banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে করণীয়

পীড়াদায়ক চুলকানি সৃষ্টি করে অ্যালার্জি। যে কোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়ে বা নাক বন্ধ হয়ে যায়, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়, শরীরে গোটা দেখা দেয়, সঙ্গে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

আসবাবে জমে থাকা পুরনো ধুলাবালি, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা চুলের সঙ্গে নানা ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে। বংশগত কারণেও অনেক সময় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারও বাবা-মা বা ভাইবোনের এ রোগ থাকলে তার দেহেও এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।

আবহাওয়া বা বাতাসের আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও এ রোগ হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি জাতীয় খাদ্য যেমন- চিংড়ি, ইলিশ মাছ, ডিম, পাকাকলা, গরুর মাংস, বেগম, দুধ, তামাক ইত্যাদি গ্রহণ করলেও অ্যালার্জি হয়।

অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দুই ধরনের। যেমন-

সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জির প্রোকোপ দেখা দিলে তাকে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে।

পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস

সারা বছর ধরে হলে খুটিনাটি সমস্যাতে অ্যালার্জি দেখা দিলে তাকে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে।

লক্ষণ

কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ চাপ লাগা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা লাগা। বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব, নিশ্বাসে কষ্টের কারণে রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা সবই অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে ও চুলকায়। হাত-পা ফুলে যেতে পারে। ফোলা অংশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে, কখনও বারবার হতে পারে।

করণীয়

অ্যালার্জির টেস্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিৎ। ঠাণ্ডা বাতাস, ধুলোবালি, ফুলের রেণু বা যেসব খাবারে এমন সমস্যা দেখা দেয় তা পরিহার করে চলা উচিৎ। এছাড়া ডাক্তারি পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং সালবিউটামল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ভালো থাকার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার নেয়া যেতে পারে।

ভ্যাকসিন পদ্ধতি

উন্নত দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পদ্ধতিতে অ্যালার্জির চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এটা অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার চিকিৎসা পদ্ধতি। আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে।

 

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য : কোরান মাজিদের নির্দেশনা

স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নারীদের সাথে অবিচার ও তাদের শোষণ করে আসছিল। নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় নিকৃষ্ট মনে করা হত। আইনের দৃষ্টিতে তাদের কোন অধিকার ছিল না। আর না সমাজে তাদের কোন মর্যাদা ছিল। তারা তুচ্ছ ভোগ্যবস্ত্ত কিংবা পরিবারের অন্যান্য আসবাব পত্রের মত ব্যবহৃত হত। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজে এটি একটি সাধারণ রীতি ছিল যে, পিতার মৃত্যুর পর ছেলেরা পরিবারের অন্যান্য সামগ্রীর মত তার স্ত্রীদেরও মালিক হত। তার মাও তখন তার স্ত্রী ও দাসী হিসেবে কাজ করত। পৃথিবীর কোন কোন অংশে নারীদেরকে আত্মাহীন একটি প্রাণী কিংবা তাদের কোন স্বতন্ত্র জীবন আছে বলে মনে করা হত না। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে যখন কোন মৃত স্বামীকে চিতায় আগুনে পোড়ানো হত; তার জীবন্ত স্ত্রীকেও সেই জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিতে বলা হত। তার কোন স্বতন্ত্র জীবন যাপনের অধিকার বলতে ছিল না। স্বামী যতদিন জীবিত থাকত ততদিনই সে বেঁচে থাকার অধিকার লাভ করত এবং যখন তার স্বামী মৃত্যুবরণ করত তাকেও তখন স্বেচ্ছায় জীবন বিসর্জন দিতে হত। এখনো ভারতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। কেননা, এটি হিন্দু মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। অনেক সমাজে নারীদের মনে করা হত দুষ্টকর্মের উৎস, যারা বেহেস্তে ঈভ (হাওয়া আ.) এর প্রথম অপরাধের কলঙ্ক বহন করছে।

ইসলামের আবির্ভাব নারীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইসলাম তাদের মর্যাদাকে পুরুষের সমান্তরালে নিয়ে আসে। তা তার সকল নৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং তার জীবনের প্রতিটি বিষয় পছন্দমত নির্বাচন করার স্বাধীনতা প্রদান করে। এটি তাকে সমাজে সকল মর্যাদা ও সম্মানের প্রতিমূর্তিতে পরিণত করে এবং তাকে সব ধরনের শোষণ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে।

কোরান মাজিদ বারংবার নারী ও পুরুষকে পৃথক সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী সমান। কোরান মাজিদ বলে:

নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফেরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। (আল-আহযাব, ৩৩:৩৫)

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আত-তাওবা, ৯:৭১)

আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহা সফলতা। (আত-তাওবা, ৯:৭২)

আর তোমরা আকাঙ্খা কর না সেসবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (আন-নিসা, ৪:৩২)

কোরান মাজিদ আরও ঘোষণা করে যে, পুরুষ ও নারী একই উৎস থেকে এসেছে এবং আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানসিক ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতার বিচারে উভয়েই সমান। কোরান মাজিদ বলে: হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। (আন-নিসা, ৪:১)

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য
কোরান মাজিদে নারীদের (নিসা) নামে একটি পৃথক সূরা রয়েছে। যাতে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণিত হয়েছে। যদিও পুরুষ ও নারী বিয়ের ক্ষেত্রে সমান অংশীদার, দায়িত্বের একটি বৃহত্তর অংশ বহন করতে হয় পুরুষকে । পুরুষকে পরিবারের প্রধান বিবেচনা করা হয় এবং তাকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্বভার বহন করতে হয়। এজন্যে কোরান ও হাদিস স্বামীদেরকে তাদের স্ত্রীদের সাথে আচরণের ব্যাপারে একটি সার্বজনীন ও সবিস্তার নির্দেশনা প্রদান করে। এই নির্দেশনাসমূহ সেসব নির্দেশনা থেকে অনেক ব্যতিক্রম যা স্বামীদের সাথে স্ত্রীদের আচরণের প্রেক্ষিতে প্রদান করা হয়েছে। নারীদের মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য অন্য কোন ধর্ম কিংবা মানব সমাজ এত বেশি গুরুত্ব দেয় নি। নিম্নে কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর তা থেকে খুশি হয়ে যদি তারা কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। (সূরা আন-নিসা, ৪:৪)

মোহরানা প্রদান বিয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। যখন কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব করে তখন তাকে একটি বিশেষ পরিমাণ মোহরানা প্রদানে স্বীকৃত হতে হয়। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, তাকে সমাজে তার নিজের অবস্থান ও স্ত্রীর মর্যাদা অনুসারে মোহরানার পরিমাণ ধার্য করতে হবে। কোরান মাজিদ বলে:

তোমাদের কোন অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও, এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোন মোহর নির্ধারণ কর নি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর উপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের উপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের এটি আবশ্যক। (বাকারা, ২:২৩৬)

মেয়েদের সেই মোহরানায় স্বীকৃত হওয়া কিংবা তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রয়েছে। মোহরানার উপর রাজি হওয়া ব্যতিরেকে বিয়ে বৈধ হয় না। কোরান মাজিদ বলে:

হে নবি, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ…। (আল-আহযাব, ৩৩:৫০)

তোমরা তাদেরকে বিয়ে করলে কোন অপরাধ হবে না, যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহরানা প্রদান কর। (আল-মুমতাহিনা, ৬০:১০)

মোহরানা একবার দিয়ে দেয়া হলে তা স্ত্রীর নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়। স্বামী তা পুনরায় ফিরিয়ে নিতে পারে না; এমনকি যদি সে তাকে তালাকও প্রদান করে। কোরান মাজিদ বলে:

আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোন কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে? (আন-নিসা, ৪:২০)

মৌলিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হওয়া
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। (আন-নিসা, ৪:৩৪)

এই আয়াতের উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, স্ত্রীর জীবনের মৌলিক চাহিদার যোগান দেওয়া একজন স্বামীরই দায়িত্ব। যদি সে তা না করে তবে সে আল্লাহ তাআলার আদেশ লংঘন করে। অধিকন্তু মুসলিম পরিবারে স্ত্রীকে উপার্জন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় নি। অবশ্য সে স্বামীর অনুমতি স্বাপেক্ষে কোন কাজ করতে পারে। আর যে অর্থ সে উপার্জন করবে তা তার নিজস্ব এবং তার সম্পদের উপর স্বামীর কোন বৈধ অধিকার নেই।

নারীদের সমান অধিকার
তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। (আল-বাকারা, ২:১৮৭)

আর নারীদের আছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের উপর (পুরুষদের) অধিকার। ( আল-বাকারা, ২:২২৮)

