banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

মা দিবস : ইসলাম “মা” কে যেভাবে সম্মানিত করেছে

হজরত তালহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে এক ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণের আবেদন জানাল। নবীজী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ বেঁচে আছেন। রাসুল (সা.) বললেন, যথার্থভাবে তার সেবা করো, বেহেশত তার পদতলে। (বোখারি শরীফ)।

মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক ‘মা দিবস’। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ৮ মে (রবিবার) যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বজুড়ে এই ‘মা দিবস’র উদযাপন, এটি আসে মূলত আমেরিকানদের হাত ধরে। ১৮৭০ সালে সমাজসেবী জুলিয়া ওয়ার্ড হো আমেরিকার নারীদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান। সে সঙ্গে দিবসটিকে স্বীকৃতি দেওয়াার জন্য প্রচুর লেখালেখি করেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃ-দিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরপর পৃথিবীর দেশে দেশে মা দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সারাবিশ্বের প্রায় ৬০টির মতো দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার একসঙ্গে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরেই।

মা জাতি সম্মানি জাতি। মায়ের তুলনা একমাত্র মা। মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতি মুহূর্তের। সারাবছর মায়ের হক আদায়ে বেখবর, আর ৮ মে, ‘মা দিবস’ এলেই মায়ের প্রতি আবেগের ভালবাসা ঢেলে দেয়া অযৌক্তিক? বছরে একবার ঢোলঢাল পিঠিয়ে ভালবাসা প্রকাশ এটা ইসলাম সমর্থন করে না। মাকে ভালবাসতে হবে সমসময়ই। মাকে যথাযথ সম্মান ও ভালবাসার কথা স্বয়ং কুরআনুল কারীমে আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন। মা পৃথিবির সবৃশ্রেষ্ট নেয়ামাত। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ট পাওয়া সম্পদ হলো মা। মা হচ্ছেন একজন সন্তানের পৃথিবীতে আসার মূল ও প্রধান উৎস এবং অস্তিত্ব ও বেঁচে থাকা থাকার একমাত্র অবলম্বন। মা শব্দটির কোনো বিকল্প নেই একজন সন্তানের কাছে। মায়ের মায়া-মমতার সাথে পৃথিবীর কোন কিছু তুলনা হয় না। মায়ের আদর এবং লালন পালনের কষ্ট সন্তান কোন দিন শোধ করতে পারবে না। শীত, তাপ, ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা যিনি সস্তানকে শৈশবে অনুধাবন করতে দেননি তিনি হলেন মা। সন্তানের অসুখে যিনি সারারাত জেগে থাকেন, সন্তান বাড়ি থেকে বের হয়ে ফেরার আগ পর্যন্ত যার চোখে ঘুম আসে না, সন্তানের বিপদ-মছিবতে সকল সুখ শান্তি যিনি বিসর্জন করে সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে সন্তানের বিপদ মুসিবত অসুখসহ যাবতীয় সমস্যা মোকাবিলা করেন থাকেন তিনি হলেন সকলের প্রাণপ্রিয় মা। মা সন্তানের জন্য পৃথিবীতে একটি বেহেশতের ফোটা ফুল। যার কাছে রয়েছে অসীম স্নেহ-মায়া-মমতা, আদর-ভালবাসা আর সান্তনা। মায়ের মতো আপন এ জগতে আর কেউ নেই। মায়ের তুলনা একমাত্র জন্মধাত্রি মা। সন্তানের উপর ফরজ কর্তব্য হলো সর্বদা মাকে যথাযথ সম্মান ও খিদমত করা। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা। শুধু বছরে একদিন মায়ের প্রতি আবেগের ভালবাসা নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা কেবলমাত্র তারই ইবাদত করবে এবং পিতা মাতার সাথে সদ্বব্যবহার করবে। যদি তাদের মধ্যে একজন কিংবা দুজনই তোমার নিকটে বৃদ্ধ বয়সে উপনিত হয়ে যান তখন তাদেরকে ‘উফ’ শব্দও বলবে না এবং তাদেরকে ধমও দিবে না। আর তাদের জন্য দয়ার মধ্য থেকে নম্রতার বাহু ঝুঁকিয়ে দাও। আর তাদের জন্য দোয়াস্বরপ একথা বলবে, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী ছগীরা’। (হে আমার পালনকর্তা! তাদের দুজনের ওপর এরকম দয়া কর যেরকম তারা আমাকে ছোট বেলায় লালন পালন করেছিলেন) (-সুরা বনি ইসরাইল:২৩-২৪)

অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি মানুষকে বিশেষ তাগিদ দিয়েছি তার পিতামাতার সাথে সদয় ব্যবহার করার। তার মা তাকে (গর্ভে) রেখেছে এবং তাকে দুধপান ছাড়ানোর সময় দিয়েছে ত্রিশ মাস। পরিশেষে যখন সে পূর্ণশক্তিতে পৌছে যায় এবং চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয় তখন সে যেন বলে হে আমার পালনকর্তা আপনি আমাকে শক্তি দান করুন যাতে আমি আপনার সেই সম্পদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি যা আপনি আমাকে এবং আমার মাতাপিতাকে পুরষ্কার দিয়েছেন। আর আমি যেন এমন ভালো কাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার সন্তান সন্তুতিদের মধ্যেও আপনি ওই যোগ্যতা দান করুন। আমি আপনার কাছেই ফিরে এসেছি এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণকারিদের মধ্যেও রয়েছি। (সূরা আহক্বাফ: ১৫)

