banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

নারীর নেতৃত্বে প্রথম পুলিশ প্যারেড

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী কর্মকর্তা পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম। অধিনায়ক হিসেবে প্যারেডের নেতৃত্ব দেবেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত ১৩টি কনটিনজেন্টের (মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যা বসহ পুলিশের ১৩টি দল) এই প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন। এসপি শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে এটা নতুন মাইলফলক।
নারী কর্মকর্তাকে প্যারেড অধিনায়ক নির্বাচন করার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হলো নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া, আরেকটি লৈঙ্গিক সমতা। গত বছর পুলিশ সপ্তাহে প্যারেডে উপ-অধিনায়ক ছিলেন একজন নারী। এবার আমরা অধিনায়কের দায়িত্ব একজন নারী কর্মকর্তাকে দিয়েছি।’
এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০১৫ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১৯ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), ২৩ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা ও ৪০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পদক পরিয়ে দেবেন।
শামসুন্নাহার বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে পুলিশ একাডেমির সারদার ক্যাম্প থেকে প্যারেড করে আসছি, আমি অপেক্ষায় ছিলাম দিনটির জন্য। কারণ, প্যারেড একটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সূক্ষ্ম কাজ। এ জন্য দেশবাসীসহ সবার কাছে আমি দোয়া কামনা করছি। যাতে করে যথাযথভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।’
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, ‘শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা-প্রগতি—এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ জনসেবা প্রদান ও জননিরাপত্তা বিধানে আরও পেশাদার এবং আন্তরিক হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সব প্রয়োজন ও সংকটকালে পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশের সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

 

সখীপুরে এক বছরে ৫৮৩ বিবাহবিচ্ছেদ

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছেদের ঘটনা এত কেন? বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
সখীপুরের আট ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় ১২টি কাজি অফিস রয়েছে। কাজি অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৫৫টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ৩৯টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ৩২টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ৩৭টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৫টি, কালিয়া ইউনিয়নে ১১০টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়নে ৩০টি, কাকড়াজান ইউনিয়নে ৬৩টি ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ২০২টি বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে সখীপুরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৪২৫টি। এদিকে ২০১৪ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের নিকাহ কার্যালয়ে ৩৪টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ২৬টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ২৭টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ২৯টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৬টি, কালিয়া ইউনিয়নে ৯৪টি, বহেড়াতৈলে ২৩টি, কাঁকড়াজানে ৫০টি এবং পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১২৬টি তালাকের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৫৮টি।
একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, তখন বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়।’
কনেপক্ষের তালাককে ডি-তালাক, ছেলেপক্ষের তালাককে বি-তালাক ও ছেলে-মেয়ের সমঝোতার তালাককে সি-তালাক বলা হয় বলে জানালেন কালিয়া ইউনিয়ন নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজি) মাহবুব সাদিক। সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার কাজি শফিউল ইসলাম বললেন, বাল্যবিবাহ, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়াঘটিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরের ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন।
এক নারী তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পেছনের কারণ জানান এই প্রতিবেদককে। তাঁর স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে বলেন পড়াশোনা করা যাবে না। কেন? স্বামী তখন ফোনে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী নাকি অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে। পড়াশোনা করলে তাঁকে ফেলে চলে যাবেন। এসব মিথ্যা বলে স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেন। তবু স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর থেকে স্বামী কোনো খরচ দেন না তাঁকে। কোনো ফোন করেন না। মেয়েটিকে তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই বছর স্বামী তাঁর খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই স্বামীকে তালাক দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাফেজা আক্তার বলেন, ‘আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না।’
এখন আগের চেয়ে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ায় তাঁদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা আর মুখ বুজে থাকেন না। তাই হয়তো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাটা বেড়েছে। এমনটা মনে করেন সখীপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শহীদুল্লাহ কায়সার।

 

১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়

অভিভাবকেরা কন্যা শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। সেখানে ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, এমন শপথ করবে সবাই। সকাল নয়টার আগেই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন স্কুলের ৬৫০ জন কন্যা শিশু আসে অভিভাবকসহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ১১ অক্টোবর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে কথা হয় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা ইয়াসমীনের মা শাবানা ইয়াসমীনের সঙ্গে। বললেন, ‘স্বপ্ন পূরণের জন্য মেয়েকে স্বাবলম্বী করব। তারপর বিয়ে দেব। তাই ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, প্রকাশ্যে এই শপথ করতে এখানে এসেছি।’
চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির জিন্নাত তাসনিন হোসেন জানাল, তার বাবা গাজিউর রহমান সঙ্গে এসেছেন। স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সেও বিয়ে করবে না।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আইনাতুল মার্জিয়ার চোখে পানি দেখা গেল। জানা গেল, তার বাবা কৃষক। ভাই নেই, তিন বোন। বড় দুই বোনের হয়েছিল বাল্যবিবাহ। এখন তাঁরা পরিবারে বোঝা হয়ে আছেন। বাবার ঘাম-ঝরানো অর্থে সে পড়াশোনা করছে। বাবার ইচ্ছা মেয়ে অনেক বড় হবে। তাই বাল্যবিবাহ নয়।
গাংনী পাইলট স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, মেয়ে মানেই বোঝা—এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার মায়ের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তাই ‘মেয়ে মানেই বোঝা’—এই কথা মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সে ১৮ বছরের আগে বিয়ে করবে না।
জানা গেলে, এই মেয়েরা প্রথমে মা বা বাবাকে নিয়ে নিজ বিদ্যালয় বা বাড়িতে বসে বাল্যবিবাহবিরোধী শপথ নিয়েছে। সেসব শপথের ছবি প্রদর্শন করা হয়। এরাই অভিভাবকসহ অনুষ্ঠানে এসে প্রকাশ্যে বাল্যবিবাহ নয়, স্বাবলম্বী হওয়ার আগে বিয়ে নয়—এমন শপথ করেছে। কন্যা শিশুদের শপথ দেখে এবং বাল্যবিবাহের কুফল জেনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৫০০ ছেলে শিশু ১৮ বছরের কম মেয়েকে বিয়ে না করার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করে।
জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার। শুধু বাল্যবিবাহ নয়, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন, অ্যাসিড-সন্ত্রাস, অপরাজনীতিমুক্ত দেশ গড়তে উপস্থিত সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের মেহেরপুর শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাবুদ হাসান, গাংনী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা আঞ্জুমান বানু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত মান্নান, জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী, নারী নেত্রী নূরজাহার বেগম, সুজনের গাংনী উপজেলা শাখার সহসভাপতি আবদুর রশিদ ও যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান।
পরে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাতটি নাটিকা মঞ্চস্থ করে। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলায় ৭১ শতাংশ কন্যা শিশুর বাল্যবিবাহ হয়। তাই গাংনী উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে সেসব বিদ্যালয়ের কন্যা শিশু ও অভিভাবকদের এই শপথের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

 

সহজ সুন্দর সাজ

নারীদের অনেকেই সহজ সুন্দর সাজ পছন্দ করেন। সেই সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করেন। জমকালো সাজ সবারই যে পছন্দ, এমন নয়। ব্যক্তিত্ব ও রুচির সঙ্গে মানিয়ে আপনার সহজ সাজটি কেড়ে নিতে পারে সবার দৃষ্টি। একটু পরই যেতে হবে পার্টিতে; পার্লারে যাওয়ার সময়ও নেই আপনার হাতে। সাজতে হবে ঘরেই। কী করা? মেকআপের কিছু প্রাথমিক নিয়ম জানা থাকলে ঘরে বসেই মেকআপ করতে পারেন আপনিও। এ জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো প্যানস্টিক, ডাস্ট পাউডার, প্যানকেক, পাফ ও ফোম, বস্নাশন, কয়েক রকম আইশ্যাডো, মাশকারা, লিপস্টিক ও গ্লস, বিভিন্ন রকম চোখের, গালের ও ঠোঁটের ব্রাশ। প্যানকেক ও ডাস্ট পাউডার ত্বকের রঙ অনুযায়ী বাছাই করবেন। ফর্সারা গোলাপি, শ্যামলারা বাদামি আর কালোরা গাঢ় রঙ বেছে নেবেন। মেকআপের আগে চাই ত্বকের যত্ন। ত্বক শুষ্ক হলে মুখ ধুয়ে হালকা করে তরল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। ত্বক তৈলাক্ত বা মিশ্র হলে টোনার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেই চলবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে বরফ বেঁধে মুখে ঘষে নেবেন। মেকআপের আগে প্রথমে আঙুলের ডগায় প্যানস্টিক নিয়ে মুখের কালো দাগ ঢেকে দিতে হবে। এরপর পাফের সাহায্যে পুরো মুখে ডাস্ট পাউডার লাগাতে হবে ও পানি স্প্রে করতে হবে হালকাভাবে। আঙুলের সাহায্যে চেপে পাউডার মুখে বসিয়ে নিতে হবে। পাউডার বসে গেলে ভেজা ফোমের সাহায্যে প্যানকেক লাগিয়ে নিন। প্রথমে টি জোন, অর্থাৎ কপাল, নাক ও চিবুকে লাগাতে হবে। তারপর আঙুলের সাহায্যে মুখের অন্যান্য অংশে পুরোপুরি মেশাতে হবে। হাতেও প্যানকেক লাগাতে হবে, যাতে ত্বকের রঙে বৈসাদৃশ্য দেখা না যায়। হালকা ফেসপাউডার বুলিয়ে গালের ভাঁজে বস্নাশনের পরশ দিন। তৈরি হয়ে গেল মেকআপের বেজ। অনুষ্ঠানের সময় মাথায় রেখে চোখের সাজ করা ভালো। দিনে হালকা সাজই মানানসই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে ন্যাচারাল টোনের শেড, যেমন সোনালি, গোলাপি, বা বাদামি শেড ভালো লাগবে। কাজল ব্যবহার করতে পারেন, সঙ্গে ভারী মাশকারা থাকবে। রাতের অনুষ্ঠান হলে গাঢ় শেড ব্যবহার করবেন। বস্নাশনও গাঢ় হবে। ঠোঁট লাইনার দিয়ে এঁকে নেয়া ভালো। দিনের বেলা হালকা, যেমন বাদামি, বিজ, গোলাপি ইত্যাদি রঙের লিপস্টিক বা শুধু গ্লস ব্যবহার করতে পারেন। রাতের অনুষ্ঠানে গাঢ় লিপস্টিক কিংবা গাঢ় শেডের গ্লস ভালো মানাবে। মেকআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, সঠিক নিয়মে মেকআপ তোলা। তাহলেই ত্বকে মেকআপের কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে না। তাহলে আর দেরি কেন? ঘরে বসেই হয়ে যাক পার্লারের সাজ।

 

আসছে আমের দিন, চলো বানাই আম ভর্তা

এখন আমের দিন। কাঁচা এবং পাকা দুই ধরনের আমই পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা এবং পাকা আম মিলিয়ে কাসুন্দি দিয়ে বেশ মজার টক-ঝাল-মিষ্টি আমের ভর্তা বানিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ মজা করে খাওয়া যেতে পারে এবং এটা যে কোন সময়। এমন কি রাতেও!

