জেরুসালেম—একটি শহরের নাম নয় কেবল, এটি ইতিহাসের ধুলিকণায় লেখা বিশ্বাস, বেদনা ও বিজয়ের এক অনন্ত কাব্য। এই পবিত্র শহরের বুকে হৃদয়ের মতোই স্পন্দিত মসজিদুল আকসা, যে স্থান একাধারে ঈমানের প্রথম অভিমুখ, নবী করিম (সা.)-এর মেরাজের সফরের গন্তব্য এবং মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেই আল আকসা আজ শুধু ইট-পাথরের একটি স্থাপনা নয়; এটি মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস ও ঐক্যের প্রতীক। যুগের পর যুগ ধরে এই মসজিদ সাক্ষী থেকেছে যুদ্ধ, বিজয়, বিশ্বাসঘাতকতা এবং পুনর্জাগরণের।
এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখবো আল আকসার অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এক দীর্ঘ, রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়—যা একইসঙ্গে বেদনার, তেমনি অহংকারের।
পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের হৃদয়ে অবস্থিত জেরুসালেম। আর এখানেই ইসলামের এক অনন্য ধন—মসজিদুল আকসা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা, মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থান হিসেবে মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান।
আল আকসা: এক দৃষ্টিতে অতীত ও বর্তমান
আল কোরআনের পবিত্র আয়াতে ‘বরকতময় ও পবিত্র ভূমি’ হিসেবে বর্ণিত এই ভূমি অসংখ্য নবী ও রাসূলের পদধূলিতে ধন্য। প্রাচীন যুগে এটি ছিল ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। ইতিহাসের পাতায় আল আকসা ঘিরে ফুটে ওঠে সুলতান সালাহউদ্দীনের বীরত্বগাথা, খলীফা ওমরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মুসলিম শাসকদের নির্মিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বর্ণালী অধ্যায়।
জেরুসালেমের এই ভূমিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহরসহ বহু মনীষী।
আল আকসা কমপ্লেক্স: শুধু একটি মসজিদ নয়, জ্ঞান-ঐতিহ্যের শহর
প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্স কোনো একটি স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্থাপত্য-ঐতিহ্যের মহাসমারোহ। চার দেয়ালের ভিতর বিস্তৃত প্রায় দুই শতাধিক স্থাপনা—মসজিদ, মিনার, মেহরাব, মিম্বারসহ একেকটি ইট যেন বহন করে শতাব্দীর ইতিহাস।
নির্মাণ ইতিহাস: হাজার বছরের শেকড়
১.ইসলাম পূর্ব যুগ: আদি নিদর্শনের শুরু
মসজিদুল আকসা পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। মক্কার মসজিদুল হারামের ৪০ বছর পর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, কেউ বলেন আদম (আ.) এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা, কেউ বলেন নূহ (আ.)-এর পুত্র সাম, আবার অনেকের মতে ইব্রাহিম (আ.) এই পবিত্র স্থানের ভিত্তি স্থাপন করেন।
২.নবীদের যুগ: পবিত্রতার উত্তরাধিকার
নূহ (আ.)-এর প্লাবনে ধ্বংস হওয়ার পর ইব্রাহিম (আ.) মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর দাউদ (আ.) এবং তাঁর পুত্র সুলাইমান (আ.) সময়কালে মসজিদ পরিণত হয় এক বিস্তৃত কমপ্লেক্সে। সুলাইমান (আ.) নির্মাণ করেন হায়কাল-ই-সুলাইমানি, যা পরবর্তীতে ইহুদিদের বিশ্বাসে রূপ নেয় সলেমন ট্যাম্পলে।
ইহুদি ও খ্রিস্টান আধিপত্য: ইতিহাসের উল্টো পৃষ্ঠা