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুল্লাহ (সা.)! আমি সর্বাগ্রে কার সঙ্গে সদাচরণ করব? ওাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তয়ে বললেন, তোমার মা। সাহাবি আবার বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করল তারপর কে? উত্তরে তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার বাবা। (বোখারি শরিফ)

হজরত তালহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে এক ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণের আবেদন জানাল। নবীজী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ বেঁচে আছেন। রাসুল (সা.) বললেন, যথার্থভাবে তার সেবা করো, বেহেশত তার পদতলে। (বোখারি শরীফ)।

শেষ কথা, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, মায়া, মমতা, ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়; বরং তা প্রতিদিনের জন্য। মায়ের প্রতি আনুগত্য, মায়ের খেদমত, মায়ের হক আদায় ও বৃদ্ধাবস্থায় সেবা-যত্ন করা এবং পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা আমাদের সবার একান্ত কর্তব্য। যাদের মাতা পিতা জীবিত নেই তাদের জন্য মাগফিরাত কামনায় বেশি বেশি তিলাওয়াত কুরআন, নফল নামাজ, দান সদকা ও দোয়া দুরুদ পাঠ করা সন্তানের কর্তব্য । মাতাপিতাকে রুহের মাগাফরাত কামনায় নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দান সদকা করা অতি উত্তম কাজ। মা আমাদের জন্য আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। আমাদের উচিত এবং প্রধান কর্তব্য হলো জীবিত মা বাবার খেদমত এবং কবরবাসী মা-বার জন্য রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি ছগীরার মাধ্যমে সর্বদা দোয়া করা।

মাওলানা এহসান বিন মুজাহির
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও তরুণ আলেম

 

আমের স্বাদে মজাদার পুডিং

ডেজার্ট বা নাস্তায় পুডিং কার না পছন্দ। ভিন্ন সময়ে ভিন্ন স্বাদের পুডিং খাওয়ার মজা বাড়িয়ে দেয় অনেক বেশি। বাজারে চলে এসেছে নানা জাতের পাকা আমা। তাই পুডিংও হতে পারে আমের স্বাদে গন্ধে ভরা। প্রিয়জনের তৃপ্তির হাসি পেতে এক টুকরো আমের পুডিংই যথেষ্ট। তাই আজই নিজ হাতে বানিয়ে নিন আমের স্বাদে মজাদার পুডিং।

যা যা লাগবে

ঘন দুধ ৭৫০ গ্রাম, ডিম ৪ টা, পাকা আমের রস ১২৫ গ্রাম, চিনি ২০০ গ্রাম, বিস্কুট গুড়া ২ টেবিল চামচ।

যেভাবে করবেন

দুধের মধ্যে বিস্কুট গুড়া ভিজিয়ে রাখতে হবে আগে থেকে, যেন গলে যায়। এবার একটা পাত্রে আমের রস ও চিনি এক সঙ্গে জ্বাল দিয়ে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর ভালো করে ডিম ফেটে দুধ ও আমের রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুডিং পাত্রে চিনি ক্যারামেল করে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে। তারপর অপেক্ষাকৃত বড় পাত্রে পানি ফুটতে দিন। পানি ফুটে উঠলে পুডিং এর পাত্রটি বসিয়ে ভারি কিছু দিয়ে চাপা দিতে হবে, যাতে পানি ফুটন্ত অবস্থায় পাত্র হেলেদুলে না যায়। পুডিং জমানোর জন্য ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই হবে। তারপর নামিয়ে এনে ঠাণ্ডা হলে ছুরি দিয়ে কেটে ডিসে পরিবেশন করুন মজাদার আমের পুডিং। স্বাদ ও গন্ধে অনন্য আমের পুডিং অতিথি আপ্যায়নেও সেরা।

 

শোন তবে মা দিবসের কথা

‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কী বিশাল তার ব্যাপ্তি। সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এ শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব ন। তিনি আমাদের গর্ভধারিণী মা।

আজ আমাদের মা দিবস। মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য, মাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন, তাঁকে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য দিনটি পালন করা হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রোববার নরওয়েতে, মার্চের চতুর্থ রোববার আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে। আর বাংলাদেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার।

বিশ্বের অনেক দেশে কেক কেটে মা দিবস উদ্যাপন করা হয়। তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হলো, তাঁকে দুই কলম লেখার সময় হয় না। চকলেট উপহার দেয়ার অর্থ হলো, তা নিজেই খেয়ে ফেলা।

আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারা জীবন ব্যয় করেন অনাথ-আতুরের সেবায়। মেরি ১৯০৫ সালে মারা যান। লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। সাত বছরের চেষ্টায় মা দিবস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়।