banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

ইসলামি পটভূমিতে বিয়ে : হাদিসের নির্দেশনা

হাদিসের নির্দেশনা
বিয়ের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে হাদিস শরীফে আরও সার্বজনীন ও বিস্তারিত নির্দেশনা এসেছে। নিম্নে কতিপয় নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে নত করে এবং লজ্জাস্থানকে অধিক হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। (বুখারি, মুসলিম)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পূত পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চায় সে যেন স্বাধীন নারীকে বিয়ে করে। (ইবনে মাজাহ)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি বিয়ে সম্পাদন করল সে নিশ্চয় অর্ধেক দীন পূর্ণ করল। অতঃপর বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে যেন সে সতর্ক থাকে। (তিরমিযি)

বিয়ের ক্ষেত্রে কাম্যবস্ত্ত
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চার কারণে কোন নারীকে বিয়ে করা হয়- তার সম্পদের কারণে, তার বংশমর্যাদার কারণে, তার সৌন্দর্যের কারণে এবং তার ধর্মানুরাগের কারণে। অতএব, তুমি ধর্মপরায়ণ নারীকে বিয়ে করে সফলকাম হও। (বুখারি, মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি কোন নারীকে তার ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রের কারণে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হও, তবে তাকে বিয়ে করে নাও। (তিরমিযি)

বিয়ের পূর্বে বর কনে পরস্পরকে দেখা
জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হয় সে যেন তাকে নারীকে দেখে নেয়। (আবু দাউদ)

মুগীরা ইবনে শুবা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি একজন নারীকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তবে তাকে দেখে নাও। কেননা, খুব সম্ভব এতে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী, তিরমিযি)

যদিও ইসলাম বিপরীত লিঙ্গের সাথে অবাধ মেলামেশার অনুমতি দেয় না, তা সেই পুরুষ ও নারীকে পরস্পর দেখে নেয়ার অনুমতি দেয় যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। যদি উভয়ের কেউ অপরজনকে অপছন্দ করে তবে তা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে উভয়ের সমান স্বাধীনতা রয়েছে।

বিয়ের অনুমতি
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পূর্ব বিবাহিতা রমণীর বিয়ে ততক্ষণ হতে পারে না, যতক্ষণ সে অনুমতি দেয়। আর না কোন কুমারী নারীকে বিয়ে দেয়া যেতে পারে যতক্ষণ না তার অনুমতি চাওয়া হয়। যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, কিভাবে তার অনুমতি চাওয়া হবে? তখন তিনি উত্তরে বললেন, যদি সে চুপ থাকে, তবে তা হল তার অনুমতি। (বুখারি, মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন বালেগা মেয়েকে তার বিয়ের ব্যাপারে অনুমতি চাইতে হবে। যদি সে চুপ থাকে তবে এটাই তার অনুমতি বলে বিবেচিত হবে। যদি সে অস্বীকার করে তবে বিয়ের ব্যাপারে তার উপর কোন জোর খাটানো যাবে না। (আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযি)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, একটি মেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে অভিযোগ করল যে, তার পিতা তাকে এমন লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে যাকে সে পছন্দ করে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে অক্ষুণ্ণ রাখার কিংবা ভেঙে দেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলেন। (আবু দাউদ)

সকলের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, প্রাক ইসলামি যুগে নারীদেরকে চতুষ্পদ জন্তু ও ক্রীত দাস-দাসীর মত মনে করা হত এবং সমাজে তাদেরকে কোন মর্যাদা দেওয়া হত না। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এখনো এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বিশেষত, ভারতে। ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে এবং তাকে তার পছন্দমত বরকে বিয়ে করার অধিকার প্রদান করেছে। আর যে ব্যক্তি তার স্বামী হিসেবে তার প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তার কাছ থেকে তালাক চেয়ে নেয়ার (খোলার) অধিকারও তাকে প্রদান করেছে।

নারীদের ইচ্ছার স্বাধীনতা
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, বুরাইদা (রা.) (&এক দাসী)- এর কিছু পারিবারিক সমস্যা ছিল এবং তাকে তার স্বামী থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যদি তুমি তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাও, তবে কি এমন ক্ষতি হবে? বুরাইদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আদেশ করছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, না, আমি কেবল সুপারিশ করছি।’ তা শুনে বুরাইদা (রা.) বললেন, তাকে আমার প্রয়োজন নেই। (বুখারি)