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ (উপকরণের অনুমান আপনি নিজেও করে নিতে পারেন)
– কয়েকটা কাঁচা পাকা আম
– এক চামচ চিনি (পরিমাণ আপনার কাছে)
– পরিমাণ মত লবণ
– এক চিমটি মরিচের গুড়া
– দুই চামচ কাসুন্দি (দেশে এখন অনেক কোম্পানি কাসুন্দি বানিয়ে বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করছে)

প্রণালীঃ
নিজ গাছের আম হলে বেশী ভাল!
চিনি প্রথমে কম দেয়াই ভাল পরে স্বাদ বুঝে দিলে বেশ হয়।
কাসুন্দি দিন। ভাল করে মিশিয়ে নিন।
খালি হাতে ডলে ডলে মিশালে মজা বাড়ে।
ব্যস হয়ে গেল ভর্তা।
আম কাসুন্দি – টক-ঝাল-মিষ্টি!

 

ব্যবসায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন

বৈজ্ঞানিক হতে চেয়েছিলাম। আর্থিক সংগতি ছিল না। তাই ১১ বছর বয়সে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করি। মার খেয়েছি। চাকরি চলে গেছে। দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করতে দেখে অনেকেই বলেছে আমার “চরিত্র” খারাপ। তবে একসময় যারা চরিত্র নিয়ে অপবাদ দিত, তারাই এখন আমাকে দেখে সালাম দেয়।’

নব্বইয়ের দশকের অভিজ্ঞতা বলছিলেন পোশাকশিল্প কারখানার একসময়কার শ্রমিক, বর্তমানে এ শিল্পেরই শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। এখন তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে পড়ছে।

শুধু নাজমা নন, এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, চাঁদপুর সদরের দুবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুনিরা চৌধুরী, সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য সংগঠন ইউসেপ বাংলাদেশের কিশোরীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও পেশার নারীরা তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন।

মুনিরা চৌধুরী বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সেভাবে কোনো দায়িত্ব নেই। তবে আমি আইনজীবী। এই পেশাকে কাজে লাগিয়ে আমি অসহায় মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

নিশাত মজুমদার বলেন, ‘এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার পরও তেমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বিমান থেকে যখন প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলাম, চারপাশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তখন মনে হলো, আমার দায়িত্ব তো অনেক বেড়ে গেছে।’

ইউসেপ বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত শারমীন আক্তার বর্তমানে এনটেল ইলেকট্রনিকস নামের একটি কোম্পানিতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ইউসেপের অন্য সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এখন নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিচ্ছি।’

ব্র্যাকের কিশোরী ক্লাবের ক্রিকেটার নাসরিন বাংলাদেশ ক্রিকেট মহিলা দলের দলনেতা হওয়ার স্বপ্নের কথা শোনাল।

ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবের আরেক নেত্রী জোহরা খানম বলেন, ‘আমি ব্র্যাকের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে এত দিনে হয়তো এক সন্তানের মা হয়ে যেতাম।’ জোহরা শুধু নিজে সচেতন হননি, অন্যদেরও বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করছেন।

উদ্যোক্তা শিরীন রওশন ১৭ থেকে ১৮ বছর আগে প্রথম শুরু করেছিলেন ‘ফ্রোজেন ফুড’-এর ব্যবসা। গৃহবধূ থেকে এখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তখন এক প্যাকেট শিঙাড়াও অনেক বলে-কয়ে বিক্রি করতে হতো। আর এখন পরোটাও কিনে খাচ্ছে মানুষ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীদের কথা শোনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এ অনুষ্ঠান তারই প্রমাণ। অন্যদিকে বলা যায়, নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যেতে বাধ্য।

ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন ট্যামেসিস বলেন, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনেও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি মিলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভারতের চেয়েও ভালো।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউরসের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান সবাইকে নিয়ে গেলেন তাঁর ২২ বছর বয়সে। তখন তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তারপর বিয়ে, সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু। তখনো সবার অবাক হওয়ার পালা।

রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, সবাই চেষ্টা করে এক পথে হাঁটলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রথম নারী অ্যাম্বাসেডর নাসিম ফেরদৌস ৩০ বছর সরকারি চাকরি করে ২০০৮ সালে অবসর নেন। তারপর গড়ে তোলেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ নামের প্ল্যাটফর্ম। লুনা শামসুদ্দোহা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশিত হয়। এই দুই নারীও তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনান।

 

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা ৫০ হাজার টাকার নিচে : গভর্নর

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আওতায় নারী উদ্যোক্তারা এখন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ

গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা গ্রুপ গঠন করে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি অংকের ঋণ নিতে পারছেন। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা যাতে ৫০ হাজার টাকার নিচে হয় সেজন্যে আমরা অচিরেই একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছি।

বুধবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপে¬ামা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মশালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা খাতের উন্নয়নে পৃথক এসএমই বিভাগ গঠন, নারী উদ্যোক্তা সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। উদ্যোক্তাদের জন্যে আমরা নীতি সহায়তার পাশাপাশি কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্যে ৬০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে নতুন উদ্যোক্তারা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন।

গভর্নর আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম জনবল তৈরি হচ্ছে। এই জনবলকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এটি আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। অবশ্য এদের কাজে লাগিয়েই গত দু’দশকে আমরা খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছি।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমাদের অগ্রগতি

উৎসাহব্যঞ্জক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত রাখা গেলে আমাদের সাফল্য আরো বেশি হবে। বাংলাদেশের এই সাফল্যগাঁথা এদেশের কর্মঠ ও সৃজনশীল উদ্যোক্তারাই রচনা করেছেন। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে তাদের সফল পদচারণার কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমাদের জন্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা চেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে আইডিইবি’র এক

হাজার নতুন শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির এ প্রকল্প অন্যান্য সংগঠনের জন্যে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতসহ যারা এসএমই ও নারী উদ্যোক্তা নিয়ে কাজ করছেন তাদের সকলকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এ দেশটিকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে চাই। যেসব ডিপে¬ামা ইঞ্জিনিয়ার শিল্প উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা নিয়ে এখানে দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছেন

তাদের ক্ষুদে উদ্যোক্তা হওয়ার তাত্ত্বিক জ্ঞান রয়েছে। যে জ্ঞান সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের নেই। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রাণশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যাবেন। অর্থায়নের অভাব ও অন্য সকল বাধা-বিপত্তি যেন আপনাদের পথ আটকাতে না পারে সে বিষয়টি আইডিইবি, ডিসিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।

আইডিইবি’র সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ, এ্যান্ট্রিপ্রিনিউয়ারশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো’র চেয়ারম্যান সবুর খান।

 

থাইল্যান্ডের হাসপাতালে সুজানা

অবসর পেলেই সুজানা জাফর দেশের বাইরে ঘুরতে যান। এবারও তিনি দেশের বাইরেই আছেন, তবে ঘুরতে নয়। থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তিনি। নিজের চেকআপ করাচ্ছেন। এখনো চেকআপের রিপোর্ট আসেনি।

এনটিভি অনলাইনকে সুজানা বলেন, ‘এখনো চিকিৎসকরা কিছু বলেননি। আশা করছি, সিরিয়াস কিছু ঘটবে না। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। সবার ভালোবাসা নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই।’

সুজানা আরো যোগ করেন, ‘এ মুহূর্তে আমার আব্বুকে খুব মিস করছি। আব্বু না-ফেরার দেশে চলে না গেলে হয়তো তিনি আমার এখন পাশে থাকতেন।’

এদিকে, চিকিৎসা শেষে ২২ মার্চ ঢাকায় ফিরবেন বলে জানান সুজানা।

 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ফাহরিবার সাফল্য

মালয়েশিয়ায় অনলাইন মার্কেটিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশি ছাত্রী ফাহরিবা আবদুল্লাহ চিশতী। তিনি মেয়েদের বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্য সংগ্রহ করে তা অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের ভোক্তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ফাহরিবা।

ফাহরিবা যে ধরনের পণ্য সরবরাহ করে থাকেন, তার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের থ্রিপিস, টুপিস, জিন্স, হ্যান্ডব্যাগ, পার্স, নেকলেস, জুতা, কানের দুল, বোরখা, লং-গাউন, মেয়েদের সাজসজ্জা সামগ্রী, ফেসওয়াশ, ছবি তোলার জন্য সেলফি-স্ট্যান্ড ও ঘর সাজানোর জন্য শোপিস।

শুধু নিজ উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশে বসে ফাহরিবার ব্যবসায় তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর মা।

এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনকে ফাহরিবা বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিকল্প কিছু নেই। মানুষ এখন আগের মতো আর কষ্ট করতে চায় না। বিজ্ঞান পৃথিবীটাকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। মানুষ এখন অনেক আধুনিক। ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমে এখন অনেক পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছি, আমি কেন এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকব।’

ফাহরিবা আরো বলেন, “দেশে থাকতে আমার ডিজাইন করা শাড়ি মানুষ কিনত। যখন নিজের ডিজাইন করা শাড়ির ছবি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার দিতাম, তখন সেগুলোর জন্য প্রচুর অর্ডার পেতাম। এভাবে দিন দিন আমার ডিজাইন করার শাড়ির অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেল। তখন আমি ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামে ফেসবুক পেজ খুললাম। তখন আমার থেকে যারা শাড়ি কিনত, তারা এই পেজের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া শুরু করে। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য আমি ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতাম। এভাবে ক্রেতাদের মধ্যে আমার পেজের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মাল।”

জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাহরিবা আবদুল্লাহ বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে আমি অনলাইন ব্যবাসায় ভালোভাবে মনোযোগ দেব। এটাকে ধরে রাখব এবং ব্যবসার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করব।’

ফাহরিবা মনে করেন, অনলাইনে মার্কেটিংয়ে একটু মেধা এবং নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে ভালো করা যায়। যেখানে অনেকে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে না, সেখানে ফাহরিবার অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসায় কোনো লোকসান নেই।

ক্রেতারা কেন আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহরিবা আবদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার চিন্তাভাবনা, শিল্পমন এবং রুচি অনেক ক্রেতা পছন্দ করেন। বাংলাদেশে থাকতে আমার অনেক ক্রেতা ছিল। আমি মালয়েশিয়া আসার পর ওই ক্রেতারা এখনো আমার কাছ থেকেই পণ্য কেনেন।’

বর্তমানে ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক ফেসবুক পেজে ২২ হাজার ব্যবহারকারী লাইক দিয়েছেন।

