banner

রবিবার, ১১ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 28 বার পঠিত

 

শিশুদের শৈশব হোক নিরাপদ, গৃহশ্রমিকের শ্রম হোক মর্যাদাপূর্ণ

(শ্রম সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ)বাংলাদেশের শ্রমজগতে এক নতুন আলো ফেলেছে শ্রম সংস্কার কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন। শিশুদের নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করা এবং গৃহ ও সৌন্দর্য সেবাখাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।

কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে গৃহকর্মে নিয়োজিত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫ অনুযায়ী এমন নিয়োগ ইতোমধ্যেই অবৈধ হলেও, আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় তা নিরবিচারে চলমান।
কমিশন মনে করে, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫’-এর যথাযথ প্রয়োগ না হলে শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত হবে না।

গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নিয়োগের ধরন যাই হোক—আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন কিংবা স্থায়ী—সবার জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, ন্যায্য বেতন, ছুটি, নিরাপদ বাসস্থান ও খাবারের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এ জন্য বাধ্যতামূলক কর্মচুক্তি চালুর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

এছাড়া অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করাও এই প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। কমিশন বলেছে, গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যসেবাখাতও শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিউটি পারলারে কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, ডে কেয়ার সুবিধা এবং ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতে পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক মর্যাদা রক্ষার বিষয়েও জোর দিয়েছে কমিশন।

পারলার কর্মীদের নিরাপত্তা বিশেষ করে রাতের সময় বাড়ি ফেরা, কর্মস্থলে হয়রানি রোধ, ও কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, এই শ্রমিকরা শুধুই সেবিকা নন তাঁরা অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা, যাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ জরুরি।

শ্রম সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদন শুধু আইনি সংশোধনের আহ্বান নয়—এ এক নৈতিক প্রত্যয়: যে শিশুদের খেলাধুলার সময়, তারা যেন নিপীড়নের শিকার না হয়; যে নারীরা অন্যের ঘর সাজায়, তাঁরাও যেন নিজের জীবনে সম্মান ও নিরাপত্তা পান।

তথ্যসুত্র -প্রথম আলো

Facebook Comments