এ ঘটনাটি দুটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথমত, সাহাবায়ে কেরাম- পুরুষ হোক কিংবা নারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইচ্ছাকে নিজেদের ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দিতেন। বুরাইদা তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান নি, তারপরও জিজ্ঞাসা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেমনটি করতে আদেশ দিচ্ছেন কিনা। যদি তিনি হ্যাঁ বলতেন তবে বুরাইদা তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতেন। দ্বিতীয়ত, ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার রয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, বুরাইদা (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের একজন দাসী। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম একজন দাসীকেও এই অধিকার প্রদান করেছে চৌদ্দশ বছরেরও অধিক কাল পূর্বে। বিশ্বের অন্যান্য সমাজ নারীদেরকে এই অধিকার প্রদান করেছে কেবল কয়েক দশক পূর্বে। অধিকন্তু, পৃথিবীতে এখনও অনেক সমাজ আছে যারা নারীদেরকে এখনো এই অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

সাক্ষী ব্যতিত বিয়ে
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা ব্যভিচারী যারা স্বাক্ষী ব্যতিত বিয়ে সম্পাদন করে। (তিরমিযি)

ইসলামে বিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে সম্পাদন করা যায় না। তা জনসাধারণের সামনে নিদেনপক্ষে দুজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে সম্পাদন করতে হয়। যারা বরের প্রস্তাব ও স্ত্রীর সম্মতির সাক্ষ্য কাজীর কাছে প্রদান করবে এবং তার সত্যায়ন করবে। কোরান মাজিদ বলে:

আর তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দুজন সাক্ষী রাখ। অতঃপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন নারী যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। (আল বাকারা, ২:২৮২)

ফুকাহায়ে কেরামের মতে সাক্ষী অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মুসলিম হতে হবে। ইসলাম এভাবে সকল ব্যক্তিগত দুর্ভিসন্ধি ও গোপন সম্পর্কের দ্বারকে রুদ্ধ করে দেয় এবং বিয়েকে খুব সুস্পষ্ট ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে।

বিয়ের ঘোষণা
মুহাম্মদ ইবনে হাতিব বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বৈধ ও অবৈধ বিয়ের মধ্যে পার্থক্য হল ঘোষণা প্রদান ও দফ পেটানো। (তিরমিযি, আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী)

কোরান মাজিদ বলে যে, পবিত্র রমণীরাই বিয়ের জন্য স্বীকৃত হয়। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,

আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দিবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।’ (৫:৫)

অতএব, বিয়ের ঘোষণা জনসমক্ষেই হতে হবে। ইহা সমাজকে অবৈধ ও গোপন সম্পর্ক থেকে অধিক রক্ষা করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর স্বার্থেরও নিরাপত্তা বিধান করে।

বিয়েতে আনন্দ উৎসব
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, এক নারী এক আনসারী পুরুষের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তার সাথে কি কোন আতিথ্য পাঠানো হয়েছিল? আনসাররা আতিথ্য খুব পছন্দ করে থাকে। (বুখারি)

আয়েশার (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বিয়ে সম্পর্কে বলেন, এই বিয়ের ঘোষণা প্রদান কর এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এজন্যে দফ পেটাও। (তিরমিযি)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তার এক আত্মীয়া নারীকে বিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি এমন কাউকে তার সাথে পাঠিয়েছে যে গাইতে পারে? যখন তিনি না বোধক উত্তর দিলেন, তখন তিনি বললেন, খুব ভাল হত যদি তোমরা তার সাথে পাঠাতে যারা গাইতে পারে-তোমাদের কাছে আমরা এসেছি, তোমাদের কাছে আমরা এসেছি। অতএব, আমাদেরকে স্বাগতম এবং তোমাদেরকে স্বাগতম। (ইবনে মাজাহ)

ইসলাম সব ধরনের বৈধ চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলার অনুমতি প্রদান করে। বিয়ের উৎসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দ ও খুশির আমেজ নিয়ে আসে। পাশাপাশি তা বিয়ের ঘোষণারও কাজ দেয়। যার ফলে তা অধিক প্রকাশ্য ও টেকসই হয়।

বিয়ের খুতবা
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সেসব বিয়ে যাতে তাশাহহুদ’ (আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতের সাক্ষ্য প্রদান) পাঠ হয় না তা কর্তিত হাতের মত। (তিরমিযি)

আবু হুরাইরা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মর্যাদাপূর্ণ কাজ যা আল্লাহর প্রশংসা সহকারে সম্পাদিত হয় না তা (আল্লাহর দয়া ও বরকত থেকে) কর্তিত হয়। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

বিয়ের খুতবা হল ইসলামের এক বিশেষ ধর্মীয় রীতি যার মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদিত হয়। বর কনে উভয়ের পক্ষ থেকে সাক্ষী নেওয়া হয়। তারা প্রথমে কনের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এবং তাকে বলা হয় যে, তাকে অমুকের পুত্র অমুকের সাথে এই পরিমাণ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসা করা হয়, সে এই বিয়েতে রাজী আছে কিনা? মেয়ের অভিভাবক এই প্রস্তাবে মেয়ের সম্মতি কিংবা অসম্মতি শুনার জন্যে অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকে। যদি সে সম্মতি প্রদান করে তবে তারা বরের প্রতি মনোযোগী হয় এবং তাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। যখন সে তার সম্মতি প্রদান করে তখন তারা কাজীর কাছে যায় এবং বর কনে উভয়ের সম্মতির কথা জানায়। অতঃপর কাজী সাহেব উচ্চ স্বরে বিয়ের খুতবা পাঠ করেন। খুতবাটি স্বামী ও স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত ও হাদিসের সমন্বয়ে প্রদান করা হয়। এতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি বর কনের জন্যে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম এবং সমাজে বিয়ের ঘোষণার মাধ্যম হিসেবেও কাজ দেয়।

