banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

এগ স্যালাড স্যান্ডউইচ

উপকরণ
ডিম- ২ টি (ভাল করে সিদ্ধ করে কুচি কুচি করে কাটা)
গাজর – ১/২ কাপ (সিদ্ধ করে লম্বা করে কাটা)
সেলারি – ১/২ কাপ (কুচনো)
মেয়োনিজ – ৩ টেবিল চামচ
মাস্টার্ড সস – ১/২ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
পাউরুটি – ৪টি
লেটুস – ৪টি পাতা

প্রণালি
প্রমে একটি বাটিতে ডিম, গাজর, সেলারি,
মেয়োনিজ, মাস্টার্ড ও লবণ-মরিচ দিয়ে ভাল করে
মেখে নিন। ভাল করে চামচের সাহায্যে মিশিয়ে নিন।
ডিমটা ঘেটে গেলে ক্ষতি নেই। এবার পাউরুটির
একটা স্লাইসের উপর লেটুস পাতা রেখে ২ চামচ এই
স্পেডটা লাগিয়ে নিন। এবার অন্য একটি পাউরুটি
দিয়ে উপর থেকে ঢেকে পরিবেশন করুন।

 

ঘরে আনুন সবুজের ছোঁয়া

আপনার গৃহ সজ্জায় ইনডোর প্ল্যান্ট হতে পারে একটি অতি প্রিয় ও প্রয়োজনীয় উপাদান। সুন্দর টবে সবুজ কয়েকটি গাছ শুধু আপনার ঘরের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করবে না, পারিপার্শ্বিকতায় আনবে সতেজতা।কিন্তু বাড়িতে শুধু গাছ রাখলেই হবেনা, তার সঠিক যতড়ব ও সাজিয়ে রাখার কৌশলগুলোও রপ্ত
করতে হবে।

 ঘরের ভেতর বা বারান্দায় এমন জায়গায় ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে হবে যেন খুব বেশি কড়া আলো না পড়ে আবার খুব অন্ধকারেও না থাকে। জানালার কাছে, অথবা বারান্দায় গাছ রাখুন।

 সপ্তাহে অন্তত একদিন সব গাছ রোদে দিন। দুপুরের কড়া রোদে গাছ রাখবেন না। সকালের হালকা রোদে গাছ কিছুক্ষণ বাইরে রাখার চেষ্টা করুন।

 গাছে ঘনঘন পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। এতে গাছ পচে যেতে পারে এবং গাছ দুর্বল
হয়ে পড়বে।
 ইনডোর প্ল্যান্ট বেশি বড় করবেন না। এতে ঘর অন্ধকার লাগবে। তাই গাছের বাড়তি ডালপালা ছেঁটে
ফেলুন।

 গাছে ঘন ঘন পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত পানি দিলে গাছ পচে যেতে পারে। কিন্তু তাই
বলে একেবারে পানি দেয়া বন্ধ করবেন না। তাহলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়বে। সকাল-বিকাল অল্প করে পানি দিন।

 ইনডোর পা›ট এসি বা এয়ারকুলারের খুব সামনে রাখা উচিত নয়। এতে গাছ খুব তাড়াতাড়ি
শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 সপ্তাহে একবার গাছে পোকামাকড়ের ওষুধ দিন।

 রাতে গাছ কার্বন-ডাই অক্সাইড ছাড়ে বলে সম্ভব হলে রাতে ঘরের বাইরে গাছগুলো রেখে দিন এবং
সকালে আবার ঘরে নিয়ে আসুন। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে জানালা খোলা রাখুন।

 গাছের পাতায় বেশি ধুলো জমলে জোরে ঘষবেন না, নরম কাপড়ে অল্প পানি দিয়ে পরিষ্কার
করুন। অথবা স্প্রে করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। পাতার নিচের অংশও পরিষ্কার করুন।

 ইনডোর পা›ট রাখার জন্য আমরা অনেকেই শখ করে ডেকোরেটিভ পট ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু
খেয়াল রাখতে হবে যখনই দেখবেন শিকড় ড্রেনেজ হোলের কাছে পৌঁছে গেছে তখনই নতুন পটে গাছ
সরিয়ে রাখুন।

