banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

রেস্টুরেন্ট স্বাদের বার্গার তৈরি করে ফেলুন আলু দিয়ে

বার্গার ছোট বড় সবার পছন্দের একটি খাবার। অনেকে দুপুরের খাবার হিসেবে বার্গার খেয়ে থাকেন। আর বাচ্চাদের তো কথাই নেই, বার্গার হলে আর কিছুই লাগে না তাদের। কিন্তু প্রতিদিন বাইরের বার্গার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন রেস্টুরেন্ট স্বাদের বার্গার। তবে এই বার্গারটি একটু ভিন্ন ধরণের। সবজি খাওয়া নিয়ে প্রায় সব বাচ্চারাই বিরক্ত করে থাকে। কিন্তু আলু সব বাচ্চাদেরই পছন্দের সবজি। এই আলু দিয়েই তৈরি করুন মজাদার আলু টিক্কা বার্গার। টিফিনেও তৈরি করে দিতে পারেন এই খাবারটি।

উপকরণ

  • ২টি সিদ্ধ আলুর ভর্তা
  • ২ কাপ সিদ্ধ সবজি (পছন্দের যেকোন সবজি)
  • ১ চা চামচ আদা মরিচ পেস্ট
  • ধনেপাতা কুচি
  • লবণ
  • ১/৪ চা চামচ গরম মশলা
  • লেবুর রস
  • ২ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার
  • কর্ণ ফ্লাওয়ার পেস্ট
  • ৩ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার
  • লবণ
  • পানি
  • ভাজা ব্রেড ক্রাম্বস
  • কোলস্ল তৈরির জন্য
  • ১ কাপ মেয়নিজ
  • ১/২ কাপ গাজর কুচি
  • ১টি পেঁয়াজ লম্বা করে কাটা
  • সরিষার সস
  • গোলমরিচ
  • লবণ
  • বার্গার বন
  • মাখন
  • চিজ
  • টমেটো কেচাপ
  • লেটুস পাতা
  • শসার টুকরো
  • টমেটোর টুকরো

প্রণালী:

১। প্রথমে সিদ্ধ আলু, আদা মরিচের পেস্ট, সিদ্ধ সবজি (মটরশুঁটি, বিনস, গাজর, ফুলকপি), ধনেপাতা কুচি, লবণ, গরম মশলা, লেবুর রস, কর্ণ ফ্লাওয়ার ভাল করে মিশিয়ে নিন।

২। হাতের তালুতে অল্প করে তেল লাগিয়ে নিন। তারপর সবজিগুলো দিয়ে বড় চপ তৈরি করুন।

৩। আরেকটি পাত্রে কর্ণ ফ্লাওয়ার, লবণ এবং পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

৪। সবজির চপটি কর্ণ ফ্লাওয়ারে ডুবিয়ে তারপর ব্রেড ক্রাম্বসে জড়িয়ে তেলে দিয়ে দিন। বাদামী রং হয়ে আসলে তেল থেকে নামিয়ে ফেলুন।

৫। এখন মেয়নিজ, গাজর কুচি, পেঁয়াজ, সরিষার সস, গোল মরিচ, লবণ একসাথে মিশিয়ে ক্লোসোল তৈরি করুন।

৬। বার্গার বনে মাখন লাগিয়ে নন-স্টিক প্যানে সেঁকুন। তারসাথে সবজির চপটি দিয়ে দিন।

৭। সবজি চপটির উপর চিজ দিয়ে একটি ছোট বাটি দিয়ে চিজসহ চপটি ঢেকে দিন।

৮। বার্গার বনে টমেটো কেচাপ, লেটুস, শসা, টমেটোর টুকরো, অল্প একটু লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো, আলুর চপ, তার উপর কোলস্ল সালাদ দিয়ে দিন।

৯। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার আলু টিক্কা বার্গার।

 