বিয়ের মোহরানা
ওকবা ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ও ন্যায্য শর্ত (মোহরানা) হল যা তোমরা পূরণ করতে সক্ষম হও। যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করেছ। (বুখারি, মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেগার’ বিয়ে থেকে বারণ করেছেন। শেগার’ বিয়ে হল, কোন ব্যক্তি তার কন্যাকে ছেলের পিতার সাথে এই শর্তে বিয়ে দেবে যে, সেও (বরের পিতা) পরবর্তীতে তার কন্যাকে তার (কনের পিতার) ছেলের সাথে বিয়ে দেবে এবং তাদের মধ্যে বিয়েতে কোন মোহরানা থাকবে না। (বুখারি, মুসলিম)

মোহরানা’ হল কোন সামগ্রী কিংবা টাকা পয়সা যা বিয়ের সময় স্বামী স্ত্রীকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এটি বিয়ের অন্যতম পূর্বশর্ত। কোরান মাজিদ বলে, হে নবি, আমি তোমার জন্যে তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ। (আল-আহযাব, ৩৩:৫০)

কনে যদি উক্ত মোহরানায় স্বীকৃত না হয় তবে বিয়ে সিদ্ধ হয় না। মোহরানার পরিমাণ সম্পর্কে কোরান ও হাদিসে কোন বাঁধা ধরা নিয়ম বর্ণিত হয় নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা অনুসারে স্বামী বিয়ের সময় মোহরানা হিসেবে একটি অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। অনেক সমাজে, উদাহরণস্বরূপ হিন্দু সমাজে কন্যার পিতা বরকে অর্থ প্রদান করতে হয়, কেননা সে তার মেয়ের বিয়ে করেছে । ইসলামি আইন নারীদের অনুকুলে। একজন পুরুষকে গ্রহণযোগ্য পরিমাণ অর্থ তার স্ত্রীকে প্রদান করতে হয়।

অলীমা বা বিয়ে ভোজ
আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ (রা.) এর উপর একটি হলুদ দাগ লক্ষ করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কি? সে উত্তর করল, আমি পাঁচ দেরহাম পরিমাণ স্বর্ণের মোহরানার বিনিময়ে এক নারীকে বিয়ে করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অলীমার ভোজের ব্যবস্থা কর। যদিও তা একটি ছাগলের মাধ্যমে হয়। (বুখারি, মুসলিম)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) আরও বর্ণনা করেন, যখন জায়নাব বিনতে জাহাশ (রা.)কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর গৃহে আনা হয় তখন তিনি অলীমার ভোজের আয়োজন করেন। তাতে লোকেরা পরিতৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত আহার করে।

অলীমা সেই ভোজের নাম যা বিয়ের পর বরের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়। এটি ইসলামি বিয়ের একটি প্রশংসনীয় আমল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতও বটে। অলীমার ভোজ বিয়ের উৎসবকে আরও শ্রীবৃদ্ধি করে এবং বিয়ের প্রচারে সহায়ক হয়।

অলীমার ক্ষেত্রে কিছু কাঙ্খিত নির্দেশনা
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিকৃষ্ট প্রকারের অলীমার ভোজন হল তা যাতে ধনীরা আমন্ত্রিত হয় এবং গরীবরা উপেক্ষিত থাকে। যে ব্যক্তি অলীমার ভোজনে (কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিত) যোগদান করা থেকে বিরত থাকে সে আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়। (বুখারি, মুসলিম)

এই হাদিস আমাদেরকে দুটি মৌলিক বিষয় শিক্ষা দেয়। প্রথমত, ধনী গরীব উভয় শ্রেণীকেই অলীমায় দাওয়াত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দাওয়াত গ্রহণ করা ও বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা বাঞ্চনীয়।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

 

যেসব সিনেমা দেখে হলেই প্রাণ হারালো দর্শক

সিনেমা মানুষের বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের জেনর এখন সিনেমায় চোখে পড়ে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘হরর সিনেমা’গুলো। শুরুতে হরর সিনেমাগুলো যেমন ছিল, বর্তমানে আর সেই চেহেরায় নেই। সিনেমায় টেকনোলজির উৎকর্ষতার ফলে যারা এই ধরনের সিনেমা নির্মাণ করেন তারা সবসময়ই তার সিনেমাটি একেবারে ন্যাচারাল করে উপস্থাপন করতে চান। মানে ভিএফক্সসহ অত্যাধুনিক কৌশল অবলম্বন করে তিনি সিনেমাটি একেবারে বাস্তব রূপ দেন। যা পর্দায় দেখে দুর্বল চিত্তের মানুষেরা সেইসব দৃশ্যগুলো মানসিকভাবে নিতে পারেন না। যার ফলে অনেক সময় ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সম্প্রতি তেমনি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল ভারতের তামিলনাড়ুতে।