ফাহরিবা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার পণ্যের অনেক ক্রেতা আছেন, যারা এখন মালয়েশিয়া থেকে পণ্য অর্ডার দেয়। আমি মালয়েশিয়ার বাজারে পাওয়া সেরা পণ্যগুলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। ফলে ক্রেতারা আমার কাছে কোনো ভেজাল পণ্য পায় না এবং সঠিক, সুন্দর ও আসল ব্র্যান্ডের পণ্য পায় আমার কাছে। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কেউ বড় হতে পারে না। তাই দেশে থাকতেও আমি চাকরি করেছি, এখন মালয়েশিয়ায়ও লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করছি।’

এর বাইরে ছুটিতে বা অবসরে বেরিয়ে পড়েন মালয়েশিয়ার বিখ্যাত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পণ্য কিনে সেসব পণ্যের ছবি আপলোড করেন নিজের প্রতিষ্ঠানের পেজে।

ফাহরিবারা দুই বোন ও এক ভাই। তাঁর ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং বোন ডেন্টিস্ট। ফাহরিবার বাবা একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন ফাহরিবা। এর আগে ২০০৬ সালে ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর পর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে বিবিএ শেষ করেন।

বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে এমএস করছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার একজন সম্মানিত সদস্য।

 

কিস্তিতে পণ্য বেচাকেনা প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

আরমান চাকরিতে ঢুকেছেন মাত্র ৯ মাস। সর্বসাকল্যে বেতন পাচ্ছেন ১৪ হাজার ৪শ’ টাকা। অভিভাবকদের ইচ্ছায় এরই মধ্যে আবার বিয়েও করেছেন। নতুন সংসার পেতেছেন ভাড়া বাসায়। কত কিছু কেনাকাটা করতে হচ্ছে। হিমশিম অবস্থা। অফিসের কাজের চাপে আর ট্রাফিক জ্যামের সময় গ্রাসে ছুটির দিন ছাড়া পুরো সপ্তাহে বাজার করার আর কোনো ফুরসতই মেলে না।

তাই সাধ্য না থাকলেও দরকার একটি রেফ্রিজারেটর। কী করবেন ভেবে পান না। প্রতিবেশী ভাবি পরামর্শ দিল, শোরুম থেকে ছয় মাসের কিস্তিতে ফ্রিজ কেনেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তিন মাসের কিস্তিতে কিনলে নগদ মূল্যের ওপর শতকরা পনের টাকা আর ছয় মাসের কিস্তিতে কিনলে শতকরা ২৫ টাকা বেশি দিতে হবে। তিনি হতাশ হলেন। রেফ্রিজারেটর কেনা তার জন্য সম্ভব নয়। যতই কষ্ট হোক সুদের কারবারে নিজেকে জড়িত করে আল্লাহর অবাধ্য হতে পারবেন না।

সানজিদা সেলাই কাজ শিখেছে। উদ্দেশ্য ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বসেই কিছু টাকা উপার্জন করবে। বাবার বোঝা কিছুটা লাঘব করবে; কিন্তু পল্লী বাজারের ছোট একটি দোকানদার আরিফ সাহেব। তার পক্ষে সম্ভব নয় মেয়েকে নগদ টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া। তিনি খোঁজ পেলেন নগদ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে সহজ কিস্তিতে সেলাই মেশিন কেনা যায়। তিনি ভয় পেলেন, আমি মুসলমান। সুদে জড়িত হবো!

আমাদের সমাজে এ রকম আরমান, আরিফ অনেক আছেন। তারা এ ভুল করে থাকেন। নগদ মূল্য থেকে কিস্তি মূল্যের অতিরিক্ত অংশকে সুদ হিসেবে গণ্য করেন। আবার অনেকে কিস্তিকে সুদের সমার্থক ভাবেন। সুদ ও অতিরিক্ত অংশকে এক ভাবেন। অথচ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

সব অতিরিক্ত অংশ সুদ নয়। কিস্তিতে টাকায় আদায় করা হলেই তা সুদ নয়- বিজ্ঞ ইসলামি চিন্তাবিদদের সুচিন্তিত মতানুসারে। কোনো লেনদেনে এক পক্ষের দেয় অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে যদি উভয়পক্ষের আদান-প্রদানকৃত বস্তুদ্বয় সমজাতের হয়। আর যদি বস্তুদ্বয় সমজাতের না হয় তাহলে অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে না।

যেমন- যায়েদ ২০ কেজি গমের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ। আবার যায়েদ ২০ কেজি ধানের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের নয়, সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ নয়।

অনুরূপভাবে বেচাকেনায় যদি এক পক্ষ পণ্য দেয়, তা যে কোনো আইটেমের হোক। অপর পক্ষ মুদ্রা দেয়, তাহলে যে কোনো এক পক্ষের দেয় বস্তুটির পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন, আর এর পশ্চাৎ কারণ যা-ই থাকুক না কেন সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশকে সুদ গণ্য করা হয় না। কেননা, মুদ্রা ও পণ্য এক জাত নয়।

উপরোক্ত আলোচনা ও উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট যে, বর্তমানে বিভিন্ন উৎপাদক, পরিবেশক ও বিক্রেতা ক্রেতাদের কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিয়ে নিজেদের পণ্য বেশি টাকায় বিক্রির অফার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওইসব পণ্য যেমন- রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, সেলাই মেশিন ইত্যাদি নগদ মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কিস্তিতে কেনাকে সুদের কারবার বলা যাবে না এবং দামের ওই অতিরিক্ত অংশকে সুদ বলা যাবে না।

তবে কিস্তিতে বেচাকেনার যে পদ্ধতি আমাদের বাজারে প্রচলিত, তাতে একটি বিষয় অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। সাধারণত বিক্রেতা পক্ষ কিস্তির সংখ্যাভেদে কয়েক ধরনের দাম প্রস্তাব করে। যেমন- মূল্য নগদ দিলে ১০ হাজার টাকা, তিন মাসে শোধ করলে ১২ হাজার টাকা, ছয় মাসে শোধ করলে ১৫ হাজার টাকা, ১২ মাসে শোধ করলে ১৮ হাজার টাকা।

ক্রেতা কিস্তির কথা বলে পণ্য নিয়ে যান। মূল্য ও কিস্তির ধরন নির্দিষ্ট করেন না। পরে নিজের রুচি ও সুবিধামতো প্রস্তাবের যে কোনো একটি মূল্য পরিশোধ করেন। মূল্য সুনির্দিষ্ট না করে বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত রেখেই বেচাকেনার চুক্তি সম্পাদন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।

বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক হলো- বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত মূল্যগুলো থেকে যে কোনো একটি মূল্য ও মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করে চুক্তি সম্পাদন করা।

 

মুসলিম ও অমুসলিম চিন্তাবিদদের দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (আলাইহাস সালাম)

সুনানে ইবনে দাউদ:

আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে তিয়ালসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেছেন:

আলী ইবনে আবি তালিব বলেছেন: তোমরা কি চাও না যে, নিজের ও নবী কন্যা ফাতেমা সম্পর্কে তোমাদেরকে অবগত করি?

তিনি মহানবী (স.) এর সবচেয়ে নিকটতম হওয়া সত্ত্বেও আমার বাড়ীতে যাতা পিষতে পিষতে তার হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হত, পানি বহনের কারণে তার কাঁধে ব্যথা হত,ঝাড়ু দান ও গৃহ পরিচ্ছন্ন করার কারণে তার পোষাক পুরোনো হয়ে যেত। শুনেছি যে, মহানবী (স.) এর নিকট কয়েকজন গৃহ পরিচারিকা ছিলেন (দাসী)। ফাতেমা সাহায্য গ্রহণের আশায় বাবার কাছে গেলেন। যাতে ঐ গৃহ পরিচারিকাদের একজনকে বাড়ীর কাজের জন্য তাঁর (স.) নিকট চাইতে পারেন। কিন্তু তিনি বাবার নিকট উপস্থিত হয়ে সেথায় উপস্থিত যুবকদেরকে দেখে অতিমাত্রায় লজ্জিত হয়ে নিজের আবেদন প্রকাশ করা হতে বিরত থাকলেন এবং মনের কথা না বলেই তিনি ফিরে আসলেন।

(সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

সহীহ আল বুখারী:

আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী নিজের প্রসিদ্ধ বুখারী গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ১৭তম পৃষ্ঠায় বাবু ফাদ্বায়েলুস সাহাবা’তে (১৩৭৬ ফার্সী/ ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে মক্কায় প্রকাশিত) নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেছে যে, মহানবী (স.) বলেছেন:

‘ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যারা তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃতপক্ষে) তারা আমাকে রাগান্বিত করেছে’।

৩য় খণ্ডের ১৪৬ পৃষ্ঠায় ও ৪র্থ খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (স.) বলেছেন: ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যে তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃত অর্থে) সে আমাকে রাগান্বিত করেছে।

৫ম খণ্ডের ২০তম পৃষ্ঠায় বলেছেন: ‘ফাতেমা বেহেশতের নারীদের সর্দার’।

সহীহ তিরমিযী:

প্রসিদ্ধ সহীহ তিরমিযী গ্রন্থের প্রণেতা নিজের সহীহ গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘আয়েশাকে জিজ্ঞেস করা হল, লোকদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে প্রিয়?

তিনি বলেন: ফাতেমা। জিজ্ঞেস করা হল: পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন: তার স্বামী আলী।

(মাহমুদ শাহাবী রচিত ‘ইসলাম ওয়াশ শিয়া’ গ্রন্থ হতে সংকলিত)

সহীহ মুসলিম:

মুসলিম বিন হাজ্জাজ কুশাইরী (মৃত্যুকাল ২৬১ হিজরী) স্বীয় প্রসিদ্ধ সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ‘ফাতেমা মহানবী (স.) এর দেহের অংশ। যে তাকে কষ্ট দেয় সে মহানবীকে কষ্ট দিয়েছে এবং যে তাকে খুশী করে সে মহানবীকে খুশী করলো।

মুসনাদে হাম্বাল:

অন্যতম সুন্নি মাযহাবের (হাম্বালী) ফিকাহে’র প্রণেতা ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল স্বীয় মুসনাদের তৃতীয় খণ্ডে নিজের বিশেষ সনদে মালেক ইবনে আনাস হতে বর্ণনা করেছেন যে,

‘দীর্ঘ ছয় মাস যাবত মহানবী (স.) যখন ফজরের নামাযের জন্য ফাতেমা’র গৃহে সামনে দিয়ে যেতেন তখন বলতেন: ‘নামায! নামায!‍ হে আহলে বাইত’… অতঃপর তিনি

((إنما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا)) –এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন।(সূরা আহযাব-৩৩)

খ্রিষ্টান চিন্তাবিদ সুলাইমান কাত্তানী’র দৃষ্টিতে নারীকূলের শিরোমনি

হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন বাণী ও রচনা রয়েছে যেগুলোর সংখ্যা অত্যাধিক, চাই তা বন্ধুদের পক্ষ হতে হোক বা শত্রুদের। বিশেষ করে বিজ্ঞ ও ন্যায়নীতিবান শত্রুদের পক্ষ হতে।

