banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

অফিস থেকে দাওয়াতে

অফিস থেকে যেতে হবে দাওয়াতে। কথাটি মনে আসতেই কি কুঁচকে গেল ভুরু জোড়া? দাওয়াতের জায়গাটি যদি হয় বাড়ির আশপাশে, তাহলে দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু যদি যেতে হয় উল্টো পথে? বিষয়টি কষ্টকরই হয়ে দাঁড়ায়। এ রকম ক্ষেত্রে সহজ উপায় হলো অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া। কিন্তু সাজসজ্জা? সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
.কর্মজীবীদের এই বিষয়টির ভেতর দিয়ে হরহামেশাই যেতে হয়। কর্মক্ষেত্রের পোশাক হওয়া উচিত হালকা ও আরামদায়ক কাপড়ের। সুতি, কোটা, সিল্ক কিংবা জর্জেটের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজেই আরামবোধ করে থাকেন বেশির ভাগ কর্মজীবী নারী। দাওয়াতের শাড়িটি সেখানে একেবারেই বিপরীত। রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান মনে করেন, আগের দিন কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া যাবে। ছোটখাটো বিষয়গুলো দিয়েই শুরু করা যাক। দাওয়াত কী ধরনের, সেটার ওপর নির্ভর করেই সব প্রস্তুতি নিতে হবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ ও পেটিকোট পরার পরামর্শ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘যদি বিয়ের দাওয়াত থাকে সে ক্ষেত্রে সকালবেলায় শাড়ি পরেই বের হতে পারেন। ব্লাউজ ও পেটিকোটটি দাওয়াতের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরুন। তাহলে অফিস শেষে শুধু শাড়িটা পরিবর্তন করে নিলেই হবে।’ আগের দিনের প্রস্তুতি হিসেবে নেইলপলিশ লাগিয়ে রাখতে পারেন। চুল শ্যাম্পু করে ব্লো ড্রাই করে নিতে পারেন। কাজের মধ্যে চুলটা হালকা করে বেঁধে রাখবেন। দাওয়াতে যাওয়ার আগে চুল খুলে আঁচড়ে ছেড়ে রাখুন অথবা বেঁধে নিন। চুল সুন্দর থাকলে পুরো লুকটাই বদলে যায় বলে মনে করেন কানিজ আলমাস খান।
ব্যাগে বা প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পছন্দের চরিত্রগুলো আঁকা থাকলে আনন্দের মাত্রাটাও যেন বেড়ে যায় অনেকাংশে। মডেল: ওয়াসিউ ও নওরিন, ছবি: নকশাসারা দিন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার পর চোখে-মুখে ক্লান্তি তো থাকবেই। হালকা মেকআপ নেওয়া প্রয়োজন যদি শাড়ি জমকালো হয়। মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে, লিকুইড ফাউন্ডেশন ও পাউডার ভালোমতো মুখে লাগিয়ে নিন। ভুরু জোড়া সকালেই এঁকে আসতে পারেন। কাজ কিছুটা এগিয়ে থাকল। যদি আইশ্যাডোর ঝামেলায় যেতে না চান, তাহলে বেশি করে মাসকারা আর কাজল ব্যবহার করুন। যাঁদের চোখ ছোট, তাঁরা বাইরের দিকে কাজল লাগাবেন। চোখের ওপরে একটু চিকন করে লাইনার টানতে পারেন।
ডিজাইনার লিপি খন্দকার দাওয়াতের দিনটিতে বাড়তি পোশাক সঙ্গে নিয়েই বের হন। তিনি মনে করেন, গয়না বড় ভূমিকা পালন করে সাজে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরে নেন বড় গলার মালা। জুতা ও ব্যাগ বদলে ফেললে সেটাও অনেকখানি সহায়তা করেব। দাওয়াতের জায়গার আশপাশে কাছের কারও বাড়িতে পোশাক বদলানোর সুযোগ থাকলে সেটার সদ্ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। লিপি খন্দকার মনে করেন অ্যান্ডি সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কর্মক্ষেত্র ও দাওয়াত দুই জায়গাতেই মানিয়ে যাবে। চওড়া কম আছে এমন পাড়ের মেরুন, কালো, সবুজ, নীল, পিচ, চাপা সোনালি রঙের শাড়িগুলো পরে ফেলতে পারেন।
গাজী টেলিভিশনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ও উপস্থাপক সামিয়া আফরিন নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন। অফিস থেকে প্রায়ই দাওয়াতে উপস্থিত হতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াত বুঝেই শাড়ি পরে আসি অফিসে। টুকটাক গয়না রেখে দিই ব্যাগে। অফিস শেষে মেকআপটা সেরে ফেলি। হালকা রঙের জামদানি, অ্যান্ডি সিল্কের শাড়ি পছন্দ এ ক্ষেত্রে। চুল খোলা রাখতেই ভালোবাসি। সম্ভব হলে নিচের অংশটি কোঁকড়া করে নিই।’
দাওয়াত যদি খুব জমকালো না হয় তাহলে সালোয়ার-কামিজ সহজ সমাধান। ব্যাগে করেই নিয়ে আসতে পারেন। অফিস শেষে চট করে পাল্টে নিলেন।
জানজটের শহরে অফিস শেষ করে বাড়ি গিয়ে তৈরি হয়ে আবার বের হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। কর্মজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই মনে করছেন, দাওয়াতের পোশাকটি সঙ্গে নিয়েই অফিসে চলে আসুন। পোশাক আনতে না পারলেও অনুষঙ্গগুলো সঙ্গে রাখুন। টুকটাক পরিবর্তনেই আপনি নিজেকে তৈরি করে ফেলতে পারবেন দাওয়াতের জন্য।