দাঁত সুস্থ রাখতে যা করবেন

খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন, দাঁত সুস্থ না থাকলে খেয়ে মজা নেই। আবার এমন খাবারও খাওয়া উচিত নয়, যা দাঁতের বারোটা বাজিয়ে দেয়। কাজেই দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার-দাবার একটু বেছে নেওয়াই ভালো। দাঁত সুস্থ রাখতে যা যা করতে পারেন, তা এখানে তুলে ধরা হলো:
১. এমন খাবার না খাওয়াই ভালো, যা খেলে দাঁতের ‘অমর্যদা’ হয়! তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। ব্ল্যাক টি, রেড ওয়াইনজাতীয় পানীয়কে ‘না’ বলুন। ধূমপান তো আপনার সাদা দাঁত হলদেটে বানানোর জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া কোমলপানীয়, চাটনি, সয়া সস এবং ঘন জুসও দাঁতের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
২. চেঞ্জ উই নিড—প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটাই ছিল বারাক ওবামার মূলমন্ত্র। আপনার টুথব্রাশের বেলায়ও এই মূলমন্ত্র প্রয়োগ করুন। ব্রাশের বয়স দু-তিন মাস হলেই সেটাকে অবসরে পাঠান। না হলে সেই ব্রাশই আপনার মুখে ছড়িয়ে দেবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁত মাজার সময় মুখের ভেতর ব্রাশ রাখতে হবে ৪৫ ডিগ্রি কোণে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে ঘষলেই দাঁত পরিষ্কার হয় না। ফলে দাঁতের সঙ্গে কুস্তি না লড়ে আস্তে-ধীরে মাজুন। ব্রাশ ধরুন ঠিক পেনসিল যেভাবে ধরা হয়।
৩. ‘যার মুখে গন্ধ, তার ভোট বন্ধ’—এমন একটা স্লোগান শোনা যায় দাঁতের মাজনের বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনের বাণী ফেলনা নয়। মুখে দুর্গন্ধ মানেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। জিব পরিষ্কার না থাকা এর অন্যতম কারণ। তাই প্রতি সকালে জিব পরিষ্কার করুন। এর জন্য টুথব্রাশ ব্যবহারের চেয়ে স্ক্র্যাপার ব্যবহার করাই ভালো।

৪. ‘ডিটারজেন্ট’ খাবার খান! আঁতকে ওঠার কোনোই কারণ নেই। ডিটারজেন্ট খাবার সেগুলোই, যেগুলো খেলে দাঁত পরিষ্কার হয়। এই খাবারগুলোর মধ্যে আছে মূলত ফলমূল, শাক-সবজি। খেতে পারেন আপেল, গাজর, পেয়ারা। পপকর্নও বেশ কাজে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় এ ধরনের খাবার মূল খাবারের পর খেলে। মানে সকাল, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়ে একটা আপেল বা গাজর খেলেই দাঁত মোটামুটি পরিষ্কার!
৫. একটা পরীক্ষা চালাতে পারেন। শুনতে বিদঘুটে লাগলেও, এটা বেশ কেজো। হাতের তালু জিব দিয়ে ভেজান। ভেজা থাকতে থাকতে শুঁকে দেখুন। বাজে গন্ধ পেলে ব্যবস্থা নিন। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউথওয়াশ পাবেন হাতের কাছেই। তবে মাউথওয়াশ যেন অ্যালকোহলমুক্ত হয়। বেশি অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ উল্টো আপনার দাঁতের বারোটা বাজাতে ওস্তাদ!
৬. দিনে দুবার দাঁত মাজুন। একবার সকালে, আরেকবার রাতে। মুখের লালা দাঁতের প্লাক (ময়লা) ধরে রাখে। ঘুমানোর সময় এই প্লাক শুকিয়ে দাঁতে জমে যায়। ঘুমানোর আগে দাঁত মাজলে প্লাক জমে না। আর সকালে নাশতার পর দাঁত মাজাই ভালো। এতে রাত আর সকালের প্লাক একসঙ্গে দূর হবে। রিডার্স ডাইজেস্ট অনলাইন অবলম্বনে

 

নিরবের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেনাকুঞ্জে হয়ে গেল চলচ্চিত্র অভিনেতা নিরবের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। আর এ অনুষ্ঠানে শোবিজ ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারাকারা উপস্থিত ছিলেন। এর পাশপাশি পারিবারিক আরও্ অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পালিয়ে তিনি বিয়ে করেছিলেন প্রেমিকা তাশফিয়া তাহের ঋদ্ধিকে। তিনি এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী। এর আগে গত শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় নিরব-ঋদ্ধির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হয়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে নিরব-ঋদ্ধির বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় রাত ৮টার দিকে। অবশ্য নিরব আগে এসে একাই অংশ নিয়েছেন ফটোসেশনে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনেকটা সিনেমার মতই নিরব ও ঋদ্ধির পরিচয় হয়। দিনাজপুরের মেয়ে ঋদ্ধি সেদিন অটোগ্রাফ নিতে এসেছিলেন নিরবের। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁদের প্রথম ফোনে কথা হয়। আর একুশে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় প্রথম দেখা করেন তাঁরা। তারপর ধীরে ধীরে তাঁদের প্রেম রূপ নেয় প্রণয়ে।