লেখক যখন এ অধ্যায়টি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন তার সম্মুখে বিশ্বের বিভিন্ন লেখক ও  চিন্তাবিদদের শত শত গ্রন্থ রয়েছে। ঐ সকল মন্তব্য ও লেখা একত্রে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং বাধ্য হয়ে কয়েকজন চিন্তাবিদ ও লেখকের মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা হল।

লেখনী’র এ অংশে অমুসলিম চিন্তাবিদদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।

প্রথমে ‘সুলাইমান কাত্তানী’ নামক এক খ্রিষ্টান সাহিত্যিক, লেখক ও কবির মন্তব্য দিয়ে শুরু করতে চাই। যিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থও রচনা করেছেন যা ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

তার সম্পর্কে অধিক জানতে এটা জানা জরুরী যে, কয়েক বছর পূর্বে নাজাফের আরবি-ইসলামি গ্রন্থাগার কর্তৃক আরব লেখকদের মাঝে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যাতে প্রতিদ্বন্দিরা মুত্তাকিদের মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর সম্পর্কে রচনা লিখে উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন।

ঐ প্রতিযোগিতায় বিশিষ্ট লেবাননীয় সাহিত্যিক ও কবি জনাব সুলাইমান কাত্তানী ‘আল ইমাম আলী নাবরাস ও মেতরাস’ শীর্ষক গ্রন্থ লিখে অংশগ্রহণ করে। ঐ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল লেখা ও গ্রন্থাদি পর্যালোচনার পর সুলাইমান কাত্তানী’র গ্রন্থটি প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয় এবং লেখক প্রথম পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বিতীয় বার একই গ্রন্থাগার হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর ব্যক্তিত্বের উপর প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। এবারও তিনি ‘ফাতেমাতুয যাহরা, ভিতরুন ফি গামাদিন’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রথমস্থান অধিকার করে প্রথম পুরস্কারটি জিতে নেন।

যদিও প্রথম অবস্থায় এ ধারণা করা হচ্ছিল যে, যেহেতু লেখক একজন অমুসলিম তাই তাকে উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তার লেখা অধ্যয়নের পর স্পষ্ট হল যে, সে এ পুরস্কারের যোগ্য ছিল। কেননা তিনি একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লেখকদের সাথে একজন ইসলামি ব্যক্তিত্বের জীবনী ও ব্যক্তিত্বের উপর গ্রন্থ রচনা পূর্বক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ঐ বইসমূহ হতে এও স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য বিষয়টিতে পৌঁছুতে পেরেছেন। সুতরাং যদি তার গ্রন্থটি প্রথম স্থান অধিকার করে তবে তাতে কোন কথা থাকার কথা নয়। কেননা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) একজন ঐশী ও বিশ্ব ব্যক্তিত্বের অধিকারী যার ব্যাপারে লেখার অধিকার সকলের রয়েছে। যদিও বন্ধুর কথাকে শত্রু বা মিত্র যে কারও মুখ হতে শুনতে ভাল লাগে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে ‘আল ফাজলু মা শাহেদতু বিহিল আ’দা’ গ্রন্থটি।

বর্তমানে জামিলা বু পাশা, ইন্দ্রা গান্ধি, ফ্লোরেন্স, এলিজাবেথ ও বিনতুল হুদা’র ন্যায় ব্যক্তিত্বের জীবনীর উপর সমগ্র বিশ্বে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়ে থাকে। এখানে কি এটা সমিচীন নয় যে, বেহেশতের নারীকূলের সর্দারিনী, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী, বিশ্বনবীর প্রাণপ্রিয় কন্যা, বেহেশতের যুবকদের সর্দারের মাতা হযরত ফাতেমা যাহরা ( আ.) এর জীবনীর পরিচয় তুলে ধরা?

জনাব সুলাইমনা কাত্তানী তার গ্রন্থের শুরুতে লিখেছেন:

‘ফাতেমা যাহরা (আ.) এর মর্যাদা এর উর্দ্ধে যে, ইতিহাসের প্রমাণ এবং রেওয়ায়েত তার ব্যক্তিত্বের প্রতি ইশারা করবে, এতটাই সম্মানিত যে, জীবনী ভিত্তিক লেখা গ্রন্থসমূহ তার পরিচয় তুলে ধরবে। ফাতেমা যাহরা ( আ.) এর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি মুহাম্মাদ (স.) এর কন্যা ও আলী (আ.) এর স্ত্রী, হাসান ও হুসাইন (আ.) এর মাতা এবং বিশ্বের নারীদের সর্দার’।

(ফাতেমা যাহরা ভিতরুন ফি গামাদিন, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩)

তিনি তার গ্রন্থের শেষাংশে লিখেছেন: ফাতেমা, হে মোস্তফা’র কন্যা! হে সর্বোচ্চ উজ্বল চেহারার অধিকারী যাকে পৃথিবী নিজের কাঁধে স্থান দিয়েছে, তুমি শুধুমাত্র দুইবার মুচকি হেসেছো; একবার নিজের বাবার সম্মুখে যখন তিনি মৃত্যুশয্যায়ে ছিলেন এবং তোমাকে তার সাথে অতি দ্রুত সাক্ষাতের সুসংবাদ দিলেন। আর দ্বিতীয়বার তোমার মুচকি হাসিটি তোমার সমগ্র ঠোঁটে ছড়িয়ে পড়েছিল যখন ছিল জীবনের শেষ মুহূর্তে তুমি তোমার শেষ নিঃশ্বাসটি ছেড়ে দিলে… তুমি সর্বদা ভালাবাসার সাথে জীবন যাপন করেছো, তুমি পবিত্রতার সাথে জীবন-যাপন করেছো…

তুমি পৃথিবীকে উপহাসব্যাঞ্জক মুচকি হাসির সাথে পরিত্যাগ করে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে রওনা হয়েছো। হে নবী কন্য! হে আলী’র স্ত্রী! হে হাসান ও হোসাইনের মাতা, হে সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী’।

(প্রাগুক্ত গ্রন্থের অনুবাদ, পৃ. ২)

ফরাসী গবেষক লুঈ মাসিনিউন:

প্রখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ ও গবেষক লুঈ মাসিনিউন, যিনি নিজের জীবনের বেশ কয়েকটি বছর হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) কে চেনার কাজে ব্যয় করেছেন। তার এক গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধে নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর মোবাহেলা, –যা ১০ম হিজরীতে মদিনায় সংঘটিত হয়েছিল- সম্পর্কে লিখেছেন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি তার ঐ প্রবন্ধে বলেন: আওরাদ ও হযরত ইবরাহিম (আ.) এর দোয়াসমূহে ১২টি নূরে সংবাদ দেয়া হয়েছে যারা ফাতেমা কেন্দ্রিক…

মুসার তাওরাত গ্রন্থেও মুহাম্মাদ (স.) ও তার বরকতপূর্ণ কন্যা এবং ইসমাঈল ও ইসহাকের (হাসান ও হুসাইন) ন্যায় তাঁর দু’টি সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

ঈসা (আ.) এর ইঞ্জিলেও আহমাদ (স.) এর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আরো সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, তিনি একটি বরকতপূর্ণ কন্যা সন্তানের অধিকারী হবেন, যে দু’টি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে…’।

আব্দুর রাহমান বাদাভী’র ব্যক্তিত্ব (যারা সাথে মোবাহেলার বিষয়টিও এসেছে), লুঈ মাসিনিউন, পৃষ্ঠা ১৭৯, ১৯৪৪ সালে মিলানে প্রকাশিত।#

সূত্র: ইন্টারনেট

 

সুখী পরিবার-২

প্রতিটি পরিবারকে সুখ-শান্তির সোনালী নীড়ে পরিণত করার সুমহান লক্ষ্য অর্জন করার জন্যে যেসব দিক-নির্দেশনা আল্লাহ রাববুল আলামীন এবং তাঁর প্রিয় রাসূল দিয়েছেন, সেগুলোর প্রতি যথার্থ মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরী ৷ পরিবারের সূচনা হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে ৷ বিয়ের মাধ্যমেই নর এবং নারীর দুটি জীবন একটি মাত্র স্রোতে প্রবাহিত ৷ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে,তেলে-জলে কখনো মেশে না ৷ অর্থাৎ মিলন ঘটে না ৷ তাই দেখা যায় বিপর্যয় ৷ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও যদি তেল আর জলের মতো হয়, তাহলে পারিবারিক বিপর্যয় দেখা দেবে-এটাই স্বাভাবিক ৷ ফলে প্রশ্ন দাঁড়ায় নর-নারী বাছাই কীভাবে করতে হবে ? অধিকার বা কর্তব্য সম্পর্কে কথা বলার আগে আমরা বরং এ প্রশ্নটির সমাধান করার চেষ্টা করি ৷