যারা ভূতের সিনেমা দেখতে ভালবাসেন তারা একেকটি নতুন হরর সিনেমার জন্য তুমুল অপেক্ষায় থাকেন। সদ্য মুক্তি পাওয়া আলোচতি সিনেমা ‘কনজিউরিং-২’ তেমন একটি সিনেমা। জেমস ওয়ান পরিচালিত মার্কিন সুপার ন্যাচারাল হরর ফিল্ম গোটা দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। আর এই সিনেমা দেখেই প্রেক্ষাগৃহে বসেই মৃত্যু হল তামিলনাড়ুর এক দর্শকের। যে বিষয়টি গোটা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে।

এমন ঘটনার পর প্রশ্ন আসছে, তাহলে আগেও কোনো সুপার ন্যাচারাল সিনেমা দেখে পৃথিবীতে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে? অতীত ঘেটে এসব তথ্য বের করেছে হোয়াটকালচার.কম। দুর্বল চিত্তের যারা আছেন তাদের হয়তো ‘হরর সিনেমা’ প্রবল চাপ তৈরি করতে পারে। যার ফলে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এমন সিনেমা দেখেও অনেকে মারা গেছেন যা আসলে হরর সিনেমা নয়। পুরোদমে কমেডি সিনেমা দেখে হাসতে হাসতেও মারা গেছেন অনেকে। প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শক সিনেমার ক্লাইমেক্স-এর সঙ্গে বুঁদ হয়ে প্রাণ হারানো এমন কিছু সিনেমা ও সেইসব ঘটনা জেনে নিতে পারেন এখানে:

‘এ ফিশ কলড্ ওয়ান্ডা’ ছবির একটি দৃশ্য…

দর্শকের মৃত্যুর কারণ কমেডি সিনেমা ‘এ ফিশ কলড্ ওয়ান্ডা’:
‘এ ফিশ কলড ওয়ান্ডা’ সিনেমাটির ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে যে, কমেডি সিনেমা হিসেবে সর্বকালের সেরা সিনেমা এটি। সুপার ন্যাচারাল কোনো ব্যাপারই আসলে ছবিটিতে নেই। অথচ ভরপুর এই হাসির ছবিটি দেখেও মারা গেছেন একজন দর্শক।

১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি প্রথমবার ডেনমার্কে মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। আর তখনই একজন ডেনিশ অডিওলজিস্ট সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যান। কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক, এই ছবিটি এতোটাই কমেডি ছিল যে হাসতে হাসতে সিনেমা হলেই প্রাণ গেল সেই ডেনিশ ব্যক্তিটির। যার নাম ছিল অলে বেনতেজ।

‘অ্যাবাটার’ দেখে অধিক উত্তেজনায় এক তাইওয়ান দর্শকের মৃত্যু:
এটা বলা অতুক্তি হবে না যে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন ফেলা দেয়া সিনেমার নাম ‘অ্যাবাটার’। বিখ্যাত নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের এই ছবিটি দেখতে অপেক্ষায় থাকেনি এরকম সিনেমা দর্শক পৃথিবীতে কী ছিল আদৌ?

২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি যখন তাইওয়ানের সিনেমা হলে মুক্তি পায় তখন ছবিটির থ্রিডি ভার্সন দেখতে জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে সব বয়সী দর্শকের মত হাজির ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী এক দর্শক। ছবিটিতে স্পেশাল ইফেক্ট-এর ব্যবহার দেখে তিনি এতোটায় আপ্লুত ছিলেন যে অধিক উত্তেজনায় প্রেক্ষাগৃহে বসেই স্ট্রোক করে বসেন। দ্রুত বেগে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ছবি দেখে অতি উত্তেজনার কথায় বলেন। শেষ পর্যন্ত ১১দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মারা যান তিনি।

‘প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’-এ ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ছবি দেখে হলেই কুপোকাত এক নারী:
বিখ্যাত নির্মাতা মেল গিবসন। তার সবচেয়ে আলোচিত সিনেমাগুলোর একটি ‘প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’। না এটা কোনো ভৌতিক গল্পের ছবি নয়, কিন্তু তারপরও ছবিটি দেখে হলে বসেই মারা যান এক বৃদ্ধ নারী। কারণ ছবিতে যে পরিমাণ নিষ্ঠুরতা মেল গিবসন দেখিয়েছেন তা সহ্য করতে পারেননি ওই।