 

‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার’ গ্রহণ করলেন সারা হোসেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার’ (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড) গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছরই বিশ্বের সাহসী নারীর পুরস্কার ঘোষণা করে। যারা শান্তি, বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর সারা হোসেনসহ বিভিন্ন দেশের ১৪ জন নারীকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

২০০৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০টি দেশের ১০০ জন সাহসী নারী এ পুরস্কার পেয়েছেন।

সারা হোসেনের পরিচিতি তুলে ধরে জন কেরি বলেন, ‘একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে সারা হোসেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের, বিশেষত নারীদের পক্ষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে লড়াই করেছেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১০ সালে বাংলাদেশে যে আইন গৃহীত হয়েছে, সেটির খসড়া প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সারা হোসেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীবিরোধী বিভিন্ন ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে জয়ী হয়েছেন সারা হোসেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। জ্ঞান ও প্রবল সাহসের জন্য বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন সারা হোসেন।’

সারা হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে।

আগামী পহেলা এপ্রিল সম্মানপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহর ভ্রমণ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে মিসৌরি, কেনটাকি, আলাবামা, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান, মিনোসোটা এবং পেনসিলভানিয়া। ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা আমেরিকান মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করে লসঅ্যাঞ্জেলসে তারা পুনরায় একসঙ্গে মিলিত হবেন এবং নারী ও মেয়েদের জীবনমান উন্নয়নে কী ধরনের ভূমিকা পালন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন।

 

তনুর লাশ তোলা হচ্ছে

দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য সোহাগী জাহান তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে তাঁর লাশ উত্তোলন শুরু হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহ আবিদ হোসেন, আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম লুৎফুন নাহার, সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান, তনুর বাবা মো. ইয়ার হোসেন প্রমুখ।

তনুর লাশ কবর থেকে তোলার জন্য গত সোমবার পুলিশ আদালত থেকে অনুমতি পায়। সে অনুযায়ী আজ তাঁর লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।

এসপি মো. শাহ আবিদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আসামি শনাক্তকরণে যেসব বিষয় প্রয়োজন, সেগুলো আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাশ তোলা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, আসামিকে শনাক্ত করার জন্য ছোটখাটো একটা আলামতও যেন বাদ না পড়ে।’

২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মো. ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই ও সেনানিবাস ফাঁড়ির কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। গত শুক্রবার মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরিত হয়। গতকাল মামলাটি পাঠানো হয় সিআইডিতে।

 