বিয়ের ক্ষেত্রে কনের চারটি গুনের কথা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এগুলো হলো- ঐশ্বর্য, আভিজাত্য, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারিত্ব ৷ ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন, একজন পুরুষের জন্যে সবচেয়ে বড়ো সম্পদ হলো ঈমানদার নারী পাওয়া, যে নারী সেই পুরুষটিকে দেখামাত্রই সুখী হয়ে উঠবে এবং তার অবর্তমানে তার সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করবে ৷” নারীর যে চারটি গুনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দ্বীনদারিত্বই হলো প্রধান বিষয় ৷ কারণ দ্বীনদার রমনীর কাছে অন্য তিনটি গুনের মূল্য অপ্রধান ৷ কেননা দ্বীনদার নারী ঐশ্বর্য, আভিজাত্য কিংবা সৌন্দর্যের বড়াই করে না ৷ ধন-সম্পদ এবং বংশগত সাম্য না থাকলে খুবই সমস্যা দেখা দেয় ৷ স্বামী বেশী ধনী হলে স্ত্রীকে ছোটলোক বলে খোটা দেয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ পক্ষান্তরে স্ত্রীর বাবা-মা তুলনামূলকভাবে ধনী হলে স্বামীকে ছোটলোক বা বিভিন্নভাবে খোটা দেয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ বিশেষ করে জীবন-যাপন প্রণালীতে তারতম্যের সম্ভাবনা থাকে ৷ আর এসব থেকেই পারিবারিক সমস্যা সাধারণত দেখা দেয় ৷ আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো এই চারটি বিষয়ে সমতা থাকলেও বর-কনের পারস্পরিক পছন্দের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে; কোনভাবেই জোর-জবরদস্তি করা যাবে না ৷ জোর করে বিয়ে করা বা দেয়া হলে পরিণতি কখনোই ইতিবাচক হয় না ৷ এই মৌলিক বিষয়গুলো মনে রেখে বিয়ে করার পর স্বামী-স্ত্রীর যে দাম্পত্য জীবন গড়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যগুলো আন্তরিকভাবে পালন করা সুখ-শান্তির অনিবার্য শর্ত ৷ আমরা প্রথমেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের দিকগুলো ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
একটি পরিবারের স্তম্ভ হলো দুটি ৷ নারী-পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রী ৷ এ দুজনের মধ্যে যে কোন একজনকে পরিবারের অভিভাবকত্ব নিতে হয় ৷ অভিভাবক শূন্য পরিবার বিশৃঙখল ৷ পরিবার সংগঠনটির সাথে ঘরে-বাইরের বহু বিষয়ের সম্পর্ক থাকে ৷ তাছাড়া নারীর তুলনায় পুরুষ যেহেতু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই শক্তিমান, তাই আল্লাহ রাববুল আলামীন পুরুষকেই স্ত্রী তথা পরিবারের অভিভাবক হিসাবে ঘোষণা করেছেন ৷ বলেছেন, ‘পুরুষরা হলো স্ত্রীদের অভিভাবক এবং ভরণপোষণকারী ৷’ অন্যদিকে রাসূলে খোদা (সাঃ)বলেছেন, ‘পুরুষ হলো পরিবারের প্রধান, আর যারা প্রধান তাদের কর্তব্য হলো নিজ নিজ অধীনস্থদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ৷’
তো কোরআণ এবং হাদীস অনুযায়ী পরিবারের অভিভাবকত্ব যেহেতু পুরুষ তথা স্বামীর ওপর ন্যস্ত হয়েছে, তাই স্বামী অর্থাৎ পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও অনেক বেশী ৷ পুরুষ কর্তাটিকে তাই হতে হয় পরিবারের প্রধান শৃঙ্খলা বিধায়ক ৷ যে পরিবারে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়, সেখানেই বিপর্যয় নেমে আসে ৷ তবে এখানে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তাহলো পরিবারের কর্তা বলে সে যেন অন্যান্যদেরকে তার প্রজা ভেবে না বসে বরং পারস্পরিক পরামর্শ, আন্তরিকতা ও দুরদর্শিতার সাথে শ্রদ্ধা-সম্মান ও স্নেহের ভিত্তিতে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য ৷ স্ত্রী যেহেতু পরিবার সংগঠনে স্বামীর প্রধান সহযোগী এবং পরিবারের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধানের প্রধান ব্যক্তি, সেজন্যে স্ত্রীর ওপর স্বামীর যথাযথ দায়িত্ব পালনই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ একথা সর্বজনবিদিত সত্য যে, দীর্ঘ পথ চলতে গেলে মাঝখানে ছোট-খাটো সমস্যা অর্থাৎ হোঁচট খাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যেতেই পারে ৷ আর যেখানে ব্যক্তি এবং ব্যক্তিত্বের সহাবস্থান ঘটে এবং তা যদি স্বামী-স্ত্রীর মতো দুটি ব্যক্তিত্বের দীর্ঘ সংসার জীবনের পথ পাড়ি দেয়ার মতো ঘটনা হয়, তাহলে ছোট-খাটো যে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়াটা অসম্ভব কিছু নয় ৷ আর সমস্যা দেখা দিলে দোষ কার তা না খুঁজে বরং কীভাবে তার সমাধান করা যায়, তারই প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ ৷ কারণ মানুষের প্রকৃতিগত মানবীয় দুর্বলতার কারণেই দোষ-ত্রুটি হয়ে থাকে ৷ ফলে দোষ-ত্রুটি খুঁজতে গেলে অযথা বিড়ম্বনাই বাড়বে ৷ সেক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ ৷ সমস্যা সমাধানের পর দোষ যদি স্ত্রীরও হয়ে থাকে, তবু তাকে তিরস্কৃত করা যাবে না ৷ কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারীকে ঘৃণা না করে ।’ স্ত্রীরতো দোষ থাকতেই পারে ৷ তাই বলে কি তার কোন গুণ নেই ? যদি গুণ থেকেই থাকে, সেক্ষেত্রে গুণগুলোকে সামান্য তুলে ধরে দোষকে চেপে যাওয়াটাই হবে অভিভাবকসুলভ আচরণ ৷ আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণ কর ৷ তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাদের মধ্যে অনেক কিছুই ভালো ও কল্যাণ জমা করে রেখেছেন ৷’ স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশিত আচরণবিধি অনুযায়ী অবশ্যই সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে ৷ মনে রাখতে হবে মহানুভবতার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে, আর অসহিষ্ণুতার মধ্যে রয়েছে সমূহ বিপর্যয় ৷

স্বামীকে হতে হবে প্রেমিক ৷ প্রেমের মাধ্যমে, ভালোবাসার মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে নীবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে ৷ প্রত্যেক স্ত্রীই চায় তার স্বামী তাকে একান্তভাবে ভালোবাসুক ৷ কিন্তু ভালোবাসার জন্যে স্ত্রীরা সাধারণত মুখ খোলে না ৷ সেজন্যে স্বামীর ওপর একটা গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয় স্ত্রীকে আবিস্কার করার ৷ প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত ভালো লাগা, মন্দ লাগার ব্যাপার থাকে ৷ স্ত্রীর প্রিয় বিষয়গুলোকে অর্থাৎ সে কী পছন্দ করে, কী অপছন্দ করে-সে বিষয়গুলো মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করতে হবে ৷ তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলোর প্রতিও একইভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷ এগুলো আবিষ্কার করার পর ন্যায় সঙ্গত চাওয়া-পাওয়া ও অধিকারগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে ৷ স্বামী তার আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গী দিয়ে স্ত্রীকে যদি বোঝাতে পারে তাহলে স্বামীর প্রতি স্ত্রীও আকৃষ্ট হবে এবং সেও তার ভালোবাসা উজাড় করে দেবে ৷ আর স্বামীকে যদি তার স্ত্রী ভালোবাসে তাহলে তার সংসার গোছাতেও আন্তরিক হবে ৷ নারী জাতি স্বভাবতই স্নেহ, আদর, ভালোবাসা প্রত্যাশা করে৷ যতোই সে স্নেহ আর আদর পায়, ততোই সে সুন্দর হয়ে ওঠে ৷ নারী এমন এক আবেগপ্রবণ চরিত্র যে, স্নেহ আর আদর পাওয়ার জন্যে এবং সবার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠার জন্য সে অনেক কিছু ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না ৷ ছোট বেলা থেকে যে মেয়েটি বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ পেয়ে বড়ো হলো, সে মেয়েটি যখন বিয়ে করে স্বামীর কাছে আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে চায় স্নেহ ভালোবাসার সকল আকাঙ্ক্ষা তার কাছ থেকেই পূরণ করতে ৷ বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এতোদিন যতো ভালোবাসা পেয়েছিল সে, স্ত্রী হয়ে স্বামীর কাছে যাবার পর স্বামীর কাছ থেকেই তা পেতে চায় ৷ ফলে কতোবেশী পরিমাণ ভালোবাসা একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে প্রত্যাশা করে তা একবার ভেবে দেখুন ৷ আর স্ত্রীর তা প্রাপ্য, কারণ স্ত্রী তার নিকটজনদের ছেড়ে একমাত্র স্বামীর কাছে চূড়ান্ত আস্থা নিয়ে এসেছে ৷ তার এই ত্যাগকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা খুবই জরুরী ৷ নবী করিম (সাঃ)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীকে বলে আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি’ এই কথাটা তার স্ত্রীর মন থেকে কখনোই মুছে যায় না ৷ এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, স্ত্রীকে মনে মনে ভালোবাসলে চলবে না, ভালোবাসার কথা মুখেও প্রকাশ করতে হবে এবং ভালোবাসা হতে হবে আন্তরিক ও অকৃত্রিম ৷ স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে অবস্থান করলে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া উচিত ৷ কাজের ফাঁকে অফিস থেকে ফোন করে কথা বললে স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা কাটে ৷ বিদেশ-বিভূঁয়ে বাস করলে চিঠিপত্র লেখা যেতে পারে ৷ ফোন করে অভাব-অনুভূতির কথা প্রকাশ করলে দূরত্ব সত্ত্বেও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায় ৷ যেখানেই আপনি বেড়াতে যান না কেন, বৌ-এর জন্য ছোট-খাটো করে হলেও উপহার সামগ্রী কিনে এনে তার হাতে দিলে স্ত্রী বুঝবে যে, স্বামী তাকে ভুলেনি ৷ সামান্য উপহার সামগ্রী ভালোবাসার অকৃত্রিম নিদর্শন হয়ে উঠবে ৷ বিনিময়ে স্ত্রীর অমূল্য ভালোবাসায় ধন্য হবে স্বামীর জীবন, পুষ্পিত হয়ে উঠবে সংসার তথা দাম্পত্য জীবন ৷

 

সুখী পরিবার-১

জীবনের স্রোতোধারার অনিবার্য সঙ্গী হলো মানবজাতি ৷ ‘নর’ এবং ‘নারী’ মানবজাতির এই জীবনধারাকে প্রবাহমান গতি দিয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মানব আদমের যুগ থেকে ৷ বর্তমান বিশ্বের ৬১০ কোটি মানুষ যুগ-যুগান্তের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এখন ৷ মানুষ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ একটি বক্তব্য প্রায় সবারই জানা, তাহলো-‘মানুষ হলো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী’ ৷ সত্যিই এই বিচারবোধই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলেছে ৷ সেজন্যে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত জীবন যাপন না করে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ৷ যুগে যুগে আল্লাহ প্রেরিত রাসূলগণই এই পরিবার গঠনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ৷ সুশৃঙ্খল এই পারিবারিক কাঠামো থেকেই মানুষ পেয়েছে সভ্যতার আলো ৷ পরিবার কাঠামোর সাথে সভ্যতা যেন নিত্যসঙ্গী ৷ যেখানে পরিবার কাঠামো নেই, সেখানে সভ্যতা বলতে যা বোঝায়, তার সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাপন পদ্ধতির খুব বেশী পার্থক্য নেই ৷ নারী এবং পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে পরিবার ৷ এই ‘সম্মিলিত’ শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক অবদান এবং অধিকারের সূক্ষ্ম বিষয় ৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী-পুরুষের অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগত মতবাদ বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছে ৷ সেসব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একমাত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদই নারীকে কখনো ভোগ্যপণ্যে কিংবা কখনো পুরুষ দেবতার সেবাদাসীতে পরিণত করেছে ৷ সভ্যতার এই স্বর্ণযুগেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার নিয়ে এখনো চলছে বিচিত্র কৌণিক মতামত ৷

