দীর্ঘ ১০ মাস মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে পরিকল্পিত সময়ের আগেই তাঁদের মহাকাশ স্টেশনেই থাকতে হয়েছে। অবশেষে নাসা ও স্পেসএক্সের যৌথ উদ্যোগে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান সুনিতা ও বুচ। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল কিছু গবেষণা ও পরীক্ষা চালিয়ে দ্রুত ফিরে আসা। কিন্তু স্টারলাইনার মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়, আর দুই নভোচারী সেখানেই আটকে পড়েন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা শুরু থেকেই চেষ্টা করলেও বিষয়টি রাজনৈতিক রূপ নেয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের পর।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও এই বিষয়ে সরব হন এবং দাবি করেন, আগের বাইডেন প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এরপর নাসা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের মাধ্যমে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। গত শুক্রবার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ক্রু ড্রাগন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ২৯ ঘণ্টা পর এটি মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে। নতুন করে চার নভোচারী সেখানে যোগ দেন, যাঁরা আগামী ছয় মাস মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাসার অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের তাকুয়া অনিশি ও রাশিয়ার কিরিল পেসকভ।
এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু সুনিতা ও বুচই নয়, তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরছেন—নাসার নিক হেগ এবং রাশিয়ার আলেকসান্দর গরবুনোভ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই দুজন মহাকাশ স্টেশনে এসেছিলেন এবং তাঁদের ফেরার জন্য আগে থেকেই স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্রু ক্যাপসুলে দুটি ফাঁকা আসন রাখা হয়েছিল।
সোমবার থেকে সুনিতাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়। মহাকাশযানের দরজা বন্ধ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়েই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন। তবে আবহাওয়া, মহাকাশযানের অবস্থা এবং সমুদ্রের পরিস্থিতি তাঁদের ফেরার পথে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, যা পুনরায় পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুনিতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহকর্মীরা ঘরে ফিরছেন। সারা বিশ্ব তাঁদের এই সফল প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।