Daily Archives: May 1, 2025
প্রাণ জুড়াতে এক গ্লাস আনারসের শরবত
গরমে প্রশান্তি মিলতে এক টুকরো আনারসের জুড়ি নেই। কাসুন্দি বলুন আর বিট লবণের গুড়ায় মাখা আনারসের ভক্ত ছোট বড় সবাই। তবে মজাদার এই ফলটির স্বাদে ভিন্নতার সংযোজনে খাওয়া যেতে পারে শরবত। স্বাদে ভরা ঠাণ্ডা একগ্লাস আনারস শরবত ইফতারিতে প্রাণ জুড়িয়ে দেবে। এক নজরে দেখে নিতে পারেন আনারস শরবতের সহজ রেসিপি।
যা যা লাগবে
আনারস ২০০ গ্রাম, বিট লবণ সামান্য, চিনি, বরফ কুচি, আধা চামচ পুদিনা পাতা।
যেভাবে করবেন
আনারস পরিষ্কার করে কেটে নিন। এবার ব্লেন্ডারে একগ্লাস পানি, আনারস, বিট লবণ, স্বাদমতো চিনি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার তা ছেকে ২০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ব্যাস আনারস শরবত রেডি। পছন্দের শরবত গ্লাসে শরবত ঢেলে বরফ কুচি আর পুদিনা পাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করলেই হল।
ঈদের আগে বসার ঘরের সাজ
উৎসব এলে শুধু নিজেকে নয়, সাজানো চাই ঘরদোরও। সাজানো গোছানো ঘরটি মনকে উৎফুল্ল করতে দারুণ পারদর্শী। বাড়িতে আগত অতিথির চোখেও স্বস্তি জাগায় ঘরের সাজ। কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে সব সময় ঘর সাজিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। তবে উৎসবের এই দিনে ছাড় দেয়া চলে না মোটেও।
ঘরের সাজে কেউ নতুন আসবাব কিনে থাকেন, কেউ পর্দা, কেউবা নতুন কার্পেট কেনেন। কিন্তু আর্থিক সংকট থাকায় তাও আবার অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা পুরনো জিনিস নতুনভাবে বিন্যাস করে ঈদের দিনে বদলে নেন ঘরের সাজ। বাড়তি কোনো খরচ ছাড়া আপনার ঘরের সাজও বদলাতে পারেন সহজে।
ঈদে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলনের সুযোগ আসে। তাদের নিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে গল্প শুরু হতে পারে বসার ঘরে।
প্রথমে ঘরে ঝুলে থাকা ফ্যানের ব্লেডটি পরিষ্কার করে নিন। দেয়াল বেশি ময়লা হলে পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন। ময়লা পড়ে দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো মুছে আবার টাঙিয়ে দিতে পারেন। কার্পেট থাকলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন যতটা সম্ভব। নইলে কড়া রোদে দিয়ে ব্রাশ করে আবার বিছিয়ে দিন। আসবাব রঙ করানো সম্ভব না হলে একটা পাতলা কাপড় একটু কেরোসিন ভিজিয়ে আসবারের ওপর ঘষে নিন। দেখুন আসবাব কেমন ঝকঝকে হয়ে উঠেছে। এবার আসবাবগুলো একটু রদবদল করে সেট করুন, এতে ঘরে নতুনত্ব আসবে।
ঘরকে সুন্দর করে তোলার জন্য অন্যতম উপাদান সুন্দর পর্দা। কিন্তু পর্দা কেনার বাড়তি বাজেট নেই। তাই পুরনো পর্দা ধুয়ে ইস্ত্রি করে টাঙিয়ে দিন। আর যদি বাজেটে কুলায় তাহলে ফেব্রিক পেইন্ট অথবা ব্রাশ প্রিন্ট পর্দায় ফ্যাশন চলছে। এতে ঘরের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এছাড়া এক রঙের নতুন পর্দা টাঙিয়ে ঘরের নতুনত্ব আনতে পারেন। তবে পর্দা সব সময় ঘরের আনুষঙ্গিক দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করলে ভালো লাগে।
ফুল হচ্ছে ঘরের সাজের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম। একমাত্র ফুলের সাজেই আপনার গৃহকোণ ঈদের খুশির জোয়ারে হয়ে উঠবে শিল্প নৈপুণ্যে অনন্য।
ঈদের দিন খাবার দাবারে থাকে স্পেশাল আয়োজন। তাই খাবার টেবিলটিও সাজাতে হবে শৈল্পিকভাবে। খাবার টেবিল সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন শুকনো ফুল। শুকনো স্ট্র ফুল, গোলাপ রাখুন ফুলদানিতে। ফুলদানি রাখুন একটি সুদৃশ্য সিরামিকের থালার ওপর। থালার ওপর ছড়িয়ে রাখা মোমের আঙ্গুরের পাশে উল্টে রাখুন একটি ঝিনুক। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে তাজা গাছের তুলনা হয় না। ঘরে নাটকীয় পরিবর্তন আনতেও তাজা গাছ সেরা। শুধু দরকার পছন্দমতো সাজিয়ে নেয়া।