পশ্চিমা সমাজে পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত লিভিং টুগেদার বা নারী-পুরুষের একত্রবাস প্রথা চালু রয়েছে ৷ এছাড়া বিয়ের প্রচলন সেখানে যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার প্রশ্নে মতবিরোধের জের ধরে ডিভোর্সের মাত্রাই ব্যাপক ৷ যে সমাজে লিভ-টুগেদারের জন্যে বিয়েরই প্রয়োজন নেই, সে সমাজে ডিভোর্স বা তালাক প্রদানের মাত্রা যে কতো মামুলি ও ভয়াবহ, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায় ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মানদন্ডে পশ্চিমা জগত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার হলেও ক্ষয়িষ্ণু পরিবার কাঠামোর ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্বব্যাপী অকল্যাণই বয়ে এনেছে ৷ তাদের ঐ কু-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে মুসলিম জাতির মধ্যেও তা এখন সংক্রমিত হচ্ছে ৷ এরফলে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ব্যাপক বেড়ে গেছে ৷ অথচ পরিবারের প্রধান যে দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রী-তাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক কর্তব্যবোধ স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকতো, তাহলে এই সমস্যা হয়তো দেখাই দিত না ৷ বহু শিক্ষিত পরিবারেও যথার্থ ইসলামী শিক্ষার অভাবে এ ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে ৷ শিক্ষিত এইসব পরিবার তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করে থাকে পাশ্চাত্যের মানদন্ডে, যেখানে নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে যাপন করছে পশুর মত জীবন ৷ তাই মুসলিম দম্পতিদের উচিৎ তাদের নিজস্ব ধর্মাদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারস্পরিক কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং যথাযথভাবে তা মেনে চলা ৷ তাহলেই দেখা যাবে সংসার হয়ে উঠেছে শান্তির সোনালী নীড়।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন এবং পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ স্থাপন করেছে ৷ ইসলাম পূর্বকালে নারীকে মানুষই মনে করা হতো না ৷ গ্রীকরা তাদেরকে মনে করতো শয়তানের চর ৷ জৈবিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই তাদের ব্যবহার করা হতো ৷ রোমানদের অবস্থাও ছিল তাই ৷ সেখানে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করা হতো ৷ জাহেলিয়াতের যুগে আরবে কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ইতিহাস সর্বজনবিদিত ৷ পারস্য সভ্যতায়ও কন্যাসন্তানকে ভীষণরকম অকল্যাণকর বলে মনে করা হতো ৷ চীনের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দুঃখ ও সহানুভূতি জানাতো ৷ অর্থাৎ নারী ছিল একটা ভোগ্যপণ্য ৷ তাদের ব্যক্তিগত কোন মানবিক সত্ত্বাই স্বীকার হতো না ৷ আর হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মৃত ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়ে মারতো ৷ এরকম করুণ একটা ঘটনাকে তারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও ত্যাগের নিদর্শন বলে মনে করতো ৷ কী আশ্চর্য, বিধবাকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, দিয়েছিল চিতার আগুনে জীবন্ত পোড়াবার নির্দেশ ! এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিচিত্র উপায়ে নারীদের সত্ত্বাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল ৷ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ফলে নারী পেল তার মৌলিক মানবিক অধিকার । নবী করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের উপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে ৷” আল্লাহ রাববুল আলামীন বললেন, নারীরা তোমাদের পোষাক এবং পুরুষরাও নারীদের পোষাকস্বরূপ ৷ যুগান্তকারী এইসব ঘোষণার মাধ্যমে নারী ফিরে পেল তাদের অধিকার, ফিরে পেল মানুষ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাও হয়ে উঠলো সভ্যতা সৃষ্টির প্রশংসিত স্রষ্টাদের গর্বিত অংশীদার ৷ কবি নজরুলের ভাষায়-

পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

ইসলাম নারী এবং পুরুষকে তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবারের শৃঙ্খলা বিধানের জন্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে একটা আদর্শ সমাজ বিনির্মানকে সুনিশ্চিত করেছে ৷ পরিবারের মূল হলো স্বামী-স্ত্রী বা বাবা-মা৷ স্বামী-স্ত্রীর জীবনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার অনুশীলন যদি না থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনেও তা আশা করা যায় না ৷ আর স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের বংশধরের সামষ্টিক রূপই হলো সমাজ ৷ আর সমাজ কাঠামোর বৃহত্তর সংগঠনই রাষ্ট্র ৷ তাই বলা যায় একটা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও আদর্শের মূল ভিত্তিই হলো পরিবার ৷ ইসলাম তাই পরিবার তথা বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যকার পারস্পরিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা বিধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একের প্রতি অপরের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে যথাযথ রূপরেখা দিয়ে দিয়েছে ৷ কারণ স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধনই উত্তর প্রজন্মের নৈতিক শৃঙ্খলা বিধানের একমাত্র উপায় ৷ সমাজের প্রতি একটু সচেতন দৃষ্টি দিলে লক্ষ্য করা যাবে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ রয়েছে, সে পরিবারে শান্তিতো নেই-ই বরং পরবর্তী প্রজন্মও বিশৃঙখল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে ৷ সামাজিক অনাচার, মাদকাশক্তিসহ মানবিক মূল্যবোধ বর্জিত কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে এই পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ৷ অথচ পরিবারে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সাধারণত খুবই ছোটখাট ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধে ওঠে ৷ ঘটনাগুলোর জন্য পারস্পরিক অহমবোধ, অশ্রদ্ধা, সম্মানহীনতা এবং নিজ নিজ কর্তব্যের ব্যাপারে ইসলামের বেধে দেয়া মানদন্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকাই দায়ী ৷ আমাদের সমাজে এখনও অজ্ঞানতাবশত স্বামীদের অনেকেই মনে করেন যে, স্ত্রী হলেন তাদের দাসীর মতো ৷ স্ত্রীর কাজ হলো স্বামীর সকল আদেশ মেনে চলা ৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন স্ত্রী এ ধরনের স্বৈরাচারী স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে নেয় না ৷ সেজন্যেই শুরু হয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ৷ স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ওপর যেরকম অধিকার চর্চা করার চেষ্টা চালায়, স্ত্রীদেরও যে স্বামীর ওপর সেরকম আধিকার চর্চার সুযোগ রয়েছে এ কথাটা স্বামীরা ভুলে যান এবং পুরুষতান্ত্রীক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেন ৷ সেজন্যে স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তব্য এবং স্বামীর ওপর স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত ইসলামী নীতিমালা নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব ৷ প্রথমেই আমরা স্ত্রীর ওপর স্বামীর কী কী কর্তব্য রয়েছে সেগুলো তুলে ধরবো ৷ একজন পুরুষ ইসলামের এই নীতিমালার মানদন্ডে নিজেকে বিচার করবেন এবং পারিবারিক শৃঙ্খলা ও দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন এটাই প্রত্যাশা ৷

 

নারীর অধিকার

নারী অধিকার বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ আলোচিত বিষয়। নারী তার অধিকার এবং অবস্থানের ক্ষেত্রে ছিল অনেক পিছিয়ে। বর্তমান সময়ে বহু সমাজে নারীরা বহু রকম সমস্যার শিকার এমনকি নির্যাতনের শিকার। সে জন্যে আমরা একটি পরিবারে নারীর মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ইসলাম কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সে বিষয়ে খানিকটা আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

বিয়ে এবং পরিবার গঠন মানব সভ্যতার একটি জরুরী প্রয়োজন। পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় নারী–পুরুষ এবং সন্তানেরা উন্নয়ন ও পূর্ণতায় পৌঁছে। আসলে পরিবার হচ্ছে মানব উন্নয়নের সবচেয়ে উপযোগী ক্ষেত্র। কেননা সমাজকে একটা জীবন্ত কাঠামোর সাথে তুলনা করা যায় যার বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে,নারী পুরুষ হচ্ছে এই সমাজ কাঠামোর মূল অঙ্গ। এদের সবারই যেমন নিজ নিজ দায়িত্ব রয়েছে তেমনি সামষ্টিক কিছু দায়-দায়িত্বও রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক কাঠামো আইনের উর্ধ্বে উঠে প্রেম ভালোবাসা এবং ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। কেননা এ ক্ষেত্রে দুটি মানব-মানবী তাদের জীবনের সবোর্ত্তম বছরগুলো একে অপরের খুব কাছে থেকে ঘনিষ্টতার মধ্য দিয়ে কাটায়। ইসলামের শিক্ষা হলো পরিবারের সদস্যরা নৈতিক গুণাবলির এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাবে যাতে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের অধিকার সম্পর্কে আন্তরিক ও সচেতন হয়।

ইসলামের অধিকার আইনে পরিবারের ভরণ-পোষণ বা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে পুরুষের ওপর। নারী যেহেতু পরিবারের এই গুরুত্বপূর্ণ ঝামেলা থেকে দায়িত্বমুক্ত, সে জন্যে সাংসারিক রান্না-বান্না এবং সন্তান-সন্ততিকে লালন-পালন করা,তাদের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ইত্যাদি বর্তায় নারীর ওপর। বিয়ের (আকদের) পর নারী,পুরুষের কাছ থেকে সম্পদের অধিকার লাভ করে,অর্থাৎ পুরুষ তার মালামাল এবং অর্থ-সম্পদের একটা অংশ তার স্ত্রীকে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয়,যাকে মোহরানা বলা হয়। অবশ্য মোহরানা পুরুষের সামর্থের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা নিসা’র ৪ নম্বর আয়াতে পুরুষদেরকে মোহরানা পরিশোধের দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন,

‌’নারীদের মোহরানাকে পরিপূর্ণভাবে প্রদান করো,তবে যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়,তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে মোহরানা নারীর প্রতি পুরুষের সততার প্রমাণ। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শহীদ মোতাহহারী নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং মোহরানা বাতিল করা সংক্রান্ত বিতর্কের জবাবে বলেছেন,

মোহরানার বিধান আসলে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা আরো প্রমাণ করে যে প্রেম পুরুষের পক্ষ থেকে শুরু হয় আর নারী তার প্রেমে সাড়া দেয়। নারীর সম্মানে পুরুষ তাকে একটি উপহার প্রদান করে। সেজন্যে মোহরানার বিধান নারী-পুরুষের সমান অধিকারের নামে বাতিল করা বা রহিত করা উচিত নয়।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে মোহরানা ছিল নারী কেনা-বেচার মূল্য। জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের কোনো মূল্যই ছিল না। আবার যেই মোহরানাটা পুরোপুরিই ছিল নারীর প্রাপ্য তা বাবা এবং ভাইয়ের অধিকারে দেওয়া হতো। ইসলাম জাহেলী এই বিশ্বাসকে বাতিল করে দিয়ে মোহরানাকে নারীর অধিকার বলে ঘোষণা করে বলেছেঃ পুরুষের পক্ষ থেকে তা আন্তরিকভাবে নারীকে প্রদান করতে হবে। পরিবারে নারীর ভরণ-পোষণও তার প্রাপ্য অধিকার। আজকের সমাজে নারীর ভরণ পোষণ বলতে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যেমন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ নারীর জীবনযাপনের জন্যে অন্যান্য বস্তু। স্ত্রীর এইসব মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা স্বামীর অবশ্য কর্তব্য।