২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির শেষ অংশে যখন অভিনেতা জিম ক্যাভিজেলকে নিষ্ঠুরতমভাবে ক্রুশে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তখন সেই বর্বরতম দৃশ্যটি পর্দার সামনে বসে মেনে নিতে পারেননি ৫৬ বছর বয়সী পেগি স্কট নামের এক নারী। তার মৃত্যুর পর ব্যাপক সমালোচনাও শুনতে হয়েছিল নির্মাতা মেল গিবসনকে। কারণ ওই নারী বয়স হলেও তিনি ছিলেন পুরোপুরি সুস্থ একজন মানুষ। কারণ পেগির মৃত্যুর পর চিকিৎসকরাও তেমনটিই জানিয়েছিলেন। সবাই সেসময় মেল গিবসনকে ওই নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করছিলেন। কেননা ছবিতে তখন কোনো ধরনের স্পেশাল ইফেক্টও ব্যবহার করেননি নির্মাতা। কিন্তু তারপরেও নির্মমভাবে এমন নিষ্ঠুরতা দেখানোকে অপরাধ হিসেবেও বলা হয়েছিল।

এছাড়া এই ছবির পোস্টার দেখেও একজন ব্রাজিলিয়ানের হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাওয়ার কথা শোনা গেছে।

‘টুইলাইট: একলিপস’ দেখে এক মদ্যপের মৃত্যু:
না। অন্য সিনেমার মত ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ও রবার্ট পেটিসন অভিনীত ‘টুইলাইট: একলিপস’-এর কোনো নির্মম দৃশ্য দেখে কেউ মারা যাননি। তবে এই সিনেমাটি দেখতে দেখতেই সিনেমা হলে বসেই মারা গেছেন এক মদ্যপ। যুক্তরাজ্যে যখন সিনেমাটি চলছিল তখন সন্ধ্যার শো’তে জনি ওয়াকার নামের এক মদ্যপ সিনেমাটি দেখতে বসেন। তার হাতে তখন ছিল একটি মদের বোতল। ছবি দেখতে দেখতেই ওই প্রেক্ষাগৃহেই ঘুমিয়ে যান তিনি। এই ঘুম তার আর ভাঙেনি। পরবর্তীতে শোয়ের আগে যখন পরিচ্ছন্নকর্মীরা থিয়েটার পরিস্কারের জন্য আসেন, তখন ওই সিনেমা দর্শককে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত মদ্যপান’কেই দায়ী করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ওই লোকের মৃত্যুর ব্যাপারটি জড়িয়ে যায় ‘‘টুইলাইট: একলিপস’-এর সাথে।

‘ব্ল্যাক সওয়ান’ প্রদর্শনকালে উচ্চস্বরে পপকর্ন খাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক দর্শকের মৃত্যু:  
বিখ্যাত নির্মাতা ডেরেন আরনোফস্কি’র জনপ্রিয় সিনেমা ‘ব্ল্যাক সওয়ান’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। তার ঠিক এক বছর পর ছবিটি প্রদর্শীত হয় লাটভিয়ায়। ছুটির দিনের এক শো’তে মাল্টিপ্লেক্সে বসে সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন ছবিটি। কিন্তু একজন দর্শকের উচ্চশব্দে পপকর্ন খাওয়ার বিষয়টি যেন একটু পীড়া দিচ্ছিল লাটভিয়া নাগরিককে। কয়েকবার বলার পরও ওই লোকটি উচ্চ শব্দে পপকর্ন খেতে থাকলে ধপাস করে সিনেমা হলের মধ্যে নিজের পিস্তল দিয়ে পাশের আরেক দর্শক গুলি বরে বসেন। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই পপকর্ন খাওয়া দর্শকের। এটা জোকসের মতো শোনালেও সত্যিই সে সময় বিষয়টি খুব আলোচিতও হয়েছিল।

এছাড়া ভারতীয় কমেডি সিনেমা ‘গ্র্যান্ড মাস্তি’ দেখে হাসতে হাসতে মুঙ্গেশ ভোগল নামের এক ব্যক্তি, এবং হরর সিনেমা দেখে ভয়ে একজন ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যু হওয়ার কথা জানা গেছে।

Save

 

যারা সেহরি খায় তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

সিয়াম পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত। তাই আমাদের সবার উচিত নিদৃষ্ট সময় হওয়ার পূর্বে সেহরি খেয়ে নেয়া। সেহরি খাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
تسحروا، فإن في السحور بركة
অর্থ : ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে’। (বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম)

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সেহরি না খেয়ে সিয়াম পালন করলে যখন সিয়াম আদায় হবে। তবে সেহরি খাবেন কেন?