এক বছরে নারী নির্যাতন বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

দেশে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ৫৫টি জেলায় নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না। নথিভুক্ত হলে সংখ্যাটি আরও বাড়ত।
আরও কয়েকটি সংস্থার নিজস্ব পরিসংখ্যানও নারী নির্যাতন পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দিচ্ছে। পুলিশের মামলার হিসাবও বলছে, নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। নারী আন্দোলনকর্মী, মানবাধিকারকর্মীরা প্রতিনিয়তই এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম, গণমাধ্যমে প্রচার—সব মিলিয়ে আগে মানুষ যে বিষয়গুলোকে নির্যাতন বলেই মনে করত না, এখন তা যে নির্যাতন, সেই সচেতনতা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে নির্যাতন নিয়ে মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। ফলে নারী নির্যাতনের সংখ্যাটি বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে।
এরই মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ চলছে।
ব্র্যাকের পরিসংখ্যান: দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক তাদের সামাজিকÿক্ষমতায়ন কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫৫টি জেলা থেকে নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত বছরের জুন মাসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ২ হাজার ৮৭৩টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরের বছর সংখ্যাটি ৫ হাজার ৮টিতে পৌঁছায়। এই এক বছরে নারীর প্রতি প্রায় সব ধরনের সহিংসতাই বেড়েছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, দরিদ্র নারীরা সচ্ছল নারীদের থেকে বেশি (৫৪ শতাংশ) সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর নারী নির্যাতনকারীদের ৮৮ শতাংশই পুরুষ। এই পুরুষেরা নির্যাতনের শিকার নারীর পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশী। ব্র্যাকের জরিপ অনুযায়ী, নির্যাতনের বেশি ঘটনা ঘটে কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। বছরের মে মাসে নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ে। অন্যদিকে জানুয়ারি মাসে নির্যাতনের ঘটনা কম থাকে।
ব্র্যাকের পল্লিসমাজ নামের ওয়ার্ডভিত্তিক ও নারীকেন্দ্রিক সংগঠনের নেটওয়ার্কের সদস্যদের কাজে লাগিয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর পরিবার, প্রতিবেশী, পল্লিসমাজের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব তথ্য রাজধানীতে ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান এবং প্রধান কার্যালয় এ তথ্য ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করে।
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিন্স প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের পর পরিবারগুলো আইনি সেবা নিতে উৎসাহ দেখায়। তবে প্রভাবশালী মহলের চাপে দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ মামলা। তবে এর মধ্যে মামলার দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণেই ভিকটিমের পরিবার আসামিপক্ষের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে বা বিভিন্নভাবে আপস করে ফেলে।
অন্যান্য পরিসংখ্যান: বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলা ছিল ১৭ হাজার ৭৫২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ২২০টি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটেও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তালিকায় ‘নারী নিপীড়ন’ শিরোনামে মামলার তথ্য দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ শিরোনামে ১০০ মামলার কথা উল্লেখ আছে।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৪ সালে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।
নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান বলেন, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের এক জরিপে পুরুষদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁরা নারীদের অধস্তন মনে করেন কি না। এর উত্তরে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব ধরনের বেশির ভাগ পুরুষই জানান, তাঁরা নারীদের অধস্তন মনে করেন। অর্থাৎ এখানে নারীদের নিয়ে পুরুষদের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নারী নির্যাতনের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ১১ বছর দুই মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যা করেছেন ৫৬ হাজার ৬৫৬ জন নারী। পরিষদ যৌতুক, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতনের পর হত্যা, নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা এবং অন্যান্যসহ মোট ৩৪টি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৫ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। আর গত বছর পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩৭৩টি। এর মধ্যে ২১২ জনকেই স্বামী হত্যা করেন। বছরটিতে ৫৪ জন নারী বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নারী অধিকার কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, আগের তুলনায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। দেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছেন, তা যেমন সত্য; তেমনি নির্যাতন পিছু ছাড়ছে না, তা-ও সত্য। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, ডিজিটাল সংস্কৃতি, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়া, ধনতান্ত্রিক সমাজের অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্যাতন বাড়ছে।
গত রোববার রাজধানীর উত্তর বাড্ডার গৃহবধূ পূর্ণিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। স্বামী মিজানুর রহমান কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রান্নাঘর থেকে গরম পানি এনে ঢেলে দেন পূর্ণিমার মাথায়। ঘটনার পর থেকে মিজানুর পলাতক।
২৭ মার্চ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে সালিস বৈঠকে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করে তাঁদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে ‘আমরাই পারি’ জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামালও মনে করেন, নারী নির্যাতনের মূল কারণ সমাজ ও পরিবারে নারীর অধস্তন অবস্থা। অনেক মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্নেও নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার সঙ্গে আপস করছেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ) আইনসহ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে। তবে আইন ও অন্যান্য উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে যা যা করা দরকার, তা সেভাবে হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ: গতকাল মঙ্গলবার মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নারী নির্যাতন পরিস্থিতি আলোচনায় আসে। এতে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২৪ মার্চ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইন ও বিচার বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার কাজে সহযোগিতা করার জন্য মহিলা-বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ সেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তনু হত্যাসহ মোট নয়টি মামলা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতনের মামলা তিনটি। হেলপ লাইন নম্বর ১০৯২১। আটটি বিভাগীয় শহরে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি), জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৬০টি ওসিসি সেলসহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী হিসেবে সালমা খান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশের অগ্রগতিতে নারীর অবদানকে দৃশ্যমান করতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক করতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের সোচ্চার হতে হবে।