 

৫ উপায়ে শরীর রাখুন বিষমুক্ত

খাবার খাওয়ার পর তা অন্ত্রে রাসায়নিক রূপান্তরের ফলে সৃষ্টি হয় কিছু উপাদান, যা দীর্ঘকাল ধরে শরীরে থাকার জন্য পরিণত হয় বিষাক্ত উপাদানে। তবে এটা দূর করাও সম্ভব।

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শরীর বিষমুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত সহজলভ্য কিছু খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীর থেকে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর করতে পারি।


তিতা খাবার
তিতা খাবার আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিরতার পানি অথবা করলা কিংবা নিমপাতার রসের জুড়ি নেই।


লেবু
লেবুতে আছে একগুচ্ছ ডিটক্স ডাইট যা টক্সিন নামক বিশেষ প্রকার জৈব, যা বিষ নির্মূলে সহায়তা করে। এছাড়া লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা দাঁত ও ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। তাছাড়া লেবুর ক্ষারীয় প্রভাব আপনার শরীরে অম্লতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। প্রতিদিন এক ফালি লেবুর সাথে গরম পানি আপনার শরীর থেকে বিষ নির্মূল করবে।


রসুন
আমরা সবাই জানি হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্য সবচেয়ে উপকারী খাদ্য রসুন। এতে রয়েছে এলিসিন নামক রাসায়নিক উপদান যা রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদন ও টক্সিন নির্মূলে সাহায্য করে। রস‍ুন কাচা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।


গ্রিন টি
শরীর থেকে বিষাক্ত জৈব রাসায়নিক নির্মূলে গ্রিন-টি’র কোনো বিকল্প নেই। তরল এই খাবার আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চা নয়, একে ওজন কমানোর ঔষুধও বলা চলে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।


টাটকা ফল
তাজা ফলে আছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও কম ক্যালোরি যা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানগুলো নির্মূলে সাহায্য করে।  সেই সঙ্গে চোখ ও ত্বককে উজ্বল করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।

 

অন্যের প্রতি খারাপ ধারণার অনিষ্টতা থেকে বাঁচুন

জীবনে চলতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে থাকি। ব্যক্তিজীবন হোক কিংবা সমাজজীবন হোক, অনুমানের আশ্রয় আমাদেরকে নিতেই হয়। কিন্তু সে অনুমান যদি নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তা কোনো মন্দ বিষয়ে হয়ে থাকে তখন সেটাকে আমরা মন্দ বা কুধারণা বলে থাকি।