ক. সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

খ. ক্ষুধা-পিপাসা মোকাবিলা করার জন্য।

গ. সেহরি খেলে সিয়াম পালনে কষ্ট কম হয় ও সিয়াম পালন সহজ হয়।

ঘ. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধাচরণ করা। কারণ তারা সিয়াম পালন করতে সেহরি খায় না। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
فصل ما بين صيامنا وصيام أهل الكتاب أكلة السحور
অর্থ : ‘আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের সিয়ামের মাঝে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া’। (বর্ণনায় : মুসলিম)

ঙ. সেহরির মাধ্যমে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

চ. ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা নিশ্চিত হয়।

তাই সেহরি খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে সেহরির খাওয়া হালকা হওয়া ভালো। এমন বেশি খাওয়া উচিত নয় যাতে দিনের বেলা কাজকর্মে অলসতা দেখা দেয়। যে কোনো হালাল খাবার সেহরিতে গ্রহণ করা যায়। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
نعم سحور المؤمن التمر
অর্থ : ‘মোমিনের উত্তম সেহরি হল খেজুর’। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)

তিনি আরো বলেন:
السحور أكلة بركة فلا تدعوه، ولو أن بجرع أحدكم جرعة من ماء، فإن الله وملائكته يصلون على المتسحرين

অর্থ : ‘সেহরি হল একটি বরকতময় খাদ্য। তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশ্‌তাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন’। (বর্ণনায় : আহমদ)

 

সফল ব্যবসার শুরু ঘর থেকেই: ৫ কৌশলে

গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, ডিজনি এবং হওলেট প্যাকার্ড আজকের বিশ্বের প্রথম সারির কোম্পানি। আপনি কি জানেন এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে মিল কোথায়? মাল্টি বিলিয়ন ডলার কর্পোরেশন হওয়ার পাশাপাশি আরেকটি মজার মিল হল, এই ছয়টি কোম্পানির প্রত্যেকটির যাত্রাই শুরু হয়েছিল প্রতিষ্ঠাতার গ্যারেজে!
অবাক হচ্ছেন? এই প্রতিষ্ঠানগুলোই আজকের উদাহরণ, যা বলছে, ব্যবসা ঘর থেকে শুরু হতে পারে কিন্তু সেই ব্যবসাই একসময় চলে যেতে পারে নেতৃত্বের পর্যায়ে। বরং ঘর থেকে শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ মূলধন কম লাগে!
আপনি যদি পরিশ্রমী হন এবং লক্ষ্যে অটল থাকেন তাহলে শুরুটা ঘরেই হতে পারে। একটি স্থায়ী অফিস নেওয়ার আগ-পর্যন্ত এখান থেকেই হতে পারে সব কাজ। আনা জনসন তার গবেষণার ফলাফলে বলছেন, এই পাঁচটি কৌশল মেনে চললে ব্যবসার শুরু যেখানেই হোক, সফল আপনি হবেনই। আনা ওয়াশিংটনের অলিম্পিয়ার একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার, গবেষক, বিজনেস কলসাল্ট্যান্ট।
১। ব্যবসায়িক ভিত্তি মজবুত করুন
আপনার ব্যবসার শুরু হয়ত খুবই স্বল্প পরিসরে। কিন্তু এখনই এর ভিত্তি মজবুত করুন। একটি প্রতিষ্ঠান শুরুর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়মগুলো সম্পর্কে জানুন, নিয়মমত আপনার কোম্পানিটি নিবন্ধন করান। অনেক সময় দেখা যায়, আপনি একটি নামে কোম্পানি শুরু করেছেন, অনেক দিন পর যখন নামটি নিবন্ধন করতে গেছেন তখন দেখলেন সেই নামে আরেকটি কোম্পানি আগেই নিবন্ধিত হয়ে আছে! হয়ত অন্য এলাকায় বলে আপনি জানতেন না বিষয়টি। অনেক সময় আপনার কোম্পানিকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা থেকেও এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শুরুতেই ভিত পাকা করুন, সকল দিক থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানকে আইনসঙ্গত করুন।
২। অফিসের সময় নির্দিষ্ট করুন
আপনার নির্দিষ্ট একটি অফিস নেই। কিন্তু তাই বলে কি অফিসের সময় বলে কিছু থাকবে না? আপনি যদি ব্যবসায় দ্রুত সফলতা পেতে চান তাহলে আপনাকে অনেক বেশী ফরমাল হতে হবে। বাসা বা গ্যারেজ যেখানেই হোক শুরু প্রতিষ্ঠানের নিয়ম আরোপ করা শুরু করুন। আপনি হয়ত অল্প কয়েকজন লোক নিয়োগ করেছেন মাত্র। তবু তাদেরকেই অফিসের সময় বেঁধে দিন। শুরু থেকেই সিরিয়াস হতে হবে আপনাকে। আপনার মনে হতে পারে, শুরুর দিকে এত নিয়ম-কানুনের কোন মানে নেই। কিন্তু ব্যবসায়িক বিশ্ব বলে, অর্জন আসে নিয়মের পথে। তাই, নিয়মের বেলায় কোন ছাড় দেওয়া যাবে না।
৩। পর্যাপ্ত জায়গা বের করুন
কাজের জন্য জায়গা খুবই জরুরি। আপনার একটি দরকারি ফাইল হারিয়ে যাওয়া আপনার প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড় বিপত্তিতে ফেলতে পারে। তাই সব জিনিস গুছিয়ে রাখা জরুরি। আবার একই সাথে জায়গার স্বল্পতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। কারণ নির্দিষ্ট জায়গা না থাকলে আসলেই কাজের সমস্যা হয়। এজন্যই অফিসে প্রত্যেক কর্মীকে আলাদা ডেস্ক দেওয়া হয়। কাজের উপর ভিত্তি করে এই জায়গার প্রয়োজনীয়তার পার্থক্য হতে পারে।
ঘরে আলাদা স্পেস বের করা খুবই সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাঁজ করে রাখা যায় এমন চেয়ার টেবিল ব্যবহার করতে পারেন। একই আসবাব কিন্তু ব্যবহার বিভিন্ন এমন ডিজাইনের আসবাব তৈরি করতে পারেন।
৪। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করুন
সঠিক প্রযুক্তি আপনার প্রতিষ্ঠানকে সহজেই অনেক দূর এগিয়ে দেবে। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি অনলাইন নির্ভর হয়, তাহলে পত্রিকার সাথে লিফলেট বিলি না করে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়াই বুদ্ধমানের কাজ হবে। ওয়েবসাইট করা, নিজের কোম্পানির ভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা আপনার কোম্পানিকে আরও ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবে। অনলাইন ব্যবসা না হলে আপনার প্রযুক্তির অস্ত্রের ব্যবহার হবে ভিন্ন। তখন আপনাকে বেশী নজর দিতে আকর্ষণীয় একটি ব্যানার তৈরির দিকে। এমন একটি লোগো তৈরি করতে হবে যা অনেক দূর থেকেও দেখা যাবে। এমন ছোট ছোট কৌশলে নিজের কোম্পানিকে তুলে ধরুন।
৫। মাইন্ডসেট
সফলতার জন্য জরুরি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা, গতি এবং ধৈর্য্য। বিশ্বের সফল ব্যবসায়ীরা কখনো তাদের মাইন্ডসেট থেকে সরে যান নি। যত প্রতিকূলতাই আসুক তারা একটা কথাই স্মরণ করেছেন, পারতে তাদের হবেই। আপনার আইডিয়াকে সবচেয়ে সুন্দর করে বাস্তবায়ন করতে পারেন আপনি নিজে। আপনার চেয়ে ভাল কেউ পারবে না সেটা। নিজের উপর এই বিশ্বাস রাখুন। আত্মবিশ্বাস বদলে দেয় আমাদের ভাব। আপনার আত্মবিশ্বাসী চোখ আপনার কর্মীদের সিরিয়াসনেস বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার

 

ইফতারে প্রাণ জুড়াবে ভিন্ন স্বাদের খেজুরের মিল্কশেক

সারাদিন রোজা রাখার পর প্রাণ জুড়াতে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবতের জুড়ি নেই। শরবতের পরিবর্তে অনেকেই বিভিন্ন ফলের জুস পান  করে থাকেন। প্রতিদিন একইরকম পানীয় পান করতে করতে একঘেয়ামি চলে আসে। তাই পানীয়তে চাই ভিন্ন কিছু, নতুন কিছু। আমের জুস, কলার জুস অথবা কমলার জুস অনেক তো হল, এইবার তৈরি করুন মজাদার খেজুরের মিল্কশেক। মজাদার এই মিল্কশেকটি অল্প কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। ইফতারিতে ঝটপট তৈরি করুন খেজুর মিল্কশেক।

উপকরণ:  

১৫ থেকে ২০টি খেজুর

৩ থেকে ৪ কাপ দুধ

৭-৮টি দারুচিনি গুঁড়ো

বরফের টুকরো

প্রণালী:

১। প্রথমে খেজুরের ভিতর থেকে বীচি আলাদা করে নিন। এলাচের খোসা ছাড়িয়ে গুঁড়ো করে নিন।

২। এইবার ব্লেন্ডারে খেজুর, এলাচ গুঁড়ো, দুধ এবং বরফের টুকরো দিয়ে ব্লেন্ড করুন।

৩। খেজুর, দুধ ভাল করে ব্লেন্ড না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে থাকুন।

৪। পরিবেশন পাত্রে ঢেলে বাদাম কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন ভিন্ন স্বাদের মজাদার খেজুরের মিল্কশেক।

টিপস:

১। আপনি চাইলে খেজুরের সাথে একটি পাকা কলা, কাঠবাদাম কুচিও যোগ করতে পারেন। এটি মিল্কশেকের স্বাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পুষ্টিগুণ করে দেবে দ্বিগুণ।