আজকালফ্যামিনিস্টরা এবং বহু পশ্চিমা মতবাদ নারীকে প্রদেয় মোহরানা এবংভরণ-পোষণকে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের সাথে বৈষম্যের সমার্থক বলে মনেকরে। অথচ মোহরানা এবং ভরণ-পোষণের বিধানটি নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য এবংতাদের ভূমিকাগত তারতম্যের কারণেই দেওয়া হয়েছে। প্রজন্ম উৎপাদন এবংঅন্তসত্ত্বার বোঝা বহনের দায়িত্বটি প্রাকৃতিকভাবেই নারীর কাধেঁ অর্পিতহয়েছে। অধ্যাপক শহীদ মোতাহহারীর মতে সন্তান ধারণ এবং শিশুকে দুধ খাওয়ানোরমতো কঠিন দায়িত্ব যেহেতু নারীর ওপর অর্পিত হয়েছে,সে জন্যে তার ভরণ-পোষণপ্রাপ্তির অধিকারটি যথার্থ এবং উপযুক্ত। শারীরিক শক্তি-সামর্থের পার্থক্যথাকার কারণেই নারীর পক্ষে অর্থনৈতিক কঠিন কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া পুরুষেরমতো সম্ভব নয়। পুরুষ ভারি কাজগুলো করার সামর্থ বেশি রাখে। আল্লাহ রাব্বুলআলামিন নারীদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুরুষের ওপরঅর্পন করেছে আবার পুরুষকে তার আত্মিক দিক থেকে নারীর মুখাপেক্ষী করেসৃষ্টি করা হয়েছে।

স্ত্রী এবং মায়ের ভূমিকা পালন করার জন্যে নারীর নিরাপত্তা এবং প্রশান্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি একজন নারী শক্ত কাজ করে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাহলে স্বামী-সন্তানের ব্যাপারে করণীয় দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে না। শহীদ মোতাহহারীর মতে, নারীকে যেহেতু প্রফুল্ল থাকতে হয় তাই তার প্রশান্তির প্রয়োজনীয়তা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিধানটাই এমন যে, নারী-পুরুষের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই কিছু তারতম্য রেখে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্যে ইসলামের বিধান হলো পরিবারের জন্যে কিংবা নিজের জন্যে নারী কাজ করতে বাধ্য নয় বরং নারীর ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ভার পুরুষের ওপর বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।নারীর দেহ ও মনকে প্রশান্ত রাখার স্বার্থে ইসলাম কাজ করাকে তাদের জন্যে অভিষ্ট্য করে দেয় নি,তবে তাদের মেধা বিকাশ এবং সামাজিক চাহিদা নিশ্চিত করার স্বার্থে চাকুরি করা অগ্রাহ্য নয়।

পাশ্চাত্যে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রশ্নে নারীর বাইরে চাকুরি করাটা একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে তারা নারী-পুরুষের প্রকৃতিগত পার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনা করছে না। ফলে নারীর মানসিক অশান্তি এবং পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা পাশ্চাত্যে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মার্কিন সমাজ বিজ্ঞানী গেরহার্ড লেনস্কি পশ্চিমা সমাজে তালাকের প্রবণতা বৃদ্ধির ঘটনার পেছনেও এটি দায়ী বলে মনে করেন। বহু মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে নারী তার শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বামী এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি নিজের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে এবং ভালোভাবে পালন করতে পারেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন মনোবিজ্ঞানী কর্মজীবী নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, আমেরিকার শতকরা ৬০ ভাগ কর্মজীবী নারী মাতা বলেছেন,তারা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। নিঃসন্দেহে নারী-পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যকে উপেক্ষা করার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিমাবিশ্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অজুহাতে নারীকে অর্থনৈতিক কঠিন কর্মকাণ্ডেনিয়োজিত করেছে এবং তাকে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করেছে। আর নারীওনিজেকে পুরুষের সমান অধিকার অর্জনের জণ্যে মাতৃত্ব এবং স্ত্রীর দায়িত্বথেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু তারা নিজেদের যথার্থ অবস্থান অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের দৃষ্টিতে মা এবং স্বামী হিসেবে পরিবারে একজন নারীর অবস্থানখুবই মূল্যবান। তবে এর পাশাপাশি সমাজেও একজন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারাখতে পারে।

উপরি উক্ত আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, নারী-পুরুষভেদে ইসলামের নৈতিক এবং বিশ্বাসগত বিধি-বিধান এক ও অভিন্ন,তবে লৈঙ্গিক বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই পার্থক্য রয়েছে। যেমন ভরণপোষণ প্রদান করা,উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়,পরিবার কাঠামোয় নারী-পুরুষের দায়িত্বের ভিন্নতা ইত্যাদি। ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে, স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর দায়িত্ব। তবে ভরণপোষণের অধিকারটি নিঃশর্ত নয়। ভরণপোষণ পেতে হলে নারীকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। তাহলো দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বামীর যথাযথ আনুগত্য তথা স্ত্রী হিসেবে স্বামীর ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। তবে আইনগত দিক থেকে এই আনুগত্যের দুই ধরনের অর্থ রয়েছে। সাধারণত, আনুগত্য বলতে স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব পালন করাকে বোঝায়,তাছাড়া পরিবারের অর্থনৈতিক বিষয়ে স্বামীর পরিচালনা মেনে নেওয়াটাও আনুগত্যের পর্যায়ে পড়ে। একইভাবে স্বামীর সাথে স্ত্রীর মেলামেশা-জীবনযাপন করা এবং চলাফেরাটাও এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ অর্থে আনুগত্য দাম্পত্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং স্বামীর জৈবিক চাহিদা মেটানো। যে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা জরুরী তাহলো নারীরা সাধারণত মাতৃত্বের কাজসহ যেসব কাজ বাসায় আঞ্জাম দেয় সেগুলো আনুগত্যের বাইরে। কোনো কোনো মতাদর্শ বিশেষ করে ফ্যমিনিস্টরা স্বামীর আনুগত্য করাকে লিঙ্গগত বৈষম্য বলে মনে করে। তাদের দৃষ্টিতে আনুগত্যের সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী নারী স্বামীর লৈঙ্গিক দাসে পরিণত হয়। অবশ্য প্রাকৃতিকভাবেই নারী পুরুষের অধিকার এবং দায়িত্বের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক থেকেই পার্থক্য রয়েছে।

বৈষম্য তখনই অর্থবহ হয় যখন দেখা যায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একই রকম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী,অথচ তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো একরকম নয়। ইসলাম মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষকে এক সমান বলে মনে করে এবং নারী-পুরুষের মাঝে কোন রকম বৈষম্যকে গ্র্রহণ করে না। কিন্তু নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য থাকার কারণে তাদের কাজকর্ম এবং দায়িত্বের মাঝেও পার্থক্য থাকবে-এটাই তো স্বাভাবিক। কেউই এমনকি চরম নারীবাদীরাও নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় এই পার্থক্য থাকার কথাটি অস্বীকার করতে পারবে না। ফরাসি দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট নারী-পুরুষের শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যেও পার্থক্য রয়েচে বলে মনে করেন। তাঁর বিশ্বাস এই পার্থক্যের ভিত্তিতে সমাজ এবং পরিবারে সবারই সৃষ্টিশীল ভূমিকা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

বিয়েরঅনেক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা হলো নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা নিশ্চিতকরা। ইসলাম এই প্রয়োজনীয়তাটিকে দ্বিপাক্ষিক বলে মনে করে এবং তা নিশ্চিতকরার স্বার্থে স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃতিগত নিজ নিজ দায়িত্ব দেওয়াহয়েছে।বিয়ের ক্ষেত্রে এইসব দায়িত্বের ব্যাপারে পারস্পরিক সচেতনতা যথেষ্টপরিমাণে থাকা প্রয়োজন, পরস্পরের ফিজিওলজিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যসম্পর্কেও জানা উচিত যাতে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সন্তুষ্টিবিধানের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রশান্তি নিশ্চিত করা যায়। এদিক থেকে পরিবারেনারী-পুরুষের সম্পর্কের অর্থ নারী,পুরুষের সেবাদাসী নয়, বরং তারা উভয়েই একএবং অভিন্ন জীবনের অধিকারী। মনোবিজ্ঞানীদের মতে স্বামীর আনুগত্য স্বীকারনা করার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। দাম্পত্য জীবনে শীতল সম্পর্ক বিরাজকরা, উশৃঙ্খলতার চর্চা,পারিবারিক ধস নেমে আসা ইত্যাদি বিচিত্র দুর্যোগদেখা দেয়। ইরানী সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ রহমতুল্লাহ সিদ্দিক মনে করেনস্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে মিল না থাকাটা তালাকের নেপথ্য গুরুত্বপূর্ণকারণ।

নারীদের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অধিকার হলো মাতৃত্বের অধিকার। ইসলামের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এ সম্পর্কে। ইসলাম মায়েদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্যে সকল মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। কোরআনে কারিমও মায়েদের মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে ব্যাপক উঁচু পর্যায়ে স্থান দিয়েছে। সূরায়ে লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন করা বিশেষ করে মায়ের সাথে সদাচরণ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়ে থাকে মা গর্ভকালীন অবস্থার কষ্ট,দুধ খাওয়ানোর কষ্ট এমনকি সন্তানদের লালন-পালন করা,প্রশিক্ষণ দেওয়ার কষ্টগুলোকে স্নেহ-মমতাপূর্ণভাবে সহ্য করে। সে কারণেই কোরআন সন্তানদের কাছ থেকে সদয় আচরণ ও সদ্ব্যবহার প্রাপ্তিকে মায়েদের প্রাপ্য বলে মনে করে।

একজন মা তার সন্তানকে শিশুকালে দুধ খাওয়ান যাতে সন্তান বেড়ে ওঠে। কোরআন সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর মেয়াদ দুই বৎসর বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান-সন্ততিদের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বাবার ওপরে বর্তায়। বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানদের ভরণ-পোষণ তথা জীবিকা নির্বাহের জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করা যাতে মা প্রশান্তচিত্ত্বে সন্তানদের লালন পালন করতে পারে। এ কারণেই সন্তানদের প্রতিপালনের এবং তাদের জীবনে মায়েদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক। পরিবারের অঙ্গনটা হলো এমন এক সবুজ শ্যামল ও উর্বর ভূমির মতো যেখানে সন্তানেরা বেড়ে উঠবে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো,বেড়ে উঠবে সতেজতার সাথে। এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাটাই মৌলিক।

সন্তানদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা দু’দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হলো শিশু তার শৈশবের ব্যক্তিত্ব বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো মায়ের স্নেহ-মমতার মধ্যেই কাটায়। ফলে এই বছরগুলোতে শিশু তার আচার-আচরণ ও অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে মায়েরই মুখাপেক্ষী থাকে। দ্বিতীয়ত, সন্তান এ সময় মাকেই বিপদ-আপদে একমাত্র নিশ্চিত আশ্রয়স্থল মনে করে। সেজন্যে শিশু যখনই কোন রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে,তখনই সে দৌড়ে গিয়ে মায়ের আঁচলে লুকায়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী জন বাবলী বলেছেন,’অনেক পরে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,মায়ের সাথে সন্তানদের আন্তরিক সম্পর্ক না থাকলে শিশুরা বিশেষ করে পুত্র শিশুরা এমন এক ব্যক্তিতে পরিনত হয় যে কিনা অন্যান্যদের সাথে যথাযথ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় না।‘

