অপরাজিতাবিডি ডটকম, রাজবাড়ী: মৃত্যুর পর ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার দরিদ্র হাসিনা বেগম (৫০)। তিনি স্থানীয় ছোহরাব হোসেনের স্ত্রী। মৃত্যুর দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত তিনটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের থেকে নেয়া সমস্ত ঋণের টাকা মওকুফ ও সঞ্চয়ী টাকা পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে। কয়েকদিন আগে ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ওই নারী।
বুধবার বেরসকারি সংস্থা আশা গোয়ালন্দ ব্রাঞ্চ কার্যালয়ে নিহত হাসিনা বেগমের স্বামী ছোহরাব হোসেনের হাতে স্ত্রীর জমাকৃত সঞ্চয় তহবিলকে দ্বিগুণ করে লাভসহ মোট ১৩হাজার ৪৫৪টাকা তুলে দেয়া হয়। সেই সাথে সংস্থার পক্ষ থেকে অবশিষ্ট পাওনা ৪০হাজার ৫৭৫টাকাও মওকুফের ঘোষণা করা হয়।
এর আগে হাসিনা বেগমের মৃত্যুর দিন গত সোমবার দুপুরে জানাজার আগে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এর স্থানীয় ব্যবস্থাপক অঞ্জন মিত্র তাদের কাছে পাওনা সাড়ে ১১হাজার টাকা মওকুফ এবং জানাজা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাদল খান ও এলাকার কয়েকজন জানান, হাসিনা বেগম ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামের মেয়ে জামাই মোকছেদ শেখের বাড়িতে গত সোমবার সকাল ছয়টার দিকে ঘরের পিছনে থাকা আম গাছের ডালে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
অভাবের কারণে একমাত্র ছেলে এলাকায় অনেকের কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ করে দুই মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ছেলের ঋণ পরিশোধ করতে ও নিজের সংসার চালাতে হাসিনা বেগম একইভাবে তিনি নিজের নামে, মেয়ে, মেয়ে জামাইসহ বিভিন্ন নামে বেসরকারি সংস্থা আশা, ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্যুরো বাংলাদেশ, কেকেএসসহ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করেন।
এতে তিনি অন্তত চার লাখ টাকার মতো ঋণী হন। এ টাকার নিয়মিত কিস্তি ও সুদ তিনি কোনোভাবেই পরিশোধ করতে পারছিলেন না। কিন্তু পাওনাদাররা প্রায় প্রতিদিনই তার বাড়িতে এসে হানা দেয় এবং টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন খারাপ কথা বলতে থাকে। আত্মহত্যার আগের দিন রোববার তাকে বাড়িতে না পেয়ে মেয়ে বাড়িতে এসে অনেকেই শাসিয়ে যায়। এরপর সোমবার ভোররাতের কোনো এক সময় তিনি আত্মহত্যা করেন।
এ নিয়ে ওইদিন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয় এবং ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর টনক নড়ে। এরপর পুলিশের তৎপরতায় এলাকার অনেক সুদেকারবারীও গা ঢাকা দেয়।
অপরাজিতাবিডিডটকম/আরিএ১৭৩৭ঘন্টা১২ফেব্রুয়ারি২০১৪/এ