Daily Archives: May 1, 2025
এই গরমে মজাদার টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের কাঁচা আমের কারি
এই গরমে ভাতের সাথে একটি টক জাতীয় খাবার থাকলে মন্দ হয় না। আর তা যদি হয় কাঁচা আমের টক তবে তো কোন কথা নেই। অনেকে কাঁচা আম দিয়ে টক রান্না করেন, আবার ডালের সাথেও কাঁচা আম দিয়ে থাকেন। এই কাঁচা আম দিয়ে তৈরি করা যায় কাঁচা আমের কারি। টক, ঝাল, মিষ্টি স্বাদের এই কারিটি খেতে কিন্তু দারুন। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মজাদার এই রান্নার রেসিপিটি।
উপকরণ:
- ৪টি খোসা ছাড়ানো আম
- ২ টেবিল চামচ তেল
- ১ চা চামচ সরিষা
- ১ চা চামচ জিরা
- ১০টি কারি পাতা
- ২-৩টি এলাচ
- ১ ইঞ্চি দারুচিনি
- ১টি মাঝারি আকৃতির পেঁয়াজ কুচি
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো
- ১ চা চামচ কারি পাউডার
- ১ চা চামচ আদা রসুনের পেস্ট
- ১/২ কাপ নারকেল কুচি
- ১ টেবিল চামচ ভাজা ধনিয়া
- ২-৩ টি শুকনো মরিচ
- ১ চা চামচ ব্রাউন সুগার বা সাধারণ চিনি
- লবণ স্বাদমত
প্রণালী:
১। নন-স্টিক প্যানে তেল গরম করতে দিন। এবার এতে সরিষা, জিরা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।
২। তারপর এতে কারি পাতা, এলাচ, দারুচিনি এবং পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাঁজুন।
৩। বাদামী রং হয়ে আসলে এতে হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, এবং কারি পাউডার দিয়ে নাড়ুন। তারপর এতে আদা রসুনের পেস্ট দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন।
৪। এবার এতে কাঁচা আম দিয়ে দিন।
৫। মাঝারি আঁচে আধা কাপ পানি দিয়ে তিন থেকে চার মিনিট রান্না করুন।
৬। এখন নারকেল কুচি, ধনিয়া, শুকনো মরিচের সাথে পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন।
৭। এই পেস্টটি আমের মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে নিন।
৮। এরপর চিনি দিয়ে এক মিনিট রান্না করুন।
৯। ভাত বা পোলাও এর সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন কাঁচা আমের কারি।
Sanjeev Kapoor Khazana
গৃহবধূকে ন্যাড়া করলেন চেয়ারম্যান
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে কথিত পরকীয়ার অপরাধে সালিস বৈঠকে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে মারধর করে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে গতকাল রোববার গজালিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এস এ কুদ্দুস মিয়া ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খালিদুল ইসলামসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এদিকে নির্যাতনের খবর পেয়ে গলাচিপা থানার পুলিশ শনিবার রাতেই গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন বাহের গজালিয়া গ্রামের সামসুল হক ডাকুয়া, আশরাফুল হোসেন ও মো. নাসির এবং দক্ষিণ ইচাদি গ্রামের মো. নিজাম ও আবদুল মান্নান।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, পাশের বাড়ির তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই যুবক তাঁদের বাড়িতে যান। এ ঘটনা দেখে এলাকার কিছু লোক খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের কাছে অভিযোগ করেন যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ওই যুবকের পরকীয়া রয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রামপুলিশ আশরাফুল হোসেন ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ডেকে গজালিয়া ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে তাঁদের ইউপি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইউপি ভবনের দোতলার হলরুমে খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সালিস বৈঠকে রাত আটটার দিকে ওই যুবক ও গৃহবধূকে লাঠিপেটা করা, তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া ও যুবকের ৩০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, সালিস বৈঠকের পর রাত সোয়া আটটার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ইউপি ভবনের দক্ষিণ পাশের মাঠে নামানো হয়। সেখানে খালিদুল ইসলাম তাঁদের দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এরপর খালিদুল ইসলামের নির্দেশে গজালিয়া বাজারের এক সেলুন-কর্মী ক্ষুর দিয়ে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খালিদুল ইসলামের মুঠোফোনে সাত-আটবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরছেন না।
তবে এস এ কুদ্দুস মিয়া দাবি করেন, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ইউপি কার্যালয়ে ডাকা হলে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলামের উদ্যোগে সালিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি (কুদ্দুস) এ ঘটনা নিয়ে তাঁদের বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করেন। ওই দুজনের চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া বা তাঁদের মারধর করার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সালিসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘লোকমুখে খবর পেয়ে শনিবার রাতেই নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। এ ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রোববার দুপুরে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
সেনা কর্মকর্তার মেয়ে বলছি
সীমানা রহমান আঁচল: আমি একজন সম্মানিত আর্মি অফিসারের মেয়ে।জীবনের পুরাটা সময় বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টেই কাটসে।এখনও আর্মির সবচেয়ে নিরাপদ এলাকাতেই বসবাস আমার।আর্মি অফিসারের মেয়ে বলেই হয়তো এতোটা নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু যদি বাবা বা ভাই আর্মি অফিসার না হয়, সেক্ষেত্রে একটা মেয়ের ক্যান্টনমেন্টে থাকাটা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আশংকা অনেক।
ক্যান্টনমেন্ট এ বাইরের মানুষের ঢুকতে পরিচয় ও সাথে যৌক্তিক কারণ দেওয়া লাগে।এতে মানুষ বিরক্তও হয়। কিন্তু এগুলো নিরাপত্তার জন্যই করা হয়। সেখানে বাইরের থেকে কেউ এসে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে কোন মেয়েকে রেপ করে হত্যা করার মত অসাধ্য সাধন করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।
মানুষ তো এত বোকা না। সবাই বুঝতেসে এটা ভিতরের কারোরই কাজ।ফুল প্ল্যানিং এর মাধ্যমে করা এই হত্যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিল।আর যদি এটা কোন সিভিলিয়ান করে তাইলে কোথায় ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তা?
হ্যাঁ এই রেপ-হত্যা আমাদের দেশে এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রতিদিনই শুনতে হয়। কিন্তু যদি তা আর্মির এলাকায় হয়ে থাকে তাইলে আর্মির কীসের এতো অহংকার? একটা মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাইলে কী নিয়ে এতো গর্ব?
সোহাগী জাহান তনু যদি কোন অফিসারের মেয়ে হয়ে থাকতো তাইলে এতোক্ষণে ওর অপরাধীদের বের করে তিনবার ফাঁসিতে ঝুলানো হয়ে যেতো। দোষ তার বাবার ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা হওয়ার। দোষ তাদের ভাগ্যের।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
#justice for Tonu
অভিনয়কে বিদায়?
গতকাল সকালে নিজেই জানালেন খবরটা। মিডিয়াকে বিদায় জানাচ্ছেন মডেল ও অভিনেত্রী হাসিন রওশন। নতুন করে আর কোনো বিজ্ঞাপন বা নাটকে দেখা যাবে না তাঁকে। কিন্তু কেন? হাসিন বললেন, ‘এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। পুরো সময়টা আমি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চাই। সবার আগে আমার পরিবার।’
অবশ্য কথা প্রসঙ্গে হাসিন জানালেন, অনেক দিন ধরেই এমন সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ভাবছিলেন। কিন্তু হাতে কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ থাকায় চাইলেও অভিনয়কে বিদায় জানানো সম্ভব হচ্ছিল না। এখন সব ধারাবাহিকের কাজ শেষ। তাই তো সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করলেন না তিনি।
হাসিন বললেন, ‘ঈদের আগে অভিনয় বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকেই হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি আর মিডিয়ায় কাজ করব না। ঈদের আগে দেশের বাইরে যাব। তা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।’
২০১১ সালে ভিট–চ্যানেল আই টপ মডেল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মিডিয়ায় পা রাখেন হাসিন। গত পাঁচ বছরে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন, একক নাটক এবং ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এখনো তাঁর অভিনীত কয়েকটি ধারাবাহিক নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে এবং কিছু একক নাটকও আছে প্রচারের অপেক্ষায়।
যামিনী রায়ের রঙচিত্র নিয়ে ভিন্নরকম বৈশাখ
বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের বৈশাখ। ভেতরে ভেতরে নিজেকে প্রস্তুত করছে সবাই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। সেই রেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে। নানা সমস্যা, যন্ত্রণা সত্ত্বেও বাঙালি ঠিকই বৈশাখের প্রথম প্রহরে বরণ করে নেবে বছরের প্রথম দিনটিকে। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সবাই মেতে উঠবে নতুনের আবাহনে। এই আবাহন নতুন পোশাক ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। উদযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাচার এই পোশাক নিয়ে বাঙালির ভাবনার শেষ নেই। ফ্যাশন হাউজগুলো নিজেদের মতো করেই সংগ্রহ সাজাচ্ছে। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি রঙ বাংলাদেশও চলছে অভিন্ন লক্ষ্যে।
সময়কে রাঙানোর ব্রত নিয়ে। ফলে বৈশাখ নিয়ে রয়েছে বিস্তৃত আয়োজন। রঙ বাংলাদেশ বরাবরই বাংলার কথা বলে। বাঙালির কথা বলে। তাই এবারের অভিযাত্রায় সৃজনের প্রেরণা হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে যামিনী রায়ের অঙ্কনশৈলীকে। আপাদমস্তক বাঙালি চিত্রকর যামিনী রায়ের ক্যানভাসে মূর্ত অবয়ব, রেখা ও রঙের উপস্থিতি আমাদের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। রঙ বাংলাদেশের পোশাক ক্যানভাসে এবার উজ্জ্বলরূপে উপস্থিত যামিনী রায়। তবে কেবল বৈশাখ সংগ্রহ নয় বরং যামিনী রায়ের প্রেরণায় তৈরি পোশাক বৈশাখ পরবর্তীতেও মিলবে।
বাংলাদেশের পোশাক সংস্কৃতিকে সচেতনভাবে বিবেচনায় রেখেই রঙ বাংলাদেশ তাদের সংগ্রহ সাজিয়ে থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং এই সময়, প্রকৃতির অবস্থা, পারিপার্শ্ব, আবহাওয়াও পোশাকের উপকরণ নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
চার ধরণের শাড়িই বলা যেতে পারে এবারের বৈশাখ সংগ্রহের মূল আকর্ষণ। সূতি, হাফসিল্ক, এন্ডি ও মসলিনে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সালোয়ার-কামিজের রেঞ্জটিও উল্লেখযোগ্য। সবগুলোই সুতিপ্রধান। বৈশাখ সংগ্রহের অন্যান্য পোশাক যেমন মেয়েদের সিঙ্গল কামিজ, ছেলেদের পাঞ্জাবি ইত্যাদিও সুতি কাপড়ে তৈরি।
পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিচের তথ্যাবলী সংযুক্ত করা হলো:
#সংগ্রহ প্রেরণা:
যামিনী রায়ের সৃজনকর্ম।
#ব্যবহৃত মূল রঙ:
অফ হোয়াইট ও লাল।
#সাহায্যকারী অন্যান্য রঙ:
সোনালী হলুদ, কমলা, নীল, সবুজ, মেরুন, জলপাই সবুজ, কফি ।
#সংগ্রহে যা রয়েছে:
শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না, সিঙ্গল কামিজ, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক, যুগল পোশাক (সালোয়ার-কামিজ + পাঞ্জাবী, শাড়ী + পাঞ্জাবী), ওড়না ও উত্তরীও। এছাড়া আরো রয়েছে শাড়ীর সঙ্গে ম্যাচিং গয়না ও মেয়েদের ব্যাগ। উপহার সামগ্রী হিসাবে রয়েছে নানা ডিজাইনের মগ ।
#বৈশাখ সংগ্রহে ব্যবহৃত ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়া:
ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ড এম্ব্রয়ডারি ও মেশিন এম্ব্রয়ডারি
#পোশাকের মূল্য:
নারী : ৫০০-৫০০০ টাকা, পুরুষ: ৮০০-২৫০০ টাকা, শিশু : ৩০০-১২০০ টাকা, উপহার সামগ্রী: ২৫০-৩০০ টাকা, মেয়েদের ব্যাগ: ৫০০-১২০০ টাকা, গয়না: ৫০-৭৫০ টাকা ।
#ডিজাইনের সংখ্যা:
১. শাড়ি: মোট ৬০ ধরণের ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
২. পাঞ্জাবি: মোট ৪০ ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে।
৩. সালোয়ার কামিজ: মোট ২৫ ধরণের ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা হয়েছে।
৪. সিঙ্গল কামিজ: মোট ডিজাইনের সংখ্যা ৩৫।
৫. বাচ্চাদের পোশাক: এর ডিজাইন সংখ্য ২৫।
৬. মগ: মগ রয়েছে ৫ ধরনের ডিজাইনের।
#অতিরিক্ত তথ্য:
১.২০ মার্চ থেকে বৈশাখ সংগ্রহের পোশাক সব আউটলেটে পাওয়া যাবে।
২.বৈশাখের পোশাক উৎসব চলবে ২০ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
৩.শোরুমের পাশাপাশি অনলাইনেও কেনাকাটা করা যাবে। আছে হোম ডেলিভারীর সুবিধা।
মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ শব্দ যুক্ত করার রহস্য!
এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোন বিধিনিষেধ নেই।‘আল-মাউসু‘আ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া’ তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- “ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েয; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।
‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কী হয়’-পংক্তিটা অনেকাংশে সত্য হলেও সুন্দর অর্থবোধক, মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন নামের প্রভাবও গৌণ নয় । হজরত আবুদারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে।অতএব, তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখ। (আবুদাউদ, বায়হাকী)
তেমনিভাবে নামের শুরুতে বা শেষে বিভিন্ন উপাধিও আমরা যুক্ত করি, সেগুলোও সুন্দর অর্থবহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের নামের শেষে খাতুন যুক্ত করা হয়। এ শব্দটির অর্থ, উৎপত্তি ও ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।
বিখ্যাত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে এসেছে- খাতুন মূলত তুর্কি ভাষার শব্দ এর বহুবচন খাওয়াতিন, এটি তুর্কি শব্দ খান বা খাকান এর স্ত্রীলিঙ্গ। আর খান শব্দের অর্থ অভিজাত ব্যক্তি, শাসক ইত্যাদি । বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে খান বা খাঁ একটি উপাধি যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগত ভাবে মঙ্গোলীয় ও ও তুর্কী ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়। খাতুন এবং খানম হলো এর স্ত্রী বাচক রূপ। সে হিসেবে খাতুন মঙ্গোলীয় ও তুর্কীতে রাজার রানী সমপর্যায়ের শব্দ। খান এবং খাতুন হিসাবে ঘোষণার পরে এই উপাধি দ্বারা একজন খান -এর রাজরানী (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন ।
বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে খাতুন শব্দের অর্থ রয়েছে, গৃহিণী, অভিজাত মহিলা ইত্যাদি । আরবি নামকোষ আল মাউসুয়াতুল আলামিয়্যাতে ড. মাহমুদ আল আক্কাম বলেন, সেলজুক শাসনামলে খাতুন শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে । তখনকার সেলজুক সুলতানদের স্ত্রীদের খাতুন নামে ডাকা হতো, যেমন খাতুনে সুলতান সোলায়মান । তবে এর আগে ৭০০ হিজরির শুরুতে তুর্কিদের সাথে আরবদের মেলামেশা শুরু হলে আরবদের মাঝেও খাতুন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় । যেমন বিখ্যাত আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নাম ছিল জুবাইদা খাতুন ।
পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় খাতুন শব্দটি তুর্কিদের সূত্র ধরে ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে । মোগল শাসনামলে ফার্সি ভাষায় খাতুনের অনুপ্রবেশ ঘটে। তখন এই শব্দটি অভিজাত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল । এরই ধারাবাহিকতায় উর্দু এবং বাংলা ভাষায় তুর্কি খাতুন শব্দটি ঢুকে পড়ে । এখানকার মেয়েদের নামের পরে খাতুন শব্দের ব্যবহার অনেক লক্ষ করা যায় ।
তবে এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোন বিধিনিষেধ নেই। আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে- ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েজ; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে। [খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা- ৩৩১।] তাছাড়া ভালো অর্থবোধক নাম রাখা এটাও ইসলামের শিক্ষা । এর ফলে সেই ভালো অর্থটি নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল (تَفَاؤُلٌ) বলা হয়।
মুফতি মাহফুজ তানিম
পৃথিবী বিখ্যাত ৫ জন নার্স
বর্তমান বিশ্বে নার্সিং বিষয়ে পড়াশুনা করাটা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং নার্সিং পেশার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সম্মান ও স্বীকৃতি অর্জনের জন্য কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে। নার্সিং পেশাটি যে সত্যিই মূল্যবান তা উনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে স্বীকৃত ছিলো না যতক্ষণ না কিছু অসাধারণ ব্যক্তি বিশেষ করে মহিলারা আহত ও অসুস্থ মানুষের সেবা করার জন্য এই পথটি বেছে নেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরেই নার্সের অবস্থান। পৃথিবী বিখ্যাত এমন কিছু নার্স বা সেবিকাদের কথাই আজ আমরা জেনে নেই আসুন যারা নার্সিং পেশার ক্ষেত্রটিকেই পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
১। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল
১৮২০ সালের ১২ই মে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। ছোটবেলা থেকেই নার্সিং এর প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিলো। কিন্তু তাঁর পিতামাতা তাকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে অসম্মতি জানান। কারণ তখন এটি তেমন কোন মূল্যবান পেশা ছিলোনা। অবশেষে তাঁর পিতামাতা তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য অনুমতি দেন। ১৮৫১ সালে তিনি নার্সিং এর উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য জার্মানিতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন “জেন্টল ওমেন” হিসেবে। কিছুদিন পর ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। নাইটিংগেল তখন নার্সদের একটি দলকে প্রশিক্ষণ দেন যারা তুরস্কের সামরিক হাসপাতালে যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা শুশ্রূষা করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে “নাইটিংগেল ট্রেইনিং স্কুল ফর নার্সিং” প্রতিষ্ঠা করেন যা বিশ্বে মহিলাদের প্রথম নার্সিং স্কুল। এইখান থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইংল্যান্ডের সব হাসপাতালে নার্সদের পাঠানো হত। ১৮৬০ সালে নাইটিংগেল নার্সিং প্রশিক্ষণের তত্ত্ব বা মতবাদ প্রকাশ করেন যা ব্যপক প্রভাব বিস্তার করে। সেই বইটিতে তিনি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ, সামরিক স্বাস্থ্য এমনকি হাসপাতালের পরিকল্পনার বিষয়েও আলোচনা করেন যা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় এখনও অনুসরণ করা হয়।
২। কারলা বারটন
ইতিহাসের পরিচিত ব্যক্তিত্ব কারলা বারটন। তিনি ১০ বছর বয়সেই সেবার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁর বড় ভাইয়ের শুশ্রূষা করার মাধ্যমে। ১৫ বছর বয়সে সুশিক্ষিতা কারলা পাশের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৫৩ সালে তিনি আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে প্যাটেন্ট অফিসে অনুলিপিকর হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬১ সালে যখন আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। যুদ্ধের সময়ে তিনি একজন পুরুষের মতই সম্মুখে থেকে কাজ করেছেন। ১৮৭৭ সালে তিনি আমেরিকাতে রেডক্রসের প্রথম শাখার প্রস্তাব করেন। ১৮৮১ সালে আমেরিকান রেডক্রসের সভাপতি মনোনিত হন। রেডক্রসের কর্মী হিসেবে তিনি প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট অনেক দুর্যোগে আহত মানুষের সেবা করেছেন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত।
৩। মারগারেট সেঙ্গার
১৮৭৯ সালে জন্ম গ্রহণ কারা মারগারেট সেঙ্গার খুবই সাহসী নারী ছিলেন। ১৮ তম গর্ভধারণের ফলে তাঁর মায়ের মৃত্যু তাকে নার্সের পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তিনি গর্ভবতী মহিলাদের সেবার ক্ষেত্রে হয়ে উঠেন বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯০০সালে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন হাসপাতালে নাসিং এর উপর পড়াশুনার জন্য ভর্তি হন। তিনি মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার জন্য “হোয়াট এভরি গার্ল শুড নো” শিরোনামে আর্টিকেল লিখেন দ্যা নিউ ইয়র্ক কল পত্রিকায়। ১৯১৬ সালে তিনি আমেরিকাতে প্রথম বার্থ কন্ট্রোল ক্লিনিক খুলেন। কিছুদিন পরেই সেঙ্গার এবং তাঁর স্টাফদের গ্রেফতার করা হয় যার ফলে বার্থ কন্ট্রোলের বিষয়টি জনসম্মুখে চলে আসে এবং তিনি একদল সমর্থক পেয়ে যান। অবশেষে সেঙ্গার ও আমেরিকান বার্থ কন্ট্রোল লীগ “ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ব্যুরো” নামে প্রথম বার্থ কন্ট্রোল ক্লিনিক স্থাপন করেন ১৯২১ সালে। তিনি তাঁর লেখা অব্যাহত রাখেন এবং “মাই ফাইট ফর বার্থ কন্ট্রোল এন্ড মারগারেট সেঙ্গার” নামের আত্মজীবনী লিখেন।
৪। মেরী ব্রেকেনরিজ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার এক্সপেডিশনারি ফোরসে কাজ করতেন। তিনি মারগারেটের চেয়ে ভিন্ন ভাবে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি ইউরোপিয়ান ধাত্রীদের সাথে দেখা করেন এবং উপলব্ধি করেন যে তাঁদের পদ্ধতি মার্কিন মূলকের প্রত্যন্ত অংশে বসবাসকারী মহিলাদের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম। তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে উত্তর আমেরিকার অ্যাল্পাইন অঞ্চলের গর্ভবতী মহিলাদের জন্মপূর্ব ও জন্মকালীন সেবা প্রদান করতেন। এর জন্য তিনি রোগীর সামর্থ্য অনুযায়ী পারিশ্রমিক নিতেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক নার্স এই কাজ শুরু করেন। কেন্টাকির নার্সিং পরিষেবা কেন্দ্র এখনও এই কাজ করছে।
৫। মেরী এলিজা মাহনি
মেরী এলিজা মাহনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা যিনি কখনোই না বলতেন না। তিনি প্রথম রেজিস্টার্ড আফ্রিকান আমেরিকান নার্স। তিনি নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর ওমেন এন্ড চিলড্রেন এ ১৫ বছর কাজ করেন এর নার্সিং স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্বে। তিনি ১৯০৫ সালে গ্র্যাজুয়েট হন এবং একজন সুপরিচিত ও সম্মানিত প্রাইভেট কেয়ার নার্স হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। কৃষ্ণাঙ্গ নার্সদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি সব সময় চেষ্টা করে গেছেন। তিনি বর্তমানের আমেরিকান নার্স এ্যাসোসিয়েশনে জয়েন করেন। তিনি বোস্টনের প্রথম মহিলা যিনি ভোটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ১৯২০ সালে।
নার্স বা সেবিকারা শুধুমাত্র হাসপাতালের রোগীদের সেবাই করেন না তারা বিশ্ব ব্যাপী অনগ্রসর মানুষের সহায়তায়ও কাজ করেন। সমাজের উন্নতির জন্য বর্তমানে এইচআইভি সংকট মোকাবিলায় অথবা জনবহুল বিশ্বে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের কুফল অথবা দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাওয়ার পানির মাধ্যমে রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রে কাজ করছেন অনেক সেবিকারা। ভবিষ্যতে যারা এই মহীয়সী নারীদের মতোই ইতিহাসে নাম রেখে যাবেন।
লিখেছেন- সাবেরা খাতুন
কিভাবে পাবেন এসএমই লোন ???
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এস.এম.ই)। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারী পুরুষের সমতা বিধান ও নারীক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে এস.এম.ই খাত এক অসীম ভূমিকা রেখে চলেছে। এশিয়ার শিল্পোন্নত ও উদীয়মান দেশগুলো যেমন- তাদের সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ও তার উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে এই এস.এম.ই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে।
শ্রমঘন শিল্পের পরিকল্পিত অবস্থার ভারসাম্য, উন্নয়নকে আজ বিশ্ব শিল্পায়নের চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করছে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত করতে এস.এম.ই খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আমাদের দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা অপরিসীম। দুর্বার পরিশ্রম আর প্রবল আত্মবিশ্বাস এ খাতকে প্রভাবিত করে দেশের আর্থ-সামাজিক আবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে। কেননা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০% ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।
আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বিদ্যমান রয়েছে যে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তার পরিবর্তে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে। বিষয়টি ঢালাওভাবে কিংবা একতরফাভাবে বলা সমাচীন নয়। উদ্যোক্তা হিসেবে শিল্প কারখানা পরিচালনার জন্য যেমন নিয়মনীতি অনুসরন করতে হয় তেমনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পদ্ধতিগতভাবে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।
অনেক সময় উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাস্তব জ্ঞান এবং ব্যাংকের নিয়মকানুন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে অহেতুক অসুবিধার সম্মুখীন হয়। সম্প্রতি দেশের অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিল্পোদ্যোক্তা বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ ও অর্থায়নের সুবিধা প্রদানের জন্য এসএমই ব্যাংকিং ব্যাবস্থা চালু করেছে। অনেক ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক সেল/ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে।
ব্যাংক (Bank)
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থবাজারে এসএমই খাতে অর্থায়নে যে সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএমই ব্যাংকিং শুরু করেছে তাদের তালিকা নিম্নরূপঃ
(১) ব্র্যাক ব্যাংক (২) বেসিক ব্যাংক (৩) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৪) ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড (৫) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৬) এবি ব্যাংক (৭) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (৮) প্রিমিয়ার ব্যাংক (৯) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (১০) সিটি ব্যাংক লিমিটেড (১১) মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ (১২) স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক (১৩) ট্রাষ্ট ব্যাংক লিঃ (১৪) ব্যাংক এশিয়া (১৫) ডাচ বাংলা ব্যাংক লিঃ (১৬) সোনালী ব্যাংক লিঃ (১৭) জনতা ব্যাংক লিঃ (১৮) অগ্রনী ব্যাংক লিঃ (১৯) পূবালী ব্যাংক লিঃ (২০) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রভৃতি।
ব্যাংক একাউন্ট খোলা (Opening Bank Account)
ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনার পছন্দ মতো ব্যাংক হতে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকে এই কাগজপত্রের চাহিদা ভিন্ন রকমের হয়। এছাড়া নিয়মের কিছু কিছু ক্ষেত্রেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরমে ব্যাংক একাউন্ট করার দরখাস্ত ।
২. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩. হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর সত্যায়িত কপি।
৪. লিমিটেড বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর রেজুলেশন কপি অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্তসহ কে কে ব্যাংক একাউন্ট অপারেট করবেন তাদের নাম উল্লেখসহ গৃহীত সিদ্ধান্তের কপি।
৫. সার্টিফাইড Join Stock থেকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র (Certificate of Incorporation)।
৬. মেম্বার বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সমিতি হতে নেয়া সদস্য সার্টিফিকেট।
৭. ঐ ব্যাংকের অন্য কোন একাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক আপনার ছবি ও আবেদন পত্রে স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে এবং তাকে সনাক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ
(ক) প্রতিটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা/ ব্যবসায়ীদের ঋণ ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প দলিল তৈরীর ফরমেট রয়েছে। আপনি যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে ইচ্ছুক সে ব্যাংকের ফরমেট অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত পূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজ ও দলিলপত্রাদিসমেত প্রকল্প ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।
(খ) একটি উপযুক্ত প্রোজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আপনি বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং কনসালটেন্সী ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত তথ্য ও পরামর্শ পেতে পারেন।
(গ) যখন কোন ব্যবসায়ী যৌক্তিকভাবে মনে করেন ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য তার ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন তখন তিনি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের বরাবরে প্রয়োজনীয় বিবরণ সম্বলিত দরখান্ত পেশ করবেন।
এতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে
১. ব্যাংকের নিজস্ব ফরম সংগ্রহকরন এবং তা যথাযথভাবে পূরন।
২. হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
৩. ব্যবসায়ের টিন নম্বর।
৪. সম্পত্তির বর্তমান মূল্যের সনদপত্র (যেখানে শিল্পটি বিদ্যমান/ প্রতিষ্ঠা করা হবে)।
৫. সম্পত্তি বন্ধক নেয়া হলে তার বৈধ চুক্তিনামা (যেখানে প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা প্রতিষ্ঠা করা হবে)।
৬. ব্যাংকের হিসাব নং এবং জামানত স্থিতি।
৭. পৌরসভার বাসিন্দা হলে কমিশনারের সনদ। স্থানীয় পর্যায়ের হলে চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সনদ।
৮. লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমেরেন্ডাম এবং আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশনের কপি। অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হলে অংশীদারী চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি।
৯. প্রতিষ্ঠান চালু থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রহনে ইচ্ছুক হলে ব্যবসার ১ বছরের লাভ ক্ষতির হিসাব বিবরনী।
১০. প্রতি ব্যাংকের ফর্মে উল্লেখযোগ্য একটি দিক রয়েছে যাকে লেটার অব গেরান্টি বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে দুইজন যোগ্য গেরান্টারের সনদ প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
১১. প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্বে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ করে থাকলে তার হিসাবের একটি হালনাগাদ ও যথাযথ বিবরন থাকতে হবে।
১২. এসএমই খাতে কতিপয় ব্যাংক কোলেটারেল ফ্রি (জামানতবিহীন) লোন চালু করেছে। এক্ষেত্রে আগ্রহী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারী করেছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে এ বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।
১৩. কিছু কিছু ব্যাংকে বর্ণিত বিষয়াদির বহির্ভূত দলিলপত্রাদি প্রয়োজন হতে পারে।
ইক্যুইটি এন্ড এন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড (BBGd)
ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারি অর্থায়নে শিল্প উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ইক্যুইটি এন্ড এন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড ( ইইএফ) এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সম্প্রতি কৃষিভিত্তিক ও খ্যদ্য প্রাক্রিয়াজাতকরন প্রকল্পে ইইএফ সহায়তা প্রদান করা হয়। এসমস্ত প্রকল্পের অগ্রাধিকার খাতসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
১. কৃষিঃ (ক) হাইব্রীড বীজ উৎপাদন (ধান, ভূট্রা, সব্জী ও তরমুজ), (খ) বাণিজ্যিকভাবে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু বীজ উৎপাদন, (গ) বাণিজ্যিকভাবে ফুল, অর্কিড চাষ (রপ্তানি বাজারের জন্য), (ঘ) বাণিজ্যিকভাবে সরু/ সুগুন্ধী চাল (রপ্তানি বাজারের জন্য এবং প্রকৃত রপ্তানিকারক যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে), (ঙ) মাশরুম চাষ প্রকল্প।
২. মৎস্যঃ মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্পঃ (ক) IQF Found স্থাপন (Individual Quick Freezing/Fish Processing), (খ) মূল্য সংযোজিত মৎসজাত খাদ্য উৎপাদন ( Value Added Fish Product Development and Marketing), (গ) আধুনিক পদ্ধতিতে শুটকীমাছ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরন ও বাজারজাতকরন (Dehydrated Fish Plant ),
মৎস্য চাষ ও হ্যাচারীঃ (ক) বাণিজ্যিকভাবে high value মাছের খামার ও হ্যাচারী স্থাপন।
খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্পঃ মৎস ও পশুজাত গুনগত মানসম্পন্ন (Balance feed) খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্প।
৩. পশুসম্পদঃ পশুজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্প স্থাপনঃ (ক) দুধ, ডিম প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট, (খ) মাংস প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট (আধুনিক কসাইখানাসহ।
প. স্বাস্থ্য রক্ষা ও ব্যবস্থাপনাভিত্তিক শিল্প স্থাপনঃ গবাদি পশু/ হাঁস-মুরগীর রোগ নির্ণয়/ চিকিৎসার জন্য ল্যাবরেটরী ও হাসপাতাল স্থাপন।
পোল্ট্রি উৎপাদনভিত্তিক শিল্পঃ গ্রেট-গ্র্যান্ট প্যারেন্ট ও প্যারেন্ট স্টক খামার।
সুদঃ সুদ নেই। প্রকল্পের অর্জিত লাভ-লোকসান উদ্যোক্তার এবং ইইএফ এর মূলধনের আনুপাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বন্টিত হবে।
প্রকল্প ব্যয়ঃ মোট প্রকল্প ব্যয় সর্বনিম্ন ৫০.০০ লক্ষ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০.০০ কোটি টাকা হতে পারে।
বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ
ইক্যুইটি এন্ড ইন্ট্র্যাপ্র্যান্যারশীপ ফান্ড ইউনিট
বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রধান কার্যালয়, ঢাকা-১০০০
ফোনঃ ৭১২৬২৮০-৯৫, ৭১২৬১০১-২০
ওয়েবসাইটঃ www.bangladesh-bank.org
স্মল এন্টারপ্রাইজ ফান্ড
(ক) বিভিন্ন ব্যাংকে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা থাকলেও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। আলোচ্য তহবিলের আওতায় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা স্পল্প সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ পায়। এটি এসইএফ ফান্ড নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের এসইএফ ঋণ সহায়তা প্রদান করে না। নিম্নলিখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্টভাবে এ ঋণ প্রদান করা হয়ঃ
(১) ওয়ান ব্যাংক (২) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৩) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৪) ঢাকা ব্যাংক (৫) এনসিসি ব্যাংক (৬) উত্তরা ব্যাংক (৭) মাইডাস (৮) আইডিএলসি (৯) পিপলস্ লিজিং (১০) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (১১) প্রিমিয়ার লিজিং। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা লাভের জন্য উল্লেখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ইন্স্যুরেন্স (Insurance)
একটি শিল্প কারখানায় দুই ধরনের ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রহণ করতে হয়। মূল কারখানা, বিল্ডিং, মেশিন, কাঁচামালের জন্য যে কোন মালিককে ফায়ার ও ফ্লাড (Fire and Flood ) পলিসি গ্রহণ করতে হয়। বিপদকালীন সময় এই Insurance Policy একটি শিল্প কারখানাকে রক্ষা করতে পারে। আর কারখানা চালু হওয়ার পর কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানির জন্য মেশিন পলিসি করতে হয়। আপনি পছন্দসই যে কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বেছে নিতে পারেন। রেফারেন্সঃ ড. নূরুল কাদির ও অন্যান্য (২০০৯) এসএমই বিজনেস ম্যানুয়াল, ১ম এডিশন., ঢাকা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন.
লেখকঃ এস. এম. শহিদুল ইসলাম,
বুকের এদিক–ওদিক ব্যথা?
বুকে ব্যথা হলেই হৃদ্রোগের ব্যথা ভেবে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। হৃদ্রোগজনিত ব্যথার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর বাইরেও নানান কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।
সাধারণত বুকের মাঝের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা, বুক ভারী লাগা, বুকে তীব্র চাপ বা মোচড় দিয়ে ধরার মতো অনুভূতি, ৩০ মিনিটের অধিক সময় ধরে ব্যথা থাকা, বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমা, ব্যথার সঙ্গে ঘাম বা বমি বমি ভাব হৃদ্রোগজনিত ব্যথার লক্ষণ। হাঁটাচলা, পরিশ্রম ও ভারী খাবারের পরে এ ব্যথা বাড়তে পারে। ঘাড়, হাত বা চোয়ালের দিকেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বুকে ব্যথার অন্যান্য কারণ
ফুসফুস ও বক্ষপিঞ্জরের বিভিন্ন সমস্যায় বুকে ব্যথা হতে পারে। নিউমোনিয়া, ফুসফুসের পর্দার প্রদাহ, হাঁপানি, ফুসফুসে রক্তসঞ্চালন কমে যাওয়া, ফুসফুসের পর্দায় বাতাস জমা, বক্ষপিঞ্জরের তরুণাস্থি বা পেশির প্রদাহের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার ছড়িয়ে গিয়ে ফুসফুসের পর্দা ও বক্ষপিঞ্জর আক্রান্ত হলেও বুকের একপাশে ব্যথা হতে পারে।
যকৃতে সংক্রমণ বা পুঁজ, পিত্তথলির প্রদাহ এবং তীব্র রক্তশূন্যতা হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। পেটের প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও বুকে চিন চিন ব্যথা হতে পারে। মনে রাখতে হবে, বুকের বাম দিকে ইনফ্রাম্যামারি লাইনের নিচে ব্যথা হওয়াটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার লক্ষণ।
কী করবেন?
বুকে ব্যথা হলেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। সমস্যাগুলো গুছিয়ে চিন্তা করুন। হৃদ্রোগের ব্যথার যেকোনো বৈশিষ্ট্য দেখা দিলে, হাঁটাচলা করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলে কিংবা ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট হলে বা জ্বর ও কাশি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ
মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
দুঃখ-যন্ত্রণা ও অশান্তি লাঘবে দোয়া ইউনুসের আমল
হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাস আল্লাহর নবী ছিলেন। কোরআনে কারিমের ১০ নম্বর সূরার নামকরণ তার নামে রাখা হয়েছে। তিনি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হলে একটি প্রকাণ্ড মাছ তাকে গিলে ফেলে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার রহমতে ওই মাছ তাকে হজম করতে সমর্থ হয়নি, এমনকি তার দেহের সামান্যতম অংশেও কোনোরূপ ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারেনি। সেই মাছের উদর-অন্ধকারে বসে আল্লাহর নবী হজরত ইউনুস (আ.) অত্যন্ত সম্মান, বিনয় ও কাতর স্বরে যে দোয়াটি পড়েছিলেন তা দোয়া ইউনুস নামে বহুল পরিচিত। সেই দোয়াটি হচ্ছে- ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজলিমীন।’
কোরআনে কারিমে হজরত ইউনুস (আ.)-এর নামে যেমন একটি সূরা রয়েছে তেমনি ইউনুস নামটিও অন্ততপক্ষে পাঁচ স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। কোরআনে হজরত ইউনুস (আ.) কে ‘যুন্নুন সাহিবুল হূত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। যুন্নুন শব্দের অর্থ মাছের সঙ্গে সম্পৃক্ত আর সাহিবুল হূত শব্দের অর্থ মৎস্য সহচর।
হজরত ইউনুস (আ.) নিনেভা নামক জনপদে প্রেরিত হন। কিন্তু নিনেভার লোকজন তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় তিনি তাদের আল্লাহর গজবের খবর দিয়ে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিনেভা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য রওনা হন। পথিমথ্যে সমুদ্র পড়লে তা পাড়ি দেওয়ার জন্য একটি জাহাজে ওঠেন। জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে, যে কারণে জাহাজটি বিপাকে পড়েছে। পরে সেকালের নিয়ম অনুযায়ী অপরাধীকে চিহ্নিত করতে লটারির ব্যবস্থা করা হয়। লটারিতে বার বার হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে সমুদ্রে ফেলে দিলে জাহাজটি বিপাক থেকে রক্ষা পায়, আর একটি বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউনুসও ছিল রাসূলদের একজন। স্মরণ করো, যখন সে পালিয়ে বোঝাই নৌযানে পৌঁছল, অতঃপর সে লটারিতে যোগদান করল এবং পরাভূত হলো। পরে এক বৃহদাকার মাছ তাকে গিলে ফেলল। তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল। সে যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করত, তাহলে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ওই উদরে থাকতে হতো।’ -সূরা সাফফাত : ১৩৯-১৪৪
হজরত ইউনুস (আ.) অক্ষত অবস্থায় ৪০ দিন সেই বৃহদাকার মাছের উদরে বসে তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তিগফার করেছিলেন এবং আল্লাহর বিনানুমতিতে স্বদেশ ত্যাগ করার জন্য অনুশোচনা ব্যক্ত করে কান্নাকাটি করেছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং স্মরণ করো যুন্নূনের কথা যখন সে রেগেমেগে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে (ইউনুস) অন্ধকার হতে আহবান করেছিল, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র সুমহান। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।’-সূরা আম্বিয়া : ৮৭
আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নবীকে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাছের উদরের সেই নিকষকালো অন্ধকারে ৪০ দিন ভীষণ কষ্টের মধ্যে থেকে হজরত ইউনুস (আ.) আল্লাহর প্রেমের এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তখন আমি তার (ইউনুসের) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা থেকে এবং আমি মুমিনদের নাজাত দিয়ে থাকি।’ -সূরা আম্বিয়া : ৮৮
হজরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের উদরে ছিলেন। এর পর আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং আল্লাহর হুকুমে মাছটি তাকে সমুদ্রের কিনারে উগরে দেয়। কোরআনে কারিমে হজরত ইউনুস (আ.)-এর মুক্তি পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘অতঃপর আমি ইউনুসকে নিক্ষেপ করালাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং সে ছিল রুগ্ন। আর আমি তার ওপর একটি লাউগাছ গজালাম।’ -সূরা সাফফাত : ১৪৫-১৪৬
উল্লেখ যে, হজরত ইউনুস (আ.) দীর্ঘ ৪০ দিন মাছের পেটে পানি-খাদ্যবিহীন অবস্থায় থাকায় ফ্যাকাসে এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, যে কারণে এই অবস্থা থেকে নিরাময়ের জন্য আল্লাহ্তায়ালা পরিবেশ দূষণমুক্তকারী এবং নির্মল ছায়াদানকারী লাউগাছ সেখানে গজিয়ে দেন। সেই লাউগাছটি এত দ্রুত গজিয়ে ওঠে যে, মুহূর্তের মধ্যে ঘন লতাপাতায় তা তাঁবুর আকার ধারণ করে। তিনি কচি লাউ খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন।
দোয়া ইউনুস- লাইলাহা ইল্লা আন্তা সুব্হানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজজলিমীন এর মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নবী হজরত ইউনুস (আ.) এই দোয়া পাঠ করেই আল্লাহর রহমতে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।
কোনো কোনো বুজুর্গ বলেন, সিজদায় যেয়ে ৪০ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
আরও বর্ণিত আছে, দৈনিক এক হাজার বার দোয়া ইউনুস পড়লে পদমর্যাদা সমুন্নত হয়, আল্লাহ তার রুজি-রোজগারে সমৃদ্ধি দান করেন, তার দুঃখ-যন্ত্রণা, পেরেশানি, অশান্তি, কষ্ট প্রভৃতি নিবারিত করেন, সকল প্রকার কল্যাণের দ্বার তার জন্য খুলে দেন, শয়তানের প্ররোচনা হতে তাকে রক্ষা করেন।
এ দোয়া এক লাখ পঁচিশ হাজার বার পড়লে (খতমে ইউনুস) সব ধরনের অপকার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, রোগ-শোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সূরা ইউনুসে রয়েছে আল্লাহর তাওহিদের সুস্পষ্ট ঘোষণা, তার পবিত্রতার ঘোষণা এবং নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি, যে কারণে এটা এত মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়েছে।
নিয়মিত সূরা ইউনুস আমলের মধ্যে অনেক ফায়দা রয়েছে। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই দোয়ার গ্রহণীয়তা কি কেবল হজরত ইউনুস (আ.)-এর জন্যই প্রযোজ্য, না সব মুসলিমের জন্য? জবাবে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য এই দোয়াটি খাসভাবে কবুল হলেও কবুলের ব্যাপারে এটা সব মুসলিমের জন্য সব সময়ই প্রযোজ্য। তুমি কি কোরআনে পাঠ করোনি- ‘ওয়া কাজালিকা নুনজিল মুমিনিন- আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।’
মানসিক চাপমুক্ত ও মন ভালো রাখতে একা থাকুন
একা থাকা মানেই অলস জীবন-যাপন, দুশ্চিন্তা আর সময়ের অপচয় মনে করেন অনেকে। কিন্তু Solitude আর Loneliness শব্দ দু’টি কিন্তু ভিন্ন। বেশিরভাগই এ দু’টোকে এক বলে ভুল করেন।
Solitude অর্থ নির্জনতা যেখানে Loneliness মানে একাকিত্ব। একা থাকা মানেই একাকিত্ব নয়। নির্জনে শুধুমাত্র নিজেকে সঙ্গ দেওয়া একটি শারীরিক ও মানসিক চাহিদা। এতে ফিজিকাল ও মেন্টাল রিল্যাক্সমেন্ট হয়।
Loneliness এর ফলশ্রুতিতে তৈরি হতে পারে মানসিক অবসাদ। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলে, Solitude শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ফলদায়ক। জীবনকে আরও চিন্তাশীল, গতিশীল, সফল ও উৎপাদনশীল করতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্জনে একা থাকা উচিত বলে মনে করে মানসিক বিশেষজ্ঞরা। এর কিছু সফলতা রয়েছে-
চিন্তার জট মুক্তি
গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যেটুকু সময় নির্জনে একা থাকি সেসময় আমাদের মস্তিষ্ক ভালো ভালো সিদ্ধান্ত তৈরি ও জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং উদ্যম ফিরে আসে। যা কোলাহল বা লোকজনপূর্ণ স্থানে সম্ভব নয়।
মানসিক চাপ দূর
দৈনন্দিন কাজ, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মিটিং ইত্যাদিতে মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয়। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে একা থাকুন। এ সময়টায় নিজের যা ভালো লাগে, যা ভালো অনুভব করেন তাই করুন। ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর ও মনে জোর ফিরে আসবে।
সূক্ষ্ম চিন্তা ও বিচারশক্তি
সারাক্ষণ অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বা আলোচনা করলেও অনেক সময় সমাধান পাবেন না। কারণ আপনার মস্তিষ্ক তথ্য নিতে থাকবে কিন্তু তা বিশ্লেষণের জন্য, ভুল-ঠিক বিচারের সময় প্রয়োজন। সে সময়টি নিন।
ইতিবাচক চিন্তা ও সহজ জীবনবোধ
নির্জনতা জীবনকে সহজ করে। সারাদিন কী কী করলেন, আপনার দিনের পরিকল্পনা কতোটুকু সফল হলো, কতোটুকু অসম্পূর্ণ থাকলো, সফল হতে আর কী করা যেতে পারে তা ভাবার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিনের এ ভাগটাই। এসব ছাড়াও সম্পর্কের জটিলতা ও সমস্যাগুলো সমাধানের পথ হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টি।
বিছিন্নতা
আপনি একাধারে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করছেন। সামলে নিচ্ছেন বিভিন্ন ধারার সম্পর্ক। দিনের যেকোনো একটি ভাগে নিজেকে সব বন্ধন থেকে মুক্ত করুন। নির্জন বারান্দায় সময় কাটান, ছাদে বা প্রিয় স্থানে একা সময় পার করুন। ভাবুন এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র সত্ত্বা যাকে আপনি চেনেন ও জানার চেষ্টা করছেন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার সব সমীকরণগুলো মিলে যাবে।
একটুখানিই তো সময়, এরপর না হয় ফের যুক্ত হবেন প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ও ব্যস্ত পৃথিবীতে।
ভালো থাকুন।