সেরা শিক্ষক, ভালো বন্ধু তিনি
পড়াশোনা বিষয়টি বোঝার পর থেকে ইচ্ছা ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষক তিনি হয়েছেন, তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এতে কোনো খেদ নেই তাসনীম চৌধুরীর। তাঁর কথা—‘বরং ভালোই হয়েছে। একজন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে তাঁর শৈশব। মনোবিকাশের প্রাথমিক স্তর এটি। এই সময়ে শিশুদের কাছে থাকার সুযোগ পাওয়া গেছে।’
তাসনীম চৌধুরী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার লামা কাগাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি (২০১৬) জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেছেন।
২০০৩ সালে তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খুশহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। যদিও তাঁর কথায়, এই পেশায় বেশির ভাগ আসেন চাকরি করার মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু শিক্ষকতা কোনো চাকরি নয়। সেবা এবং পেশা হিসেবে এটি মহান।
তাসনীম চৌধুরী বলেন, ‘আমি শিশুদের সঙ্গে শিশু হয়ে কাজ করি। তাদের মতো, তাদের সরলতার কাছাকাছি গিয়ে তাদের বন্ধু হলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।’ অনেক শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে। তাই তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ‘খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য’ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে একটি চার্ট তৈরি করেছেন। পুষ্টি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করেন। সমস্যা-সম্ভাবনার জায়গাটুকু বুঝে সেভাবে পরামর্শ দেন। তাতে সুফল পাওয়া যায়। পিছিয়ে পড়া, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেন। পড়ালেখার বাইরে কাজের একটি নমুনা দিয়ে বলেন, তায়রা আক্তার নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী শুধু লবণপানি দিয়ে ভাত খেত। ঝাল খেতে পারত না। এতে সে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিল। তার সঙ্গে মিশে ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছেন। এখন সে সবকিছু খেতে পারে।
কাগাবলা গ্রামের অভিভাবক যমুনা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে এমেলি আক্তার আইএ পাস করেছে। এই মাস্টারনির সহযোগিতা না থাকলে এতদূর পড়া তার সম্ভব হতো না।’
মিলনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সাগর দাস জানিয়েছে, সে ও তার এক বোন পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে ম্যাডামের (তাসনীম চৌধুরী) কারণে। ম্যাডাম তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। সব বিষয়ে উৎসাহ দিতেন।
বাক্প্রতিবন্ধী পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিজওয়ানা আক্তারসহ অনেক ছাত্রছাত্রী আছে। যারা আলাদা মনোযোগ দাবি করে। তাদের ‘কেস স্টাডি’ তৈরি করেছেন। যা অনুসরণ করে এই শিশুদের প্রতি যত্ন ও শিক্ষা দেওয়া হয়। এর বাইরেও তিনি গান গেয়ে থাকেন, ছবি আঁকেন, প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করেন। সহজলভ্য জিনিস দিয়ে শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে পাঠদান করেন। অর্ণবে অনন্তকাল নামে তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলে দেয়ালিকা প্রকাশ করেন।
দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা তিনি। এদের সামলানোর দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর মা বেগম নীহারিকা। মায়ের সহযোগিতা না থাকলে তাঁর পক্ষে স্কুল ও শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নশীল হওয়া সম্ভব হতো না। কাজের ক্ষেত্রে স্বামী শেখ বুরহান উদ্দিনেরও সমর্থন আছে। তিনিও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছে। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তাঁর কিছু চিন্তাভাবনাও আছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও কার্যকর ও মানসম্মত করতে মনোবিজ্ঞানী দিয়ে শিক্ষকদের কাউন্সিলিং করা, পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতা-মানবিকতা ও সম্প্রীতিবিষয়ক উপভোগ্য রচনা সংযুক্ত করা, শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়াতে শিশু একাডেমির শিশু পত্রিকা প্রতি বিদ্যালয়ে পাঠানো, পাঠাগার গড়ে তোলা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, খাদ্যপুষ্টিবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর মনিটরিং করা, শিক্ষার্থীদের একই পোশাক পরা ইত্যাদির ওপর জোর দিতে চান তিনি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মারুফ আহমদ বলেন, ‘উপজেলার একটি প্রত্যন্ত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছিল। জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের নির্বাচন সঠিক ছিল। তাঁর অনেক এক্সট্রা কারিকুলাম আছে। তিনি গান পরিবেশন, ছবি আঁকা ও লেখালেখি করেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভাবেন। তাঁর এ সাফল্যে আমরা খুশি। তিনি জেলায় একটি মডেল। এতে অন্যরাও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবেন।’
৫শ নারীর ভাগ্য বদলানো শ্রেষ্ঠ জয়িতার গল্প
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ প্রবাদ বাক্যটি নিজের জীবনে যেমন বাস্তবায়ন করেছেন তেমনি অন্যদের ভাগ্যের চাকাও বদলানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের সফল মেয়ে আয়েশা।
তিনি মৃত আব্দুল হালিমের মেয়ে। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তিনি আজ সফল উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়েছেন। তার সফলতায় নকশীতে লক্ষ্মীপুর জেলা এখন দেশের অন্যতম ব্যান্ডিং। শুধু ব্যান্ডিংই নয়, সেইসঙ্গে তিনি সৃষ্টি করেছেন ৫শ নারীর কর্মসংস্থান। সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে শুরু করেন ছোট একটি বুটিক কারখানা।
বর্তমানে রায়পুর উপজেলার চরবংশী এলাকার বিভিন্ন বাড়ি, চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার কাটাখালী ও সদর উপজেলার কামান খোলা এলাকার বাবুর বাড়িতে মিলে রয়েছে শতাধিক বুটিক ফ্রেম। এ সব ফ্রেম ভাড়া ঘরে ৩শ নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন বুটিক কারখানা। নিজ গ্রামেও এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরো প্রায় ২শ নারী। এসব নারী সদস্যদের হাতে কাজ করা বুটিক শাড়ি যাচ্ছে ঢাকা শহরের বসুন্ধরা মার্কেট, নিউ-মার্কেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কামানখোলার বাবুর বাড়িতে ঘিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে চলছে শাড়িতে বুটিকের কাজ। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা ও লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা বুটিকের কাজ করে বাড়তি টাকা রোজগার করছে। আয়েশার নিজের এ উদ্যোগে ৫ শতাধিক নারী সাবলম্বী হতে চলছে।
সোমাবর কথা হয় ওই কারখানার সুপারভাইজার রোজিনার সঙ্গে। তিনি জানান, গ্রামীণ জনপদ ও ঘরোয়া পরিবেশে এসব নারীরা শাড়ি বুনিয়ে সাবলম্বী হতে চলছে। একটি শাড়িতে বুটিকের কাজ করতে ৫ জন নারী দরকার হয়। কাজ শেষ করতে তাদের এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। একটি শাড়ি বুনতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। তবে বর্তমান বাজারে মেনট্রেসের দাম বৃদ্ধি পাওয়া আগের তুলনায় লাভ কম হচ্ছে। এখানকার কাজ করা এসব শাড়ি ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে দরিদ্র নারীদের অন্ন যোগানোর পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
দুপুর গড়িয়ে ঠিক সাড়ে ৩টা বাজে। পরিচয় মিলে বুটিক কারখানার মূল উদ্যোক্তা আয়েশা বেগমের সঙ্গে। তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি তুলে ধরেন তার জীবন কাহিনি।
আয়েশা বলেন, ‘১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের আব্দুল হালিমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের জন্ম নেয়া আয়েশা ৭ বোনের মধ্যে প্রথম। অভাবে সংসারে একের পর এক বোন হলে বাবা-মা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে ঠিক তখনই তার বাল্যবিয়ে হয়ে যায় একই এলাকার কৃষক মোস্তফার সঙ্গে। বিয়ের কারণেই তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
এতে আয়েশা আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে। নিজের শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও শিক্ষিত হতে না পেরে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন বুনেন। কিন্তু দিনমজুরি স্বামীর উপার্জন দিয়ে সংসার ও ছেলে লেখাপড়া চালানো প্রায় অসম্ভ হয়ে পড়ে। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য সে নিজেই এলাকার একটি বুটিকের দোকানে মাসে ১৫শ টাকা বেতনে চাকরি নেয়। এর মাঝে আয়েশা তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের জন্য ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের’ মাধ্যমিক শাখার ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।
এর মাঝে কিছু কাজ শেখা হলো আয়েশার। পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে আয়েশা নিজের ঘরেই একটি ছোট বুটিকের কারখানা গড়ে তুলেন। এ আয় দিয়ে ছেলের লেখাপড়া ও সংসার চলতে শুরু হয়। এতেই সংসারের কিছুটা অভাব দূর হয়। এভাবেই ৬ বছর পার হলে আয়েশা ‘বাংলাদেশ উম্মক্ত বিশ্ববিদ্যাল’ থেকে বিএ পাসও করেন। পরে সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের ছোট বুটিকের আয় দিয়ে ১৩টি ফ্রেম দিয়ে গ্রামে গড়ে তুলেন একটি বড় কারখানা। ঘুরে যায় তার জীবনের গতি।
ভাবতে থাকে সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের কথা। পরে এসব নারীসহ আশপাশের গ্রামের সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের নিয়ে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার কাটাখালী এবং চলতি বছরের ১ জুলাই সদর উপজেলার কামানখোলা এলাকার বাবুর বাড়িতে তিনটি কারখানা গড়ে তোলেন। যার মধ্যে শতাধিক ফ্রেমে কাজ করছে ৩ শতাধিক নারী এবং চরবংশী নিজ গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে এই বুটিকের কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছে আরো ২শ নারী।
আয়েশা ২০১৪ সালে জেলায় শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন। ওই বছরই চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০টি উপজেলার ২৫০ নারীকে পিছনে ফেলে অর্থনীতিতে সাফল্য জনক ভূমিকার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা লাভ করে আয়েশা নির্বাচিত হন শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে।
আয়েশা বলেন, ‘আমার এ সম্মাননা সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের জন্য উৎসর্গ করেছি। তবে আমার বুটিক কারখানায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নারীর কর্মসংস্থান করাসহ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত। শিল্পকেন্দ্রিক সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণে ভাগ্য বদল হতে পারে এ অঞ্চলের সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের। সরকারি বা কোনো দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরো বহু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশী প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।’