আরও উল্লেখ্য যে, পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমানাধিকারের ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও পশ্চিমা ধারণার মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে। ইসলাম উভয়কে একই ধরনের মৌলিক মানবাধিকার প্রদান করে। কিন্তু সমান দায়িত্বভার অর্পণ করে না। একজন পশ্চিমা নারীকে রান্নাঘরে কাজ করতে হয়, শিশুদের খাওয়াতে হয়, ছেলেমেয়েদের লালন পালন করতে হয়, আবার যুগপৎভাবে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করার জন্যে স্বামীকে সহযোগিতাও করতে হয়। সে সমরাস্ত্রও বহন করে এবং দেশ প্রতিরক্ষায়ও অংশ নেয়। ইসলাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে এমন দায়িত্বসংক্রান্ত সমতার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। তা বুঝে যে, পুরুষ ও নারীর শরীরতন্ত্র ও শারিরিক গঠনের ক্ষেত্রে অনেক ভিন্নতা এবং তাদের উভয়ের মাঝে বিশেষ যৌন স্বাতন্ত্র রয়েছে। অধিকন্তু তাদের আবেগিক চাহিদা ও মানসিক বিচার বুদ্ধির ক্ষেত্রেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। একারণে ইসলাম পুরুষ ও নারীকে ভিন্ন ভিন্ন দুই গোচ্ছ দায়িত্ব প্রদান করে। মুসলিম সমাজে পুরুষ হল পারিবারিক কর্মকান্ডের প্রধান। তাদের প্রথমিক দায়িত্ব হল পরিবারের সদস্যদের জন্য উপার্জন করা। পক্ষান্তরে, নারীরা ঘরের ঘরের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের প্রধান দায়িত্ব হল সন্তান লালন পালন করা। পুরুষরা এভাবে দায়িত্বের একটি বড় বোঝা বহন করে। কোরান মাজিদে তা খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে:

আর নারীদের আছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের উপর (পুরুষদের) অধিকার। আর পুরুষদের রয়েছে তারে উপর মর্যাদা এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। ( আল-বাকারা, ২:২২৮)

আর তোমরা আকাঙ্খা কর না সেসবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের রয়েছে অংশ তারা যা উপার্জ করে তা থেকে। (আন-নিসা, ৪:৩২)

স্ত্রীর প্রতি দয়া প্রদর্শন
আর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যান রাখবেন। (&আন-নিসা, ৪:১৯)

এমন কোন নারী পাওয়া দুষ্কর যে তার জীবনের সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এভাবে কোন কারনে অপছন্দ করা শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে কোরান মাজিদ স্বামীকে বলে, তার দুর্বলতাকে এড়িয়ে যেতে এবং তার সাথে দয়া ও সহানুভূতির আচরণ করতে। কোরান মাজিদ আরও সুসংবাদ প্রদান করে যে, স্বামীর এই কাজের জন্য আল্লাহ তাআলা তাকে প্রভূত কল্যান দান করবেন।

স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া
হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। (আত-তাগাবুন, ৬৪:১৪)

কোন কোন ক্ষেত্রে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের চাহিদা আল্লাহ তাআলার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। পরিবারের এধরনের সদস্যরা আমাদের শত্রু। কোরান মাজিদ আমাদেরকে বলে যে, আমাদের পরিবারের এসব সদস্যদের কেবল ক্ষমা করে দেয়াই উচিৎ তা নয়, বরং তাদের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতাকে গোপন রাখতে হবে। তাদের দোষ প্রকাশ করলে তা তাদের জন্য মানহানির কারণ হবে, যা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।

স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা
যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব। (আন-নূর, ২৪:২৩)

আর তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে, তোমরা তাদের উপর তোমাদের মধ্য থেকে চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত কর। (আন-নিসা, ৪:১৫)

ইসলামি আইনে কোন অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্যে তার অপরাধ প্রমাণ করতে দুইজন স্বাক্ষী আবশ্যক হয়। ইসলামে একজন নারীর সম্ভ্রম ও সতীত্বকে এতই মর্যাদা দেয়া হয়েছে যে, ইসলামি আইন তার অপরাধ প্রমাণের জন্য চারজন স্বাক্ষী পেশ করাকে অপরিহার্য করেছে। অন্যথায় সে নিরপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

সালিশ নিয়োগের সমান অধিকার
যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোন দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোন মীমাংসা করলে তাদের কোন অপরাধ নেই। (আন-নিসা, ৪:১২৮)

স্ত্রীর প্রতি দয়া প্রদর্শন, এমনকি তালাক প্রদানের পরও
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। (আল-বাকারা, ২:২৩২)

এগুলি কোরান মাজিদের এমন কিছু নির্দেশনা, যা ইসলাম নারীদের যে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে তার চিত্রকে ফুটিয়ে তোলে। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম কিংবা সমাজ এমনকি এর ধারে কাছেও আসে না।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

 

ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনো করবেন না এই ভুলগুলো

পড়াশোনা শেষ? এবার তো ভাবতে হবে ক্যারিয়ারের কথা! একটা মানানসই চাকরির জন্য জমা দিতে হবে সিভি। অনেকক্ষেত্রে আমাদের সিভি মেইল করতে হয়। কোথাওবা সিভি পাঠাতে হয় ডাকযোগে। অনেক অফিস পছন্দ করেন ‘Walk in interview’ নিতে। ইন্টারভিউ বোর্ডে নার্ভাস হয়ে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এর সাথেই জড়িয়ে থাকে চাকরি না পাওয়ার মত বিপত্তিটি। আসুন জেনে নিই, চাকরির এই সাক্ষাতকারে কোন ভুলগুলো করা যাবে না একেবারেই।
নার্ভাস হয়ে ভুল উত্তর দেওয়া
হয়ত আপনি একেবারেই নতুন। প্রথমবার ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। কিন্তু প্রথমবার হোক আর বহুবার মুখোমুখি পরীক্ষায় নার্ভাস হন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তাই আপনার যে ভয়ের অনুভূতিটি হচ্ছে সেটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তবু নিজেকে সামলে নিতে হবে আপনার। ভেতরে যতই ভয় কাজ করুক না কেন, বাইরে একদম প্রকাশ পেলে চলবে না। আর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই হতে সাবধানী। জানা উত্তর যেন ভুল না হয় কোনভাবেই।
পাল্টা প্রশ্ন করা
ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনো পালটা প্রশ্ন করা যাবে না। আপনাকে যে প্রশ্ন করা হবে ঠিক সে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে শুধু। বাড়তি কথা বলা কোনমতেই পছন্দ করেন না ইন্টারভিউয়াররা। তারা পুরো সময়টাতেই আপনার মাইন্ড রিড করে চলেছেন। যতটুকু সময় আপনি আছেন, তারা সারাক্ষণই আপনাকে খেয়াল করছেন। বাড়তি জ্ঞান দেখানো বা পালটা প্রশ্ন করা আপনার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া
যদি জিজ্ঞেস না করা হয় তাহলে অবশ্যই ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরিত থাকুন। আমাদের দেশে ইন্টারভিউ বোর্ডে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে প্রচুর এলোমেলো প্রশ্ন করা হয়। অনেক সময় প্রশ্ন কর্মসংশ্লীষ্টতা ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তি পর্যায়ে। নিজের স্মার্টনেস ব্যবহার করুন। যত কম তথ্য দিয়ে উত্তর দিতে পারবেন ততই ভাল।
দক্ষতা না তুলে ধরা
নিজের দক্ষতা তুলে ধরুন। আপনি যদি ভাল ইংরেজি বলতে জানেন, তাহলে উত্তর দেওয়ার সময় এই দক্ষতা প্রকাশ করুন। এটি আপনার সম্পর্কে ভাল ইম্প্রেশন তৈরি করবে। আবার হয়ত আর কোন ভাষা জানেন আপনি। টেকনোলজির ব্যবহার ভাল পারেন, এটাও হতে পারে। তবে অবশ্যই সেটা আপনার চাকরির সাথে মানানসই হতে হবে। আমরা অনেক সময়ই নিজের দক্ষতা থাকা স্বত্তেও ইতস্তত করে সেটা প্রকাশ করি না, পরে আফসোস করি।
পোশাক নির্বাচন
ইন্টারভিউতে পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক আপনার প্রথম ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু তরুণদের মধ্যে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রায়ই ভুল হতে দেখা যায়। অবশ্যই সাক্ষাতকারের সময় অতি উজ্জ্বল রঙের পোশাক পড়া উচিৎ নয়। চাকরি যেমনই হোক, পোশাক ফরমাল হওয়া চাই। চুল বাধা, জুতা মেলানো সব কিছুতে প্রকাশ পাওয়া চাই আপনার ব্যক্তিত্ব।
অপ্রয়োজনে হেসে ফেলা
আপনাকে যত অদ্ভুত প্রশ্নই করা হোক না কেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে হেসে ফেলবেন না। নিজের গাম্ভীর্য বজায় রাখুন। কোনভাবেই আপনাকে যেন বোকা মনে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নার্ভাসনেসের কারণে অনেক সময় আমরা খেয়াল না করে হেসে ফেলি, যা পুরো বিষয়টিকে হালকা করে দিতে পারে।
অপ্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করা
আপনাকে নিজের জীবনের কোন অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বলা হতে পারে। অনেক সময় আমরা খুজে পাই না কি বলব। এমন কোন অভিজ্ঞতা হয়ত শেয়ার করে ফেললাম যা চাকরির সাথে যায় না কোনদিক থেকেই। জ্বী, এই অভিজ্ঞতাও চাকরি সংশ্লীষ্ট হওয়া জরুরি। বরং এটাই সুযোগ আপনার যোগ্যতা প্রকাশ করার।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার

 

