banner

শনিবার, ১০ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 26 বার পঠিত

 

ডা. সায়েবা আক্তার: মাতৃস্বাস্থ্যের নীরব পথিকৃৎ

 

ডা. সায়েবা আক্তার একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তার উদ্ভাবন ‘সায়েবা’স মেথড’ বিশ্বের মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, তিনি ব্যক্তি হিসেবে নিজে থেকে গেলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।

১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা ডা. সায়েবা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বেশ মেধাবী। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গবেষণা ও চিকিৎসা সেবায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন।

উদ্ভাবন: ‘সায়েবা’স মেথড’
২০০০ সালে, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ (Postpartum Hemorrhage – PPH) প্রতিরোধে তিনি ‘ইউটেরিন বেলুন ট্যাম্পোনেড’ (UBT) নামক একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা ‘সায়েবা’স মেথড’ নামে পরিচিত। উন্নত দেশে এই সমস্যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও, ডা. সায়েবা স্বল্পমূল্যের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা প্লাস্টিকের ক্যাথেটারের মাধ্যমে জরায়ুর ভেতরে বেলুন তৈরি করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রচুর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং হাজারো মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।

ডা.সায়েবা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গাইনিকোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের চিকিৎসা দিতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন।
এছাড়াও, তিনি সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় সহায়তা করতে ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তার উদ্যোগে অনেক দরিদ্র মেয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া, তিনি ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ অর্জন করেন।
তবে, তার কাজ আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল স্বীকৃতি পেলেও, ব্যক্তি হিসেবে তিনি সেই মর্যাদার আসনে আসতে পারেননি,থেকে গেলেন জনমনের আড়ালে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনিসেফসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির প্রশংসা করলেও,ব্যক্তি হিসেবে কাজের জন্য পাননি বিশেষ কোন বিশ্বস্বীকৃতি।
প্রায়শই দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেলেও, তারা ব্যক্তিগতভাবে উপেক্ষিত থাকেন। তার উদ্ভাবন নোবেল পুরস্কার কিংবা র‍্যামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারের যোগ্য হলেও, তিনি এখনো সে পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাননি।

ডা. সায়েবা আক্তার কেবল একজন চিকিৎসক নন, তিনি একজন পথিকৃৎ, মানবতার সেবক। তার উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসুক বা না আসুক, তার কাজের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে বিশ্ব তাকে আরও বড় পরিসরে সম্মানিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

Facebook Comments