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বুখতে নাসর হায়কাল ধ্বংস করে স্মৃতিচিহ্ন লুটে নেয়। ৭০ বছর পর ইরানি সম্রাটের সহায়তায় ইহুদিরা নির্মাণ করে ‘সেকেন্ড ট্যাম্পল’। এরপর গ্রিক সম্রাট অ্যারোটেনিস একে গ্রীক মন্দিরে রূপান্তর করেন। খ্রিস্টান শাসকরা আবারও এর রূপান্তর ঘটায় গির্জায়। এ সময় ইহুদিরা ভূমিহীন, আশ্রয়হীন জাতিতে পরিণত হয়—যেমনটা কোরআনে উল্লেখিত ‘লাঞ্চনার জাতি’।
ইসলামোত্তর যুগ: পুনর্জাগরণের আলোকবর্তিকা
মেরাজের রাতে রাসূল (সা.)-এর আল আকসা সফর শুধু অলৌকিক ঘটনা নয়, এক নতুন যুগের সূচনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ হিজরিতে খলীফা ওমর (রা.) মসজিদে ওমর নির্মাণের মাধ্যমে এখানে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক নির্মাণ করেন কুব্বাতুস সাখরা।
স্বর্ণচূড়া বিশিষ্ট অষ্টকোণাকৃতির এই স্থাপনা ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কেন্দ্রের পাথরটি ইহুদিদের মতে পৃথিবীর ‘ফাউন্ডেশন স্টোন’।
উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে আল আকসা হয়ে ওঠে ইসলামি জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠিত হয় অসংখ্য মাদরাসা ও প্রতিষ্ঠান। যদিও শিয়া ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়ের হাতে কিছু সময় এটি বিভ্রান্ত মতবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, কিন্তু সেলজুক সুলতানরা পুনরুদ্ধার করে ইসলামের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন। ইমাম গাজালির আল আকসায় অবস্থান, জ্ঞানের দীপ্তি ছড়ায় এই কমপ্লেক্সে।
ক্রুসেড থেকে আধুনিক যুগ:রাজনৈতিক বৈরি বাতাস
মসজিদ আল আকসা—ইতিহাস, ধর্ম এবং রাজনীতির এক অম্ল-মধুর মিশেল। জেরুসালেমের হৃদয়ে অবস্থিত এই পবিত্র স্থানকে ঘিরে ইতিহাসের অনেক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে এর মর্যাদা বহু পুরনো হলেও, এর ইতিহাসে এক গভীর মোড় আসে ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে, যখন প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করে। তারা আল-আকসা মসজিদকে “সলোমনের মন্দির” বলে ঘোষণা করে এবং কুব্বাত আস সাখরাকে “টেমপ্লাম ডোমিনি((Templum Domini)” বা ঈশ্বরের গম্বুজ হিসেবে রূপান্তর করে ফেলে। মসজিদটি তখন খ্রিষ্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে, আর আল-আকসা মসজিদকে ব্যবহার করা হয় কখনও ঘোড়ার আস্তাবল, কখনও রাজপ্রাসাদ হিসেবে।
১১১৯ খ্রিষ্টাব্দে নাইটস টেম্পলাররা মসজিদটিকে তাদের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এই সময়ে স্থাপত্যগত অনেক পরিবর্তন আসে—উত্তরের বারান্দা সম্প্রসারিত হয়, নতুন এপস তৈরি হয়, এবং অভ্যন্তরে একটি বিভক্তকারী দেয়াল নির্মিত হয়। পশ্চিমে ও পূর্বে খিলানযুক্ত নতুন অংশ সংযোজিত হয়, যা পরে একটিতে মহিলাদের নামাজের স্থান এবং অন্যটিতে ইসলামী জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক দখলের অবসান ঘটে ১১৮৭ সালে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে। বিজয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মসজিদের অভ্যন্তরে থাকা খ্রিষ্টানদের স্থাপনাগুলো(টয়লেট, শস্যগুদাম) সব সরিয়ে ফেলা হয়। মেঝে আচ্ছাদিত হয় দামি কার্পেটে, গোলাপজল ও সুগন্ধি ছিটিয়ে তা আবার নামাজের উপযোগী করে তোলা হয়। সালাহউদ্দিন তখন মসজিদে স্থাপন করেন এক ঐতিহাসিক মিম্বর, যা আগে 1168 সালে সুলতান নুরউদ্দিন জেনগির আদেশে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং তার মৃত্যুর পরে সমাপ্ত হয়।
পরবর্তী শতকগুলোতে মামলুক ও উসমানীয় শাসকদের অধীনে আল-আকসা ধীরে ধীরে নতুন মাত্রা পায়।
১৩৪৫ সালে মামলুক সুলতান আল-কামিল শামান মসজিদের পূর্ব দিকে আরও দুটি সারি ও ফটক সংযুক্ত করেন। উসমানীয়রা ১৫১৭ সালে জেরুসালেমের শাসন নিলে মসজিদে বড় কোনো স্থাপত্য পরিবর্তন না আনলেও আশেপাশে নানান উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। কাসিম পাশার ফোয়ারা, নতুন সেতু এবং মুক্ত গম্বুজ নির্মাণ হয় এই সময়েই। ১৮১৬ সালে গভর্নর সুলাইমান পাশা আল-আদিল মসজিদের জীর্ণ অবস্থা দেখে পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
বিশ শতকে এসে আল-আকসা নতুন করে সংস্কারের সুযোগ পায়, যখন জেরুসালেমের গ্র্যান্ড মুফতি আমিন আল-হুসাইনি তুর্কি স্থপতি মিমার কামালউদ্দিন বেককে দায়িত্ব দেন মসজিদ ও আশেপাশের স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। পুরনো উমাইয়া ভিত্তি শক্তিশালী করা হয়, কাঠের বিমের পরিবর্তে কংক্রিট ও পিতল ব্যবহৃত হয়, ভেতরের আর্চ ও গম্বুজের সৌন্দর্য পুনর্নির্মাণ করা হয়। খোদিত আরবি লিপি ও ফাতেমীয় আমলের মোজাইকও প্লাস্টারের আড়াল থেকে উদ্ধার করে দৃশ্যমান করা হয়।
তবে সব ইতিহাস আনন্দদায়ক নয়। ১৯২৭ ও ১৯৩৭ সালের ভূমিকম্প মসজিদে ব্যাপক ক্ষতি করে, যাকে ১৯৩৮ ও ১৯৪২ সালে আবার মেরামত করা হয়।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ছিল এক মোড়বদলের ঘটনা, যেখানে মুসলিমরা হারায় মসজিদুল আকসার কার্যত নিয়ন্ত্রণ। যদিও নামমাত্রভাবে এটি পরিচালিত হয় জর্ডান-ফিলিস্তিনের ওয়াকফের তত্ত্বাবধানে, বাস্তবে প্রতিটি প্রবেশপথে রয়েছে দখলদার সেনাদের কঠোর নজরদারি। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের আগে পোহাতে হয় অসহনীয় চেকিং, কখনো কখনো বন্ধ থাকে প্রবেশদ্বার।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট, যখন এক অস্ট্রেলীয় পর্যটক ডেনিস মাইকেল রোহান মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুনে নুরউদ্দিনের তৈরি সেই ঐতিহাসিক মিম্বর পুড়ে যায়। রোহান বিশ্বাস করতেন এই আগুনের মাধ্যমে তিনি যীশুর দ্বিতীয় আগমন ত্বরান্বিত করতে পারবেন। এই ঘটনার ফলে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং তার ফলস্বরূপ গঠিত হয় ওআইসি—ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা।
১৯৮০-এর দশকে ফের উগ্রবাদী ইহুদি সংগঠন গুশ এমুনিম আন্ডারগ্রাউন্ড আল-আকসা ও কুব্বাত আস সাখরা উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাদের লক্ষ্য ছিল, এই দুই পবিত্র স্থাপনা ধ্বংস করে সেই স্থানে ”তৃতীয় ইহুদি মন্দির(থার্ড টেম্পল)” নির্মাণ করা।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, যখন ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এরিয়েল শ্যারন এক হাজার সশস্ত্র রক্ষী নিয়ে আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করেন। ফিলিস্তিনিরা প্রতিবাদ করে, এবং সংঘর্ষের সূচনা হয়—যা পরবর্তীতে “আল-আকসা ইন্তিফাদা” নামে ইতিহাসে স্থান পায়। এই ইন্তিফাদা চলে পাঁচ বছর, ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ফিলিস্তিনে।
২০১৪ সালে ইসরায়েলি পুলিশ ১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো আল-আকসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তারা শুধু প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।
২০১৪ সালের পর থেকে আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা ও দখলদারিত্বের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, তা মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মসজিদে প্রবেশে মুসলমানদের জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে—বিশেষ করে রমজানের মতো পবিত্র মাসে, যেখানে পুরুষদের জন্য ৫৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ বহু ফিলিস্তিনির জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী নিয়ম ভেঙে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো প্রায় ১৮০ জন ইহুদি উপাসককে আল-আকসা চত্বরে প্রার্থনার অনুমতি দেয়। এ পদক্ষেপ মুসলিমদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, কারণ এটি মসজিদের দীর্ঘকালীন ধর্মীয় মর্যাদা ও স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
মুসলমানদের দাবি, এই পরিবর্তন ইসরায়েলের পরিকল্পিত নীতির অংশ, যার মাধ্যমে মসজিদের নিয়ন্ত্রণে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এই সংকট শুধু ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক মুসলিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন আল-আকসার ধর্মীয় অবস্থান ও মুসলমানদের অধিকারে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও আল-আকসা মসজিদ তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বিশ্ব বিবেকের সামনে প্রশ্ন তুলে দাঁড়িয়ে আছে—একটি মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ উপাসনাস্থলের আশায়।
সমাপ্তি
আল-আকসা মসজিদ শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি একটি প্রতীক—বিশ্বাস, সংগ্রাম ও অটল অবস্থানের প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যে মিনার একবারও মাথা নোয়ায়নি, বরং প্রতিটি দখল, প্রতিটি আগুন, প্রতিটি গুলির শব্দে আরও বেশি দৃঢ় হয়ে উঠেছে তার আত্মিক অবয়ব। ক্রুসেডারদের বিজয়, সালাহউদ্দিনের পুনরুদ্ধার, উসমানীয়দের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা আধুনিক যুগের দখলদারিত্ব—সব কিছুর মধ্য দিয়েই আল-আকসা থেকেছে অমলিন, অভ্রান্ত।
আজও, যখন জেরুসালেমের আকাশে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে, তখনও মসজিদুল আকসার আঙিনায় ভোরের আলো পড়ে নিঃশব্দে। সেই আলোয় ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণ যেন চিত্রিত হতে থাকে—মিম্বর, মিনার ও মোজাইকে। সময়ের শত আঘাত, রাজনীতির শত হিসাব-নিকাশ আর বেদনার অতল থেকে উঠে আসা এই মসজিদ তাই কেবল ইবাদতের স্থান নয়, হয়ে উঠেছে এক জাতির আত্মপরিচয়ের অন্তর্নিহিত প্রতিচ্ছবি।
এখনও আল-আকসা থেকে ধ্বনিত হয় আজানের ধ্বনি—ভেঙে দেয় দেয়ালের সীমা, জাগিয়ে তোলে আত্মা। যতদিন ঈমান টিকে থাকবে, ততদিন আল-আকসাও টিকে থাকবে—বিশ্বাসের প্রতিরূপ হয়ে, দুনিয়ার সমস্ত নির্যাতনের বিপরীতে মাথা উঁচু করে।
আল আকসা আজও আমাদের ডাকে, ইতিহাসের প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যেন সে ফিসফিস করে বলে—
“আমাকে ভুলো না, কারণ আমার মাঝে লুকিয়ে আছে তোমার আত্মপরিচয়, তোমার সংগ্রাম, তোমার ঈমান।”
আরওয়া আনাম