জমে উঠছে ঈদের বাজার

ঈদ মানেই খুশি অফুরান। মুখরোচক খাবার-দাবার, ঘোরাঘুরি আর নতুন পোশাকের গন্ধে মাতোয়ারা হওয়া যেন ঈদের আরেক অর্থ। মুসলমানদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসবে আয়োজনটা একটু বেশিই থাকে। বেশ আগ থেকেই শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। ঈদের আগে একমাস জুড়ে সিয়াম সাধনা যেমন চলে, তেমন খুশির দিনে রঙিন হওয়ার জল্পনা কল্পনাও চলে পুরোদমে। তাইতো রমজানের কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই পূর্ণ উদ্যামে জমে উঠেছে ঈদের বাজার।

রাজধানীর বিপনি বিতান গুলোতে শুরু হয়েছে উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে বিক্রি তেমন না দেখা গেলেও ইফতারের আগেই বেচা-বিক্রির ভিড় বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। রোববার দুপুর থেকে বিকেল পযর্ন্ত রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর মৌচাক, আনারকলি, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের নজর কাড়তে দোকানের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের রঙিন বাতি, অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত রঙিন ব্যানার, বিভিন্ন ধরনের অপারের পোস্টার দিয়ে সাজিয়ে রাখছেন তারা। এসবের ফাঁক দিয়েই হয়তো উঁকি মারছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ।

এ মার্কেট গুলোতে শিশু ও তরুণীদের জন্য ফ্রক, জিপসি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ফ্লোরটাচ, সিনথেটিক ফ্রক, কিরনমালা, সাবারিয়া জামা বিক্রি হচ্ছে। এ পোশাকগুলো দাম এক থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে। শাড়ির ক্ষেত্রে আছে গ্যাস সিল্ক, দোতারি সিল্ক, সিল্ক জামদানি, মিরপুরের লেহেঙ্গা শাড়ি, টাঙ্গাইলের সুতি কাতান, স্বর্ণকাতান ও বেনারসি কাতান। ছেলেদের জন্য প্যান্ট ও শার্টের পিস পাঁচশ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ম রমজান থেকে প্রতিদিন বেচা বিক্রি বেড়ে চলছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের বিকিকিনি পুরোদমে জমে উঠবে।

প্রতিবছরই ঈদ উপলক্ষে বাজারে আসে বাহারি নাম ও ডিজাইনের রঙ বেরঙের পোশাক-পরিচ্ছদ। ফরচুন শপিং কমপ্লেক্সের জান্নাত ফ্যাশানের নতুন কালেকশান রয়েছে সারারা, ড্যান্সিং স্টার, বাজরঙ্গি ভাইজান, শাড়ি লেহেংগা, লংকটি, গ্রাউন স্টাইল, বিন্দাজসহ মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক।

এখানকার বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সাগর  জানান, এসব পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে তরুণীদের কাছে বেশি প্রিয় পোশাক সারারার কাটতি। এসব পোশাকের মূল্য ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া এ দোকানে নারীদের পোশাকের মধ্যে ফ্লোরটাচ, সিংগেল কটি, আওয়ারাসহ বিভিন্ন পোশাক ভালো বিক্রি হচ্ছে।

এ মার্কেটের নিত্যসাজ দোকানে ছোট বাচ্চাদের জামা-কাপড়ের মধ্যে আছে মেয়ে বাচ্চোদের পার্টি ফ্রক ১৫শ থেকে ৭ হাজার টাকা দামের। প্লাজো সেট ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, স্কার্ট ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা, সুতি ফ্রক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, গাউন সেট ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।

ছেলে বাচ্চাদের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে মোদি সেট, বাবা সেট, জিন্স প্যান্ট, টি শার্ট। এসব পোশাক ৫ থেকে ৭শ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বড়দের থ্রিপিস, গাউন, লেহেঙ্গা, রাউন্ড ফ্রকের বেশ কদর রয়েছে বলে জানালেন নিত্য সাজের বিক্রয় প্রতিনিধি জীবন।

বর্তমানে দৈনিক ২০ থেকে ২৫  হাজার টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈদের আগে বাজার জমলে বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে। ঈদের বাজার জমে উঠলে ছোট দোকান গুলো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করলেও বড় দোকান গুলোতে বিক্রি হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।

এদিকে মৌচাকের তৌকির ফ্যাশানের বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম  জানান, বেচা-বিক্রি এখনও তেমন জমে নাই। তবে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত বিক্রি কম হলেও ইফতারের আগে বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়। এখন পযর্ন্ত  শিশুদের পোশাক আইটেমই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে ১০ থেকে ১২ রোজার পর বড়দের পোশাকও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এই বিক্রেতা।

 