সন্তান প্রতিপালনেরব্যাপারে মায়ের যথাযথ ভূমিকা পালনে ঔদাসীন্য পশ্চিমা সমাজে বহু সমস্যারসৃষ্টি করেছে। মার্কিন বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ডেভিস কিংস্‌লিলিখেছেন,’পাশ্চাত্যে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক একটি দিক হচ্ছে বাবা-মা‘র সাথেসন্তানদের দূরত্ব সৃষ্টি করা।‘ পশ্চিমা সমাজে মায়েরা তাদের সময়েরবেশিরভাগই বাসার বাইরে এবং কর্মস্থলে ব্যয় করেন আর তাদের সন্তানেরাডে-কেয়ার সেন্টারে কাটায়। মা বাসায় ফেরার পরও ক্লান্তির কারণে সন্তানেরপ্রতি মাতৃত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে না। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর বার্টন ওয়ায়েটডে-কেয়ার সেন্টারকে শিশুদের জন্যে একটা বিপর্যয় বলে মনে করেন। তিনিবলেছেন,ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে মায়েদের ভালোবাসার চেয়ে বেশি ভালোবাসাউৎপন্ন করা একটা অসম্ভব ব্যাপার।

পশ্চিমা মনোরোগ চিকিৎসক ডক্টর এলিয়ট বার্কার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রূঢ় বা উত্তেজিত এবং হত্যাকারী ব্যক্তিদের ওপর কাজ করেছেন। এ ধরনের অপরাধী লোকদের বাবা-মা‘রা যখন তাদের সন্তানদের দেখতে আসতেন তিনি তখন তাদেরকে বলতেন,বাবা-মাকে যে সময় এই সন্তানদের প্রয়োজন ছিল সে সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন। আমি জানি এই সন্তানেরা তাদের জন্মের অল্প পরেই তাদের মায়ের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং সেবিকাদের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মায়েরা তাদের কাছে খুব কম সময়ই ছিল। এ কারণেই ইসলাম মাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক বলে মনে করে। পরিবারকে মনে করে সমাজের মৌলিকতম ভিত্তি আর মাকে মনে করে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্থপতি। ইসলাম তাই সমাজের জন্যে উপযুক্ত সন্তান উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের গঠনমূলক ভূমিকার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে।

পারিবারিকঅধিকারের সাথে নারীর মিরাস বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পদের বিষয়টিজড়িত। ইসলামে মিরাসী ব্যবস্থা বা উত্তরাধিকার পরিবারের গুরুত্বের প্রতিদৃষ্টি রেখেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। যারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের সমর্থকতারা দাবি করে যে ইসলামে মৌরুসি সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীকে উপেক্ষিত বাঅবমূল্যায়িত করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার এবংতালাকের বিষয়টি নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।

মানুষ যখন থেকে মালিকানার অর্থ বুঝতে পারলো এবং সামষ্টিক জীবন যাপন করতে শুরু করলো,তখন থেকে মানুষ মালামাল ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হয়। ইসলামের আবির্ভাবের আগে এই সম্পদ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের শক্তির উৎস বা প্রতীক। আর যে-ই তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী ছিল সে-ই অপেক্ষাকৃত কম শক্তির অধিকারী লোকদের সম্পদ নিজের কুক্ষিগত করে নিত। দুর্বলরা তাই শক্তিমানদের কারণে বঞ্চিত ছিল সে সময়। অবশ্য বিশ্বের সকল জাতি ও গোত্রেই নারীরা পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। নারীরা স্ত্রী হিসেবে,মা হিসেবে,কন্যা বা বোন হিসেবে তাদের উত্তরাধিকার বা মৌরুসি সম্পত্তির অধিকার পেত না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রোমানরা, গ্রিকরা, মিশরীয়রা এবং চীনারা নারীদেরকে অপরাপর মালামালের মতো নিজেদের ভোগ দখলাধীন সম্পদ বলে মনে করতো। সর্বোপরি নারী সবসময়ই ছিল মৌরুসি সম্পদ থেকে বঞ্চিত, মৌরুসি সম্পত্তির অধিকারী ছিল শুধু ছেলেরা অর্থাৎ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। ইউরোপের অবস্থাও ছিল একই রকম। সেখানেও যারা রক্ত-সম্পর্কের দিক থেকে খুব ঘনিষ্ট ছিল কেবল তারাই মৌরুসি সম্পত্তি পেত এবং মেয়েরা মৌরুসি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছিল। ইসলামই সর্বপ্রথম কোনো বিশ্বজনীন জীবন বিধান যেখানে নারীকে মৌরুসি সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং নারীদের ব্যাপারে জাহেলী যুগের সকল মর্যাদা হানিকর নিয়ম-নীতির বিলোপ ঘটানো হয়েছে। ইসলাম সমাজ ও পরিবারে নারী-পুরুষের প্রত্যেকের ভূমিকা ও আর্থিক দায়িত্বের ভিত্তিতেই মিরাসের (উত্তরাধিকারের) বিষয়টি বিবেচনা করেছে।

আসলে মৌরুসি (উত্তরাধিকারী) আইনটি একটা অর্থনৈতিক বিষয়। ইসলামে মৌরুসি আইনটি সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিমূলেই স্থাপন করা হয়েছে। নারী তার অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে মোহরানা,জীবিকা নির্বাহের জন্যে আবশ্যিক প্রদেয় খোরপোষসহ আরো অনেক কিছু প্রাপ্য। এমনকি নারী তার মৌরুসি সম্পদের পুরো অংশই বিনিয়োগ করার অধিকার রাখে, তার জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তার মৌরুসি সম্পত্তির অংশ ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ পুরুষ নারীর মোহরানা এবং ভরণপোষণের জন্যে প্রদেয় অর্থসহ জীবনযাপনের জন্যে আরো যা যা প্রয়োজন সবকিছু পরিশোধ করতে বাধ্য। এমনকি নারী যদি বাচ্চাদের প্রতিপালনের জন্যে কোনো কিছু চায়,তাহলে পুরুষ তা দিতে বাধ্য। এদিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে পুরুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশই খরচ হয় পরিবার,স্ত্রী ও সন্তানদের পেছনে।

মৌরুসি সম্পত্তির অংশ ভাই-বোনদের গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে ভাইয়ের অংশ বোনের অংশের দ্বিগুণ। বোনের বিয়ের পর তার জীবন-জীবিকার সমূহ ব্যয়ভার স্বামীর ওপর বর্তায়। তাই তার মৌরুসি সম্পত্তির অংশ সে বিনিয়োগ করে এবং স্বামীর সম্পত্তি ব্যবহার করে নিজের জীবন চালায়। কিন্তু ভাই তার বোনের দ্বিগুণ অংশ পেয়ে তার নিজের,স্ত্রীর,সন্তান-সন্ততির সর্বপ্রকার ব্যয় নির্বাহ করতে বাধ্য। তাই বোনের তুলনায় ভাইয়ের অংশ বেশি হলেও দেখা যায় ভাইয়ের অংশের পুরোটাই পরিবারের জন্যে ব্যয় হয়। এছাড়া লক্ষ্য করা যায় সমাজের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের তুলনায় তাদের পুজিঁ বেশি বিনিয়োগ করে থাকে যা একটি সমাজের অর্থনৈতিক ধস প্রতিরোধ করে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রে যে মৌরুসি সম্পদের অংশ পুরুষের চেয়ে নারীর কম তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের অংশ সমান। আবার কখনো কখনো নারীর অংশ পুরুষের চেয়ে বেশিও আছে।

পরিবার সংক্রান্ত আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তালাক। মানব সমাজের যে কটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে পরিবার ব্যবস্থাটি অন্যতম কেন্দ্রিয় একটি বিষয়। আজ পর্যন্ত পরিবার ব্যবস্থার কোনো বিকল্প দেখতে পাওয়া যায় নি। সন্তান-সন্ততিদের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত চাহিদাগুলো মেটানোর ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব পালন করে থাকে পরিবার। আর পরিবার গঠনের মূল উৎস বিয়ের উপকারিতা ও কল্যাণ সম্পর্কে বিচিত্রমুখি কথা বলেছে ইসলাম। পরিবারের গুরুত্বের কারণে তালাকের নোংরা ও মন্দ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে পরিবার এবং সন্তান-সন্ততিদের ওপর তালাকের কী রকম কুপ্রভাব পড়ে-সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলে আকরাম (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহর কাছে সেই ঘরই সবচেয়ে প্রিয় যে ঘরটি বিয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আর সেই ঘরের মতো ঘৃণ্য কোনো ঘর নেই যে ঘর তালাকের কারণে ধ্বংস হয়।”

অনেকেইছোটোখাটো বিষয়-আশয় নিয়ে সহজেই পারিবারিক জীবনের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দেয়।অনেকে আবার ক্যাথলিকদের একটি গোষ্ঠীর মতো বিশ্বাস করে-কোনো দম্পতি ভীষণরকমপারিবারিক অসংলগ্নতায় ভোগার পরও বাকি জীবন সেভাবেই কাটাতে হবে। কিন্তুইসলাম সর্বপ্রকার চরমপন্থা ও উগ্রতা পরিহার করে তালাক এবং পরিবারসহ সকলবিষয়েই মধ্যপন্থা ও ন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছে। সেজন্যেই ইসলাম পরিবারব্যবস্থার প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়ার পরও বলেছে একান্তই যদি কোনোদম্পতির মধ্যকার সম্পর্ক এমন এক তিক্ততার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যা আরসমাধানের যোগ্য থাকে না, সেরকম অবস্থায় সেই দম্পতিকে চরম তিক্ততা নিয়েজীবনযাপন করতে ইসলাম বাধ্য করে নি।

ইসলাম আসলে বোঝাতে চায় যে দাম্পত্য জীবনটা হলো একটা মানবিক এবং প্রাকৃতিক সম্পর্ক নির্ভর, এটা কিছুতেই চুক্তি ভিত্তিক সম্পর্ক নয়। অধ্যাপক মোতাহহারী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ “প্রকৃতি বিয়ের ভিত্তিকে স্থান দিয়েছে প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, একতা এবং আন্তরিকতার ওপর। এখানে জোর-জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই। বলপ্রয়োগ করে কিংবা আইনের বাধ্যবাধকতা দিয়ে দু ব্যক্তিকে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে এবং ঐ সহযোগিতা চুক্তির প্রতি উভয়কে সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য করা যায়। কিন্তু জোর করে বা আইনের মারপ্যাঁচ দিয়ে পরস্পরকে ভালোবাসতে দুজনকে বাধ্য করাটা অসম্ভব।”

আবার কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে জ্বালাতন করে তাহলে ইসলামী আদালত অভিযোগ পাবার ভিত্তিতে নারীপক্ষকে সহযোগিতা করে। মানবীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে এবং মানবীয় পূর্ণতায় পৌঁছার দিক থেকে নারী-পুরুষের মাঝে কোন রকম ভেদরেখা ইসলাম টানে নি। ইসলাম সবসময়ই নারীকে মর্যাদাবান করেছে, যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে।