয়াজ।
২) এরপর এতে রান্না করা ভাতটুকু দিয়ে দিন। ভাতটা দিয়ে একটু আঁচ বাড়িয়ে নিন। চামচ দিয়ে নেড়ে ছড়িয়ে নিন ভাতটুকু। ১-২ মিনিট ভাজুন। দরকার হলে আরও কিছুটা তেল দিন।
৩) একটি বাটিতে ডিম ভেঙ্গে হুইস্ক করে নিন। এবার এটাকে ভাতের মাঝে দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন যাতে পুরো ভাতের সাথে ডিম মিশে যায় ও রান্না হয়ে আসে। দরকার হলে আরও তেল দিতে পারেন।
৪) এরপর বেক হওয়া চিংড়ি এবং মটরশুঁটি দিয়ে দিন ভাতের মাঝে। ভালো করে নেড়েচেড়ে নিন যাতে সব উপকরণ একসাথে মিশে যায়।
৫) লবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো এবং সয়া সস দিন নিজের পছন্দমত। সব উপকরণ মিশে যাবার জন্য নেড়েচেড়ে ফ্রাই করে নিন। মটরশুঁটি রান্না হলে এবং সুন্দর ফ্লেভার উঠলে নামিয়ে নিন।
পরিবেশন করুন ওপরে স্রিরাচা সস দিয়ে। ভালো করে বুঝতে দেখে নিন রেসিপির ভিডিওটি-
টিপস
– চিংড়িটাকে ইচ্ছে করলে ভেজেও নিতে পারেন বেক করার বদলে
– ফ্রিজে রেখে খেতে চাইলে পরের দিন গরম করার সময়ে একটু পানি দিয়ে নিন ওপরে
– রান্নার সময়ে একদম ঝরঝরে ভাত ব্যবহার করুন, নরম বা ভেজা ভাত ব্যবহার করবেন না
– ফ্রাইড রাইসের জন্য নতুন করে ভাত রান্না করলে সেটা ঠাণ্ডা করে তারপর ফ্রাই করুন

 

যেভাবে সস্তা কাপড়ও দামি দেখাবে

হাঁটাচলার পথে অনেকেই ফুটপাথ থেকে জামাকাপড় কিনে থাকেন। এর মূলেও রয়েছে যথেষ্ট কারণ। প্রথমত, শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটি করার সময় নাও থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, রাস্তা থেকে কিনলে দর কষাকষি করা যায়। কিন্তু, অনেকেই সেকথা ফলাও করে জনসমক্ষে বলতে নারাজ। তাই পরনের পোশাকটি ফুটপাথে কেনার কথা আড়ালে রেখে, দামি জায়গা থেকে কেনা হয়েছে বলে দাবি করতে চান অনেকেই। কিন্তু দাবি করলেই তো আর হল না। পোশাক সত্যি সত্যি যেনো দামি দেখায় তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। জেনে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী-

১) রাস্তা থেকে কিনে আনা পোশাকটি নিজের শরীরে মাপ মতো ফিটিংস করিয়ে নিন। তাহলে সেটি পরলে আপনাকে আরও ভালো লাগবে দেখতে।

২) ফুটপাত থেকে কিনে আনা জামাকাপড়ের সেলাই অনেক সময়ই আলগা থাকে। তাই বাড়িতে নিজেই সেলাই করে চাপা দেওয়া যেতে পারে সেই খুঁত।

৩) হয়তো এক রঙের কোনও পোশাক কিনে এনেছেন। এবার তার উপর নিজের পছন্দের রঙিন কোনও কাপড়ের পকেট বসিয়ে নিতে পারেন। অথবে শিল্পীদের দিয়ে তার উপর আঁকিয়ে নিতে পারেন। দেখবেন তাতে একটা আলাদা অভিজাত লুক এসেছে।

৪) পোশাক যে দামেরই কিনুন। তার যথাযথ মেন্টেন্যান্স প্রয়োজন। তাই যেসব পোশাক ড্রাইওয়াশে দেওয়া দরকার সেগুলি বাড়িতে নিজে হাতে না কেচে ড্রাই ক্লিনিকেই পাঠানো উচিত। এতে পোশাক ভালো থাকবে।

৫) কাচা, ধোওয়ার পর অবশ্যই আয়রন করে নিন। তবেই সেটা স্মার্ট দেখাবে।

৬) ফুটপাথের জামাকাপড়ে রাস্তার ধুলো ময়লা পড়ে। তাই তা ব্যবহারের আগে ভালো করে ওয়াশ করে নেওয়া উচিত হাইজিনমুক্ত থাকতে।