বরফ ঠাণ্ডা জাম-দইয়ের স্লাশ

সারাদিন তৃষ্ণায় ছটফট করার পর ইফতারে খাবারের চাইতে পানীয়ের প্রতিই বেশি আকর্ষণ থাকে। প্রতিদিন একই রকমের জুস বা আইসক্রিম পছন্দ না হলে চেখে দেখতে পারেন এই দুইয়ের মাঝামাঝি একটি দারুণ খাবার, ফলের স্লাশ। ফ্রেশ ফল এবং বরফের মিশেলে প্রাণ জুড়াতে স্লাশ অতুলনীয়। আজ দেখে নিন জাম এবং দইয়ের স্বাদে একটি স্লাশের রেসিপি।
উপকরণ
– ১৫/২০টা জাম, বিচি ফেলে হালকা ভর্তা করে নেওয়া
– ২ কাপ দই
– ১ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
– ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
– ২/৩ টেবিল চামচ গুঁড়ো চিনি
– পরিবেশনের জন্য মধু এবং বাদামের কুচি
প্রণালী
১) জামগুলোকে আলদা আলাদা গ্লাসে নিন। একেকটি গ্লাসের সিকি অংশে জাম নেবেন।
২) ব্লেন্ডারে দই, ভ্যানিলা এসেন্স, লেবুর রস এবং চিনি নিন এবং ব্লেন্ড করে নিন। ভালোমত মিশে গেলে এতে আইস কিউব দিন। আইস কিউব কুচি কুচি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন।
৩) গ্লাসে রাখা জামের ওপরে দইয়ের এই মিশ্রণ দিন। এর ওপরে মধু ঢেলে দিন অল্প করে। এর ওপরে কুচি করা কাঠবাদাম এবং পেস্তাবাদাম ছড়িয়ে দিন।
ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো বরফ ঠাণ্ডা জাম-দইয়ের স্লাশ। সাথে সাথেই পরিবেশন করুন।

 

হলিউডের নারী তারকাদের মেকআপ বিরোধী আন্দোলন

হলিউডের নারী তারকাদের যেন উন্মুক্তভাবে দেখার সময় চলছে। তবে সেটি পোশাকের ক্ষেত্রে নয়, শুধুমাত্র তাদের চেহারায় থাকছে না কোন আবরণ। এবং সেটি হচ্ছে মেকআপ। মার্কিন গায়িকা আলিসিয়া কিস এই আন্দোলনে শামিল হতে চলেছেন। তার মত প্রাকৃতিক লুকে থাকার এই আন্দোলনে আরও আগে থেকেই রয়েছেন অন্যান্য বিখ্যাত নারীরা।

আলিসিয়া সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যার শিরোনাম ‘উন্মোচন করার সময়ে আলিসিয়া কিস’। এখানে তিনি তার চেহারায় মেকআপের আবরণ সরিয়ে প্রাকৃতিক লুকে নিজেকে মজবুত করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আলিসিয়ার ভাষায়, ‘আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বেশ উদ্বিগ্ন থাকতাম আমার চেহারা নিয়ে এবং মেকআপ নিয়ে। মেকআপ ছাড়া বের হলে যদি কেউ আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, এরপর সেই ছবি যদি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে দেয়, এই ধরনের নিরাপত্তাহীন ভাবনায় থাকতাম।’

তবে এরপর একজন ফটোগ্রাফার তার নতুন অ্যালবাম ‘ইন কমন’-এর কভারের জন্য    মেকআপ ছাড়া ছবি তুলতে উৎসাহ দেয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে সামনে আসার পর থেকে নিজেকে মজবুত ভাবা শুরু করছি। কারণ আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে উপলব্ধি করা। এরপর থেকে আমি নিজেকে কোন আবরণে আটকে রাখতে চাই না। শুধু আমার চেহারাই নয়, আমার মন, আমার আত্মা, আমার চিন্তাভাবনা, আমার স্বপ্ন, আমার পরিশ্রম এবং আমার আবেগও উন্মুক্ত রাখতে চাই।’

প্রসঙ্গত, হলিউডে মেকআপ ব্যবসা থেকে প্রচুর লাভজনক। মেকআপহীন সেলফির প্রচলন আজকাল তেমনভাবে দেখা না গেলেও এর মধ্যে কিছু তারকা এই জোয়ার থেকে আলাদা পদক্ষেপ নিয়েছেন। মেকআপ ছাড়াই তারা আসছেন ভক্ত দর্শকদের সামনে।

এই ফেব্রুয়ারিতে কিন্ডি ক্রোফোর্ড তার ৫০ তম জন্মদিনে মেকআপ ছাড়া সেলফি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল সাইটে। এছাড়াও অন্যান্য নারী তারকা যেমন লেডি গাগা, সালমা হায়েক এবং কাইলি জেনারও তাদের প্রাকৃতিক চেহারা দেখিয়েছেন দুনিয়াবাসীকে।

 

খেজুর দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব

সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার আয়োজনে ঘরে-বাইরে হরেক রকম খাবারের পসরা বসে। ইফতার আয়োজনের সেই সব রকমারি খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা গ্রহণ করা মুস্তাহাব।

এ বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে— খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। তারপর কোনো মিষ্টি জিনিস দ্বারা। তারপর পানি দ্বারা। (আবু দাউদ : হাদিস ২৩৫৫)

عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال :كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يفطر على رطبات قبل أن يصلي، فإن لم يكن رطبات فتمرات،فإن لم يكن تمرات، حسا حسوات من ماء. رواه أحمد

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (বর্ণনায় : আহমদ)

এ হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারির আদব হল, মাগরিবের নামাজের পূর্বে ইফতার করা। তাজা খেজুর বা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করা। খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হল, খেজুর সহজপ্রাপ্য। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে খাওয়ার পর যে সমস্যা হওয়ার কথা খেজুর খেলে তা হয় না। এ ছাড়াও খেজুর হালকা খাবারের একটি। পানি, খেজুর এগুলো দ্বারা ইফতার করলে আলস্য সৃষ্টি হয় না। দ্বিতীয়ত পেট পুরে পানাহার ইসলাম সমর্থন করে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন—

ما ملأ ابن آدم وعاء بطنه، بحسب ابن آدم لقيمات يقمن صلبه، فإن كان لا محالة فاعلا فثلث لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لنفسه. رواهالترمذي

মানুষ সে সকল পাত্র পূর্ণ করে তার মাঝে মানুষের পেট অপেক্ষা আর কোনো খারাপ পাত্র নেই। মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট। এর থেকেও বেশি যদি প্রয়োজন হয়, তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের জন্য রেখে দেয়া উচিত। (বর্ণনায় : তিরমিজি)

 

কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ৪ নারী শ্রমিক নিহত

কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় তামাকের প্রোসেসিং কারখানার (বিটিসি) চার নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন।

সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ভাদালিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিকরা হলেন- জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার লক্ষ্মীপুর এলাকার মৃত পিতাহার মির্জার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৬৫), মৃত আক্কাস মণ্ডলের স্ত্রী কমেলা খাতুন (৬৩), মৃত তফায় শেখের স্ত্রী ফজিরন খাতুন (৪৫) ও একই উপজেলার মধুপুর এলাকার লিয়াকতের স্ত্রী নুখীজন নেছা (৪৭)।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী জানান, সকালে তামাকের প্রোসেসিং কারখানায় (বিটিসি) কাজের উদ্দেশ্যে ওই নারীরা শ্যালোইঞ্জিনচালিত আগলামনে করে কুষ্টিয়া আসছিল। এ সময় ভাদালিয়া বাজারের কাছে পৌঁছালে পিছন থেকে একটি ট্রাক তাদের গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হন আরো ৬ জন যাত্রী। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়ার স্টেশন ম্যানেজার আলী সাজ্জাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা উদ্ধার তৎপরতার চেষ্টা করেছি। আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

সব হারানো ফারজানার সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

রাজধানীর মিরপুরে কালশীর বিহারি ক্যাম্পে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে একই পরিবারের নয় জনসহ ১০ জনকে হত্যার ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ওই ঘটনায় পল্লবী থানায় দায়ের করা ছয়টি মামলার তদন্ত এখন স্থবির হয়ে আছে। দীর্ঘ দুই বছরেও জড়িতদের কাউকেই শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নেই তদন্তের কোনো অগ্রগতি।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, কালশী বিহারি ক্যাম্পের জায়গা দখলের উদ্দেশ্যেই ১০ জনকে হত্যা করা হয়। পল্লবী থানার পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণেই প্রথমে পল্লবী থানার পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তভার পেলেও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেনি।

তদন্তকারীরা কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়েছে, অথচ তারা ঘটনাস্থলেই ছিল না। তবে ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধীদের ধরতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন তারা। সেই তদন্তে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে সেদিনের হামলায় পরিবারের নয় সদস্যকে হারানো কিশোরী ফারজানাকে এখনো তাড়া করে ফেরে সেই দুঃসহ স্মৃতি। পরিবারের কেউ বেঁচে না থাকায় সে এখন মোহাম্মদপুরে এক খালুর বাসায় আছে।

গত বছরের ১৩ জুন শবেবরাতের রাতে পটকা ফোটানো নিয়ে পল্লবীর কালশী এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ভোরের দিকে কালশীর বিহারি ক্যাম্পের একটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। এতে আগুনে পুড়ে ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন মারা যায়। তাদের মধ্যে একই পরিবারের নয় জন রয়েছে।

নিহতরা হলো- ইয়াসিন আলীর স্ত্রী বেবী আক্তার (৪৫), ছেলে আশিক (২৫), তিন মেয়ে শাহানি (২০), আফসানা (১৮), রুখসানা (১৪), যমজ ছেলে লালু (১২) ও ভুলু (১২), পুত্রবধূ শিখা (১৯) এবং শাহানির ছেলে মারুফ (৩)। এছাড়া ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আজাদ নামে এক শ্রমিক নিহত হন।

স্বজনদের অভিযোগ, হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া সন্ত্রাসী ও এর নেপথ্যে কারা ছিল, তা সবাই জানে। তারা সবাই ছিল বাউনিয়া বাঁধ এলাকার সরকারদলীয় লোকজন, যারা স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার সহযোগী। পুলিশ তাদের সঙ্গে মিলেই হামলা চালায়। পরে তদন্তে নেমে পুরো ঘটনাই ধামাচাপা দিতে চায়। ডিবি পুলিশ তদন্ত করেও রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে না। দুর্বৃত্তরা নয়টি ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আগুন দেয়। এ ঘটনায় ১০ জন মারা গেলেও পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি।

পরে ওই ঘটনায় পল্লবী থানায় ছয়টি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়েছে চারটিতে। বাকি দুটি মামলার বাদী হয়েছেন মোবারক হোসেন নামে এক ব্যক্তি ও স্থানীয় এক চা বিক্রেতা। পাঁচ মামলাতেই আসামি করা হয়েছে হামলার শিকার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। আসামির সংখ্যা তিন হাজার ৭১৪। তবে পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি অজ্ঞাত। বাকি মামলাগুলো হয়েছে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে।

উর্দু স্পিকিং ইয়ুথ পিপলস রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের দপ্তর সম্পাদক ইমরান খান  বলেন, ‘বিহারি ক্যাম্পের জায়গা দখল করতেই হামলা করা হয়। আগুনে পুড়ে ও গুলিতে মারা গেছে বিহারিরা। অথচ মামলায় এই সম্প্রদায়ের লোকজনকেই আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর সাতজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনও কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে ওইসব মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরের জুনে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে দেখা করেন। তখন তারা মন্ত্রীকে সেই ঘটনার কিছু ভিডিওচিত্র দেন। তাতে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেই বিহারি ক্যাম্পে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। সে সময় মন্ত্রী এক মাসের মধ্যেই ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এক বছরেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।’

ডিবির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কালশীর সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনার মামলাগুলোর তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। সবগুলো মামলাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হলে কারা জড়িত বা প্রকৃত ঘটনা কী তা বলা যাবে না।’

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন, তদন্তভার পাওয়ার পর স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশ ও সরকারদলীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে ডিবির তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে ইসলাম নামের একজন ছিলেন, যিনি ঘটনার সময় দিনাজপুরে ছিলেন। ঢাকায় ফেরেন পাঁচদিন পর। এভাবে ডিবি পুলিশ অনেকের বক্তব্য নিয়েছে, যারা প্রত্যক্ষদর্শী নয় এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থাকলেও তা আমলে নেয়নি তদন্তকারীরা।

দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মা, তিন ভাই, তিন বোন, ভাবি ও ভাগ্নের সঙ্গে দগ্ধ হয়েছিল কিশোরী ফারজানা আক্তার। সৌভাগ্যবশত সে বেঁচে গেলেও মারা যায় পরিবারের নয়জন। বেঁচে ছিলেন তার বাবা ইয়াসিন মিয়াও। তবে আগুন দেয়ার ঘটনার আড়াই মাস পর আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারও মৃত্যু হয়।

এখন খালা সাহিদা বেগম ও খালু আসলাম খানের সঙ্গে তাদের মোহাম্মদপুর মার্কেট ক্যাম্পের বাসায় থাকছে ফারজানা। সে স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ফারজানা  বলে, ‘সেই কথা মনে পড়লে আমার ভয় লাগে। সাংবাদিকদের বলে কী লাভ! যারা মারছে তাদের তো বিচার হয় না।’

সে জানায়, পড়ালেখা শেষ করে সে দুস্থ-অসহায় মানুষের সেবায় কাজ করতে চায়। সবার দোয়ও চায় সে।

ফারজানার খালু সেলুনকর্মী আসলাম খান  বলেন, ‘ছোট্ট একটি ঘরে তারা সাতজন থাকেন। তার সামান্য আয়ে সংসারের খরচ ও ফারজানার লেখাপড়া চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। প্রথমে কিছু সহায়তা পাওয়া গেছে। যা ফারজানার চিকিৎসায়ই খরচ হয়ে গেছে। এখন মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।