চোখ চুলকালে আমরা অনেকেই অবচেতনভাবে হাত দিয়ে ঘষে ফেলি। প্রথমদিকে এটি স্বস্তিদায়ক মনে হলেও, নিয়মিত বা জোরে চোখ ঘষার অভ্যাস আমাদের অজান্তেই নানা ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। চোখ শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ, তাই এর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
চোখ ঘষার ফলে কর্নিয়া বা কনজাংটিভার ওপর চাপ পড়ে, যা চোখে খসখসে ভাব, লালচে রঙ ও ঝাঁঝালো অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—নোংরা বা জীবাণুযুক্ত হাতে চোখ ঘষলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া, যারা গ্লুকোমার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে চোখ ঘষা চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়িয়ে অপটিক নার্ভের ক্ষতি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়ের ঝুঁকি তৈরি করে। আবার, নিয়মিত ঘষার ফলে চোখের চারপাশের নরম ত্বকে বলিরেখা বা ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে, যা বয়সের আগেই চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ফেলে।
সবচেয়ে মারাত্মক একটি দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি হলো কর্নিয়ার গঠন বিকৃতি—যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কেরাটোকোনাস বলা হয়। এ অবস্থায় কর্নিয়া পাতলা ও শঙ্কু আকৃতির হয়ে পড়ে, ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায় এবং তা সারাজীবনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে অ্যালার্জি বা ধুলোবালির কারণে চোখে অস্বস্তি হলে, তাৎক্ষণিকভাবে চোখ ঘষার পরিবর্তে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নেওয়া, কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আইড্রপ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। হালকা চাপ দিয়ে চোখ চেপে ধরা বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়াও আরাম পেতে সহায়ক হতে পারে।
চোখে যদি লালভাব, ব্যথা, ঝাপসা দেখা বা চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। স্মরণে রাখা উচিত—চোখের প্রতি অবহেলা মানেই নিজের প্রতি অবহেলা।
সতর্ক থাকুন, চোখের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।