সমাজে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে এ মন্দ ধারণা হুমকিস্বরূপ। কারো সঙ্গে মুক্ত মনে কিংবা ভালো ধারণা রেখে চলাফেরা করা আর তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ওঠাবসার করার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোনো দলিল-প্রমাণ ছাড়া অনর্থক কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে তাই ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক রকম অনুমান থেকেই বেঁচে থাকো। কেননা কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়।’ –সূরা হুজরাত : ১২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কোরআনে যে অনুমান করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও অপবাদ দেওয়া। যে মন্দ বিষয়ের কোনো প্রমাণ নেই, সে বিষয়ে কেবলই অনুমানের ওপর ভর করে কিছু বলে দেওয়াকেই এ আয়াতে বারণ করা হয়েছে। যেমন, কাউকে কোনো অশ্লীল বিষয়ে কিংবা মদ্যপানে অভিযুক্ত করা।’

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অনুমান থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা এর কারণ বলে দিয়েছেন এভাবে- কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্দ ধারণা ও অনুমানই গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা অপবাদের মতো জঘন্য গোনাহের পথ করে দেয়।

কারো সম্পর্কে যদি স্পষ্টভাবে জানা যায়, সে কোনো পাপকাজে জড়িয়ে পড়েছে কিন্তু সে ব্যক্তি তা প্রকাশ করেনি এবং প্রকাশ করাকে সে পছন্দও করছে না, তাহলে সে পাপের কথা বলে বেড়ানোই তো মৃত ভায়ের মাংস খাওয়ার মতো অপরাধ! এ থেকেই বোঝা যায়, যদি কারো দোষ বলাটা শুধুই ধারণানির্ভর হয় তাহলে তা কত ঘৃণিত কাজ হবে!

হাদিস শরিফেও এ ধরনের অনর্থক মন্দ ধারণা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, বোখারি ও মুসলিম শরিফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মন্দ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য মিথাচার।’-সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস নং : ৬৭০১

অনেক সময় মন্দ ধারণা ব্যক্তি, পরিবার এমনকি সমাজে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) একবার শিকার হয়েছিলেন এ মন্দ ধারণার। হৃদয়বিদারক সে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে বোখারি শরিফসহ হাদিসের আরও অনেক কিতাবে।

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসূলে কারিম (সা.) এক যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরছিলেন। সঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন। রাতের বেলা পথ চলার এক পর্যায়ে এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। কিন্তু সকালবেলা যখন কাফেলা আবার চলতে শুরু করল, তখন ঘটনাক্রমে সবার অজান্তে কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন নবীপত্নী হজরত আয়েশা (রা.)। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অমূলকভাবে একটি মন্দ কথা রটিয়ে দেয় এবং তার প্ররোচনায় কয়েকজন মুসলমানও এতে অংশ নেয়।

এ ঘটনায় মদিনা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। অবশেষে মহিয়সী এ নারীর পবিত্রতা আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দেন ওহির মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি মুমিনদেরকে পারস্পরিক ভালো ধারণা পোষণ করতে আদেশ করেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যখন একথা শুনেছিলে, তখন কেন এমন হলো না যে, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণ নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করত এবং বলে দিত, এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা?’ –সূরা নূর : ১২

সূরা হুজরাতের যে আয়াতে মন্দ ধারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটা যেমন মুমিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি তা আল্লাহতায়ালার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো মুমিন যেন আল্লাহতায়ালা সম্পর্কেও খারাপ ধারণা পোষণ না করে। যেমন, কেউ মনে করল বা বলল, আল্লাহ আমার ওপর কিছুতেই অনুগ্রহ করবেন না কিংবা আল্লাহ আমাকে তো কেবল শাস্তিই দেবেন। এভাবে পরম দয়ালু আল্লাহকে কেবল নির্দয় মনে করা এবং তার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ।

অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন, কেউ যদি মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ সে অপরাধ ক্ষমা করেন। তাকে সিক্ত করেন করুণা ও অনুগ্রহের বারিধারায়। প্রতিটি মুমিনকে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর প্রতিটি গুণে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বিশ্বাস রাখতে হবে। এর ব্যতিক্রম করা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করারই নামান্তর। তাই হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা না নিয়ে মৃত্যুবরণ না করে। -সহিহ মুসলিম

লেখক : শিক্ষক, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, ঢাকা