 পানি দেয়ার সময় খেয়াল রাখুন যেন বাড়তি পানি গড়িয়ে পড়ে। এতে আপনার ঘর অপরিষ্কার হয়ে
যাবে। তাই একদিন পরপর অল্প করে পানি দিন।

 টব বদলানোর সময় খেয়াল রাখুন শিকড় যাতে ভেঙে না যায়।

 গাছের পাতার রঙ হালকা হতে থাকলে ঠাণ্ডা ও আলো কম পৌঁছায় এমন জায়গায় গাছ রাখতে হবে।

 টবের মাটি মাঝে মাঝে ওলট-পালট করে দেয়া ভালো। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে।

 শুধু গাছের গোড়ায় পানি দিলেই হবে না। গাছের পাতায় সপ্তাহে ৩ দিন পানি স্প্রে করতে হবে।

 কিছু গাছের জন্য খুব অল্প পানির প্রয়োজন পড়ে। যেমন- জেড প ্যান্ট, ক্যাক্টাস, এ্যারেইকা পাম। এগুলোতে সপ্তাহে ২ বার অল্প পরিমাণে পানি দিলেই হয়।

 খুব ছোট ক্যাক্টাস থাকলে গোড়ায় পানি না ঢেলে সপ্তাহে ১ দিন পানি স্প্রে করে দিলেই হবে।

 নতুন নতুন যারা ইনডোর প্যান্ট লাগানোরচিন্তা করছেন তাদের জন্য মানিপ্যান্ট, স্পাইডার প্যান্ট আর ইংলিশ আইভি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এগুলো সহজেই বেড়ে ওঠে।

 

সহস্রাব্দের নারীবাদ

‘ফেমিনিজম’ বা ‘নারীবাদ’ নিয়ে ভুল ধারণা বিদ্যমান রয়েছে সারা বিশ্বের প্রায় সবদেশেই।এমনকি এই ২০১৬ সালে এসেও ‘নারীবাদ’কে বেশ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন স্বয়ং নারীরাও। অনেকে আবার ব্যঙ্গ করে বলেন
বর্তমানের নারীবাদে আসলে নারীকেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে! মূলতঃ নারীবাদ বিষয়টি নিয়ে সঠিক জ্ঞানের
অভাবই এসব নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। নারীদের অধিকার আদায়, সমতা অর্জন এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংগঠিত বিভিনড়ব মতবাদ ও আন্দোলনই হলো ফেমিনিজম, যার বাংলা শব্দটি হলো নারীবাদ। এবং বলা হয়ে থাকে, এসব ‘কজ’ (পধঁংব)
বা অধিকারের যেকোন একটি যদি কোনো ব্যক্তি সমর্থন করে থাকেন তবে তিনি নিজেকে নারীবাদী বলুন আর
না-ই বলুন, সংজ্ঞানুযায়ী তিনি একজন ‘নারীবাদী’। এবং এসব কোনো একটি অধিকার আদায়ের জন্য সংঘটিত
আন্দোলনগুলোও নিজস্ব কর্মীদের দ্বারা নারীবাদী আন্দোলন বলে অ্যাখ্যায়িত নাহলেও সেগুলো আসলে
নারীবাদী আন্দোলন, বা সংক্ষেপে নারী আন্দোলন। এখানে অধিকার আদায় এবং অংশগ্রহণ বলতে
ভোটাধিকার, রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, কাজের ক্ষেত্রে সমান পারিশ্রমিক, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার,
বিবাহে সমানাধিকার, মাতৃত্ব, অবসর, প্রজনন-সংμান্ত অধিকার (গর্ভনিরোধক ব্যবহার ও গর্ভপাতের অধিকার), ভাষার লিঙ্গ নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীন বেতন-কাঠামো এবং বিভিনড়ব ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রভৃতির স্বীকৃতি প্রদান তথা নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নকে বোঝায়।
এসব অধিকার আদায়ের যেকোনো ধরনের আন্দোলনই
নারীবাদের অন্তর্ভূক্ত।
‘নারীবাদ’ ধারণাটি মোটেও নতুন নয়, বরং এর রয়েছে অন্তত ১৩০ বছরের প্রত্যক্ষ ইতিহাস। সভ্যতার ইতিহাসে প্রায় প্রতিটি সামাজিক পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে লিঙ্গবৈষম্য নিরসনকারী নারীবাদী আন্দোলনগুলো রয়েছে। বিভিনড়ব মতবাদ অনুযায়ী নারীবাদী হতে পারেন যেকোন লিঙ্গের। এমনকি ‘নারীবাদ’ শব্দটি প্রম যিনি ব্যবহার করেন এবং এই মতবাদের সূত্রপাত ঘটান, তিনি নিজেও একজন পুরুষ। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি দার্শনিক চার্লস ফুরেয়ার প্রম নারীবাদ শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। নারীবাদ” (ভবসরহরংস) সহস্রাব্দের নারীবাদ এবং নারীবাদী” (ভবসরহরংঃ) শব্দ দুটি ফ্রান্স ও
নেদারল্যান্ডসে প্রম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে, যুক্তরাজ্যে ১৮৯০ সালে, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সালে। অক্সফোর্ড
ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী, নারীবাদী” শব্দের উৎপত্তিকাল ১৮৫২ এবং নারীবাদ” শব্দের ক্ষেত্রে তা ১৮৯৫।
সময়কাল, সংস্কৃতি ও দেশভেদে বিশ্বের বিভিনড়ব প্রান্তের নারীবাদীরা বিভিনড়ব কর্মসূচী ও লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করেছেন। তবে পাশ্চাত্য নারীবাদী আন্দোলনের ইতিহাস তিনটি প্রবাহ”-এ বিভক্ত। নির্দিষ্ট কিছু নারীবাদী লক্ষ্যের এক একটি আঙ্গিক নিয়ে এক একটি প্রবাহ কাজ করেছে। প্রম প্রবাহটি ছিল ঊনবিংশ শতক ও বিংশ শতকের প্রম ভাগে। এ সময় নারীর ভোটাধিকার অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়, এবং নারীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্বটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এ শিক্ষার অধিকার অনেকটাই শুধু সমাজের ঊঁচু শ্রেণীর নারী সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হয় ১৯৬০’র দশকে। এই সময়ে নারীর সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার
ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। তবে পুরুষতান্ত্রিকতার মূল কারণ হিসেবে শুধু মাতৃত্ব ও যৌনতায় পুরুষের নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করার হয় এসময়ের কিছু ত্বত্ত্বে। ফলে নারীবাদের ধারণাকে এভাবে সীমিত করে ফেলায় সমালোচনার
মুখে পড়ে সেই সময়ের নারীবাদ। এছাড়া যৌনতার সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের প্রয়োজন শেষ করার অংশ হিসেবে
সমলিঙ্গ সম্পর্কগুলো ব্যাপক হারে আত্মপ্রকাশ করে, এবং এতে সমকামীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেরও
সূত্রপাত ঘটে। একইসঙ্গে সামনে চলে আসে তৃতীয় লিঙ্গদের সামাজিক অধিকারের বিষয়গুলোও।
তৃতীয় প্রবাহ মূলতঃ দ্বিতীয় প্রবাহের প্রতিμিয়া স্বরূপ ১৯৯০ এর দশক থেকে শুরু হয়। তবে এটি একটি
ভিনড়বমুখী ধারাবাহিকতা। এই পর্যায়ে প্রাগত লিঙ্গ নির্ভর সামাজিক মূল্যবোধ গুলোর পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান নারীবাদীরা। নারীদের সাজসজ্জার বিষয়টিকে দ্বিতীয় প্রবাহে পুরুষতান্ত্রিকতার বাহক হিসাবে ধরা হতো।
তবে সাজসজ্জাসহ নারীদের সব ধরনের নারীসুলভ আচরণ নিয়েও একজন নারী যে কোনো পেশাতেই পুরুষের
সমান কর্মদক্ষ হতে পারে- এটাই ছিল তৃতীয় প্রবাহের মূল ভাবনা। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গদের অধিকার আন্দোলনও
আরো শক্তিশালী হয় এসময়। বর্ণবাদের শিকার কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামি’, ‘হলুদ’ জাতিসমূহসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর
নারীদের অধিকার যে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর অধিকারের সমতুল্য, তা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরও সূত্রপাত ঘটে। বলা হচ্ছে, নারীবাদের চর্তু প্রবাহ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এবং এই প্রবাহের মূল আন্দোলনটি অনেকটাই
ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমভিত্তিক। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সব শ্রেণীর সব বয়সের মানুষের কাছে ছড়িয়ে
পড়া ডিজিটাল গণমাধ্যমে নারীদের যেভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে তা পুরুষতান্ত্রিকতার বাহক কি না তা অনুসন্ধান
করা, এবং এই ডিজিটাল গণমাধ্যম ব্যবহার করেই নারী আন্দোলন এবং এর মূল ভাবনাগুলো সব স্তরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই হবে বর্তমান প্রবাহের মূল লক্ষ্য।

 

ট্রেন চালনায় নারী : ওঁরা ১৫ জন

কেউ তাঁদের দেখে বিস্মিত হন। কেউ মুগ্ধ। কারও কারও তো আবার প্রশ্নের শেষ নেই। কেউ কেউ জানতে চান, ‘এত সাহস হলো কী করে আপনাদের?’
তাঁরা সবাই ট্রেনের সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) বা সহকারী ট্রেনচালক। এই দেশে যখন নারীদের নানা বাধাবিপত্তিতে পড়তে হয়, তখন তাঁরা সাহসের সঙ্গে ছুটে বেড়ান রেলগাড়ি চালিয়ে। ফলে সাধারণ মানুষদের অবাক হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেল, বর্তমানে রেলওয়েতে ট্রেন চালনায় ১৫ জন নারী আছেন। এর মধ্যে সালমা খাতুন বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক। তিনি এখন ঢাকায় লোকোমাস্টার। বাকিরা এখনো সহকারী লোকোমাস্টার।
প্রতিটি ট্রেনে একজন মূল চালকের সঙ্গে এএলএম থাকেন। এএলএম থেকে লোকোমাস্টার বা পূর্ণাঙ্গ চালক হতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০-১২ বছর। কেবল ট্রেন চালনাই নয়, তাঁদের ট্রেনের ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ও তড়িৎ (মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল) দিকগুলো শিখতে হয়। জানতে হয় সিগন্যালব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণসহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরুষের পাশাপাশি সব ধরনের কাজ শিখলেও এখনো দূরের রাস্তায় নানা কারণেই আমরা মেয়েদের পাঠাতে পারছি না। অথচ তাঁরা সেটিও পারবেন। মেয়েদের যেমন এই পেশার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, তেমনি সমাজের সবাইকেও ইতিবাচক মনোভব পোষণ করতে হবে।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চারজন এএলএম আছেন লালমনিরহাটে। তাঁরা হলেন আফরোজা বেগম, ফরিদা আক্তার, নাছরিন আক্তার ও মুনিফা আক্তার। চট্টগ্রামে আছেন ছয়জন—সালমা বেগম, খুরশিদা আক্তার, উম্মে সালমা সিদ্দীকা, কুলসুম আক্তার, রেহানা আবেদিন ও কোহিনুর আক্তার। কৃষ্ণা সরকার আছেন পাবনার ঈশ্বরদীতে। তাঁরা সবাই যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। আর ২০১৪ সালে বেবি ইয়াসমিন, ছিপি খাতুন ও এ্যানি যোগ দিয়েছেন রেলওয়েতে। তাঁরা রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে কাজ করছেন। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা এই পেশাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
পথ দেখিয়েছেন সালমা
ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম সহকারী লোকোমাস্টার পদে যোগ দেন টাঙ্গাইলের সালমা খাতুন। এখন তিনি সাব-লোকোমাস্টার। কিছুদিনের মধ্যেই লোকোমাস্টার হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাবেন সালমা। চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করার আগ্রহ তাঁর ছোটবেলা থেকেই। প্রিয় খেলনা ছিল ট্রেন, সেই থেকেই ট্রেনের প্রতি ভালোবাসা।
সালমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। তবে কাজটি সহজ নয়। রেলওয়েতে বাবার চাকরির সুবাদে এ পেশা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি। ভালো লাগে এই কারণে যে আজ আরও অনেক মেয়ে আসছেন। যত বেশি মেয়ে এ পেশায় আসবেন, তত তাড়াতাড়ি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।’ প্রথম নারী চালক হিসেবে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কমলাপুরে কাজ করছি। কোনো ট্রেন এলে ইঞ্জিন খুলে সেটি চালিয়ে আরেকটাতে লাগাই। লোকজন তখন বিস্ময় নিয়ে দেখে। অনেক পুরুষ তাঁদের স্ত্রীদের দেখান। তবে এ কাজটা কিন্তু চ্যালেঞ্জের। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই উপভোগ করি।’
প্রশ্নের শেষ নেই
নরসিংদীর মেয়ে সালমা বেগম ছোটবেলা থেকেই সাহসী। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যোগ দেন এএলএম হিসেবে। তবে এখনো লেখপাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। প্রায়ই ডেমু ট্রেন নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সপ্তাহে চার দিন, মাঝেমধ্যে পুরো সপ্তাহই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমু নিয়ে যাই। আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের প্রশ্নের শেষ নেই। তাঁরা জানতে চান মেয়ে হয়েও এত সাহস পাই কী করে?’ কী করে আসলে সাহস পান জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি একটু সাহসী। অন্য ভাইবোন কিংবা কাজিনরা যেটা করতে সাহস পেত না, আমি সেটা করতে পারতাম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভালো লাগে
ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এএলএম হয়েছেন চাঁদপুরের মেয়ে কুলসুম আক্তার। তাঁরও চ্যালেঞ্জিং পেশা বেছে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে রেলওয়েতে যোগ দেবেন এমনটা ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘নানা জায়গায় চাকরির আবেদন করেছিলাম। এখানে হয়ে গেল। মনের মতো কাজ পেলাম।’
পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন রেলেরই এএলএম গোলাম মোস্তফাকে। দেড় বছরের একটি মেয়ে আছে তাঁদের। ডেমু ট্রেন নিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে মাঝেমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এত শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে খুব ভালো লাগে তাঁর।
ছোট মেয়ের বড় দায়িত্ব
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাড়ি নাছরিন আক্তারের। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট্ট এই মেয়েটি এখন রেলের সহকারী চালক। ডিগ্রি পাস করে তিনি এই কাজে যোগ দিয়েছেন। নাছরিন বলেন, ‘ট্রেনে থাকার খুব বেশি সুযোগ পাই না। বেশির ভাগ কাজ অফিসেই। তবে নতুন যে ডেমু ট্রেন আসছে, সেটার সহকারী চালক হিসেবে কয়েকবার লালমনিরহাট থেকে পার্বতীপুর গিয়েছি। আমার পাঁচ বছরের মেয়েটাকেও কয়েকবার আমার সঙ্গে নিয়েছি। ও খুব উপভোগ করে।’
মানুষের অনেক আগ্রহ
কুমিল্লার মেয়ে রেহানা আবেদিনের বেড়ে ওঠা ট্রেনের সঙ্গেই। নানা ছিলেন রেলের লোকোমাস্টার। বাবাও রেলের কর্মকর্তা। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে নিজেও চলে এলেন রেলে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেও বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছেন। মাঝেমধ্যেই ট্রেনে সহকারী চালক হিসেবে থাকেন। কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ।’
মনে হলো আমিও পারব
নড়াইলের লোহাগড়ার মেয়ে কৃষ্ণা সরকার। তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। যশোর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে তিনি এসেছেন এই পেশায়। এখন কাজ করছেন পাবনার ঈশ্বরদীর লোকোশেডে। স্নাতকোত্তর নিয়েও কেন এই পেশায় এলেন? কৃষ্ণা বলেন, ‘আমি আসলে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখার আগে এ সম্পর্কে জানতাম না। কিন্তু খবরের কাগজে পড়েছিলাম সালমা আপার কথা। মনে হলো আমিও পারব। আমি মনে করি শিক্ষিত লোকজন এই পেশায় এলে মানুষের শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।’
ছোটবেলার বড় ট্রেন এখন আর বড় নয়
চট্টগ্রামের মেয়ে উম্মে সালমা সিদ্দিকী স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এ বছর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেবেন। তাঁর বাসা ষোলশহরের রেলস্টেশনের খুব কাছেই। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ট্রেন দেখছি। তখন অনেক বড় মনে হতো একেকটা ট্রেনকে। এখন যখন ট্রেনের সহকারী চালক হিসেবে থাকি, তখন আর এত বড় মনে হয় না।’
লোকজনের বিস্ময় উপভোগ করি
আফরোজারা চার বোন। রেলওয়েতেই ছিলেন, ২০১১ সালে পরীক্ষা দিয়ে এএলএম হয়েছেন আফরোজা। বিভাগীয় পরীক্ষার্থী হিসেবে এই পদে আসা একমাত্র নারী তিনিই। বাড়ি লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে। প্রশিক্ষণ শেষে লালমনিরহাট থেকে পার্বতীপুর তিনি ট্রেন চালাতেন। এখন লালমনিরহাটেই আছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে চালকের স্থানে একজন নারীকে দেখে বিস্মিত হন। এই বিস্ময় উপভোগ করি। অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা জানতে চায় কাজটা কেমন? আমিও উৎসাহ দিই।’ আফরোজার স্বামীও ট্রেনচালক। তবে স্বামী-স্ত্রী এখনো একসঙ্গে কোনো ট্রেন চালাননি বলে হাসিমুখে জানান আফরোজা।
একটুও ভয় লাগে না
২০১২ সালে যে ৫৩ জন এএলএম যোগ দেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন নারী ফরিদা আক্তার। প্রশ্ন করেছিলাম এত বড় ট্রেন চালাতে ভয় লাগে না? বগুড়ার এই মেয়েটি জানান, একটুও না। 

 

মায়ের মর্যাদা, মাতৃত্বের মর্যাদা

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘যেখানে দেখি যাহা, মা-এর মতন আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই।’ জগৎ-সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সব বেদনা দূর করে দেয়, তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, বিপদে-সংকটে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেন, তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন—মা। প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না।
শান্তির ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মা-কে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার?’ নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবারও জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতার।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল। তাঁর চিন্তা-চেতনায় ইসলামী ভাবধারা ফুটে উঠেছে। নারীত্ব ও মাতৃত্ব সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন চির স্মরণীয়। নারী অধিকার আন্দোলনের চারণভূমি ইউরোপে তিনি পড়াশোনা করেছেন। কাজেই নারী সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। আল্লামা ইকবাল মনে করেন, নারী যদি প্রজ্ঞা-পাণ্ডিত্যে প্রাগ্রসর না-ও হতে পারে, মানবতার কল্যাণে কোনো কাজ না-ও করতে পারে, তবুও নারী ‘মা’ হওয়ার কারণে শ্রদ্ধার পাত্র, সম্মান পাওয়ার যোগ্য। পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই, যার ওপর নারীর অনুগ্রহ নেই, মায়ের করুণা নেই।
মরহুম ইকবাল মনে করেন, নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আদর্শ মা হওয়া। মাতৃত্বের মাধ্যমে নারীত্ব পূর্ণতা লাভ করে। ইকবাল মনে করেন, মায়েরা হলেন পৃথিবীর ভিত্তিস্বরূপ। তাঁরা ‘মা’ না হলে বংশ বাড়বে না। সমাজ চলবে না। পৃথিবী থমকে যাবে। শত কোলাহল-উত্তাপ থেমে যাবে। সভ্যতার বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই মায়েরা হলেন পবিত্র আমানত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ইকবাল বলেছেন, ‘জগতের ভিত হলো মায়ের জাতি/দুনিয়ায় তারা আমানত-শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি।’
ইকবাল মনে করেন, মাতৃত্বের প্রেরণা যদি নারীর মধ্যে অবিচল থাকে; তাতে সন্তানের কল্যাণ, পরিবারের কল্যাণ, পৃথিবীর কল্যাণ। যে সমাজে নারীরা মা হতে চায় না, মাতৃত্বের মর্যাদা দেওয়া হয় না, সে সমাজে শান্তি থাকে না। সুখ থাকে না। ঐক্য থাকে না। ছোট-বড়র পার্থক্য থাকে না। সুখের শেষ আশ্রয়স্থল পরিবার হয়ে ওঠে সাক্ষাৎ নরক। যে সমাজ মা হতে উৎসাহিত করে না, মাতৃকুলের মর্যাদা রক্ষা করে না, সে সমাজে নারী ভোগের পণ্য, জৈবিক চাহিদা পূরণের উপকরণ। যৌবন ফুরিয়ে গেলে, জৌলুস হারিয়ে গেলে নারী অর্থহীন, বিত্তহীন, মূল্যহীন। নীরবে-নিভৃতে তার সময় কাটে। অনাহারে-অর্ধাহারে তার দিন কাটে। কেউ তাকে চেনে না। কেউ তাকে দেখে না। বৃদ্ধাশ্রমে তার ঠাঁই মেলে। এ চিত্র আধুনিক যুগের। এ দৃশ্য পশ্চিমা সভ্যতার, পশ্চিমের দেশগুলোর। এ চিত্র ইকবাল স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন। যে সমাজের বীভৎস রূপ ইকবাল সন্ধানী চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন, সে সমাজের স্বরূপ ইকবাল এভাবে তুলে ধরেছেন : ‘পশ্চিমা দুনিয়ায় মায়েদের মূল্য নেই/তাই তো তাদের সমাজে প্রাণ নেই।’
কেবল সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমেই মায়েরা দায়মুক্ত হয়ে যান না, ভারমুক্ত হয়ে যান না। শিশুর সুন্দর বেড়ে ওঠা, তার ভাষা শেখা, চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সন্তানের জীবনের সব উন্নতি-বিকাশ, চেতনা-সচেতনতা, চিন্তা-বিশ্বাস—সবই তার মায়ের তরবিয়াত ও দীক্ষার ফসল। মায়ের আত্মিক ভালোবাসা ও স্বচ্ছতার অবদান। ইকবাল মনে করেন, পুরনো, জীর্ণ, ঘুণেধরা সমাজ বদলে দিতে নারীরা অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। নারীর মধ্যে আল্লাহ তাআলা এমন শক্তি, বিশ্বাস ও দরদ দিয়েছেন, সে চাইলে জাতির ধমনিতে ইমানের জ্যোতির্ময় দীপ্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। ইকবালের দৃষ্টিতে নবুয়তের সঙ্গে মাতৃত্বের একটা জুতসই সম্পর্ক আছে। নবীদের মতো মায়েরা উম্মতের জন্য রহমতস্বরূপ। নবীদের মতো মায়েরা জাতির চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন। ইকবালের জবানিতেই দেখুন : ‘মায়েরা করে থাকেন চরিত্র গঠন/সত্য-সুন্দর মণি-মুক্তার মতন।/আদর্শ মা জাতির জন্য রহমত/নবুয়তের সঙ্গে আছে তাঁর নিসবত।/স্নেহ-মমতায় তাঁরা নবীদের মতন/যতন করে জীবন করে গঠন।’