 

মেহাজাবীন এ বিখ্যাত ডিজাইনারদের পোশাক

আসছে ঈদ উপলক্ষে মেহাজাবীন নিয়ে এসেছে দেড়শ’র বেশি নতুন ডিজাইনের পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে এক্সক্লুসিভ শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা, বাচ্চাদের ড্রেস, টপস, পাঞ্জাবি, শার্ট ও টি-শার্ট ইত্যাদি। এরই মধ্যে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনার শপ হিসেবে আলাদা নাম কুড়িয়েছে মেহাজাবীন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকা রুনা লায়লার ডিজাইন করা ড্রেস ‘সিগনেচার বাই রুনা লায়লা’ পাওয়া যাচ্ছে কেবল মেহাজাবীনেই। ভারতের বিখ্যাত ডিজাইনার মনিশ মালহোত্রা ও সব্যসাচীর ডিজাইন করা ড্রেসও পাওয়া যাচ্ছে মেহাজাবীন এ।

এছাড়া মেহাজাবীনের ব্রাইডাল, অলঙ্কার, কসমেটিক্স, জুতা, স্যান্ডেল ও এক্সেসরিজ কালেকশনও বৈচিত্র্যধর্মী। উল্লেখ্য, এই ঈদে কেউ যদি অন্য আট দশজনের চেয়ে অন্যরকমভাবে সাজাতে চান নিজেকে, তাহলে একবার ঢু মারতেই পারেন মেহেজাবীন এ! বনানী ১১নং রোড শাখা ও যমুনা ফিউচার পার্কের ডি ব্লক, নিচতলার শোরুম দুটিতে পাওয়া যাচ্ছে ড্রেসগুলো। মোবাইল: ০১৯৪১০৭৪৯৭২

 

বাংলাদেশি সন্দেহে আসামে ৮৫ বছরের বৃদ্ধার জেল

গত ৫০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসছেন ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা সুভদ্রা সরকার। এমন কি দুমাস আগে যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও তিনি ভোট দিয়েছেন। অথচ এতো বছর পর তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে জেলে পাঠিয়েছেন বিদেশি চিহ্নিতকরণের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তারা ওই নারীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

অনেকের অভিযোগ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অনেক এলাকাতেই বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে হয়রানি শুরু হয়েছে নতুন করে। আর এ কারণেই আসামের বঙাইগাঁও জেলার বাসিন্দা বৃদ্ধা সুভদ্রাকে আজ কোকরাঝাড় জেলের মধ্যে একটি বিশেষ আটক-শিবিরে আটক থাকতে হচ্ছে।

বঙাইগাঁও জেলার সীমান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার রঞ্জিত বর্মন বলেন, ‘ওই নারীর কাছে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠানো হয়েছিল আদালতে হাজির হয়ে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে। কিন্তু তিনি আসেননি, তাই ট্রাইবুনাল একতরফা রায় দিয়ে দিয়েছেন। এখানে পুলিশের কিছু করার নেই। তারা এবার হাইকোর্টে গিয়ে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণ করতে পারেন।’

এ ব্যাপারে অবশ্য বৃদ্ধার নাতি প্রহ্লাদ সরকার বলেন, ‘কয়েক দফায় নোটিশ এসেছিল ঠাকুমার নামে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, আদালাতে যেতে পারেননি। আমার কাকা সব নথি নিয়ে গিয়েছিল। তাই মামলাটা ঝুলে ছিল। হঠাৎই ঠাকুমাকে নিয়ে এসপির অফিসে যেতে বলা হয়। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

তাছাড়া সত্তরের শেষ আর আশির দশকের মাঝ পর্যন্ত চলা আসাম আন্দোলনের শেষে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতেও বলা আছে- ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর পরে যারা বাংলাদেশ থেকে আসামে আসবেন, তাদের বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হবে। অথচ ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে সুভদ্রা সরকারের। তাহলে তিনি কী করে অনুপ্রবেশকারী হন?

সম্প্রতি আসামে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার তৈরি হয়েছে। তাদের ভোটের মূল স্লোগানই ছিল অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে। তবে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যদি কেউ পালিয়ে আসামে চলে আসেন, তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা সরকারি ভাবেই ঘোষণা করেছে বিজেপি।

অবশ্য এর প্রতিবাদও জানিয়েছে বাঙলাভাষী হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলন করে আসা ‘সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন’। সংগঠনটির বঙাইগাঁও জেলা সভাপতি সম্রাট ভাওয়ালের দাবি, রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরই বাংলাভাষী হিন্দুদের ওপর হয়রানি বেড়ে গেছে। একটু এদিক ওদিক হলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মূলত যারা একদম গরীব, অশিক্ষিত তাদেরই বেছে বেছে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। তারা রোজগারের কথা ভাববে না নথি নিয়ে কোর্টে দৌড়াবে?